কালবৈশাখীতে ৭ জেলায় ১০ জনের মৃত্যু

কালবৈশাখী ঝড় ও বজ্রপাতে ৭ জেলায় অন্তত ১০ জন নিহত ও দুজন নিখোঁজ হয়েছেন। এর মধ্যে পটুয়াখালীর বাউফলে দুইজন, ঝালকাঠিতে তিনজন, বাগেরহাটে একজন, পিরোজপুরে একজন, নেত্রকোণায় একজন, খুলনায় একজন ও রাঙ্গামাটিতে একজনের মৃত্যু হয়েছে। এছাড়া বাউফলে নিখোঁজ রয়েছেন দুইজন।

পটুয়াখালীর বাউফল
পটুয়াখালীর বাউফলে কালবৈশাখী ঝড়ে দুজনের মৃত্যু হয়েছে। এছাড়াও তেতুলিয়া নদীতে নিখোঁজ রয়েছে দুই জেলে। বিধ্বস্ত হয়েছে শতাধিক ঘরবাড়ি। বজ্রপাতে ১০টি গরুও মারা গেছে। গাছপালা উপড়ে বিভিন্ন এলাকা বিদ্যুৎ বিচ্ছিন্ন রয়েছে।

বাউফলের নাজিরপুর গ্রামের জহির সিকদারের কিশোর ছেলে মোহাম্মদ রাতুল শিকদার (১৫) বজ্রপাতে এবং দাসপাড়া ইউনিয়নের চর আলগি এলাকার বৃদ্ধ সাফিয়া বেগম (৮০) গাছ চাপা পড়ে মারা যান।

বাউফল উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মো. বশির গাজী বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।

তিনি জানান, তেতুলিয়া নদীতে ইব্রাহিম ফরাজী (৪৩) ও ইসমাইল রাঢ়ী (৪০) নিখোঁজ হয়েছেন। তারা দুজনেই চন্দ্রদীপ ইউনিয়নের চর ওয়াডেলের বাসিন্দা।

তিনি আরো জানান, ঝড়ে বাউফলে শতাধিক ঘরবাড়ি বিধ্বস্ত হয়েছে। ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ নিরুপনের কাজ চলছে।

ঝালকাঠিতে বজ্রপাতে নিহত ৩
ঝালকাঠিতে রবিবার সকালে বজ্রপাতে এক স্কুলছাত্রীসহ তিন নারী নিহত হয়েছেন। নিহতরা হলেন- ঝালকাঠির কাঁঠালিয়া উপজেলার উত্তর তালগাছিয়া গ্রামের হেলেনা বেগম (৪০), শেখেরহাট গ্রামের মিনারা বেগম (৩৫) এবং পোনাবালিয়া গ্রামের মাহিয়া আক্তার এসানা (১১)।

বিষয়টি নিশ্চিত করে ঝালকাঠির পুলিশ সুপার আফরুজুল হক টুটুল জানান, গবাদি পশু ফিরিয়ে আনতে মাঠে যাওয়ার সময় বজ্রপাতে তারা মারা যান।

বাগেরহাটে একজনের মৃত্যু
বাগেরহাটে কালবৈশাখী ঝড়ে ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। ঝড়ের সময় গরু আনতে গিয়ে বজ্রপাতে কচুয়া উপজেলা চরসোনাকুড় গ্রামে একজনের মৃত্যু হয়েছে। এছাড়া বাগেরহাট শহরের বাসস্ট্যান্ড এলাকায় বিলবোর্ড ভেঙে যাত্রীবাহী বাসের চালকসহ তিনজন গুরুতর আহত হয়েছেন।

আজ সকাল সাড়ে ৯টার দিকে ঝড়ে শরণখোলা, মোড়েলগঞ্জ, রামপাল, কচুয়া ও বাগেরহাট সদর উপজেলায় বহু গাছ উপড়ে গেছে। সেই সঙ্গে বিধ্বস্ত হয়েছে কয়েকশ কাঁচা ও আধা পাকা বাড়ি। ঝড়ে গাছ পড়ে ও বিদ্যুতের খুঁটি উপড়ে পুরো জেলা বিদ্যুৎ বিচ্ছিন্ন হয়ে গেছে।

বাগেরহাট জেলা প্রশাসক মো. খালিদ হোসেন বলেন, কালবৈশাখী ঝড়ে জেলা সদরসহ অন্যান্য উপজেলাগুলোতে গাছপালা উপড়ে পড়ার পাশাপাশি কিছু বাড়িঘর বিধ্বস্ত হয়েছে। উপজেলার নির্বাহী কর্মকর্তাদের ক্ষয়ক্ষতি নিরুপনের জন্য নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে তিন মেট্রিক টন চাল বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে।

পিরোজপুরে ঝড়ে একজনের মৃত্যু
পিরোজপুরে আকস্মিক ঝড়ে এক নারী নিহত ও বেশ কয়েকজন শিশুসহ ১৪ জন আহত হয়েছেন। আজ সকালে পিরোজপুর সদর উপজেলায় কালবৈশাখী আঘাত হানে।

নিহত রুবি বেগম (২২) উপজেলার দক্ষিণ মারিচল গ্রামের মিরাজ সরদারের স্ত্রী। মাত্র ১৫ মিনিট স্থায়ী এই ঝড়ে প্রায় একশ ঘরবাড়ি ও কয়েক হাজার গাছপালা উপড়ে গেছে।

খুলনায় নিহত ১
খুলনায় বজ্রপাতে এক যুব‌কের মৃত্যু হয়েছে। মারা যাওয়া ওবায়দুল্লাহ গাজীর (৩৫) বাড়ি ডুমু‌রিয়া উপজেলার কোমলপুর গ্রামে।

গুটুদিয়া ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান শেখ তুহিনুল ইসলাম তুহিন বলেন, সকাল সাড়ে নয়টার দিকে বজ্রপাতের সময় ওবায়দুল তার ঘরে ছিলেন। ঘরের চাল ভেদ করে বজ্রপাতের আঘাতে তিনি ঘটনাস্থলেই মারা যান। এসময় তার একটি গরুও মারা যায়।

রাঙ্গামাটিতে বজ্রপাতে একজনের মৃত্যু
রাঙ্গামাটির রাজস্থলী উপজেলায় বজ্রপাতে সাজেউ খিয়াং (৪৮) নামে একজন মারা গেছেন। আজ রবিবার (৭ এপ্রিল) বিকালে এ ঘটনা ঘটেছে।

জানা গেছে, সাজেউ খিয়াং রাজস্থলী উপজেলার ১ নম্বর ঘিলাছড়ি ইউনিয়নের ধনুছড়ি পাড়া গ্রামের অংসাউ খিয়াংয়ের ছেলে।

স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, রবিবার বিকালে বাড়ির সামনে কাজ করার সময় বজ্রপাতসহ বৃষ্টি শুরু হয়। এসময় সাজেউ নিজ ঘরে চলে আসেন। পরে বিকাল ৩টার দিকে বজ্রপাতে বাসার ভিতরে তার মৃত্যু হয়। রাজস্থলী থানার ওসি ইকবাল হোসেন মৃত্যুর বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।

নেত্রকোণায় বজ্রপাতে কৃষকের মৃত্যু
নেত্রকোণার খালিয়াজুরী উপজেলায় হাওরে কাজ করার সময় বজ্রপাতে এক কৃষকের মৃত্যু হয়েছে। আজ রবিবার দুপুর পৌনে ১২টার দিকে উপজেলার রাজঘাট হাওরে এ ঘটনা ঘটে। 

নিহত কৃষক শহীদ মিয়া (৫২) উপজেলার মেন্দীপুর ইউনিয়নের জগন্নাথপুর গ্রামের কফিল উদ্দিনের ছেলে। 

নিহতের ভাই স্থানীয় ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক রেজাউল করিম জানান, সকালে বাড়ি থেকে বের হয়ে গ্রামের সামনে রাজঘাট হাওরে মরিচখেত পরিচর্চার কাজ করছিলেন শহীদ মিয়া। দুপুর পৌনে ১২টার দিকে হঠাৎ বজ্রসহ বৃষ্টি শুরু হয়। এ সময় শহীদ মিয়ার ওপর বজ্রপাত পড়ে তিনি ঘটনাস্থলে মারা যান। 

খালিয়াজুরী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) খোকন কুমার সাহা জানান, এ ঘটনায় নিহত শহীদ মিয়ার পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে কথা বলে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।