চেল্লাখালী নদীতে চলছে অবৈধ বালু উত্তোলন, হুমকিতে ব্রিজ

শেরপুর জেলার নালিতাবাড়ী উপজেলার সীমান্তবর্তী গারো পাহাড় এলাকার পাহাড়ি চেল্লাখালী নদীতে চলছে অবৈধভাবে বালু উত্তোলন। ফলে ওই এলাকার সীমান্ত সড়কের চেল্লাখালী নদীর উপর নির্মিত ব্রিজ হুমকির মুখে পড়েছে। সেই সাথে নষ্ট হচ্ছে ফসলের মাঠ এবং হুমকির মুখে ঘর বাড়ি। এ বিষয়ে ক্ষতিগ্রস্ত এলাকাবাসী উপজেলা প্রশাসনের কাছে লিখিত অভিযোগ দিয়েও কোন কাজ হচ্ছে না বলে জানিয়েছেন ভুক্তভোগীরা। তবে উপজেলা প্রশাসন বলছেন অবৈধ বালু উত্তোলন বন্ধে প্রায়ই অভিযান পরিচালনা করা হয়।

সরজমিনে গিয়ে দেখা গেছে, ‌শেরপুর জেলার নালিতাবাড়ী উপজেলার সীমান্তবর্তী গারো পাহাড় এলাকার পাহাড়ি খরস্রোতা নদী চেল্লাখালী। বর্ষায় এই নদী দিয়ে উজান থেকে পাহাড়ি ঢলের সাথে প্রচুর বালু নেমে আসে। তাই বর্ষা চলে গেলে স্থানীয় প্রশাসন ইজারার মাধ্যমে বালু উত্তোলনে অনুমতি দিলেও অসাধু ইজারাদার ও স্থানীয় কিছু অবৈধ বালু ব্যবসায়ী কোন নিয়ম নীতির তোয়াক্কা না করে নিজেদের স্থানীয় প্রভাব খাটিয়ে বরুঙ্গা ব্রিজের আশপাশ থেকে এবং নদীর তীরবর্তী বিভিন্ন ফসলি জমি থেকে বালু উত্তোলন করে যাচ্ছে। এতে গভীর খাদ তৈরি হয়ে আশপাশের বিভিন্ন ফসলি জমি ভেঙে পড়ছে।

এছাড়া হুমকির মুখে আছে আশপাশের বেশ কিছু ঘরবাড়ি। সবচেয়ে বেশি ঝুঁকিতে রয়েছে সীমান্ত সড়কের বুরুঙ্গা ব্রিজ। এ ব্রিজে পিলারগুলো নিচের মাটি সরে যাওয়ায় ব্রিজের পিলারের পাইলিং বেরিয়ে পড়েছে। স্থানীয়দের অভিযোগ বালু উত্তোলনকারীরা প্রভাবশালী হওয়ায় তাদের ইচ্ছামত অবৈধভাবে বালু উত্তোলন করে যাচ্ছে। সরকার থেকে বালু মহলের যে ইজারা দেওয়া হয়েছে তা ব্রিজ থেকে দুই কিলোমিটার দূরে। অথচ তারা প্রভাব খাটিয়ে ব্রিজের আশপাশ থেকেই অসংখ্য স্যালো মেশিন দিয়ে বালু তুলে যাচ্ছে প্রকাশ্যে।


বালু উত্তোলনকারী প্রভাবশালীরা তাদের ইচ্ছামত বালু উত্তোলন করতে গিয়ে স্থানীয় কারো বাঁধা পেলে তার ওপর চড়াও হয় এবং হুমকি-ধমকি মারপিট ও মামলাও করা হয় বলে জানিয়েছেন ভুক্তভোগী অনেকেই।

অবৈধ বালু উত্তোলনের কারণে বরুঙ্গা ব্রিজের পাশাপাশি পার্শ্ববর্তী বারোমারি বাজার সংলগ্ন বুরুঙ্গা গ্রামের সরকারি খাস জমি থেকে অবৈধভাবে বালু উত্তোলন করছেন স্থানীয় প্রভাবশালী রসূল মাহমুদ নামে এক বালু ব্যবসায়ী। সেখানে একটি বিদ্যুতের খুঁটি, কৃষি আবাদের সেচের ড্রেন ও একটি মসজিদসহ বেশকিছু বাড়ি ঘর এখন হুমকির মুখে রয়েছে।

স্থানীয় বরুঙ্গা, অন্ধারুপাড়া ও খলচন্দা গ্রামের প্রায় ২ শতাধিক শ্রমিক এই বালু উত্তোলন ও পরিবহনের কাজের সাথে জড়িতরাও চায় বৈধভাবে বালু তোলা বন্ধ হোক। বৈধভাবে বালু উত্তোলন করা হলে তারাও কর্মহীন হয়ে পড়বে না।

এ বিষয়ে পোড়াগাঁও শ্রমিক ইউনিয়নের সাধারণ সম্পাদক বাদশা মিয়া বলেন, আমরাও চাই বৈধভাবে বালু উত্তোলন বন্ধ করা হোক। এতে অন্য কেউ ক্ষতিগ্রস্ত হবে না।


এদিকে শুক্রবার ওই নদীর তীরবর্তী এলাকায় সাংবাদিকের উপস্থিতি টের পেয়ে বালু উত্তোলনের স্যালো মেশিন বন্ধ করে ওই জায়গা থেকে তাদের লোকজন সব চলে যায়। কোনভাবেই তাদেরকে আর খুঁজে পাওয়া যায়নি। অবশেষে টেলিফোনের মাধ্যমে স্থানীয় অবৈধ বালু উত্তোলনকারী রসূল মাহমুদের সাথে যোগাযোগ করা হলে তিনি জানায়, আমি বৈধভাবে ভালো উত্তোলন করছি।

এদিকে মূল ইজারাদার সাবেক ছাত্রলীগ নেতা জোবায়ের হোসেন সোহেলের সাথে অবৈধভাবে বালু উত্তোলনের বিষয়ে টেলিফোনে যোগাযোগ করলে তিনি এ বিষয়ে সদুত্তর দিতেন না পেরে পড়ে বিস্তারিত জানাবে বলে ফোন রেখে দেয়। এরপর তাকে আর পাওয়া যায়নি।

অবৈধ বালু উত্তোলন বন্ধের দাবিতে গ্রামবাসীর লিখিত অভিযোগের বিষয়ে নালিতাবাড়ী উপজেলার নির্বাহী কর্মকর্তা রিসিল জানায়, আমরা প্রায়ই অভিযান চালিয়ে অবৈধ বালু উত্তোলন বন্ধ করছি। তবে আবারো চালু হলে সে বিষয়ে লিখিত অভিযোগ পেলে প্রয়োজনে ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।

অবৈধ বালু উত্তোলনের কারণে পরিবেশ বিপর্যয় রক্ষা এবং স্থানীয় ক্ষতিগ্রস্ত গ্রামবাসীর ফসলের জমি ও ঘরবাড়ি রক্ষায় প্রশাসনের উচ্চ পর্যায়ের হস্তক্ষেপ কামনা করছেন স্থানীয় সচেতন মহল।

সাম্প্রতিক দেশকাল ইউটিউব চ্যানেল সাবস্ক্রাইব করুন

মন্তব্য করুন

Epaper

সাপ্তাহিক সাম্প্রতিক দেশকাল ই-পেপার পড়তে ক্লিক করুন

Logo

ঠিকানা: ১০/২২ ইকবাল রোড, ব্লক এ, মোহাম্মদপুর, ঢাকা-১২০৭

© 2024 Shampratik Deshkal All Rights Reserved. Design & Developed By Root Soft Bangladesh

// //