মুক্তিযোদ্ধার গ্রন্থশালা জ্ঞানের আলো ছড়াচ্ছে কয়েক গ্রাম

মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে দায়িত্ব মুক্তিযুদ্ধের সঠিক ইতিহাস তুলে ধরা। সরকারী চাকুরি থেকে অবসর নিয়ে দেশ স্বাধীন তথা মুক্তিযুদ্ধের সঠিক ইতিহাস জানান দিতেই প্রতিষ্ঠা করেছেন গ্রন্থাগার। সেই গ্রন্থাগারে রয়েছে বঙ্গবন্ধু ও মুক্তিযুদ্ধ কর্নার। যেখানে দেড় হাজারেরও বেশি বইয়ের মধ্যে ৩ শতাধিক বই রয়েছে মুক্তিযুদ্ধ ও মুক্তিযোদ্ধার ইতিহাসের।

এছাড়াও কুরআন-হাদিসের অনুবাদসহ ধর্মীয়, সামাজিক, বিভিন্ন বিখ্যাত মানসিক ব্যক্তিদের রচিত বই রয়েছে। যা রাজাপুর উপজেলার প্রত্যন্ত গ্রাম নিজ গালুয়া এলাকায় জনসাধারণের মাঝে মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাসসহ জ্ঞানের আলো ছড়িয়ে দিচ্ছেন সাবেক পুলিশ কর্মকর্তা মনোয়ার হোসেন।

তিনি ১৯৭১ সালে খুলনা কমার্স কলেজে এইচএসসি পড়াশুনা অবস্থায় দেশমাতৃকার টানে বঙ্গবন্ধুর ডাকে ঝাঁপিয়ে পড়েন মুক্তিযুদ্ধে। দেশ স্বাধীনের পরে উচ্চমাধ্যমিক উত্তীর্ণ হয়ে ১৯৭২ সালে পুলিশের উপ-পরিদর্শক পদে যোগ দেন। পদোন্নতিপ্রাপ্ত হয়ে পুলিশ পরিদর্শক (ওসি) পদে দায়িত্ব পালন করতে শুরু করেন। ২২ বছর ওসির দায়িত্ব পালন শেষে ২০০৫ সালের ৩১ জুন অবসর গ্রহণ করেন।

অবসরকালীন সময়ে মুক্তিযুদ্ধের সঠিক ইতিহাস ছড়িয়ে দিতে ২০০৭ সালের এপ্রিল মাসে পিতার নামে গড়ে তোলেন মাস্টার জহির উদ্দিন স্মৃতি পাঠাগার। সেখানে বর্তমানে দেড় হাজারেরও বেশি বিভিন্ন বই রয়েছে। যার মধ্যে উল্লেখযোগ্য সংখ্যক বই রয়েছে মুক্তিযুদ্ধভিত্তিক বিভিন্ন ইতিহাস সম্বলিত।

মনোয়ার হোসেন জানান, পাঠাগারে রয়েছে বঙ্গবন্ধুর লেখা চিঠি। এগুলোর মধ্যে তার কন্যা শেখ হাসিনা, স্ত্রী ফজিলাতুন্নেছা মুজিব, জননেতা মাওলানা ভাসানীসহ জনতার উদ্দেশে লেখা চিঠি উল্লেখযোগ্য। স্থানীয় বিভিন্ন বধ্যভূমির আলোকচিত্র, বঙ্গবন্ধুর অ্যালবাম, বিভিন্ন জেলার মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস, বরেণ্য গবেষকদের লেখা ইতিহাসগ্রন্থ, এনসাইক্লোপিডিয়া, উইকিপিডিয়া, বাংলাপিডিয়া, ফোকলোর গ্রন্থসহ অসংখ্য দুঃপ্রাপ্য দেড় হাজারের বেশি বইয়ের সংগ্রহ। রয়েছে ভাষা আন্দোলনের, মুক্তিযুদ্ধ ও বিভিন্ন গণতান্ত্রিক আন্দোলনে অংশগ্রহণকারী সন্তানদের আলোকচিত্র ও পরিচিতি। সব মিলিয়ে ঝালকাঠি জেলায় বেসরকারী গ্রন্থাগারের জরীপ ও প্রতিযোগিতায় জেলায় একাধিকবার প্রথম স্থান অধিকার করেছি।

এলাকাবাসী সংগ্রহশালাটি পরিদর্শন করে জানান, ‘মুগ্ধ ও অনুপ্রাণিত হলাম। জাতীয় ইতিহাসের সঙ্গে স্থানীয় গৌরবময় ইতিহাস যুক্ত করে এক মালায় গেঁথে যে উপস্থাপনা, তা নতুন প্রজন্মকে উদ্বুদ্ধ করবে। এখানেই আমাদের আশার জায়গা। এই কাজের যারা কাণ্ডারি, তাদের জানাই অভিবাদন।’

মনোয়ার হোসেন বলেন, ‘গ্রন্থাগারে ২০টি চেয়ার রয়েছে বসে পড়ার জন্য। পাশেই প্রাইমারী এবং হাইস্কুল আছে। আমরা শিক্ষার্থীদের উদ্বুদ্ধ করছি। তারা যেন গ্রন্থাগারে এসে সময় কাটায়। বীর মুক্তিযোদ্ধা ও শহীদদের নিদর্শন, প্রকাশনা, চিঠি ও বধ্যভূমির মাটি সংগ্রহসহ আরো নানা উপাদানে গ্রন্থাগারটি সমৃদ্ধ করার ইচ্ছে আছে।’

স্থানীয় সুধীজনের আশা, মাস্টার জহিরউদ্দিন স্মৃতি পাঠাগার দিনে দিনে এই অঞ্চলের ইতিহাস, ঐতিহ্য ও সংস্কৃতি নিয়ে গবেষণা ও তথ্য সংগ্রহের কেন্দ্র হয়ে উঠবে।

ঝালকাঠি জেলা সরকারী গ্রন্থাগারের লাইব্রেরিয়ান শেখ রুবেল জানান, রাজাপুর উপজেলার নিজ গালুয়া গ্রামে মাস্টার জহির উদ্দিন স্মৃতি পাঠাগার স্থাপন করেছেন বীর মুক্তিযোদ্ধা মনোয়ার হোসেন। তিনি পুলিশেরও একজন কর্মকর্তা ছিলেন। আমি তার পাঠাগার পরিদর্শন করেছি। অত্যন্ত মনোমুগ্ধকর পরিবেশে রয়েছে। দেখে মুগ্ধ ও অনুপ্রাণিত হলাম। জাতীয় ইতিহাসের সঙ্গে স্থানীয় গৌরবময় ইতিহাস যুক্ত করে এক মালায় গেঁথে যে উপস্থাপনা, তা নতুন প্রজন্মকে উদ্বুদ্ধ করবে। এখানেই আমাদের আশার জায়গা। এই কাজের যারা কাণ্ডারি, তাদের জানাই অভিবাদন।

সাম্প্রতিক দেশকাল ইউটিউব চ্যানেল সাবস্ক্রাইব করুন

মন্তব্য করুন

Epaper

সাপ্তাহিক সাম্প্রতিক দেশকাল ই-পেপার পড়তে ক্লিক করুন

Logo

ঠিকানা: ১০/২২ ইকবাল রোড, ব্লক এ, মোহাম্মদপুর, ঢাকা-১২০৭

© 2024 Shampratik Deshkal All Rights Reserved. Design & Developed By Root Soft Bangladesh

// //