মানিকগঞ্জে রাতের আঁধারে বিলীন হচ্ছে ফসলি জমি

মানিকগঞ্জে ফসলি জমি থেকে অবৈধ মাটি বাণিজ্যে মেতেছে রাজনৈতিক পরিচয়ধারী ভূমিখেকো একটি চক্র। বিকেল থেকে ভোর পর্যন্ত বিরামহীন মাটি বাণিজ্য করছেন তারা। এতে ফসলি জমি অনাবাদী হওয়ার পাশাপাশি পার্শ্ববর্তী জমি মালিকদের মাঝে চরম ভাঙন আতঙ্ক বিরাজ করছে।

জানা গেছে, ঘিওর উপজেলার বানিয়াজুরি ইউনিয়নের মোড়াবাড়ি এলাকায় রাসেলের কৃষি জমিতে এ মাটি বাণিজ্য চলছে। মাটি খেকো চক্রটি প্রভাবশালী হওয়ায় ভয়ে প্রতিবাদের সাহস পাচ্ছে না এলাকাবাসী। সংশ্লিষ্টরাও ব্যবস্থা নিচ্ছে না বলে অভিযোগ তাদের। এর আগেও এ চক্রটিকে অবৈধ মাটি বাণিজ্যের অভিযোগে বালিয়াখোড়া ইউনিয়নের জোকার চক ও শিবালয় উপজেলার মোনাইলের চকে ভ্রাম্যমাণ আদালত জরিমানা করেছিল।

জেলা পরিষদের সদস্য ও জেলা স্বেচ্ছাসেবক লীগের সাধারণ সম্পাদক আবুল বাশারের তত্ত্বাবধানে রাথুরা গ্রামের তপু এ মাটির ব্যবসা পরিচালনা করছেন বলে তিনি স্বীকার করেছেন।

আজ বুধবার (২৭ মার্চ) সরেজমিনে দেখা যায়, ঢাকা-আরিচা মহাসড়কের মুন্নু গেট পার হওয়ার পর সালোয়া টেক্সটাইল গেটের ভেতর দিয়ে ফসলি জমির উপর দিয়ে মাটি বহনের রাস্তা বানানো হয়েছে। এর মাঝে রয়েছে গ্রামীণ সড়ক। মাঝখানে রাস্তা রেখে এপার ওপারে দশ চাকার ভারী ট্রাক চলাচল করায় রাস্তাটিও ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে উঠেছে। তার একটু সামনেই মোড়াবাড়ির চকে কয়েক শ ডিসিমেল কৃষি জমিতে এক্সকেভেটর (ভেকু) দিয়ে এক থেকে দেড় ফুট করে পার বাঁধা হয়েছে। এর ভেতরেই মাটিই বিক্রি করছে প্রভাবশালী চক্রটি।

ভূমিখেকো চক্রটির ভয়ে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক স্থানীয় একাধিক লোক বলেন, তারা অনেক প্রভাবশালী। তাদের হাত অনেক বড়। তাদের বিরুদ্ধে কথা বললে এলাকায় থাকা সম্ভব হবে না। সংশ্লিষ্টদের কাছে ফসলি জমি থেকে মাটি বিক্রি বন্ধ ও কৃষি জমি রক্ষার দাবি জানিয়েছেন তারা।

সালোয়া টেক্সটাইলের রেওয়ান বিশ্বাস বলেন, মাটি ব্যবসায়ী বাশার এ সাইট নিয়ন্ত্রণ করে, সে এসে আমাদের জমির উপর দিয়ে রাস্তা নেওয়ার বিষয়ে কথাবার্তা বলে গেছে।

তপুর কাছে মাটি বাণিজ্যের বিষয়ে জানতে চাইলে বাশারের নেতৃত্বে তার সংশ্লিষ্টতার কথা স্বীকার করেন তিনি। ইফতার করে বানিয়াজুরির অফিসে আসার প্রস্তাব দেন।

জেলা স্বেচ্ছাসেবক লীগের সাধারণ সম্পাদক ও জেলা পরিষদের সদস্য মাটি ব্যবসায়ী আবুল বাশারের বক্তব্য চেয়ে যোগাযোগ করা হলেও তার বক্তব্য পাওয়া যায়নি।

বানিয়াজুরি ইউপি চেয়ারম্যান এস আর আনসারী বিল্টু বলেন, আমি মাটি বাণিজ্যের বিপক্ষে। চক্রটি ফসলি জমির মাটি বিক্রি করছে। এটা বন্ধে প্রশাসনের হস্তক্ষেপ কামনা করছি।

এ বিষয়ে বানিয়াজুরি ইউনিয়ন ভূমি সহকারী কর্মকর্তা (নায়েব) মনির হোসেন বলেন, মোড়াবাড়ি এলাকার অবৈধ মাটি বাণিজ্যের বিষয়টি আমি এসিল্যান্ড স্যারকে জানিয়েছি।

ঘিওর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) সুকুমার বিশ্বাস বলেন, বিষয়টি জানা নেই। কারা এ অবৈধ মাটি বাণিজ্য করে তাদের নাম ঠিকানা দেন, ব্যবস্থা নিচ্ছি।

এ বিষয়ে ঘিওর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) আমিনুল ইসলাম বলেন, মাটি ব্যবসায়ীরা চোর, তারা রাতের আধারে চুরি করে। দুই একদিনের মধ্যে ওখানে অভিযান পরিচালনা করা হবে।

সাম্প্রতিক দেশকাল ইউটিউব চ্যানেল সাবস্ক্রাইব করুন

মন্তব্য করুন

Epaper

সাপ্তাহিক সাম্প্রতিক দেশকাল ই-পেপার পড়তে ক্লিক করুন

Logo

ঠিকানা: ১০/২২ ইকবাল রোড, ব্লক এ, মোহাম্মদপুর, ঢাকা-১২০৭

© 2024 Shampratik Deshkal All Rights Reserved. Design & Developed By Root Soft Bangladesh

// //