কেরু কোম্পানিতে ১০৪ মৌসুমি শ্রমিকের স্থায়ী নিয়োগ

জুবাইদা নাহার এ্যানি ও নাজেরা বেগম চুয়াডাঙ্গার দর্শনা কেরু এ্যান্ড কোম্পানিতে মৌসুমি শ্রমিক হিসেবে প্রায় ১০ বছর আগে কাজ কাজ শুরু করেন। কারখানা চালু হয়ে উৎপাদন বন্ধ হওয়া পর্যন্ত তাদের কাজ। এরপর মৌসুমি শ্রমিকদের বন্ধ হওয়া কারখানায় আর কোন কাজ থাকে না। আবার তাদের কাজ পেতে পরবর্তী মৌসুম শুরু পর্যন্ত অপেক্ষায় থাকতে হয়।

গত ২০২২-২০২৩ অর্থ বছরে চিনিকলটি উৎপাদনে ছিল ৪২ দিন এবং ২০২৩-২০২৪ অর্থ বছরে ছিল ৫১ দিন। উৎপাদন যতদিন মৌসুমি শ্রমিকদের কাজও ততদিন। মৌসুম সময় টুকুতে শ্রমিকরা প্রতিদিন ৩১০ টাকা, ৪৮০ টাকা ও ৫১০ টাকা মজুরী পায়। এভাবে ১৪ বছর এ প্রতিষ্ঠানে কোন স্থায়ী নিয়োগ না হওয়ায় দৈন্যতায় দিনপার করছিল মৌসুমি শ্রমিকরা। কেরু এ্যান্ড কোম্পানি কর্তৃপক্ষ ১০৪ জন দক্ষ শ্রমিককে স্থায়ী নিয়োগ দিয়ে তাদের দৈন্যতা ঘোঁচালো।

কেরু এ্যান্ড কোম্পানির দাপ্তরিক সূত্রে জানা যায়, মৌসুমি পদে জনবল প্রয়োজন ৪৫৭ জন, এখানে কর্মরত রয়েছে ৩০৭ জন। জনবল শূন্য রয়েছে ১৫০ জন। গত ২০২৪ সালের ১৪ ফেব্রুয়ারি চিনি ও খাদ্য শিল্প কর্পোরেশনের ২৫২৫ তম বোর্ড সভায় মৌসুমি শ্রমিক পদ থেকে স্থায়ীকরণ সংক্রান্ত একটি নীতিমালা অনুমোদিত হয়। ৩৬.০৪.০০০০.০১৩.৭৬.০০১.২২.২৭৭ স্মারকে বাংলাদেশ চিনি ও খাদ্য শিল্প কর্পোরেশনের ভারপ্রাপ্ত চিফ অফ পারসোনেল শাহরিনা তানাজের ২০২৪ সালের ১৪ মার্চ স্বাক্ষরিত অনুমোদীত নীতিমালাটির একটি পত্র কেরু এ্যান্ড কোম্পানি কর্তৃপক্ষের কাছে আসে। এই নীতিমালার আলোকে কর্তৃপক্ষ মৌসুমি দক্ষ শ্রমিক স্থায়ীকরণ করার জন্য সদর দপ্তরে একটি পত্র পাঠায়। এরপর ৩৬.০৪.০০০০.০১২.২৮.০১৯.১৮.৮২ স্মারকে গত ২০২৪ সালের ২৫ মার্চ প্রধান কার্যালয়ের চিফ অফ পারসোনেল হামিদুল ইসলাম মৌসুমি জনবলকে স্থায়ীকরণের মাধ্যমে শূন্যপদ পুড়নের জন্য অনুমোদন পূর্বক একটি পত্র পাঠায়। তাতে উল্লেখ করা হয় অনুমোদীত নীতিমালা অনুযায়ী মজুরি কমিশনে ৪৪টি ও পে-কমিশনের ৬৫টি পদসহ সর্বোমোট ১০৯টি স্থায়ী শূন্য পদ পুড়নের প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে। এরপর ২০২৪ সালের ২ এপ্রিল আন্তঃবিভাগীয় মৌসুমি শ্রমিক দিয়ে স্থায়ী শূন্যপদ পুড়নের জন্য একটি সমন্বয় বিজ্ঞপ্তি কেরু এ্যান্ড কোম্পানির নোটিশ বোর্ডে টাঙ্গিয়ে দেয়া হয়। এরপর ২০২৪ সালের ২৭ এপ্রিল কেরুর মহাব্যবস্থাপক (কারখানা) সুমন কুমার সাহাকে আহবায়ক করে ৭ সদস্যের একটি নিয়োগ কমিটি গঠন করা হয়।

কমিটির অন্যান্য সদস্যরা হলেন, একই প্রতিষ্ঠানের মহাব্যবস্থাপক (অর্থ) মুহাম্মদ আব্দুছ সাত্তার, মহাব্যবস্থাপক (প্রশাসন) ইউসুফ আলী, মহাব্যবস্থাপক (কৃষি) মোহাম্মদ আশরাফুল আলম ভূঁইয়া, মহাব্যবস্থাপক (ডিস্টিলারি) রাজিবুল হাসান, উপ-মহাব্যবস্থাপক (পাসোনেল) আল-আমিন ও ঢাকা সদর দপ্তরের মানবসম্পদ বিভাগের  ব্যবস্থাপক (সংস্থাপন) সাইফুল আলম।

বিজ্ঞপ্তির শর্ত অনুযায়ী আবেদনকারীদের আবেদনগুলো যাচাই-বাচাই করে প্রতিনিধি মনোনয়নের জন্য সদর দপ্তরে পাঠানো হয়। সদর দপ্তরের প্রতিনিধির উপস্থিতিতে ওই কমিটির সদস্যগণ যোগ্যতা মূল্যায়ন করে নিয়োগ প্রক্রিয়া ২০২৪ সালের ১৩ ও ১৪ মে শেষ করে। এর মধ্যে ৫টি পদে আবেদনকারীরা তাদের যোগ্যতার মূল্যায়নে না টেকায় তাদের নিয়োগ দেওয়া হয়নি।

এতদিন চাকরীর পর স্থায়ী নিয়োগপত্র পেয়ে কেরু এ্যান্ড কোম্পানির গ্যারেজ সুপারভাইজার মিজানুর রহমান কান্না জড়িত কণ্ঠে বলেন, ২০০১ সাল থেকে তিনি মৌসুমি শ্রমিক হিসেবে চাকরি করে আসছে। দীর্ঘ ২৩ বছর ধরে  ছেলে মেয়ে নিয়ে কোন রকম সংসার চালিয়ে এসেছে। চাকরির শেষ সময়ে তিনি স্থায়ী নিয়োগ পেয়ে বেশ খুশি। আর মাত্র সাড়ে ৭ মাস তার চাকরি আছে।

একই অনুভূতি জানান,আউট স্টেশন ক্যান গার্ড আবুল কাশেম। তিনি বলেন, চাকরির শেষ সময়ে স্থায়ী হতে পেরে দারুণ লাগছে। তার আর সাড়ে তিন বছর চাকরি আছে। একই পদের শহিদুল ইসলাম বলেন, ২৬ বছর পর পদোন্নতি পেয়ে চাকরি স্থায়ীকরণ হয়েছে।

এ প্রতিষ্ঠানটিতে কর্মরত রয়েছে প্রায় ১ হাজার ৪০০ শ্রমিক-কর্মচারী। প্রায় ২০ হাজার পরিবারে জীবিকা নির্বাহ করে থাকে এই প্রতিষ্ঠানটি।

কেরু এ্যান্ড কোম্পানির ব্যবস্থাপনা পরিচালক মোহাম্মদ মোশারফ হোসেন বলেন, প্রত্যেকটি পদক্ষেপে নিয়ম মেনে এবং স্বচ্ছতার মধ্যদিয়ে প্রতিষ্ঠানের ১০৯টি শূন্য পদের জন্য গত ১৩ ও ১৪ মে সকালে কেরুজ হাইস্কুলে শ্রমিক-কর্মচারীদের স্থায়ী নিয়োগ পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হয়। এ নিয়োগ পরীক্ষায় প্রায় ২০০ শ্রমিক-কর্মচারী অংশ নেয়। পরে ওই দিনই যাচাই-বাচাই করে চূড়ান্তভাবে  ১০৪ জনকে স্থায়ী করে বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করা হয়। এর মধ্যে ৫টি পদে আবেদনকারীরা তাদের যোগ্যতার মূল্যায়নে না টেকায় তাদের নিয়োগ দেওয়া হয়নি। গত ১৫ মে সকালে স্থায়ীকরণ শ্রমিক-কর্মচারীরা প্রতিষ্ঠানে যোগদান করার পর এদিন সন্ধ্যায় বাংলাদেশ চিনি ও খাদ্য শিল্প কর্পোরেশনের চেয়ারম্যান শেখ শোয়েবুল আলম নিয়োগ স্থগিতের আদেশ দিয়ে একটি পত্র পাঠান। অফিস চলাকালীন এ পত্রটি হাতে না পাওয়ায় এ আদেশ বাস্তবায়ন করা সম্ভব হয়নি।

শ্রমিক কর্মচারী ইউনিয়নের সভাপতি ফিরোজ আহম্মেদ সবুজ বলেন, স্থায়ী নিয়োগ সকল নিয়ম মেনেই করা হয়েছে। এতে শ্রমিক-কর্মচারীরা যথেষ্ট সন্তুষ্ট।

এ বিষয়ে শ্রমিক কর্মচারী ইউনিয়নের সাধারণ সম্পাদক মাসুদুর রহমান মাসুদ বলেন, ২০-২৫ বছর ধরে  শ্রমিকরা চাকরী করে যাচ্ছে। তাদের কোন পদোন্নতি হয়না। তাই সবার প্রচেষ্টায় গত ১৫ মে ১০৪ জন শ্রমিককে স্থায়ীকরণ করা হয়েছে এবং মুক্তিযোদ্ধা সন্তানদের অগ্রাধিকার দিয়ে এ স্থায়ীকরণের নিয়োগ শেষ করা হয়েছে।

সাম্প্রতিক দেশকাল ইউটিউব চ্যানেল সাবস্ক্রাইব করুন

মন্তব্য করুন

Epaper

সাপ্তাহিক সাম্প্রতিক দেশকাল ই-পেপার পড়তে ক্লিক করুন

Logo

ঠিকানা: ১০/২২ ইকবাল রোড, ব্লক এ, মোহাম্মদপুর, ঢাকা-১২০৭

© 2024 Shampratik Deshkal All Rights Reserved. Design & Developed By Root Soft Bangladesh

// //