ক্ষমতাসীনদের সাথে সম্পর্ক করাই ছিল মতিউর পরিবারের কৌশল

যখন যে দল ক্ষমতায় থাকে তখন সে দলের নেতাকর্মীদের সঙ্গে সুসম্পর্ক গড়ে নিজেদের আখের গোছান তারা। ক্ষমতার কাছাকাছি থাকতে গিয়ে কখনো আওয়ামী লীগ আবার কখনো বিএনপির সঙ্গে নাম জড়িয়েছে মতিউরের বাবা এবং ভাইদের। এমনকি ছাত্র জীবনে শিবিরের সম্পৃক্ততার অভিযোগও রয়েছে আলোচিত মতিউর রহমানের বিরুদ্ধে।

সরেজমিনে জানা যায়, ড. মতিউর রহমানকে এলাকাবাসী চেনেন পিন্টু হাওলাদার নামে। জুভি স্কুল শিক্ষক বাবা আব্দুল হাকিম হাওলাদার ছিলেন স্থানীয় রাজনীতিতেও পরিচিতমুখ।

তিনি ছিলেন উপজেলা বিএনপির সহ-সভাপতি। বিভিন্ন আমলে ক্ষমতায় থাকা সরকারি দলের ঘনিষ্ঠ হওয়ায় পুরো উপজেলা জুড়ে দাপুটে অবস্থানে আছে এই হাওলাদার পরিবার।

আশির দশকে বরিশাল জেলা আওয়ামী লীগের তৎকালীন সভাপতি মহিউদ্দিন আহমেদের হাত ধরে স্থানীয় রাজনীতিতে যুক্ত হন হাকিম হাওলাদার। কিন্তু ২০০১ সালে বিএনপি ক্ষমতায় এলেই পাল্টে ফেলেন দল।

তৎকালীন স্থানীয় সংসদ সদস্য ও বিএনপি নেতা মোশাররফ হোসেন মঙ্গুর সহযোগিতায় ২০০৩ সালে কাজিরচর ইউনিয়নের চেয়ারম্যান নির্বাচিত হন। বাবার নির্বাচনী বৈতরণী পার হতে সকল ধরণের সহযোগিতা করেন ছেলে মতিউর রহমান।

দুই দলের উচ্চ পর্যায়ের অনেক নেতাদের সঙ্গে ক্ষমতার আমলে হাকিম হাওলাদারের সখ্যতার কথা জানান মতিউরের গ্রামের বাড়ির আত্মীয় ও স্থানীয়রা।

মতিউর রহমানের চাচাতো ভাই আব্দুল্লাহ হাওলাদার জানান, বিএনপি আমলে স্থানীয় ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান নির্বাচিত হন তার চাচা। দায়িত্বে ছিলেন একটানা ৯ বছর।

এই পরিবারের ঘনিষ্ঠ আরেক স্থানীয় ব্যক্তি বলেন, হাকিম হাওলাদার মিশুক প্রকৃতির ছিলেন। বিএনপি বা আওয়ামী লীগের অনেক নেতার সঙ্গেই তার সখ্যতা ছিল ৷

বাবার পরে ছোট ভাই আব্দুল কাইয়ুম হাওলাদারকে রাজনীতিতে প্রতিষ্ঠিত করতে চেয়েছিলেন মতিউর রহমান। এজন্য প্রথমে কাজিরচর ইউনিয়ন যুবদলের যুগ্ম আহবায়ক করা হয় তাকে।

তবে রাজনৈতিক পটপরিবর্তনের কারণে পাল্টে ফেলেন দলীয় পরিচয়। আওয়ামী লীগে নাম লেখাতে কাউয়ুম হাওলাদারের জন্য আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় এক নেতার দ্বারস্থ হন মতিউর রহমান। এ নিয়ে বছর কয়েক আগে বেশ বিতর্কে জড়ান কাইয়ুম হাওলাদার।

৫ ভাই বোনের মধ্যে সবার বড় ড. মতিউর রহমান। তার প্রথম স্ত্রী বর্তমানে একটি উপজেলার চেয়ারম্যানের দায়িত্ব পালন করছেন। তার বাবা হাকিম হাওলাদার উত্তর চর বাহাদুরপুর প্রাথমিক বিদ্যালয়ে চাকরি করতেন। অবসরে গিয়ে ২০০৩ সালে স্থানীয় কাজিরচর ইউনিয়ন চেয়ারম্যান নির্বাচিত হন।

মতিউয়ার রহমান পরিবারের ঘনিষ্ঠ কয়েকটি সূত্র নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, ‘ছাত্রজীবনে মতিউর রহমান নিজেই শিবিরের রাজনীতির সঙ্গে ছিলেন। প্যাদারহাট মাধ্যমিক বিদ্যালয় থেকে এসএসসি পাস করার পর মতিউরকে ভর্তি করানো হয় সরকারি বরিশাল কলেজে।

তৎকালীন সময় যশোর বোর্ডের অধীনে এইচএসসি পরীক্ষার ফলাফলে দেশের মধ্যে ৬ষ্ঠ হন তিনি। এরপর ভর্তি হন ঢাকা বিদ্যালয়ে। সেখানে অধ্যয়নরত অবস্থায় ছাত্রশিবির পরিচালিত ‘রেটিনাসহ দুটি কোচিং সেন্টারের ফার্মগেট শাখার পরিচালক ছিলেন। সেখান থেকেই আসে মতিউরের বিদ্যালয়ে লেখাপড়ার খরচ।

তাছাড়া ১১তম বিসিএস উত্তীর্ণের পর বিএনপির তৎকালীন একজন মন্ত্রীর সহযোগিতায় সরকারি চাকরিতে প্রবেশ করেন মতিউর রহমান। এমনকি রাজস্ব কর্মকর্তা হিসেবে দায়িত্ব গ্রহণের পেছনেও অবদানের কথা শোনা যায় সাবেক মন্ত্রীর।

কাজিরচর ইউনিয়নের বর্তমান চেয়ারম্যান মো. মন্টু বিশ্বাস বলেন, হাওলাদার পরিবারের একটি কৌশল এটি। তারা যখন যে দল ক্ষমতায় আসে তখন সে দলের নেতাকর্মীদের খুঁজে সম্পর্ক তৈরি করে।

তিনি বলেন, বিএনপি নেতা মঙ্গু মতিউরের বাবাকে চেয়ারম্যান হতে সহযোগিতা করেছে। আবার আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় এলে মতিউর রহমান পিন্টু আওয়ামী লীগের একজন প্রেসিডিয়াম সদস্যের সঙ্গে ঘনিষ্ঠ হবার চেষ্টা করেন।

সাম্প্রতিক দেশকাল ইউটিউব চ্যানেল সাবস্ক্রাইব করুন

মন্তব্য করুন

Epaper

সাপ্তাহিক সাম্প্রতিক দেশকাল ই-পেপার পড়তে ক্লিক করুন

Logo

ঠিকানা: ১০/২২ ইকবাল রোড, ব্লক এ, মোহাম্মদপুর, ঢাকা-১২০৭

© 2024 Shampratik Deshkal All Rights Reserved. Design & Developed By Root Soft Bangladesh

// //