স্ট্রবেরি চাষে যুবকের সাফল্য

লেখাপড়া শেষে চাকরির পেছনে না ছুটে উদ্যোগী হওয়ার চেষ্টা করছেন লালমনিরহাট সদর উপজেলার মহেন্দ্রনগর ইউনিয়নের মনোরম গ্রামের জাহিদ হাসান বসুনিয়া। তিন বিঘা জমিতে স্ট্রবেরি চাষ করে ভাগ্য বদলের স্বপ্ন দেখছেন শিক্ষিত এ যুবক। প্রথমবারেই দ্বিগুণ লাভের আশা করছেন এ তরুণ উদ্যোক্তা।

জানা গেছে, কুড়িগ্রাম সরকারি কলেজ থেকে ২০১৮ সালে ইতিহাসে স্নাতকোত্তর পাশ করে সরকারি চাকরির পেছনে ছুটে সময় নষ্ট না করে নিজেই কিছু করার উদ্যোগী হন। পৈতৃক সূত্রে পাওয়া এক একর জমিতে প্রথম আলুর আবাদ শুরু করেন। বেশ লাভ হওয়ায় টানা চার মৌসুম আলু আবাদ করেন। কিন্তু ভিন্ন কিছু করার ইচ্ছে ছিল জাহিদের। আর সেই ইচ্ছে থেকে ইউটিউবে ও গুগোল থেকে চাষের পদ্ধতি জেনে স্ট্রবেরি চাষে আগ্রহী হন। পরে বগুড়ার হাসান নামে এক স্ট্রবেরি চাষির কাছ থেকে পরামর্শ নিয়ে জমি প্রস্তুত করেন জাহিদ। প্রথমে নিজের জমানো দুই লাখ টাকায় শুরু করেন স্ট্রবেরি চাষ। তবে পুঁজির অভাবে বাণিজ্যিকভাবে স্ট্রবেরি চাষ করতে বিপাকে পড়তে হয় তাকে।

এদিকে ঝুঁকিপূর্ণ আবাদে ঋণ দিতে নারাজ ব্যাংক কর্তৃপক্ষ। অবশেষে তিনটি এনজিও থেকে চার লাখ টাকা ঋণ নিয়ে গত বছর ডিসেম্বর মাসের ১২ তারিখ প্রথমবারের মত সেই আলুর জমিতে রোপণ করেন ১৮ হাজার স্ট্রবেরির চারা।

কিন্তু দেড় মাসের মাথায় অর্ধেকেরও বেশি চারা মরে যায়। তবুও হাল ছাড়েনি জাহিদ। হতাশ না হয়ে অবশিষ্ট প্রায় আট হাজার চারাগাছের যত্ন শুরু করেন। চারা গাছের যত্ন নিতে নিয়োগ দেন শ্রমিক। শ্রমিকদের পরিচর্যা আর নিজের প্রচেষ্টায় অবশেষে আড়াই মাসের মাথায় থোকায় থোকায় ফল আসা শুরু হয়।

স্ট্রবেরি চাষি জাহিদ হাসান জানান, গত ফেব্রুয়ারির ২০ তারিখে প্রথম ফল তোলা হয়। এ পর্যন্ত ক্ষেত থেকে ৫ বার মোট ২৯০ কেজি ফল তোলা হয়েছে। যার পাইকারি বাজারমূল্য কেজিতে সাড়ে ৬০০ টাকা দরে মোট ১ লাখ ৮৮ হাজার ৫০০ টাকা। তিনি খরচ বাদে ৫ থেকে ৬ লাখ টাকা আয়ের আশা করছেন।

তিনি বলেন, যারা শিক্ষিত বেকার যুবক আছেন, তারা শুধু চাকরির পেছনে না ছুটে যদি নিজেরাই উদ্যোগী হয়ে কিছু করেন তাহলে দেশের বেকার সমস্যার সমাধান সম্ভব। আধুনিক কৃষির মাধ্যমে স্বাবলম্বী হওয়া এখন সহজ। আমার প্রত্যাশা, স্ট্রবেরি চাষ করে নিজের ভাগ্যের চাকা ঘোরাতে সক্ষম হবো। এতে স্থানীয় পুষ্টির চাহিদা যেমন মিটবে পাশাপাশি অন্যরাও এগিয়ে আসলে কর্মসংস্থান সৃষ্টির সুযোগ হবে।

স্ট্রবেরি বাগানের কৃষি শ্রমিক সন্তোষ রায় বলেন, প্রথমদিকে কঠিন মনে হলেও এখন স্ট্রবেরি চাষের নিয়মকানুন সহজ হয়ে গেছে। প্রতিদিন সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত আগাছা নিড়ানো ও কীটনাশক স্প্রে করেছে। এখন পাকা স্ট্রবেরি তোলার কাজ করছেন তারা।

প্রতিবেশী বেলাল হোসেন জানান, দূরদূরান্ত থেকে প্রতিদিনই স্ট্রবেরি ক্ষেত দেখতে আসেন অনেকে। তার এই উদ্যোগ দেখে অনেকেই আগ্রহ প্রকাশ করছেন স্ট্রবেরি চাষে।


অপর প্রতিবেশী হারুন অর রশিদ বলেন, স্ট্রবেরি দামি ফল। লাভ দেখে আগামীতে আমারও এক বিঘা জমিতে স্ট্রবেরি চাষ করার ইচ্ছে আছে।

জাহিদের স্ট্রবেরি বাগান দেখতে আসা আমেনা বেগম জানান, এই ফলের নাম শুনেছি, দেখিনি। আজ স্বচক্ষে দেখলাম, খেলাম। খেতে বেশ সুস্বাদু।

জেলা শহর থেকে আসা রাজু মিয়া নামে এক তরুণ বলেন, জাহিদ ভাইয়ের চাষের কথা শুনে তাজা স্ট্রবেরি কিনতে এসেছি। এ অঞ্চলে এই ফলের চাষ হয় না। গাছ থেকে টাটকা স্ট্রবেরি পেয়ে ভালো লাগছে।

লালমনিরহাট কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক (ভারপ্রাপ্ত) শাহ আমল মিয়া বলেন, এ অঞ্চলে কেউ কেউ সখের বশে স্ট্রবেরি চাষ করে থাকে। এটি সংবেদনশীল ফল। অল্প সময়ের জন্য তাজা থাকে। বাণিজ্যিকভাবে স্ট্রবেরি চাষ ও বাজারজাতকরণ বড় চ্যালেঞ্জ। তরুণ উদ্যোক্তা জাহিদ, সেই চ্যালেঞ্জ মোকাবেলা করে সফল হয়েছেন। প্রযুক্তিগত সহায়তার প্রয়োজন হলে কৃষি বিভাগ থেকে তা করা হবে বলেও তিনি জানান।

সাম্প্রতিক দেশকাল ইউটিউব চ্যানেল সাবস্ক্রাইব করুন

মন্তব্য করুন

Epaper

সাপ্তাহিক সাম্প্রতিক দেশকাল ই-পেপার পড়তে ক্লিক করুন

Logo

ঠিকানা: ১০/২২ ইকবাল রোড, ব্লক এ, মোহাম্মদপুর, ঢাকা-১২০৭

© 2024 Shampratik Deshkal All Rights Reserved. Design & Developed By Root Soft Bangladesh

// //