নেত্রকোণায় ২ শিক্ষককে অপহরণের অভিযোগে মামলা

নেত্রকোণা জেলার আটপাড়া উপজেলার একটি মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের ম্যানেজিং কমিটির সভাপতি নির্বাচন বাধাগ্রস্ত করতে দুই শিক্ষককে অপহরণ করার অভিযোগ উঠেছে।

অপহরণকৃতরা হলেন- আটপাড়া উপজেলার খিলা উচ্চ বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক ইমন চন্দ্র পাল ও শাকিল আহমেদ। তারা দুজনই ম্যানেজিং কমিটির নির্বাচনের ভোটার (টিআর) সদস্য।

এ ঘটনায় আজ বৃহস্পতিবার (৪ এপ্রিল) খিলা উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক খায়রুল আলম বাদী হয়ে জেলার আটপাড়া উপজেলার খিলা গ্রামের মৃত আব্দুল রউফের ছেলে তানভীর আহমেদ, মৃত আব্দুল মালেকের ছেলে মঞ্জরুল হক, মৃত আব্দুল হক মেম্বারের ছেলে সোহেল মিয়া, পিয়াজকান্দি গ্রামের আবুল হাসেমের ছেলে দেলোয়ার হোসেন সহ অজ্ঞাত ১০-১২ জনের নামে নেত্রকোণা জেলার বারহাট্টা থানায় মামলা দায়ের করেছেন।

স্থানীয় একাধিক বাসিন্দা জানান, স্কুলের ম্যানেজিং কমিটির সভাপতি প্রার্থী সাবেক ছাত্রলীগ নেতা তানভীর আহমেদের বিরুদ্ধে ওই শিক্ষকদের অপহরণ করে নির্বাচন বাধাগ্রস্ত করার অভিযোগ উঠেছে। অপহরণকালে তার সাথে নির্বাচিত দুই অভিভাবক সদস্য সোহেল মিয়া ও মঞ্জুরুল হক ছিলেন বলেও জানা গেছে। তবে তানভীর আহমেদ তার বিরুদ্ধে উঠা অভিযোগ অস্বীকার করেছেন। গত বুধবার বেলা সাড়ে ১১টার দিকে উপজেলার নারাচালত এলাকায় তাদের অপহরণ করা হয়।

এদিন বেলা ১২টায় খিলা উচ্চ বিদ্যালয়ে সভাপতি নির্বাচনে সভা হওয়ার সময় নির্ধারণ করা ছিল। সভার আগে বেলা সাড়ে ১১টার দিকে নেত্রকোণা জেলা শহর থেকে স্কুলে যাওয়ার পথে উপজেলার নারাচালত এলাকায় ওই দুই শিক্ষককে তুলে নিয়ে যাওয়া হয়। এতে তারা উপস্থিত না হতে পারায় সভা পণ্ড হয়ে যায়।

অপহৃত শিক্ষক ইমন চন্দ্র পাল জানান, স্কুলের সভায় আসার জন্য আমরা চারজন শিক্ষক নেত্রকোণা জেলা শহর থেকে সিএনজি যোগে রওনা হই। বেলা সাড়ে ১১টার দিকে উপজেলার নারাচাতল এলাকায় পৌঁছলে ৪-৫টি মোটরসাইকেলে করে তানভীর আহমেদ, অভিভাবক সদস্য সোহেল মিয়া ও মঞ্জুরুল হকসহ ১২-১৪ জন আমাদের পথরোধ করে। এক পর্যায়ে সিএনজি থেকে আমরা ভোটার দুইজন শিক্ষককে টেনে-হিঁচড়ে তুলে নিয়ে যায়। এতে শিক্ষক শাকিল আহমেদের পা ভেঙে যায়। তারা আমাদের নানান ভয় ভীতি দেখিয়ে আটপাড়া শহরের কাছে একটি আশ্রয়ণ প্রকল্পের ঘরে আটকে রাখে। পরে বিকাল তিনটার দিকে জেলা শহরের কাছে নিয়ে ছেড়ে দেয়।

প্রত্যক্ষদর্শী খিলা উচ্চ বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক আনিছুর রহমান জানান, ওই সিনজিতে আমিও ছিলাম। পথরোধ করে ভোটার দুইজন শিক্ষককে টেনে-হিঁচড়ে নিয়ে যায়।

বিদ্যালয় সূত্রে জানা গেছে, খিলা উচ্চ বিদ্যালয়ে দুই বছর মেয়াদী ম্যানেজিং কমিটি গঠনের লক্ষে গত পহেলা এপ্রিল চারজন পুরুষ অভিভাবক সদস্য নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। এছাড়া একজন সংরক্ষিত মহিলা সদস্য, একজন দাতা সদস্য ও দুইজন শিক্ষক সদস্যসহ মোট ৮ সদস্য নির্বাচিত হয়। তারা মিলে সভাপতি নির্বাচিত করবেন। বুধবার (৩ এপ্রিল) সভা করে সভাপতি নির্বাচিত করার সিদ্ধান্ত হয়। তবে কমিটির অধিকাংশ সদস্য অনুপস্থিত থাকায় কোরাম সংকট দেখা দেয়। পরে উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) নিলুফার ইয়াসমিন নিপা গিয়ে সভা স্থগিত করেন। 

এ বিষয়ে বিদ্যালয়ের সভাপতি আবু সাইদ জানান, দুই শিক্ষককে অপহরণ করা হয়েছে বলে জেনেছি। এটা খুবই দুঃখজনক। তারা উপস্থিত না হতে পারায় কোরাম পূর্ণ হয়নি। ফলে আর সভাপতি নির্বাচন হয়নি।

খিলা উচ্চ বিদ্যালয়ের সামনে থাকা সার-বীজ ব্যবসায়ী ও বিদ্যালয়ের জমি দাতা অলি মিয়া জানান, আবু সাঈদ দীর্ঘদিন ধরে বিদ্যালয়ের সভাপতি পদে আছেন। তিনি খুবই সৎ ও ভালো মানুষ। বিদ্যালয়ের অনেক উন্নয়ন তার হাত ধরে হয়েছে। শিক্ষক-শিক্ষার্থীর ভালো-মন্দ বিপদে-আপদে তিনি পাশে থাকেন। এলাকাবাসী, অভিভাবক ও শিক্ষকরা তাকে পছন্দ করেন। ওই শিক্ষকরা তাকে সমর্থন দিবেন এই ধারণা থেকেই তানভীর আহমেদ তাদের অপহরণ করেছেন বলে জেনেছি। একই কথা বলেন খিলা গ্রামের আল মামুন। 

অভিযোগের বিষয়ে জানতে চাইলে তানভীর আহমেদ উল্টো প্রশ্ন ছুঁড়ে বলেন, এই যুগে কি দিনদুপুরে এভাবে অপহরণ সম্ভব? এসব অভিযোগ মিথ্যা ও হাস্যকর! এক সময় উপজেলা ছাত্রলীগের নেতৃত্বে ছিলাম। এখন ঠিকাদারি করি। সারাদিন এলজিইডি অফিসে কাজের বিলের কাগজপত্র নিয়ে ব্যস্ত ছিলাম। অপহরণের বিষয়ে কিছুই আমার জানা নেই।

তবে অভিযুক্ত দুই অভিভাবক সদস্যর সাথে যোগাযোগের চেষ্টা করেও তাদের বক্তব্য পাওয়া যায়নি।

এ বিষয়ে উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) নিলুফার ইয়াসমিন নিপা জানান, গত বুধবার বেলা ১২টায় সভা হওয়ার কথা ছিল। কিন্তু ১টা পর্যন্ত অধিকাংশ সদস্য অনুপস্থিত থাকায় সভা স্থগিত করা হয়। এক সপ্তাহের মধ্য নতুন করে সভার তারিখ নির্ধারণ করা হবে।

এ ব্যাপারে জানতে চাইলে নেত্রকোণা জেলার বারহাট্টা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মুহাম্মদ রফিকুল ইসলাম জানান, জেলার আটপাড়া থানাধীন খিলা উচ্চ বিদ্যালয়ের সভাপতি নির্বাচন নিয়ে অপহরণের ঘটনায় বারহাট্টা থানায় মামলা দায়ের করেছেন খিলা উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক খায়রুল আলম। পুলিশের তদন্ত চলছে। 

তিনি আরো জানান, ঘটনাস্থল বারহাট্টা উপজেলার সীমানায় হওয়ায় বারহাট্টা থানায় মামলা করা হয়।

সাম্প্রতিক দেশকাল ইউটিউব চ্যানেল সাবস্ক্রাইব করুন

মন্তব্য করুন

Epaper

সাপ্তাহিক সাম্প্রতিক দেশকাল ই-পেপার পড়তে ক্লিক করুন

Logo

ঠিকানা: ১০/২২ ইকবাল রোড, ব্লক এ, মোহাম্মদপুর, ঢাকা-১২০৭

© 2024 Shampratik Deshkal All Rights Reserved. Design & Developed By Root Soft Bangladesh

// //