আ.লীগ নেতা বাবুলের মৃত্যু নিয়ে দুই গ্রুপের পাল্টাপাল্টি অবস্থান

রাজশাহীর বাঘা উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আশরাফুল ইসলাম বাবুল খুনের মদদদাতা হিসেবে  সিটি মেয়র ও আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য এএইচএম খায়রুজ্জামান লিটন, রাজশাহী-৩ আসনের এমপি আসাদুজ্জামান আসাদ ও বাঘা উপজেলা চেয়ারম্যান লায়েব উদ্দিন লাভলুকে অভিযুক্ত করেছেন সাবেক পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী ও রাজশাহী-৬ আসনের এমপি শাহরিয়ার আলম। বৃহস্পতিবার (২৭ জুন) বাবুলের জানাজায় অংশ নিয়ে তিনি ওই তিন নেতার নাম মদদদাতা হিসেবে উল্লেখ করেন।

জানাজার আগে বক্তব্য রাখেন রাজশাহী-৬ (বাঘা-চারঘাট) আসনের সংসদ সদস্য ও সাবেক পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী শাহরিয়ার আলম। তিনি বলেন, বাবুল হত্যার বিষয়ে গোপনে যারা মদদ দিয়েছেন তাদেরকেও আইনের আওতায় এনে বিচার করা হবে।

এ সময় তিনি কয়েকজন কেন্দ্রীয় ও স্থানীয় আওয়ামী লীগ নেতার নাম উল্লেখ করে তারা কেন জানাজায় আসেনি জানতে চান। তিনি বলেন, তাদের সৎ সাহস নেই। প্রয়োজনে তাদের নামে মামলা করে আইনের কাঠগড়ায় দাঁড় করানো হবে।

শাহরিয়ার আলম আরো বলেন, প্রকাশ্যে কিংবা পশ্চাতে থেকে কেউ মদদ দিয়ে থাকলে তারা এই জানাজা থেকে চলে যান। এরপরে জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি বীর মুক্তিযোদ্ধা অনিল কুমার সরকারকে চলে যেতে বলা হয়। শাহরিয়ার বক্তব্য শেষ করার পর জেলা আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক ও পুঠিয়া উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান আবদুস সামাদ তাকে চলে যেতে বলেন।

জানাজায় অংশগ্রহণ করেন স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় প্রতিমন্ত্রী ও জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক এবং রাজশাহী-৫ (পুঠিয়া-দূর্গাপুর) আসনের সংসদ সদস্য আবদুল ওয়াদুদ দারা, রাজশাহী জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান বীর মুক্তিযোদ্ধা মীর ইকবাল, রাজশাহী মহানগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ডাবলু সরকার, সাবেক সংসদ সদস্য আয়েন উদ্দিন, জেলা আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি ও বাগমারার উপজেলা চেয়ারম্যান জাকিরুল ইসলাম সান্টু প্রমুখ।

রাজশাহী-৬ (বাঘা-চারঘাট) আসনের সংসদ সদস্য শাহরিয়ার আলমের বক্তব্যকে উদ্দেশ্যপ্রণোদিত ও মিথ্যা অভিহিত করে প্রতিক্রিয়া জানিয়েছেন বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য ও রাজশাহী সিটি কর্পোরেশনের  মেয়র এএইচএম খায়রুজ্জামান লিটন। 

বৃহস্পতিবার বিকেল ৪টায় নগর ভবনে মেয়র দপ্তরে প্রতিক্রিয়ায় মেয়র এএইচএম খায়রুজ্জামান লিটন বলেন, গত কিছুদিন আগে বাঘায় দুইপক্ষের সংঘর্ষে বাঘা উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আশরাফুল ইসলাম বাবুল গুরুতর আহত হয়। তাকে চিকিৎসার জন্য রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে আসা হয় এবং চিকিৎসা নিয়ে তার অবস্থার উন্নতি হয়। হঠাৎ করে বুধবার সকালে তার অবস্থার অবনতি ঘটে। বিকেলে ৪টা থেকে সাড়ে ৪টার দিকে তিনি মারা যান (ইন্না লিল্লাহি.. রাজিউন)। মরহুম বাবুল সক্রিয় রাজনৈতিক কর্মী ও নেতা ছিলেন, আমার অনেক স্নেহভাজন ছিলেন। আমি আমার রাজনৈতিক জীবনের শুরু থেকেই তাকে পাশে পেয়েছি, বাবুল যখন ছাত্রনেতা, তখন থেকেই। তিনি নিবেদিতপ্রাণ আওয়ামী লীগ নেতা ছিলেন। তাকে হত্যার উদ্দেশ্যে আঘাত করার মতো নিন্দনীয়-নৃশংস ঘটনার সঙ্গে আমার কোনোভাব জড়িত থাকার কোনও কারণ নেই, কোনো সুযোগ নেই, যুক্তিও নেই। মরহুমের জানাজায় আমাকে দায়ী করে, সরাসরি আমার নাম ধরে, আমার দলীয় পদ উল্লেখ করে, আমার পাশাপাশি আমাদের আরেকজন সংসদ সদস্য আসাদুজ্জামান আসাদসহ আরো কয়েকজনের নাম উল্লেখ করে বাঘা-চারঘাটের বর্তমান এমপি উদ্দেশ্যপ্রণোদিত ও ঈর্ষাপরায়ণভাবে এরকম উক্তি করতে পারেন, সেটা আমার বোধগম্য নয়। 

তিনি আরও বলেন, জানাজা নামাজের মতো একটি পবিত্র কাজ, যেখানে মৃত ব্যক্তির জন্য দোয়া করা হয়, সেখানে এভাবে মামলা করা হবে, মোবাইল কললিস্ট চেক করা হোক, মামলার আসামি করা হবে— এই সমস্ত কথা তার কাছ থেকে আমি আশাই করিনি। তিনি কী উদ্দেশ্যে বলেছেন, কেন বলেছেন তা তিনিই বলতে পারবেন। যারা রাজনীতি সচেতন ও বিবেকসম্পন্ন মানুষ তারা নিশ্চয় এরকম কর্মকাণ্ডকে সমর্থন করবেন না। করার কোনও কারণ নেই।

তিনি আরো বলেন, আমরা একজন দলীয় নেতাকে হারালাম। এ ঘটনা অত্যন্ত নিন্দনীয় ও কষ্টকর। বাবুল হত্যার ঘটনার সুষ্ঠু তদন্ত ও বিচার আমিও চাই। আমার বয়স এখন ষাটের ওপরে। আমার রাজনৈতিক জীবনে এ ধরনের ঘটনায় মদদ দেওয়ার ইতিহাস নেই। মনে হচ্ছে যেন লাশটি কারও দরকার ছিল। একজনের মৃতদেহ দরকার ছিল যেটাকে পুঁজি করে রাজনীতি করা যায় এবং প্রতিপক্ষকে ঘায়েল করা যায়। এ রকম একটা চক্রান্ত ও ষড়যন্ত্রকারী একটি গোষ্ঠী ছিল, এখনো আছে বলে আমি মনে করি, অনেকেও তাই মনে করেন। এই লাইনেও বিষয়গুলো তদন্ত হওয়া দরকার।

উল্লেখ, রাজশাহীর বাঘায় পাল্টাপাল্টি কর্মসূচিতে দুই গ্রুপের সংঘর্ষে আহত বাঘা উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আশরাফুল ইসলাম বাবুল (৫০) মারা যান। রাজশাহী মেডিকেল কলেজ (রামেক) হাসপাতালের নিবিড় পরিচর্যা কেন্দ্রে (আইসিইউ) চিকিৎসাধীন অবস্থায় বুধবার বিকেল সাড়ে ৪টার দিকে তার মৃত্যু হয়।

এ বিষয়ে বাঘা থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) আমিনুল ইসলাম বলেন, সংঘর্ষের দিন আশরাফুল ইসলাম বাবুলকে কুপিয়ে ফেলে রাখা হয়েছিল। পুলিশ তাকে উদ্ধার করে হাসপাতালে নিয়ে যায়। চিকিৎসাধীন অবস্থায় তিনি মারা গেছেন।  মরদেহের ময়নাতদন্ত করা হয়েছে। মারামারির ঘটনায় যে মামলাটি হয়েছিল, সেই মামলাটিই এখন হত্যা মামলায় রূপ নেবে।

গত শনিবার (২২ জুন) বাঘা উপজেলা সদরে রক্তক্ষয়ী সংসংঘর্ষে আওয়ামী লীগের দুই গ্রুপের নেতাকর্মীরা। এতে উভয় পক্ষের ৩০ জন নেতাকর্মী আহত হন। তাদের মধ্যে বাবুলের অবস্থা ছিল সঙ্কটাপন্ন। সংঘর্ষের ঘটনায় সেদিন রাতেই থানায় মামলা করেছেন উপজেলা দলিল লেখক সমিতির সভাপতি পিন্টু। এ মামলায় বাঘা পৌরসভার মেয়র আক্কাস আলীসহ ৪৬ জনকে আসামি করা হয়েছে। এ মামলায় পুলিশ আটজনকে গ্রেপ্তার করেছে। গ্রেপ্তার হয়ে ইউপি চেয়ারম্যান ও যুবলীগ নেতা মেরাজুল ইসলাম এখন কারাগারে রয়েছেন। গ্রেপ্তার এড়াতে মেয়র আক্কাস আত্মগোপনে আছেন।

সাম্প্রতিক দেশকাল ইউটিউব চ্যানেল সাবস্ক্রাইব করুন

মন্তব্য করুন

Epaper

সাপ্তাহিক সাম্প্রতিক দেশকাল ই-পেপার পড়তে ক্লিক করুন

Logo

ঠিকানা: ১০/২২ ইকবাল রোড, ব্লক এ, মোহাম্মদপুর, ঢাকা-১২০৭

© 2024 Shampratik Deshkal All Rights Reserved. Design & Developed By Root Soft Bangladesh

// //