শেরপুরে ভারতীয় এক নাগরিকের ঝুলন্ত লাশ উদ্ধার

শেরপুরে ভারতীয় এক নাগরিকের রহস্যজনক ঝুলন্ত লাশ উদ্ধার করেছে পুলিশ। নিহত ভারতীয় ওই নাগরিকের নাম প্রণয় চন্দ্র সূত্রধর (৭৫)। তার বাড়ি ভারতের পশ্চিমবাংলায় দিনহাটা মহকুমার কুচবিহার জেলায়। তার পিতার নাম হীরেন্দ্র চন্দ্র সূত্রধর।

গতকাল রবিবার (২৩ জুন) সন্ধ্যায় শহরের গৃদানারায়নপুর মহল্লায় ওই ভারতীয় নাগরিকের ছোট ভাইয়ের বাসার চারতালা ভবনের সিলিং ফ্যান থেকে তার ঝুলন্ত মরদেহ উদ্ধার করা হয়।

নিহতের ছোট ভাই পরিবার পরিকল্পনা বিভাগের হেড অফিসের প্রোগ্রাম ম্যানেজার ডা. পীযূষ চন্দ্র সূত্রধর জানায়, আমার বড় ভাই প্রণয় চন্দ্র সূত্রধর ছোটবেলায় ১৯৬৩ সালে আমার মামার সাথে ভারতের পশ্চিমবাংলার কুচবিহারের দিনহাটায় চলে যায়। সেখানে থেকেই তিনি বড় হয় এবং পরবর্তীতে বিয়ে করেন। সেই সাথে তিনি ভারতীয় নাগরিকত্ব লাভ করেন। সেখানে তার স্ত্রী ও দুই কন্যা সন্তান রয়েছে। তিনি দেশে স্বাধীন হবার আগে ভারতে চলে যান। এরপর দেশ স্বাধীন হওয়ার পর দুই থেকে তিনবার বাংলাদেশে বেড়াতে আসেন। সম্প্রতি গত রমজান মাসের শুরুর দিকে বাংলাদেশের চ্যাংড়াবান্ধা বর্ডার দিয়ে তিনি প্রথমে ঢাকায় আমার বাসায় উঠেন। সেখান থেকে আমার অন্যান্য আত্মীয়-স্বজনের বাড়িতে বেড়ান কয়েকদিন। এরপর দুই মাস আগে শেরপুর শহরের আমার বাসায় উঠেন। আমি আমার স্ত্রী ও দুই সন্তান নিয়ে ঢাকায় বসবাস করে আসছি। শেরপুরে বাসায় মাঝেমধ্যে ছুটিতে এসে থাকতাম। আমার দাদা দুই মাস আগে থেকে সে একাই আমার বাসায় বসবাস করে আসছিলেন। ঈদের ছুটিতে আমি আমার পরিবারসহ শেরপুর আসি। আমি ও আমার দুই ছেলেকে নিয়ে ঈদের পরেই ঢাকায় ফিরে যাই। এদিকে আমার স্ত্রী ও দাদা বাসায় ছিলেন। দুই-একদিনের মধ্যেই সবাই ঢাকায় ফিরে যাওয়ার কথা ছিলো। রবিবার আমার স্ত্রী স্বপ্না রানী সূত্রধর জামালপুরের নান্দিনায় তার নানা বাড়ি থেকে শেরপুর বাসায় এসে তালা খুলে দেখেন দাদা ফ্যানের হুকের সাথে দাঁড়িতে গলায় ফাঁস লাগানো অবস্থায় ঝুলছিলেন। পরে আমার স্ত্রী থানায় খবর দিলে পুলিশ এসে তার ঝুলন্ত মরদেহ উদ্ধার করে। 

পীযুষ চন্দ্র সূত্রধর তার মৃত্যুর ব্যাপারে জানায়, ভারতে তার স্ত্রী-কন্যাদের সঙ্গে বিরোধ থাকায় বাংলাদেশে চলে আসে। এখানে এসেও তিনি মানসিকভাবে বিপর্যস্ত ছিলেন। তাই হয়তো আত্মহত্যা করেছে।

তবে এ বিষয়ে স্থানীয় এলাকাবাসী বলছেন ভিন্ন কথা, তারা বলছেন প্রণয় চন্দ্র সূত্রধর তার পৈত্রিক সম্পত্তির জন্য বাংলাদেশে আসেন। হয়তো সে সম্পদের ভাগ-বাটোরা নিয়ে বিরোধ হওয়ায় তাকে হত্যা অথবা সে নিজেই আত্মহত্যা করতে পারে।

তবে জমিজমার বিষয়ে ডাক্তার পীযূষ চন্দ্র সূত্রধর বলেন, বাবা বেঁচে থাকা অবস্থায় আমাদের সকল জমিজমা ভাগ-বাটোয়ারা করে দিয়ে গেছেন। এ জমি নিয়ে কোনো বিরোধ থাকার সুযোগ নেই।

এই বিষয়ে শেরপুর জেলা সদর হাসপাতালে আরএমও খাইরুল কবির সুমন জানায়, মরদেহের পোস্টমর্টেম এর জন্য আলামত সংগ্রহ করা হয়েছে। পোস্টমর্টেম এর রিপোর্ট পাওয়ার পর মৃত্যুর কারণ জানা যাবে।

এদিকে শেরপুর জেলা পুলিশ সুপার আকরামুল হোসেন পিপিএম এ বিষয়ে বলেন, মরদেহ উদ্ধার করে ময়না তদন্তের জন্য জেলা হাসপাতালের মর্গে পাঠানো হয়েছে। ময়না তদন্ত শেষে নিশ্চিত হওয়া যাবে এটা হত্যা না আত্মহত্যা। এছাড়া নিহতের পরিবারের পক্ষ থেকে কোনো আইনগত সহায়তা চাওয়া হলে ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে বলে জানান তিনি। 

সাম্প্রতিক দেশকাল ইউটিউব চ্যানেল সাবস্ক্রাইব করুন

মন্তব্য করুন

Epaper

সাপ্তাহিক সাম্প্রতিক দেশকাল ই-পেপার পড়তে ক্লিক করুন

Logo

ঠিকানা: ১০/২২ ইকবাল রোড, ব্লক এ, মোহাম্মদপুর, ঢাকা-১২০৭

© 2024 Shampratik Deshkal All Rights Reserved. Design & Developed By Root Soft Bangladesh

// //