গারো পাহাড়ের চরণতলার মেলা

পূজা অর্চনা, পাঠা বলি, জমজমাট নানাসব খেলনা, আর বাহারি দোকানের পসরার সমাহারের মধ্যে দিয়ে শেরপুরের সীমান্তবর্তী গারো পাহাড় এলাকার ঐতিহ্যবাহী চরণতলার একরাত্রি-একদিনের কালী পূজা এবং মেলা অনুষ্ঠিত হয়েছে।

গতকাল মঙ্গলবার (৩০ এপ্রিল) বিকেল থেকে ১ মে বুধবার সকাল পর্যন্ত অনুষ্ঠিত এ মেলা দেখতে জেলা ও জেলার বাইরে থেকে হাজার হাজার ভক্তকুল হিন্দু সম্প্রদায়, আদিবাসী সনাতনী হিন্দু ধর্মাবলম্বীরা ছাড়াও স্থানীয় ও জেলার বিভিন্ন প্রান্ত থেকে মুসলিম ধর্মাবলম্বীরাও ভিড় করে। 

মেলায় নানান খেলনা, মুখরোচক খাবারের দোকান, পূজা-অর্চনার আসবাবপত্র, মেয়েদের নানা পাহাড়ি গয়নার দোকানসহ শিশুদের বিনোদনের জন্য নানান রাইডস বসানো হয় বর্তমান যুগে। তবে এক সময় শুধুমাত্র নাগরদোলা বসানো হতো মেলায়। বর্তমান আধুনিক যুগের কারণে নতুন নতুন বিভিন্ন রাইডস বসানো হয়ে থাকে বলে মেলা সূত্রে জানা গেছে।


স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, এক সময় এ মেলায় প্রায় এক হাজার মহিষ ও পাঠা বলি করা হতো। এখন সেই আগের জৌলুস নেই। এখন কেবল শতাধিক পাঠা বলি হয়ে থাকে। কালেভদ্রে কোন কোন বছর মহিষ বলি হয়ে থাকে।

সূত্র জানায়, প্রতি বছর বৈশাখ মাসের কৃষ্ণ পক্ষের প্রথম মঙ্গলবার সীমান্তবর্তী ঝিনাইগাতী উপজেলার গারো পাহাড় এলাকার বিষ্ণপুর গ্রামের চরণতলায় শ্মশান কালীপূজা ও মেলা শত শত বছর ধরে অনুষ্ঠিত হয়ে আসছে। এবার ইমেলার বয়স হল ১০৯ বছর। কালের ব্যবধানে এখন চরণতলার মেলাটি স্থানীয় হিন্দু-মুসলিম পাহাড়ি জনতার মিলন মেলায় পরিণত হয়েছে। তবে পূজা শুরু হয় রাত থেকে এবং রাত বারোটার পর থেকে ভোর পর্যন্ত চলে পাঠা বলি।


বিষ্ণপুর গ্রামের এই এলাকাটির ‘চরণতলা’ নাম হওয়ার পেছনে একটি কাহিনী রয়েছে। এই গ্রামে ‘চরণ হাজং’ নামে এক গৃহস্থ ছিল। সে প্রতিদিন গায়ের পাশ দিয়ে বয়ে যাওয়া পাহাড়ি নদী সোমেশ্বরী পাড়ি দিয়ে ওপাড়ে তার মেষ চড়াতে যেতেন। একদিন ঝড় বৃষ্টি শুরু হলে দ্রুত মেষগুলোকে পাড় করে সে নিজেও নদী পার হতে চেষ্টা করেন। কিন্তু নদীর পানির প্রবল স্রোতে চরণ হাজং তলিয়ে যায়। সেই থেকেই এই জায়গাটির নাম ‘চরণতলা’ হিসেবে পরিচিতি লাভ করে।

সাম্প্রতিক দেশকাল ইউটিউব চ্যানেল সাবস্ক্রাইব করুন

মন্তব্য করুন

Epaper

সাপ্তাহিক সাম্প্রতিক দেশকাল ই-পেপার পড়তে ক্লিক করুন

Logo

ঠিকানা: ১০/২২ ইকবাল রোড, ব্লক এ, মোহাম্মদপুর, ঢাকা-১২০৭

© 2024 Shampratik Deshkal All Rights Reserved. Design & Developed By Root Soft Bangladesh

// //