ঝিনাইদহ প্রতিনিধি
প্রকাশ: ০৯ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ০১:৩০ পিএম
আপডেট: ০৯ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ০১:৩৯ পিএম
ঝিনাইদহে টানা বৃষ্টির পর বৈরী আবহাওয়ায় মারাত্মক প্রভাব পড়তে শুরু করেছে কৃষিতে। এরই মধ্যে জমে থাকা বৃষ্টির পানি শুকাতে শুরু করেছে। তবে মারা যাচ্ছে মরিচ গাছসহ বিভিন্ন সবজির ক্ষেত। বর্তমানে মাঠে ধান, মুলা, শিম, লাউসহ অন্যান্য ফসল রয়েছে। নিচু জলাবদ্ধ এলাকার সবজির জমিতে বেশি সমস্যা দেখা গেছে। এমন অবস্থা অব্যাহত থাকলে সবজির ফলন কমে যেতে পারে বলে আশঙ্কা কৃষকদের।
কৃষি বিভাগ বলছে, বর্তমানে মাঠে মরিচসহ যেসব সবজি রয়েছে তা খরিপ- ২ মৌসুমের। বছরের মার্চ মাসের মাঝামাঝি সময় থেকে এপ্রিল মাসের মাঝামাঝি সময় পর্যন্ত এই মৌসুমের সবজির চারা রোপণ করা হয়। তীব্র তাপদাহের কারণে এবার সময়মত চারা রোপণ করতে পারেননি কৃষক। বেশির ভাগ কৃষক সেচের পানিতে চারাগাছ রোপণ করেন। জুনে যে বৃষ্টি হয়েছে তা পর্যাপ্ত নয়। আবার শেষদিকে টানা বৃষ্টি হয়েছে। তবে আশা করছি, আগামী কয়েক সপ্তাহের মধ্যে শীতের আগাম সবজি বাজারে আসতে শুরু করবে।
ঝিনাইদহ সদর উপজেলার নগরবাথান, হলিধানী, বাজার গোপালপুর, ডাকবাংলা, বেড়াশুলাসহ বিভিন্ন এলাকা ঘুরে দেখা গেছে, সবজি চাষিরা ক্ষতির সম্মুখীন। এসব এলাকায় কাঁচামরিচ, শিম, লাউ, পটোল, বেগুন, শসা ও মুলাসহ বিভিন্ন ধরনের সবজি চাষ হয়।
জেলা কৃষি বিভাগের তথ্য অনুযায়ী, মৌসুমে পাঁচ হাজার ৪২৯ হেক্টর জমিতে সবজির আবাদ থেকে ৯২ হাজার ৯৪৫ দশমিক ৪৮ মেট্রিক টন সবজি উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়। সেখানে সদর উপজেলায় সবজির আবাদ হয়েছে ১ হাজার ৭৪০ হেক্টর জমিতে। এর মধ্যে মরিচ ৫২৫ হেক্টর, লাউ ১২৯ হেক্টর, পটোল ৮২ হেক্টর, গ্রীষ্মকালীন শিম ২৫ হেক্টর জমিতে চাষ হয়েছে।
কৃষকরা জানান, গত প্রায় এক মাস ধরে আবহাওয়ার বৈরিতা গেল। কখনও মুষলধারে আবার কখনও ভারি বৃষ্টি হয়েছে। কয়েকদিন মাঝে রোদ হলেও আবার বৃষ্টি শুরু হয়। এতে সবজি ক্ষেতে পানি জমে যায়। গাছের গোড়ার মাটি স্যাঁতসেতে থাকায় ছত্রাক জাতীয় রোগসহ ফসলে বিভিন্ন রোগের প্রাদুর্ভাব বেড়ে যায়। সবচেয়ে বেশি ক্ষতির মুখে রয়েছে কাঁচামরিচ গাছ। নগরবাথান, হলিধানী, বাজার গোপালপুর, দূর্গাপুর, চোরকোল, মামুনশিয়া, কামতা কুবিরখালি এলাকার অনেক গাছই মরে গেছে। কোথাও আবার মরিচ গাছের পাতা শুকিয়ে যাচ্ছে, কমে যাচ্ছে ফলন। শিমের ফুল ঝরে যাচ্ছে, পাতা শুকানো রোগে আক্রান্ত হচ্ছে মুলা গাছ।
সদর উপজেলা মধুহাটি ইউনিয়নের দূর্গাপুর গ্রামের ডালিম হোসেন বলেন, ২ বিঘা জমিতে ৭০ থেকে ৮০ হাজার টাকা খরচ করে মরিচ গাছ লাগিয়েছিলাম। লাখ খানেক টাকার মরিচ বিক্রি করেছি। এরপর বৃষ্টি হয়ে গাছের গোড়ায় পচন লাগে। দোকান থেকে এনে ওষুধ দিয়েছিলাম, কিন্তু কোনো কাজে আসেনি। সব গাছ মরে গেছে।
চোরকোল গ্রামের আব্দুল মতিন বলেন, আবহাওয়ার কারণে তার ২ বিঘা জমির মরিচ গাছ মারা গেছে। অনেকের মরিচ গাছ মারা যাচ্ছে। ফলে কেউ কেউ তাড়াহুড়ো করে মরিচ তুলে ফেলছে।
ঝিনাইদহ সদর উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা নূর-এ-নবী বলেন, ক্ষেতের পানি দ্রুত অপসারণ করা না গেলে মরিচ গাছে ছত্রাকের আক্রমণ হতে পারে। মারা যেতে পারে অন্যান্য সবজি গাছ। এ জন্য জমির পানি দ্রুত নিষ্কাশনের ব্যবস্থা করতে হবে। গাছের গোড়ায় স্প্রে করতে হবে। মরিচ গাছে কোথাও কোথাও পোকামাকড়ের আক্রমণ হচ্ছে। এ ক্ষেত্রে কৃষক যদি পরিমিত মাত্রায় কীটনাশক ব্যবহার করেন, সমাধান পাবেন।
সাম্প্রতিক দেশকাল ইউটিউব চ্যানেল সাবস্ক্রাইব করুন
বিষয় : ঝিনাইদহ বৈরী আবহাওয়া কৃষি কৃষি বিভাগ
© 2024 Shampratik Deshkal All Rights Reserved. Design & Developed By Root Soft Bangladesh