পাবনা প্রতিনিধি
প্রকাশ: ১১ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ০৭:৫৭ পিএম
আপডেট: ১১ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ০৮:৪৬ পিএম
পাবনা সদর উপজেলার পদ্মা নদীতে বালু উত্তোলনের দৃশ্য দেখলে মনে হবে, এটি যেন কোনো নৌবন্দর। কিন্তু বাস্তবতা ভিন্ন। সেখানে প্রকাশ্যে ১৫ থেকে ২০টি ড্রেজার বসিয়ে অবৈধভাবে বালু উত্তোলন করছে একটি চক্র।
শতাধিক ট্রলারের মাধ্যমে এসব বালু চলে যাচ্ছে পাবনার পাকশী, সুজানগর, কাজিরহাট ঘাট, কুষ্টিয়ার পাংশা, কুমারখালী, রাজবাড়ীসহ বিভিন্ন স্থানে। সরেজমিন ঘুরে পাওয়া গেছে এমন তথ্য।
সংশ্লিষ্টরা বলছেন, প্রতিদিন অন্তত কোটি টাকার ওপরে বালু উত্তোলন করা হয় পদ্মায়। আগে এ কাজে আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের আধিপত্য ছিল। তবে দলটি ক্ষমতা হারানোর পর বিএনপির নেতাকর্মীরাও এতে ভাগ বসিয়েছেন বলে স্থানীয় বাসিন্দারা অভিযোগ জানিয়েছেন। এভাবে পাবনা সদর উপজেলার ভাঁড়ারায় পদ্মা নদীতে বালু উত্তোলনের মহাযজ্ঞ চলছে। এতে ভাঙনও তীব্র হয়েছে। কৃষকের শত শত বিঘা ফসলি জমি নদীতে বিলীন হয়ে যাচ্ছে বলে জানান কৃষকেরা।
অভিযোগ উঠেছে, নদীর এপার ও ওপারের স্থানীয় প্রশাসন ও নেতাদের ম্যানেজ করে পাবনা ও কুষ্টিয়ার প্রভাবশালী সিন্ডিকেটের মাধ্যমে বালু উত্তোলন চলছে। নদীর তীর ঘেষে বালু উত্তোলনের ফলে তীব্র ভাঙন দেখা দিয়েছে।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একাধিক কৃষকের ভাষ্য, নৌকার ওপর অস্ত্র নিয়ে তারা বালু উত্তোলন করছে। বছরের পর বছর ধরে এ কাজ চলছে।
তবে প্রশাসনের কোনো উদ্যোগ দেখছেন না অভিযোগ করে এক কৃষক বলেন, আমরা প্রতিবাদ করলেই দেওয়া হচ্ছে প্রাণনাশের হুমকি। এসব অন্যায়ের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার বা দেখার কেউ নেই।
অনুসন্ধানে জানা যায়, পাবনা জেলার সুজানগর উপজেলার সোহেল শিকদার ও আক্তার শিকদার, কুষ্টিয়ার খোকশা উপজেলার আকমল মন্ডল ও রানা মন্ডল, পাংশার হাবাবপুর ইউনিয়নের লতিফ খান, জেমস খান, রাকিব খান ও রইচ উদ্দিনের নিয়ন্ত্রণে প্রভাবশালী সিন্ডিকেটের নেতৃত্বে বালু উত্তোলন চলছে।
এ অভিযোগের বিষয়ে জানতে সোহেল শিকদার ও আক্তার শিকদারের মোবাইলে ফোন দিয়েও তাদের পাওয়া যায়নি এবং লতিফ খান, জেমস খান, রাকিবের সাথেও যোগাযোগ করলে তাদের মুঠোফোন বন্ধ পাওয়া যায়।
এ অভিযোগের বিষয়ে রইচ উদ্দিনের সাথে মুঠোফোনে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, আমি এ বালু তোলার সাথে জড়িত নেই। আমার বিরুদ্ধে মিথ্যা তথ্য দিয়েছে। তবে স্থানীয়রা অনেকেই কাজির হাট ঘাটে লোকাল বালু তুলছেন। আপনি কাজির হাট ঘাটে দাঁড়ালে দেখতে পাবেন প্রতিদিন অনেক বালুর টলার যায়।
বালু তোলার বিষয়ে পাবনার ভাঁড়ারা ইউপি চেয়ারম্যান সুলতান মাহমুদ খান বলেন, এক মাস ধরে বালু উত্তোলন করা হচ্ছে। কিন্তু এসবের সঙ্গে আমি জড়িত নই। আমার জড়িত থাকার অভিযোগ মিথ্যা।
প্রকাশ্যে বালু উত্তোলনের বিষয়ে জানতে পাবনা সদর উপজেলার নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) শামীমা খাতুনের মুঠোফোনে বারবার ফোন দিলেও তিনি রিসিভ করেননি।
এ বিষয়ে সুজানগর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মীর রাশেদুজ্জামান রাশেদ জানান, পদ্মায় নিয়মিত অভিযান চলছে এবং নিয়মিত মামলা দায়েরের কার্যক্রম চলমান আছে।
এবিষয়ে পাবনার নাজিরগঞ্জ নৌ পুলিশ ফাঁড়ির ইনচার্জ সাইদুর রহমানের সাথে মুঠোফোনে যোগাযোগ করা হলে তিনি অভিযোগ অশিকার করে বলেন, আমাদের অভিযান চলমান আছে। আজকেও একটা ড্রেজার জব্দ করা হয়েছে। তবে আসামিরা পালিয়ে গেছেন। এ বিষয়ে মামলা প্রক্রিয়াধীন রয়েছে।
স্থানীয় নদী পড়ের বসতীরা ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের কাছে আকুল আবেদন জানান এই বালু উত্তোলন বন্ধ করার জন্য।
সাম্প্রতিক দেশকাল ইউটিউব চ্যানেল সাবস্ক্রাইব করুন
বিষয় : পাবনা পদ্মা নদী বালু উত্তোলন
© 2024 Shampratik Deshkal All Rights Reserved. Design & Developed By Root Soft Bangladesh