পুলিশ ক্যাম্প নির্মাণ হলেও ৩ বছরে শুরু হয়নি কার্যক্রম

লক্ষ্মীপুর সদরের তেওয়ারীগঞ্জ ইউনিয়নের আঁধার মানিক এলাকায় প্রায়ই ঘটছে হত্যা, চুরি, ডাকাতি আর ছিনতাইয়ের মতো ঘটনা। দুর্গম চর ও সীমান্তবর্তী এলাকা হওয়ায় অপরাধীরা এ এলাকায় নির্বিঘ্নে চালাচ্ছে তাদের অপরাধ কর্মকাণ্ড। গেলো ছয় বছরে অন্তত পাঁচটি হত্যাকাণ্ডসহ ঘটেছে চুরি, ডাকাতি, ছিনতাই ও নারী ধর্ষণের মতো ঘটনা। এসব অপরাধ কর্মকাণ্ড নিয়ন্ত্রণে ২০২১ সালের ১২ জুন আঁধার মানিক পুলিশ ক্যাম্প নির্মাণ কাজের উদ্বোধন করে জেলা পুলিশ। কিন্তু ভবন নির্মিত হলেও এখনো শুরু হয়নি পুলিশ ক্যাম্পের কার্যক্রম। এতে নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছেন স্থানীয় বাসিন্দারা। তবে জেলা পুলিশ বলছে, আঁধার মানিক এলাকায় পুলিশ তদন্ত কেন্দ্র স্থাপনের জন্য একটি প্রস্তাবনা পুলিশ সদর দপ্তরে পাঠানো হয়েছে।

লক্ষ্মীপুর জেলা শহর থেকে প্রায় ৩০ কিলোমিটার দূরে অবস্থিত সীমান্তবর্তী গ্রাম আঁধার মানিক। সদর উপজেলার দক্ষিণ পূর্বাংশের তেওয়ারীগঞ্জ ইউনিয়নের দুর্গম চরাঞ্চল এটি। পার্শ্ববর্তী নোয়াখালী সদর ও লক্ষ্মীপুরের তিনটি থানা এলাকার সীমান্তবর্তী হওয়ায় এলাকাটি এখন অপরাধীদের স্বর্গরাজ্যে পরিণত হয়েছে। হত্যা, চুরি-ডাকাতি ও ছিনতাইয়ের মতো ঘটনা ঘটিয়ে নির্বিঘ্নে সটকে পড়ছে অপরাধীরা।

স্থানীয় বাসিন্দা হাফেজ মিয়া, তারা বানু, ইউসুফ আলীসহ কয়েকজন জানান, সদরের তেওয়ারীগঞ্জ ও পার্শ্ববর্তী কুশাখালি ইউনিয়নের ঝাউডগি, ফরাসগঞ্জ, আঁধার মানিক, নলডগি ও পুকুরদিয়া এলাকা জুড়ে রয়েছে চোর-ডাকাতের অভয়ারণ্য। মাঝে মধ্যেই এসব চরাঞ্চলে ঘটছে হত্যা, চুরি-ডাকাতি ও ছিনতাইয়ের মতো ঘটনা। গত ছয় বছরে এই আঁধার মানিক এলাকায় স্থানীয় ইউপি সদস্য সাফিউল্যা, ঠিকাদার মনির, ব্রিকফিল্ড শ্রমিক মোহাম্মদ আলী ও অটোরিকসাচালক মুরাদসহ অন্তত পাঁচটি হত্যাকাণ্ডের ঘটনা ঘটেছে। এসময় দুর্বৃত্তরা ছিনিয়ে নেয় মুরাদের অটোরিকশাটিও। এসব ঘটনায় এখন স্থানীয়দের মাঝে বিরাজ করছে উদ্বেগ-উৎকণ্ঠা। চোর-ডাকাতের উপদ্রব ঠেকাতে স্থানীয় ইউপি চেয়ারম্যান ওমর ফারুক ইবনে হোসাইন ভুলু পারিবারিকভাবে আঁধারমানিক এলাকায় পুলিশ ফাঁড়ি স্থাপনের জন্য ভূমি দান করলে সেই ভূমিতে পুলিশ ফাঁড়ি স্থাপনের উদ্যোগ নেয় জেলা পুলিশ। নির্মাণ করা হয় আধপাকা টিনসেডের ৫ কক্ষবিশিষ্ট ২টি ভবন। কিন্তু এখনো শুরু হয়নি এর কার্যক্রম। ফাঁড়িটির কার্যক্রম শুরু না হওয়ায় প্রতিনিয়ত তাদেরকে আতঙ্কের মধ্যে বসবাস করতে হয়। পুলিশ ক্যাম্পটি চালু হলে নির্বিঘ্নে বসবাস করতে পারতেন তারা।

এদিকে স্থানীয় তেওয়ারীগঞ্জ ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান ওমর ফারুক ইবনে হোসাইন ভুলু দুঃখ প্রকাশ করে জানালেন, এলাকায় শান্তি-শৃঙ্খলা রক্ষায় পারিবারিকভাবে নগদ টাকা ও ভূমি দান করলেও নানা জটিলতায় এখনো চালু হয়নি আঁধার মানিক পুলিশ ক্যাম্পের কার্যক্রম।

লক্ষ্মীপুরের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (ক্রাইম এন্ড অপস্) মো. হাসান মোস্তফা স্বপন জানালেন, এলাকাটিকে অপরাধ প্রবণ হিসেবে চিহ্নিত করে ওই স্থানে স্থায়ী পুলিশ তদন্ত কেন্দ্র স্থাপনের জন্য একটি প্রস্তাবনা ইতোমধ্যে পুলিশ সদর দপ্তরে পাঠানো হয়েছে। অনুমোদন পেলে ওই এলাকায় আইন-শৃঙ্খলা ভালোভাবে নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব হবে বলে জানান তিনি।

দুর্গম চরের মানুষের জানমালের নিরাপত্তা ও আইনশৃঙ্খলা উন্নয়নের লক্ষ্যে ৬০ শতাংশ ভূমির উপর সরকারি ও স্থানীয় ইউপি চেয়ারম্যানের ব্যক্তিগত অনুদানে প্রায় ২২ লাখ টাকা ব্যয়ে নির্মিত হয় এ আঁধারমানিক পুলিশ ক্যাম্প। কিন্তু নির্মাণের তিন বছর পরেও এখনো শুরু হয়নি এর কার্যক্রম। সচেতনমহল বলছেন, এ পুলিশ ক্যাম্পটির কার্যক্রম শুরু হলে সীমান্তবর্তী এলাকার আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি যেমন উন্নতি হতো, তেমনি নির্বিঘ্নে চলাচল করতে পারতো সাধারণ মানুষ।

সাম্প্রতিক দেশকাল ইউটিউব চ্যানেল সাবস্ক্রাইব করুন

মন্তব্য করুন

Epaper

সাপ্তাহিক সাম্প্রতিক দেশকাল ই-পেপার পড়তে ক্লিক করুন

Logo

ঠিকানা: ১০/২২ ইকবাল রোড, ব্লক এ, মোহাম্মদপুর, ঢাকা-১২০৭

© 2024 Shampratik Deshkal All Rights Reserved. Design & Developed By Root Soft Bangladesh

// //