সামরাই খাল দখলমুক্ত করার আহবান পরিবেশবাদী সংগঠনের

কক্সবাজার শহরের উপকণ্ঠে পৌরসভার ৫ ও ৬ ওয়ার্ডে অবস্থিত ২০০ বছরের পুরনো চার কিলোমিটার শাখা নদী বা সামরাই খাল দখল, ভরাট আর দূষণে অস্তিত্ব হারাতে বসেছে।

চার কিলোমিটার এই খাল আর এস, বি এস সিটে প্রস্ত ছিল গড়ে ১২০ ফুট। এখন এ খালের ২ কিলোমিটার সম্পূর্ণভাবে বন্ধ করে তৈরি হয়েছে শত শত অবৈধ স্থাপনা। আর যে ২ কিলোমিটার খালের অস্তিত্ব এখনো দৃশ্যমান তা ৮/১০ ফুট। তাই বিশ্ব পানি দিবসে গতকাল ২২ মার্চ (শুক্রবার) খালের মল্লিক পাড়া পয়েন্টে ধরিত্রী রক্ষায় আমরা (ধরা) কক্সবাজার শাখা, ওয়াটার কিপার্স বাংলাদেশ ও নদী পরিব্রাজক দল আয়োজিত মানববন্ধন ও আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত হয়। ধরা কক্সবাজার শাখার আহবায়ক বীর মুক্তিযোদ্ধা ফজলুল কাদের চৌধুরীর সভাপতিত্বে আলোচনা সভা কক্সবাজার নদী পরিব্রাজক দলের সভাপতি শামসুল আলম শ্রাবণের সঞ্চালনায় আলোচনা সভায় অন্যান্যদের মধ্যে বক্তব্য রাখেন জেলা ধরার যুগ্ম আহবায়ক এইচএম ফরিদুল আলম শাহীন, তৌহিদ বেলাল, কক্সবাজার  সিভিল সোসাইটিস ফোরামের সহ-সভাপতি ইঞ্জিনিয়ার কানন পাল, বীর মুক্তিযোদ্ধা সমীরপাল, নদী পরিব্রাজক দলের কেন্দ্রীয় সদস্য আবুহেনা মোস্তফা কামাল ও জসিম উদ্দীন প্রমুখ।

বক্তারা বলেন, কক্সবাজার শহরের তীর ঘেঁষে বয়ে যাওয়া বাঁকখালী নদীর শাখা হচ্ছে এই মামরাই খাল।এই খালে মাছ শিকার ও সেচের পানি দিয়ে চাষ হতো বিশাল বিস্তীর্ণ জমি। এই খালের উপর  নির্ভর করে অন্তত ১০/১২ হাজার লোকের কর্মসংস্থান হতো। বহমান এই খালে চলাচল করতো দাঁড়ি ও ইঞ্জিন চালিত নৌকা। কালের বিবর্তনে অর্ধশতাধিক ভূমিগ্রাসী সামরাই খাল ভরাট করে ক্ষমতার দাপট দেখিয়ে শত শত অবৈধ স্থাপনা তৈরি করে ভোগদখল করছেন। খাল দখলকারীদের চিহ্নিত করে নদী পরিব্রাজকদল সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয় ও প্রধানমন্ত্রীর দপ্তরে ইতিপূর্বে একাধিক লিখিত অভিযোগ দায়েরের পরিপ্রেক্ষিতে অবৈধ দখলকারীদের তালিকাও তৈরি করা হয়েছে। শুধু তাই নয়,২০২০--২০২১ অর্থ বছরে কক্সবাজারে পৌরসভার মাধ্যমে উক্ত খাল খননের মাধ্যমে দখলদারদের উচ্ছেদ করে এই জীবন্ত খালের গতি ফেরাতে ২১ কোটি টাকা বরাদ্দ আসে। কিন্তু দখলদারদের বাধার মুখে খাল খনন করা সম্ভব হয়নি। ফলে টাকা ফেরত চলে যায় মন্ত্রণালয়ে।

বক্তারা আরো বলেন, দখলদার যতই শক্তিশালী হোক তাদের উচ্ছেদ করতে হবে। খাল খনন করে পূর্বের অবস্থানে ফিরিয়ে দিতে হবে। আজ কক্সবাজার পৌরসভারস্থ বিভিন্ন খাল নালা নর্দমা বন্ধ হওয়াতে ভূ-পৃষ্টের পানি অনেক নিচে নেমে গেছে। পানীয় জলের তীব্র সংকটের কারণে দেখা দিয়েছে চরম মানবিক বিপর্যয়। সুপেয় পানি সংকটে পড়েছে কক্সবাজার শহরের দুই লক্ষাধিক মানুষ। তাই এই সমস্যা থেকে উত্তরণের জন্য সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের জরুরি পদক্ষেপ চেয়েছেন পরিবেশবাদী সংগঠনের নেতারা।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে কক্সবাজার পৌরসভার ৫ নং ওয়ার্ডের কাউন্সিলর ওমর ছিদ্দিক লালু বলেন, সামরাই খাল দখল মুক্ত করে আগের অবস্থায় ফেরাতে পৌরসভা থেকে নতুন ভাবে প্রকল্প গ্রহণ করে মন্ত্রণালয়ে প্রেরণ করা হয়েছে। প্রকল্প অনুমোদন হলে খাল খনন প্রক্রিয়া শুরু করা হবে।

স্থানীয় সুনীল মল্লিক বলেন, এসএম পাড়া গোদারপাড়া, মল্লিক পাড়া চাঁদের পাড়া হয়ে নারিকেল বাগান পর্যন্ত এই খাল দখল, দূষণ ও ভরাট করে অবৈধ স্থাপনা নির্মাণ করেছেন অর্ধ সহস্রাধিক প্রভাবশালী, এর মধ্যে জনপ্রতিনিধি, রাজনৈতিক নেতা ও ব্যবসায়ী জড়িত। একাধিকবার খালের সীমানা নির্ধারণ করে লাল পতাকা পুতে দেওয়া হয়েছিল। শেষমেশ কাজের কাজ কিছুই হয়নি।

কক্সবাজার পৌরসভার নবনির্বাচিত মেয়র মাহবুবুর রহমান চৌধুরী বলেন, এবার আর ছাড় নেই। কারণ আমি নির্বাচনে দখলকৃত সমস্ত খাল, নালা, নর্দমা জলাশয় দখলমুক্ত করার অঙ্গীকার করেছি। তাই সামরাই খালসহ সকল জলাশয় অবমুক্ত করতে আবারো পৌরবাসীর সহযোগিতা চেয়েছেন মেয়র।

সাম্প্রতিক দেশকাল ইউটিউব চ্যানেল সাবস্ক্রাইব করুন

মন্তব্য করুন

Epaper

সাপ্তাহিক সাম্প্রতিক দেশকাল ই-পেপার পড়তে ক্লিক করুন

Logo

ঠিকানা: ১০/২২ ইকবাল রোড, ব্লক এ, মোহাম্মদপুর, ঢাকা-১২০৭

© 2024 Shampratik Deshkal All Rights Reserved. Design & Developed By Root Soft Bangladesh

// //