আমুর বিরুদ্ধে উপজেলা নির্বাচনে হস্তক্ষেপের অভিযোগ

ঝালকাঠি উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে স্থানীয় সংসদ সদস্য ও আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য আমির হোসেন আমু সরাসরি হস্তক্ষেপ করেছেন বলে অভিযোগ করেছেন প্রতিদ্বন্দ্বী চেয়ারম্যান প্রার্থী। দলের সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নির্দেশ উপেক্ষা করে আমির হোসেন আমু প্রার্থী ঘোষণা করেছেন। পাশাপাশি অনুসারী নেতাকর্মীদের দিয়ে অন্য প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থীদের নির্বাচনের মাঠ ছাড়তে বাধ্য করছেন।

আজ বুধবার (১৫ মে) বিকেল সাড়ে ৩টায় শহীদ আব্দুর রব সেরনিয়াবাত বরিশাল প্রেস ক্লাবে এক সংবাদ সম্মেলনে এমন অভিযোগ করেছেন- ঝালকাঠি সদর উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে ‘দোয়াত-কলম’ প্রতীকের প্রার্থী নির্বাচন সমন্বয়কারী ঝালকাঠি জেলা আওয়ামী লীগের আইন সম্পাদক অ্যাডভোকেট রুহুল আমিন রেজভী ও কেন্দ্রীয় আওয়ামী লীগের পরিবেশ উপ-কমিটির সদস্য ব্যারিস্টার এস.এম গোলাম সাহরিয়া।

তারা অভিযোগ করেছেন, ‘গত মঙ্গলবার সন্ধ্যায় উপজেলার কীর্তিপাশায় যুবলীগ-ছাত্রলীগের হামলায় দোয়াত-কলম প্রতীকের প্রার্থী সুলতান হোসেন খানসহ অন্তত ২০-২৫ জন আহত হয়েছেন। তারা সবাই বরিশাল শের-ই-বাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রয়েছেন। হাসপাতালে ভর্তি থাকায় প্রার্থী নিজে সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত থাকতে পারেননি।

লিখিত বক্তব্যে জেলা আওয়ামী লীগের আইন সম্পাদক অ্যাডভোকেট রুহুল আমিন রেজভী দাবি করেন, ঝালকাঠির বর্তমান পরিস্থিতি সুষ্ঠু নির্বাচনের অনুকূলে নেই। হামলাকারীরা সকলেই শহরে ঘুরে বেড়াচ্ছে। মঙ্গলবারের হামলাকে তারা রিহার্সেল জানিয়ে ঘোষণা দিয়েছে, আমির হোসেন আমুর মনোনীত প্রার্থীর বিরুদ্ধে প্রার্থী হওয়ার ফলাফল ভোটের দিনে বুঝিয়ে দেওয়া হবে।

তিনি বলেন, আমরা খুবই আতঙ্কের মধ্যে আছি। নির্বাচন কমিশন, পুলিশ-প্রশাসন কেউ আমাদের সহায়তা করছেন না। একটি নিরপেক্ষ ও সুষ্ঠু ভোট সম্পন্ন করতে তাদের সদিচ্ছা নেই। শুধু মঙ্গলবার নয়, এর আগেও আমির হোসেন আমুর মনোনীত প্রার্থী আনারস প্রতীকের আরিফুর রহমান অনেকবার প্রভাব বিস্তার করে আমাদের নির্বাচনী কর্মকাণ্ডে বাধা দিয়েছে। কিন্তু পুলিশ কাছে এবং রিটার্নিং অফিসারের কাছে লিখিত অভিযোগ দিয়েও কোন প্রতিকার পাইনি।

সংবাদ সম্মেলনে তিনি আরো বলেন, প্রধানমন্ত্রী ঘোষণা দিয়েছেন দল নিরপেক্ষ নির্বাচন হবে। কিন্তু স্থানীয় সংসদ সদস্য আমির হোসেন আমু, জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি শাহে আলম, সাধারণ সম্পাদক ও জেলা পরিষদ চেয়ারম্যান খান সাইফুল্লাহ পনির সরাসরি নির্বাচনে হস্তক্ষেপ করছেন। এমনকি আনারস প্রতীকের প্রার্থী আরিফুর রহমানের সমর্থক উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক হাফিজ আল মাহমুদ, জেলা যুবলীগের আহবায়ক রেজাউল করিম জাকির, যুগ্ম আহবায়ক ও কাউন্সিলর কামাল শরীফ, জেলা ছাত্রলীগের সভাপতি মধুর নেতৃত্বে হামলা চালিয়ে আমাদের এলাকা ছাড়া করতে চাইছে।

মূলত আমির হোসেন আমু মনোনীত প্রার্থী আরিফুর রহমান জেনে গেছেন তিনি নির্বাচনে জয়লাভ করতে পারবেন না। সুষ্ঠু নির্বাচন হলে তার পরাজয় নিশ্চিত। এজন্য প্রভাব বিস্তার করে আমাদের নির্বাচন থেকে দূরে সরাতে চাইছেন। আমরা স্পষ্ট করে বলতে চাই, নির্বাচন থেকে আমরা কিছুতেই সরে দাঁড়াবো না।

যদিও অভিযোগ অস্বীকার করেছেন ঝালকাঠি-২ আসনের সংসদ সদস্য ও আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য আমির হোসেন আমু। তিনি গণমাধ্যমকে বলেন, ‘আমি গতকাল ঢাকাতে ছিলাম। এসব বিষয়ে আমি কিছু জানি না।’

জেলা যুবলীগের যুগ্ম আহবায়ক ও ঝালকাঠি পৌরসভার ৪ নম্বর ওয়ার্ড কাউন্সিলর কামাল শরীফ বলেন, ‘মঙ্গলবারে সুলতান খানের লোকদের ওপর কোন হামলা হয়নি। তারা নিজেরা মারামারি করে আমাদের ওপর দায় চাপাচ্ছে। বরংছ তাদের সমবেত কর্মীরা কীর্তিপাশায় আরিফুর রহমানের লোকদের মারধর করে অফিস ভাংচুর করেছে।’

ঝালকাঠি সদর থানার অফিসার ইনচার্জ শহিদুল ইসলাম বলেন, ‘হামলার ঘটনায় ১৭ জনের বিরুদ্ধে মামলা হয়েছে। আমরা এখন পর্যন্ত তিনজনকে গ্রেপ্তার করতে পেরছি। এরা হলেন- জেলা ছাত্রলীগের যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক আলফি শাহরুন শুভ, ছাত্রলীগ নেতা ইশতিয়াক আহমেদ ও তুহিন হাওলাদার। অন্যদের গ্রেফতারে অভিযান চলছে। নির্বাচন সুষ্ঠু করতে কাউকে ছাড় দেয়া হবে না।’

তিনি জানান, ‘চেয়ারম্যান প্রার্থী সুলতান হোসেন খানের ভাই হেমায়েত উদ্দিন খান বাদী হয়ে মামলাটি দায়ের করেন। মামলায় জেলা আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি ও আনারস প্রতীকের চেয়ারম্যান প্রার্থী খান আরিফুর রহমান, জেলা যুবলীগের আহবায়ক রেজাউল কমির জাকির, জেলা যুবলীগের যুগ্ম-আহবায়ক মো. কামাল শরীফ, পৌর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক হাফিজ আল মাহমুদ, জেলা ছাত্রলীগের সভাপতি আবদুল্লাহ আল মাসুদ মধু, জেলা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক তরিকুল ইসলাম পারভেজ, জেলা ছাত্রলীগের যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক আলফি শাহরুন শুভসহ ১৭ জনের নাম উল্লেখ করে অভিযুক্ত করা হয়েছে। এছাড়া অজ্ঞাত আরো ৮০-৯০ জনকে অভিযুক্ত করা হয়েছে।’

সার্বিক বিষয়ে উপজেলা পরিষদ নির্বাচনের রিটার্নিং কর্মকর্তা ও ঝালকাঠি জেলা নির্বাচন কর্মকর্তা আব্দুস ছালেক বলেন, সুষ্ঠু নির্বাচনে আমরা বদ্ধ পরিকর। নির্বাচন কমিশন কারো পক্ষে কাজ করছে না। আমাদের কাছে যতগুলো অভিযোগ এসেছে তার সবগুলোর বিষয়ে ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়েছে। গতকালকের (মঙ্গলবার) ঘটনায় আমরা প্রধান নির্বাচন কমিশনারের দপ্তরে অবহিত করেছি। আশা করছি দ্রুত ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।

স্থানীয় সংসদ সদস্য প্রভাব বিস্তার করেছে, এমন অভিযোগের বিষয়ে রিটার্নিং কর্মকর্তা বলেন, আমাদের জানা মনে বর্তমানে তিনি নির্বাচনী এলাকায় নেই। সুতরাং তার বিরুদ্ধে প্রভাব বিস্তারের অভিযোগ তোলা সঠিক নয়।

উল্লেখ্য, আগামী ২১ মে ঝালকাঠি সদর উপজেলা পরিষদ নির্বাচনের ভোট গ্রহণ। এ লক্ষ্যে গত মঙ্গলবার কীর্তিপাশায় নির্বাচনী উঠোন বৈঠকের আয়োজন করেন ‘দোয়াত-কলম’ প্রতীক নিয়ে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করা চেয়ারম্যান প্রার্থী সুলতান হোসেন। সেখানে অপর চেয়ারম্যান প্রার্থী খান আরিফুর রহমানের সমর্থক যুবলীগ ও ছাত্রলীগ নেতাকর্মীদের সাথে সুলতান হোসেন ও তার অনুসারীদের মধ্যে হামলা, পাল্টা হামলা এবং সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে।

সাম্প্রতিক দেশকাল ইউটিউব চ্যানেল সাবস্ক্রাইব করুন

মন্তব্য করুন

Epaper

সাপ্তাহিক সাম্প্রতিক দেশকাল ই-পেপার পড়তে ক্লিক করুন

Logo

ঠিকানা: ১০/২২ ইকবাল রোড, ব্লক এ, মোহাম্মদপুর, ঢাকা-১২০৭

© 2024 Shampratik Deshkal All Rights Reserved. Design & Developed By Root Soft Bangladesh

// //