চুয়াডাঙ্গা সদর হাসপাতালে জনবল সঙ্কটে স্বাস্থ্য সেবা ব্যাহত

চুয়াডাঙ্গায় প্রচণ্ড তাপপ্রবাহের কারণে হাসপাতালে রোগীর সংখ্যা বেড়েই চলেছে। প্রচণ্ড গরম আবহাওয়ায় ডায়রিয়া, পেটের পীড়া, ঠান্ডা, জ্বর-কাশি, নিউমোনিয়া, শ্বাসকষ্ট, পানিশূন্যতাসহ বিভিন্ন রোগে আক্রান্ত হয়ে সদর হাসপাতালে চিকিৎসা নিতে আসছেন রোগীরা। হাসপাতাল ১০০ শয্যার হলেও চিকিৎসা নিতে ভর্তি হচ্ছেন ৩ থেকে ৪ গুণ রোগী। জনবল সঙ্কটের কারণে স্বাস্থ্য সেবা থেকে বঞ্চিত হচ্ছে রোগীরা, বরাদ্দ না থাকায় ভাগ করে দিতে হচ্ছে খাবার।

চুয়াডাঙ্গা সদর হাসপাতালের দাপ্তরিক সূত্রে জানা যায়, গত ৬দিনে ১০০ শয্যার বিপরীতে ২ হাজার ৩২৬ জন রোগী হাসপাতালে ভর্তি হয়েছে এবং আছে। গত বৃহস্পতিবার (১৮ এপ্রিল) হাসপাতালে ভর্তি ছিল ৩৪৭ জন রোগী, এর মধ্যে ৫ শয্যার ডায়রিয়া ওয়ার্ডে ৫৮ জন ও ২৫ শয্যার শিশু ওয়ার্ডে ৫২ জন রোগী ভর্তি ছিল। শুক্রবার (১৯ এপ্রিল) হাসপাতালে ভর্তি ছিল ৩৬১ জন রোগী, এর মধ্যে একই শয্যার ডায়রিয়া ওয়ার্ডে ৫৭ জন ও শিশু ওয়ার্ডে ৪৪ জন রোগী ভর্তি ছিল। শনিবার (২০ এপ্রিল) হাসপাতালে ভর্তি ছিল ৩৮২ জন, এর মধ্যে একই শয্যার ডায়রিয়া ওয়ার্ডে ৭৫ জন ও শিশু ওয়ার্ডে ৫১ জন রোগী ভর্তি ছিল। রবিবার (২১ এপ্রিল) হাসপাতালে ভর্তি ছিল ৪১৪ জন রোগী, এর মধ্যে একই শয্যার ডায়রিয়া ওয়ার্ডে ৮৪ জন ও শিশু ওয়ার্ডে ৬২ জন রোগী ভর্তি ছিল। সোমবার (২২ এপ্রিল) হাসপাতালে ভর্তি ছিল ৪১৯ জন, এর মধ্যে একই শয্যায় ডায়রিয়া ওয়ার্ডে ৯৩ জন ও শিশু ওয়ার্ডে ৫৬ জন রোগী ভর্তি ছিল। মঙ্গলবার (২৩ এপ্রিল) হাসপাতালে ভর্তি ছিল ৪০৩ জন, এর মধ্যে একই শয্যার ডায়রিয়া ওয়ার্ডে ৯১ জন ও শিশু ওয়ার্ডে ৬০ জন রোগী ভর্তি ছিল। হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ দাবি করছে তাপপ্রবাহে রোগীর সংখ্যা বাড়লেও পর্যাপ্ত মজুদ থাকায় তাদেরকে হাসপাতাল থেকেই ওষুধ সরবরাহ করা হচ্ছে। তবে ১০০ শয্যার হাসপাতাল হওয়ায় এর অধিক ভর্তি রোগীদের খাদ্য চাহিদা মেটানো যাচ্ছেনা। ১০০ শয্যার জন্য তৈরি করা খাবার ওয়ার্ডের রোগীদের মধ্যে ভাগাভাগি করে দেওয়া হচ্ছে।

চুয়াডাঙ্গার দর্শনা শ্যামপুর থেকে আসা ২৯ দিন বয়সের মুরসালিনের বাবা মাসুদ রানা বলেন, গরমের কারণে আমার সন্তান বমি করছে। চারদিন আগে আমি চুয়াডাঙ্গা সদর হাসপাতালে ছেলেকে ভর্তি করেছি। এখনো স্যালাইন চলছে। কোন কাজ হয়নি। সন্তানকে ডাক্তারের চেম্বারে নিয়ে গিয়ে দেখিয়েছি। এখন কিছুটা ভালো।

চুয়াডাঙ্গা আলমডাঙ্গা উপজেলার চিলাভালকি গ্রামের নয় মাস বয়সী ওসমানের বাবা খন্দকার সাইদুর জানান, সন্তানকে ডায়রিয়া জন্য হাসপাতালে ভর্তি করিয়েছি। ক’দিন খুব খারাপ ছিল বর্তমানে ভালো আছে।

চুয়াডাঙ্গার দর্শনা শ্যাপুরের বাসিন্দা চার দিন বয়সী ফারজানার মা ফিরোজা বলেন, জ্বর কাশির কারণে বাচ্চাকে ভর্তি করিয়েছিলাম। এখন ভালো আছে। খুব গরমে এমন হয়েছে।

চুয়াডাঙ্গা শহরতলী দৌলাতদিয়াড় গ্রামের ১৯ মাস বয়সী আরিয়ান ইসলামের বাবা জনি ইসলাম জানান, প্রচণ্ড গরমে রাতে ছেলে অসুস্থ হয়ে পড়ায় তাকে ভর্তি করিয়েছি। এখন একটু ভালো আছে। তবে স্যালাইন চলছে।

চুয়াডাঙ্গা সদর হাসপাতালের জ্যেষ্ঠ শিশু বিশেষজ্ঞ ডা. আসাদুর রহমান মালিক বলেন, চুয়াডাঙ্গায় চরম ভাবাপন্ন আবহাওয়া বিরাজ করছে। সে কারণে ছোট বড় সকলেই অসুস্থ হচ্ছে। শিশুরা একটু বেশি অসুস্থ হচ্ছে। শিশুরা জ্বর,কাশি ও ডায়রিয়ায় আক্রান্ত হচ্ছে। শিশুদের পরনে বেশি কাপড় রাখা যাবেনা। তাদের ঢিলেঢালা পোশাক পরাতে হবে। শিশুদের পর্যাপ্ত পানি খাওয়াতে হবে। ছয় মাস বয়সের নিচে শিশুদের মায়ের দুধ খাওয়াতে হবে। ছয় মাসের অধিক বয়সের শিশুদের মায়ের দুধের পাশাপাশি বাড়তি খাবার খাওয়াতে হবে। শিশুদের জ্বর হচ্ছে সে কারণে তাদের খোলামেলা ও পাখার নিচে রাখতে হবে।

চুয়াডাঙ্গা সদর হাসপাতালের আবাসিক মেডিকেল অফিসার ডা. উম্মে ফারহানা জানান, ১০০ শয্যার হাসপাতাল হলেও জনবল আছে ৫০ শয্যার। এখানে শয্যার বিপরীতে ৩-৪ গুণ বেশি রোগী সব সময় চিকিৎসার জন্য ভর্তি হচ্ছে। তবে অতিরিক্ত গরমের কারণে কয়েক দিনের ব্যবধানে রোগী বেড়ে গেছে। বিশেষ করে ডায়রিয়া ও শিশু ওয়ার্ডে রোগীর সংখ্যা অতিরিক্ত বৃদ্ধি পেয়েছে। হাসপাতালে যে পরিমাণ জনবল আছে, সেটা দিয়েই আমরা রোগীদের সেবা দিয়ে যাচ্ছি। এখানে জনবল যদি আরো বাড়ানো যেত তাহলে সুবিধা হতো। হাসপাতালে পর্যাপ্ত পরিমাণ স্যালাইন ও ওষুধ আছে। রোগীদের সেগুলো সরবরাহ করা হচ্ছে।

সাম্প্রতিক দেশকাল ইউটিউব চ্যানেল সাবস্ক্রাইব করুন

মন্তব্য করুন

Epaper

সাপ্তাহিক সাম্প্রতিক দেশকাল ই-পেপার পড়তে ক্লিক করুন

Logo

ঠিকানা: ১০/২২ ইকবাল রোড, ব্লক এ, মোহাম্মদপুর, ঢাকা-১২০৭

© 2024 Shampratik Deshkal All Rights Reserved. Design & Developed By Root Soft Bangladesh

// //