মানিকগঞ্জে চামড়া পুড়িয়ে তৈরি হয় বিষাক্ত কেমিক্যাল

মানিকগঞ্জে ট্যানারির বর্জ্য ও পশুর চামড়া উচ্ছিষ্ট পুড়িয়ে তৈরি হচ্ছে কয়েলের বিষাক্ত কাঁচামাল। দুর্গন্ধে অতিষ্ঠ হয়ে পড়েছে এলাকাবাসী, ঝুঁকিতে পরিবেশ ও স্বাস্থ্য, ধোঁয়ায় নষ্ট হচ্ছে ফসল।

মানিকগঞ্জের হরিরামপুর উপজেলার ধূলসুড়া ইউনিয়নের আইলকুণ্ডি গ্রামের ফসলি জমিতে গড়ে উঠেছে এ উন্মুক্ত ভাসমান কারখানা। এর নেই কোন নিবন্ধন, নিজস্ব নাম ও বৈধ কাগজপত্র। স্থানীয় প্রভাবশালীদের সহযোগিতায় ২মাস যাবৎ এই কারখানা চলছে বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে।

শ্রমিকেরা জানান, বলড়া ইউনিয়নের কোকরহাটি এলাকার লোকমান হোসেন কারখানাটির যাবতীয় তদারকির দায়িত্বে আছেন। তিনি বলড়া ইউনিয়ন পরিষদের নারী সদস্য ছবুরা বেগমের স্বামী।

সরেজমিনে ও শ্রমিকদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, কয়েলের কাঁচামাল ও মাছের খাদ্য তৈরিতে চামড়া উচ্ছিষ্ট ও পানি ব্যবহার হয়। প্রশাসনের চোখ ফাঁকি দিয়ে দিনে চামড়া পুড়ানোর কাজ বন্ধ রেখে রাতে চামড়ার ছাট ও প্লাস্টিকের বর্জ্য পুড়িয়ে এগুলো সেদ্ধ করা হয়। এতে পোড়ার দুর্গন্ধ বাতাসে ছড়িয়ে স্বাস্থ্য ঝুঁকি তৈরি করেছে। অন্যদিকে কারখানার ধোঁয়ায় আশে পাশের ফসল ও যাবতীয় ফলের মুকুল নষ্ট হচ্ছে।

খোলা আকাশের নিচে বেশ কিছু জায়গা জুড়ে চলছে কয়েলের কাঁচামাল ও মাছের খাদ্য তৈরির কাজ। এর নেই কোন সাইন বোর্ড। দেখা মিলে না কোম্পানি ও মালিকের। বেশ কিছু শ্রমিক রাতে সেদ্ধ করা চামড়া রোদে শুঁকচ্ছে। মালিকের নাম জানতে চাইলে তারা বলেন, আমরা কিছুই জানি না। পরে এক এক করে সবাই সটকে পড়েন। শুধু জানান, একজন লোক হেমায়েতপুরের থেকে সন্ধ্যায় আসে, রাতেই চলে যায়।

এলাকাবাসী অভিযোগ করেন, মশার কয়েলের কাঁচামাল তৈরির কারখানার গন্ধে, ধোঁয়ায় আমরা মারাত্মক স্বাস্থ্য ঝুঁকিতে আছি। এলাকার কিছু প্রভাবশালী লোকদের মেনেজ করে কারখানা চালাচ্ছে। আমরা এর প্রতিবাদ করতে সাহস পাচ্ছি না।

কারখানা এলাকার জহির উদ্দিন বলেন, রাতে যখন চামড়া পুড়ানো শুরু হয় গন্ধে ঘুমাতে পারি না। ভাত খাওয়ার সময় গন্ধে বমি পর্যন্ত হয়। আমরা গরীব মানুষ, নিরবে সহ্য করতে হচ্ছে।

আইলকুণ্ডি গ্রামের রানা বলেন, দিনে কম গন্ধ। সন্ধ্যা হলেই চামড়া পোড়ায় তখন বাড়িতে থাকা অসম্ভব হয়ে যায়। প্রশাসনের কাছে দ্রুত এই ভাসমান কারখানা বন্ধ করার দাবি করছি।

কারখানাটি তদারকির দায়িত্বে থাকা লোকমান হোসেন বলেন, জমিটি মালিকের কাছ থেকে ভাড়া নিয়ে পুনরায় কারাখানার মালিককে বছর চুক্তিতে ভাড়া দিয়েছি। তার পক্ষ থেকে সম্পূর্ণ দেখভালের দায়িত্বে আমি আছি। সবাইকে ম্যানেজ করে চলতে হয়। আমরাও খুব ভালো নেই।

হরিরামপুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা শাহ নুর এ আলম বলেন, বিষয়টি আমার জানা নেই। ইউএনও মহোদয়ের সাথে কথা বলে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

হরিরামপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মো. শাহরিয়ার রহমান বলেন, এ বিষয়ে অবগত আছি। অতিদ্রুত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

সাম্প্রতিক দেশকাল ইউটিউব চ্যানেল সাবস্ক্রাইব করুন

মন্তব্য করুন

Epaper

সাপ্তাহিক সাম্প্রতিক দেশকাল ই-পেপার পড়তে ক্লিক করুন

Logo

ঠিকানা: ১০/২২ ইকবাল রোড, ব্লক এ, মোহাম্মদপুর, ঢাকা-১২০৭

© 2024 Shampratik Deshkal All Rights Reserved. Design & Developed By Root Soft Bangladesh

// //