কাজী দীপু, মুন্সীগঞ্জ
প্রকাশ: ০৩ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ০৭:৪৫ পিএম
আপডেট: ০৩ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ০৮:০৪ পিএম
মুন্সীগঞ্জের সিরাজদিখান উপজেলায় মুদ্রণ শিল্পনগরীর জন্য তিন ফসলি জমি অধিগ্রহণ বন্ধের দাবিতে মানববন্ধন, বিক্ষোভ মিছিল ও প্রতিবাদ সভা করেছে জমির মালিকপক্ষ।
আজ মঙ্গলবার (৩ সেপ্টেম্বর) দুপুর ১২ টার দিকে উপজেলার চিত্রকোট ইউনিয়নের খারশুর এলাকার ঢাকা-দোহার সড়কে এ কর্মসূচি পালন করা হয়। ঘণ্টা ব্যাপী এই কর্মসূচিতে কয়েক শতাধিক নারী-পুরুষ অংশ নিয়ে প্রথমে সড়কে মানববন্ধন রচনা করেন। এরপর বিক্ষোভ মিছিল করে ঢাকা-দোহার সড়কে প্রদক্ষিণ করে খারশুর বাজার এলাকায় প্রতিবাদ সভায় করে। এসময় পরিবেশ ও কৃষি জমি রক্ষায় বিভিন্ন স্লোগান দেয় এবং জীবন দিয়ে হলেও জমি রক্ষা করার আল্টিমেটাম দিয়েছেন বিক্ষোভকারীরা।
বিক্ষোভকারী গীতা বিশ্বাস বলেন, চিত্রকোট ইউনিয়নের খারশুর মৌজার খারশুর, লালপুর, নয়াগাঁও, গীরিনগর, খারখোলা, মরিচা, বেনুখালীর গ্রামে তিন ফসলি জমিতে ফসল উৎপাদন করে জীবিকা নির্বাক করছিল অন্তত ৫০০ পরিবার। তাই সরকার তিন ফসলি জমি অধিগ্রহণ করে নিলে এসব পরিবারের সবাই কর্মহীন হয়ে পড়বে। সঙ্গে পরিবেশের উপরও বিরূপ প্রভাব পড়বে।
বিক্ষোভে অংশ নেওয়া ননী গোপাল বিশ্বাস বলেন, যেখানে জমি অধিগ্রহণ করা হচ্ছে সেখানে আমার ৬৩ শতাংশ জমি আছে। ওই জমিতে আলু, সরিষা, ধান, পাট, মৌসুমী শাকসবজির চাষাবাদ করে যা আয় হয় তা দিয়ে আমার দুই ছেলে-মেয়ের পড়াশোনাসহ পাঁচজনের সংসার চলে। সরকার জমি নিয়ে গেলে না খেয়ে মরতে হবে। তাই বেঁচে থাকার তাগিদে প্রতিবাদ জানাতে স্ত্রী ও সন্তান নিয়ে কর্মসূচিতে এসেছি।
প্রতিবাদ সভায় খারশুর কৃষিজমি রক্ষা কমিটির আহবায়ক ও ১৫২ শতাংশ জমির মালিক মাসুদ রানা বিপ্লব দাবি করেন, ৭টি গ্রামের ৫ শতাধিক পরিবার কৃষি কাজের উপর নির্ভর করেই চলে। কিন্তু স্বৈরাচার হাসিনা সরকারের লুটেরা সালমান এফ রহমানের ইন্ধনে সরকার তিন ফসলি জমিতে মুদ্রণ শিল্পনগরী করার জন্য প্রকল্প তৈরি করে জোরপূর্বক আমাদের জমি অধিগ্রহণ করার উদ্যোগ নেয়। আর এর পেছনে স্থানীয় দালালরা সরকারি কর্মকর্তাদের সঙ্গে কাজ করছে।
বক্তব্যে তিনি আরো বলেন, আমরা তিন ফসলি কৃষি জমিতে কোন মিল কারখানা চাই না। তাই অন্তর্বর্তীকালীন সরকার উপদেষ্টার কাছে ভুক্তভোগী মানুষের প্রার্থনা, কৃষিজমি অধিগ্রহণ বন্ধ করে ফসল আবাদ করে পরিবারগুলো জীবিকা নির্বাহ করুক। তা না হলে নামমাত্র মূল্য দিয়ে জমি নেওয়ার চেষ্টা করলে আমরা জীবন দিয়ে জমি রক্ষা করবো।
প্রকল্প সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা যায়, মুন্সীগঞ্জের ২০১৬ সালে সিরাজদিখানের বড়বর্তা মৌজায় একশ একর জমিতে মুদ্রণ শিল্পের কাজ শুরু করে ২০২১ সালের ডিসেম্বরে কাজ শেষ হওয়ার কথা ছিল। জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটি (একনেক)। বাংলাদেশ ক্ষুদ্র ও কুটির শিল্প করপোরেশন প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করবে। সে সময় প্রকল্পের ব্যয় ধরা হয় ১৩৮ কোটি ৭০ লাখ টাকা। তবে বড়বর্তায় জমি অধিগ্রহণে সমস্যা দেখা দেওয়ায় ২০২২ সালের শুরুর দিকে খারশুর মৌজায় প্রকল্পের প্রস্তাবনা দেওয়া হয়। ২০২৩ সালে অনুমোদন হয় প্রকল্পটি। ২৬৪ কোটি ৫৫ লাখ টাকা ব্যয়ে ২০২৭ সালের জুন মাসে প্রকল্পের কাজ শেষ হওয়ার কথা রয়েছে।
প্রকল্প পরিচালক মোহাম্মদ নিজামউদ্দিন জানান, যারা জমির মালিক তারা দুই ফসলী তিন ফসলী জমি দাবি করেছিল। কৃষি বিভাগের মাধ্যমে জমিগুলো তদন্ত করে দেখা হয়েছে। জমিগুলোতে সারা বছর পানি থাকে। এগুলো এক ফসলী জমি। ইতিমধ্যে আমাদের অধিগ্রহণে ক্ষতিগ্রস্তদের ক্ষতিপূরণ প্রদানের কাজ শুরু হয়েছে। জমির মালিকদের চেক প্রস্তুত রয়েছে। আগামী সপ্তাহ থেকে বালুভরাটের কথা রয়েছে। আমরা হচ্ছি প্রত্যাশী সংস্থা, প্রশাসন আমাদেরকে জমি বুঝিয়ে দিলেই আমরা সেখানে কাজ করব।
সাম্প্রতিক দেশকাল ইউটিউব চ্যানেল সাবস্ক্রাইব করুন
© 2024 Shampratik Deshkal All Rights Reserved. Design & Developed By Root Soft Bangladesh