ঝিনাইদহে সরকার নির্ধারিত দামে মিলছে না মুরগি-মাংস

ঝিনাইদহে সরকার নির্ধারিত দামে মিলছে না নিত্য প্রয়োজনীয় পণ্য। নির্দেশ পালনে মাঠে নেই দায়িত্বশীল দপ্তরগুলো।

ঝিনাইদহ শহরের বিভিন্ন বাজারে সরেজমিনে খোঁজ নিয়ে জানা যায়, ব্রয়লায় মুরগি বিক্রি হচ্ছে ১৯৫ টাকা কেজি ও সোনালী মুরগি ৩০০ টাকা কেজি। গরুর মাংস বিক্রি হচ্ছে ৭০০ থেকে ৭৫০ টাকা, ছাগলের গোস্ত বিক্রি হচ্ছে ১ হাজার টাকা কেজি দরে। ঝিনাইদহ শহরের নতুন হাটখোলা, ট-বাজার, আরাপপুর, পাগলাকানাই, পানি উন্নয়ন বোর্ড সংলগ্ন বাজারে একই দামে বিক্রি হচ্ছে মুরগি ও গরুর মাংস।

ঝিনাইদহ আরাপপুর এলাকার ছব্দুল পোল্ট্রি হাউজের মালিক ছব্দুল হোসেন বলেন, ভোক্তা অধিকারের অফিসার মেহের আফরোজ বাজারে এসেছিলেন। তিনি এসে দেখে গেছেন সবকিছু। এসমস্ত বাজার মূল্য তালিকায় ব্রয়লার মুরগি ১৯৫ টাকা ও সোনালী মুরগি ৩০০ টাকা দাম লিখে বিক্রি হচ্ছে। এতে আপত্তি জানাননি ভোক্তার ওই কর্মকর্তা।

পাগলাকানাই এলাকার মুরগি ব্যবসায়ী ইনতাজ হোসেন বলেন, আমরা সরকার নির্ধারিত দামে মুরগি কিনতে পারছি না। বিক্রি করবো কিভাবে।

ঝিনাইদহ নতুন হাটখোলার মুরগি ব্যবসায়ী কামাল হোসেন বলেন, আজকে ব্রয়লার বড় খামারিদের কাছ থেকে কিনেছি ১৭১ টাকা কেজি এবং ছোট খামারিদের কাছ থেকে ১৬৮ টাকা কেজি, সোনালী ২৬৭ টাকা কেজি কিনে ৩০০ টাকা কেজি বিক্রি করা হচ্ছে। আপনারা সরকারের নির্দেশ মানছেন না কেন? এমন প্রশ্ন করলে তিনি বলেন, আমরা কিনতে না পারলে বিক্রি করবো কিভাবে। তাহলে আমাদের ব্যবসা বন্ধ করে দিতে হবে। মুরগি কেনার কোন মেমো দেখাতে বললে তিনি বলেন, আমাদের কোন মেমো দেওয়া হয় না।

একজন পাইকারী মুরগি ব্যবসায়ী নাম গোপন রাখার শর্তে বলেন, কোম্পানি আমাদের কাছে সর্বনিম্ন ১৬৮ টাকা কেজি বিক্রি করলেও সরকার নির্ধারিত দামেই তাদের বিক্রয় সিট করছে। মেমো চাইলে দিচ্ছে না। বলছে নিলে নেন না নিলে না নেন।

ঝিনাইদহ শহরের আরাপুরের সিপি কোম্পানির ডিপোর ম্যানেজার মেহেদী হাসান বলেন, আমরা সরকার নির্ধারিত দামেই বিক্রি করছি। বিক্রয় ইনভয়েস দেখাতে বললে তিনি বলেন অফিসে কোন মেমো রাখা হয় না। মেমো খামারিদের কাছে। অফিসের আরও দুই কর্মচারী মো. জিয়া ও ফজলে এলাহীকে মেমো দেখাতে বললে তারা বলেন, আমাদের অফিসে কোন মেমো নেই।

শৈলকুপার দুধসর এলাকার খামারি হাসান বলেন, আমাদেরকেও কোম্পানি থেকে কোন মেমো দেওয়া হয় না। আমরা কোম্পানি থেকে ৪১ টাকা পিস হিসেবে চলতি সিজনে বাচ্চা নিয়েছি। এখন একটি বাচ্চা বিক্রি হচ্ছে ৮০ টাকা পিস।

তিনি বলেন, খাবারের দাম এত, ওষুধ ও পরিচর্যা আবার অনেক বাচ্চা মারাও যায় তাহলে খামারিয়া কি করবে।  

একজন খামারী নাম গোপন রেখে বলেন, একটি উর্বর ডিমের দাম সর্বোচ্চ ১২ টাকা, সেই ডিম হ্যাচিং করে খামারী পর্যায়ে পৌছাতে সকল খরচ ধরে ২৫ টাকার মধ্যে হয়ে যাওয়া সম্ভব। কিন্তু একটি বাচ্চা কোম্পানি বিক্রি করছে ৮০ টাকা। পোল্ট্রি সেক্টর মূলত সিন্ডিকেট ও কোম্পানির হাতে জিম্মি। এদিকে ঝিনাইদহে কয়েকটি কোম্পানি রয়েছে যারা বাচ্চা থেকে শুরু করে, খাবার, ওষুধ, ডিম ও মুরগি বিক্রি পর্যন্ত সকল কিছু করে থাকেন। ঝিনাইদহে সিপি কোং, প্যারাগন, একাত্তর ও কাজী ফার্মসসহ বিভিন্ন কোম্পানি এই ব্যবসা বিস্তার করেছে। সরকার নির্ধারিত দামের বেশি দামে পাইকারী বিক্রি করলেও মেমো না দেওয়ার অভিযোগ পেয়ে এসব অফিসে গিয়ে কাউকে পাওয়া যায়নি।

সরকার নির্ধারিত দামে মুরগি বিক্রির তদারকি নিয়ে ঝিনাইদহ ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের সহকারী পরিচালক নিশাত মেহের বলেন, এবিষয়ে কৃষি বিপণন কর্মকর্তার সাথে কথা বলেন। তারা দেখবে এই বিষয়টি।

ঝিনাইদহ জেলা কৃষি বিপণন কর্মকর্তা মো. শরিফুল ইসলাম বলেন, আমাদের জনবল কম। তদারকিতে মাঠে নামতে হবে।

কৃষি বিপণন অধিদপ্তরের উপপরিচালক মো. কামরুজ্জামান বলেন, আমাদের জনবল কম। প্রত্যেক জেলা উপজেলার স্থানীয় মাঠ প্রশাসন, জনপ্রতিনিধি, বাজার পরিচালনা কমিটি, ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তর নিয়ে আমাদের কার্যক্রম পরিচালিত হচ্ছে। স্থানীয় প্রশাসন আমাদের সহযোগিতা না করলে সরকারের এই নির্দেশ বাস্তবায়ন করা সম্ভব নয়। আমি ঝিনাইদহের বিষয়টি ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানাবো।

সাম্প্রতিক দেশকাল ইউটিউব চ্যানেল সাবস্ক্রাইব করুন

মন্তব্য করুন

Epaper

সাপ্তাহিক সাম্প্রতিক দেশকাল ই-পেপার পড়তে ক্লিক করুন

Logo

ঠিকানা: ১০/২২ ইকবাল রোড, ব্লক এ, মোহাম্মদপুর, ঢাকা-১২০৭

© 2024 Shampratik Deshkal All Rights Reserved. Design & Developed By Root Soft Bangladesh

// //