বন্যার শঙ্কা ও ভাঙন আতঙ্কে তিস্তা পাড়ের মানুষ

তিস্তায় পানি প্রবাহ বিপৎসীমার নিচ দিয়ে প্রবাহিত হলেও স্রোত বিদ্যমান থাকায় শুরু হয়েছে নদী ভাঙন। ভাঙন আতঙ্কে নির্ঘুম রাত কাটছে তিস্তা তীরবর্তী অঞ্চলের মানুষজন। ভাঙনের তীব্রতা সব চেয়ে বেশি সদর উপজেলার গোকুন্ডা ইউনিয়নে।

গত ১২ ঘণ্টায় গোকুন্ডা ইউনিয়নে অন্তত ১০টি বাড়িসহ বিভিন্ন স্থাপনা নদী ভাঙনের শিকার হয়েছে। এ এলাকায় বসবাসরত মানুষজন নিজেদের শেষ সম্বলটুকু রক্ষা করতে আপ্রাণ চেষ্টা করছেন। তবে এ জন্য কোন সময় পাচ্ছেন না তারা। মুহূর্তের মধ্যে নদী গর্ভে বিলীন হচ্ছে ঘরবাড়িসহ গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনা। 

ভারতের বাঁধ ভেঙে যাওয়ার কারণে তিস্তাপাড়ের হাজারও মানুষের মধ্যে আতঙ্ক বিরাজ করছে। উজানের ঢল যেকোনো সময় লালমনিরহাটে প্রবেশ করে বন্যার সৃষ্টি হতে পারে- এমন শঙ্কায় নির্ঘুম রাত পাড় করছেন তারা। গজলডোবা বাঁধে পানির চাপ বাড়ায় তিস্তা নদীতে পানি বৃদ্ধি পাচ্ছে। এদিকে তিস্তা পাড়ের মানুষদের আতঙ্কিত না হওয়ার পরামর্শ দিয়েছেন লালমনিরহাট পানি উন্নয়ন বোর্ড। 

আজ শুক্রবার (২৩ আগস্ট) দুপুর ১২টায় তিস্তা ব্যারেজ পয়েন্টে নদীর পানিপ্রবাহ রেকর্ড করা হয়েছে ৫১ দশমিক ৪০ সেন্টিমিটার, যা বিপৎসীমার ৭৫ সেন্টিমিটার নিচ দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে (স্বাভাবিক ৫২ দশমিক ১৫ সেন্টিমিটার)। 

এদিকে তিস্তায় পানি বাড়তে থাকায় দেখা দিয়েছে নদী ভাঙন। গত দুই দিনে তিস্তা নদীর ডান তীর লালমনিরহাট সদর উপজেলার খুনিয়া গাছ ইউনিয়নের হরিনচড়া, গোকুন্ডা ইউনিয়নের চর গেকুন্ডা গ্রামে নদী ভাঙন দেখা দিয়েছে। গত দুই দিনে তিনশ বিঘা ফসলি জমি দশ থেকে পনেরটি বাড়ি নদী গর্ভে বিলীন হয়ে গেছে। ভাঙন হুমকিতে রয়েছে শতাধিক পরিবার। একদিকে তিস্তা পাড়ে ভাঙন অন্য দিকে বন্যা আতঙ্কে নির্ঘুম রাত কাটাচ্ছেন তারা। পানি উন্নয়ন বোর্ড ভাঙন প্রতিরোধে জিও ব্যাগ ফেললেও, যা ভাঙন রোধে অপ্রতুল।

চর গোকুন্ডা এলাকার ছকমল উদ্দিন বলেন, শুনেছি ভারতের নাকি বাঁধ ভেঙে তিস্তা নদীতে বন্যা শুরু হবে। কয়েক দিন থেকে একটু একটু পানি বাড়ার দিকে আছে। এবার পানির অনেক স্রোত, এতে চর গোকুন্ডার অনেক বাড়িঘর নদী গর্ভে বিলীন হয়ে গেছে। বর্তমানে আমরা বন্যা আর ভাঙন আতঙ্কে রয়েছি।

হাতীবান্ধা উপজেলার ডাউয়াবাড়ী এলাকার ফারুক হোসেন জানান, তিস্তা পানি বৃদ্ধি পেয়ে ভাঙন শুরু হয়েছে। প্রতি বছর ভাঙন কবলে পরে হাজার হাজার পরিবার নিঃস্ব হয়ে যায়। আমাদের ত্রাণ দরকার নেই তিস্তা নদী খনন করে স্থায়ী বাঁধ নির্মাণ করা হলে তিস্তা পাড়ের লোকজন স্থায়ীভাবে নিরাপদে বসবাস করতে পারবে।

গোকুন্ডা ইউপি চেয়ারম্যান রশিদ সরকার টোটন জানান, তিস্তা নদীতে তেমন বন্যা না হলেও অতিরিক্ত স্রোতের কারণে ৮ নং ওয়ার্ডে চর গোকুন্ডা সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয় মসজিদ সংলগ্ন এলাকায় তীব্র ভাঙন সৃষ্টি হয়েছে। গত বুধবার থেকে প্রায় দশ থেকে পনেরটি বাড়ি ভাঙনের শিকার হয়েছে। চোখের সামনে গ্রামের একের পর এক বাড়িঘর নদীগর্ভে বিলীন হতে থাকলেও কিছুই করা যাচ্ছে না।

লালমনিরহাটের পাউবো নির্বাহী প্রকৌশলী সুনীল কুমার জানান, তিস্তায় বন্যার আশঙ্কা নেই, তবে পানির স্রোত বেশি থাকায় কয়েকটি পয়েন্টে ভাঙন দেখা দিয়েছে। ভাঙন কবলিত এলাকায় জিও ব্যাগ ফেলে ভাঙন রোধ করার চেষ্টা করা হচ্ছে।

সাম্প্রতিক দেশকাল ইউটিউব চ্যানেল সাবস্ক্রাইব করুন

মন্তব্য করুন

Epaper

সাপ্তাহিক সাম্প্রতিক দেশকাল ই-পেপার পড়তে ক্লিক করুন

Logo

ঠিকানা: ১০/২২ ইকবাল রোড, ব্লক এ, মোহাম্মদপুর, ঢাকা-১২০৭

© 2024 Shampratik Deshkal All Rights Reserved. Design & Developed By Root Soft Bangladesh