পিরোজপুরে বাঙ্গির বাম্পার ফলনে খুশি চাষিরা

পিরোজপুরের স্থানীয় ভাষায় ফুট নামে সবাই চিনলেও স্থান ভেদে এর অপর নাম বাঙ্গি, খরমুজ, কাঁকুড় ইত্যাদি। নাম যাই হোক বাঙ্গি একটি স্বাস্থ্যকর ফল। পুষ্টিগুণে ভরপুর এবং অনেক উপকারী ফল এটি। ফুট বা বাঙ্গি এক রকমের শসা জাতীয় ফল। তবে বাঙ্গি শসার চেয়ে বেশ বড় হয়। কাঁচা বাঙ্গি সবুজ, পাকলে হলুদ রঙের হয়। এর বাইরের দিকটা মিষ্টি কুমড়ার মত হালকা ডোরাকাট খাঁজযুক্ত এবং ভেতরের দিকটা ফাকা।

পিরোজপুরের ইন্দুরকানীতে এবার ভাঙ্গির বাম্পার ফলন হয়েছে। আবহাওয়া অনুকূলে থাকায় ফলন ভালো হয়েছে বলে জানান কৃষকেরা। বাঙ্গি চাষ লাভজনক হওয়ায় কৃষকরা বাঙ্গি চাষে ঝুঁকছে। গত বছরের তুলনায় এবার এ উপজেলায় কৃষি বিভাগের তথ্য মতে ১৫ হেক্টর জমিতে বাঙ্গি চাষ বেশি হয়েছে। উপজেলার বালিপাড়া, ঢেপসাবুনিয়া, মাঝেরচর, পত্তাশী ও চরনী পত্তাশী গ্রামে দিগন্তজোড়া মাঠে শুধু সবুজ আর সবুজের সমারোহ। এই সবুজের মাঝে থরে থরে সাজানো আছে বড় বড় বাঙ্গি। দেখলে শুধু চোখ নয় মনও জুড়িয়ে যায়।

গতকাল শুক্রবার (২২ মার্চ) সকালে উপজেলার ঢেপসাবুনিয়া গ্রামে বাঙ্গি ক্ষেতে গিয়ে দেখা গেছে কৃষকের কর্মব্যস্ততা। কেহ বিক্রির জন্য ক্ষেত থেকে বাঙ্গি তুলছে। বাঙ্গি চাষি ইমাম হোসেন জানান, তিনি, বাহার ও নাসির মিলে এবার ২৪ বিঘা (৮ একর) জমিতে বাঙ্গি চাষ করেছেন। এতে তাদের ১ লাখ টাকার মত খরচ হয়েছে। গত বছর একই পরিমাণ জমির বাঙ্গি ৮ লাখ টাকায় বিক্রি করেছেন। এবার তারা ৮ হাজার গর্তে ৩২ হাজার (প্রতি গর্তে ৪টি) চারা লাগিয়েছেন। এক্ষেত্রে একটি গর্তে ৩টি করে বাঙ্গি হলেও ২৪ হাজার বাঙ্গি বিক্রির আশা করছেন তিনি। 

ইমাম হোসেন আরো বলেন, রমজানের কারণে বাঙ্গির দাম ভালো থাকায় এবার ১৫ লাখ টাকার বেশি বিক্রির আশা করছেন। বর্তমানে ক্ষেত থেকে প্রতিটি বাঙ্গি পাইকাররা গড়ে ৭৫ টাকা দরে কিনে নিয়েছেন। চাষি খোকন শিকদার জানান, আগে যে বাঙ্গি তারা ৪০ টাকা দরে বেচত এবার তা ৭০/৮০ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে। এভাবে দাম থাকলে ভালো লাভ হবে বলে জানান তিনি।

বগুড়া থেকে বাঙ্গি কিনতে আসা বেপারী আব্দুল লতিফ বলেন ইন্দুরকানী অঞ্চলের বাঙ্গি মানে ভালো। তাই তিনি এখানে বাঙ্গি কিনতে এসেছেন। লতিফ বেপারী জানান, তিনি কৃষকের ক্ষেত থেকে ৭৫/৮০ টাকা দরে প্রতিটি বাঙ্গি কিনেছেন। ক্ষেত থেকে এনে গাড়িতে উঠানো এবং গাড়ি ভাড়া দিয়ে ঢাকায় আড়ত পর্যন্ত পৌঁছাতে বাঙ্গি প্রতি আরো প্রায় ১৩/১৪ টাকা খরচ হবে। 

উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা কামরুন্নেছা সুমি বলেন, ইন্দুরকানী উপজেলার মাটি বাঙ্গি চাষের উপযোগী। উপজেলায় এ বছর ২০২৩-২৪  অর্থ বছরে ৬৫ হেক্টর জমিতে বাঙ্গি চাষ হয়েছে। গত বছর এখানে ৫০ হেক্টর জমিতে বাঙ্গি চাষ হলেও ফলন ভাল এবং লাভ বেশি হওয়ায় চাষিরা বাঙ্গি চাষের প্রতি আগ্রহী হয়ে উঠেছে। এ বছর আমাদেরর লক্ষ্যমাত্রা পূরণ হয়েছে। আগামীতে আরো বেশি পরিমাণ জমিতে বাঙ্গি চাষের আশা করছি।

এই কৃষি কর্মকর্তা আরো বলেন, বাঙ্গি অনেক রোগের উপকারী একটি ফল। বাঙ্গিতে প্রচুর ক্যালরি রয়েছে। এতে খাদ্য উপাদান হিসাবে ক্যালসিয়াম, ভিটামিন-এ, ম্যাগনেসিয়াম, পটাসিয়াম প্রচুর পরিমাণে আছে। তাই গ্রীষ্মকালে এবং ইফতারিতে বাঙ্গি স্বাস্থ্যের জন্য খুবই উপকারী। ডায়াবেটিস, উচ্চরক্তচাপ, অ্যাসিডিটি, আলসার, নিদ্রাহীনতা, ক্ষুধা মন্দাসহ অনেক রোগের প্রতিকার করে থাকে। বাঙ্গি দেহের ওজন কমাতে ও ত্বকের নানা রকমের সমস্যা দূর করতে সাহায্য করে। বাঙ্গি গর্ভবতী মহিলাদের জন্যও উপকারী বলেও জানান তিনি।

সাম্প্রতিক দেশকাল ইউটিউব চ্যানেল সাবস্ক্রাইব করুন

মন্তব্য করুন

Epaper

সাপ্তাহিক সাম্প্রতিক দেশকাল ই-পেপার পড়তে ক্লিক করুন

Logo

ঠিকানা: ১০/২২ ইকবাল রোড, ব্লক এ, মোহাম্মদপুর, ঢাকা-১২০৭

© 2024 Shampratik Deshkal All Rights Reserved. Design & Developed By Root Soft Bangladesh

// //