বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে অংশ নিয়ে পুলিশের ছোড়া গুলি এখনো শরীরে বয়ে বেড়াচ্ছেন সাদিকুল ইসলাম রাব্বি (২৭)। সদর উপজেলার ল' কলেজের সামনে থেকে পুলিশ গুলি করে তাকে। পুলিশের ছোড়া শটগানের ছড়রা গুলি লাগে তার মাথাসহ সারা শরীরে। এখনো পুলিশের ছোঁড়া ১৭৩ গুলি শরীরে বহন করছেন রাব্বি।
সাদিকুল ইসলাম রাব্বি মানিকগঞ্জ সদর উপজেলার দিঘি ইউনিয়নের বাটভাউর এলাকার মৃত রফিকুল ইসলাম ছেলে।
জানা গেছে, গত ৪ আগস্ট ছাত্র-জনতার আন্দোলনে গিয়ে ল' কলেজের সামনে থেকে গুলিবিদ্ধ হন। গুরুতর আহত রাব্বিকে সরকারি হাসপাতালে নিয়ে গেলেও চিকিৎসা পাননি তিনি। প্রাইভেট হাসপাতালে চিকিৎসা নেওয়ার জন্য ভর্তি হলে সেখানেও পুলিশের ভয়ে পালাতে বলেন চিকিৎসকরা। এরপর শিবালয়ের উথুলী স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স হাসপাতালে ভর্তি হয়ে চিকিৎসা নেন তিনি। চারদিন চিকিৎসা শেষে বাড়ি ফেরেন রাব্বি। হাসপাতাল থেকে কিছু গুলি অপসারণ করা হলেও এখনো তার শরীরে এবং মাথায় ১৭৩টি ছড়রা গুলি রয়েছে। অর্থের অভাবে বাকি চিকিৎসা সম্পন্ন হয়নি তার।
আহত রাব্বির বাবা মারা যাওয়ার পর তাদের সংসারে তিনি ছাড়া আয় করার মতো কোন লোক নেই। এমতাবস্থায় তার উপর পুলিশের নির্যাতন। মা-বোন আর স্ত্রী এবং ৭ মাসের শিশু কন্যা নিয়ে মানবেতর জীবনযাপন করছেন তিনি।
আহত সাদিকুল ইসলাম রাব্বি বলেন, গত ৪ আগস্ট দুপুরে ল' কলেজ এলাকায় পুলিশ আমার উপর শটগান দিয়ে গুলি ছুড়ে। আমাকে আহত অবস্থায় মানিকগঞ্জ ২৫০ শস্যা বিশিষ্ট জেনারেল হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। ওই হাসপাতালের কর্তৃপক্ষ আমাকে চিকিৎসা না দিয়ে ঢাকা রেফার্ড করে দেন। পরে বিকেলে আমি মুন্নু মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি হই। ওই হাসপাতালে রাত ১১ টার পর পুলিশ তল্লাশি চালায়। পরে কোনভাবে মুন্নু হাসপাতাল থেকে বের হয়ে উথুলি স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স হাসপাতালে চারদিন চিকিৎসা নেই। শরীর থেকে অনেকগুলো বুলেট অপারেশন করে বের করা হয়েছে। বর্তমানে আমার শরীরে ১২২টি এবং মাথায় ৫১টি ছড়রা গুলি রয়েছে। অপারেশন করতে অনেক টাকার প্রয়োজন। আমি ছাড়া আমার সংসারে আয় করার মতো কোন লোক নেই। মা-বোন আর আমার স্ত্রী এবং ৮ মাসের শিশু কন্যা নিয়ে অনেক কষ্টে আছি।
বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন মানিকগঞ্জের প্রধান সমন্বয়ক ওমর ফারুক বলেন, গত ৪ আগস্ট পুলিশ রাব্বির উপর শটগান দিয়ে গুলি করে। এতে আহত হন রাব্বি। আমি তার চিকিৎসার জন্য জেলা প্রশাসকের কাছ থেকে কিছু টাকা নিয়ে দিয়েছি। তার শরীরে বর্তমানে অনেক বুলেট রয়েছে। অপারেশন করতে ব্যয়বহুল খরচ হবে। আমরা বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সকলেই তার পাশে আছি। খুব শিগগিরই আওয়ামী লীগের দোসরদের বিরুদ্ধে মামলা করা হবে বলে জানান তিনি।
মানিকগঞ্জ জেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক এস এ জিন্নাহ কবির বলেন, তার চিকিৎসার জন্য আমাদের একটি সিদ্ধান্ত হয়েছে। দুই একদিনের মধ্যে তাকে চিকিৎসার জন্য হাসপাতালে ভর্তি করা হবে।
সাম্প্রতিক দেশকাল ইউটিউব চ্যানেল সাবস্ক্রাইব করুন
© 2024 Shampratik Deshkal All Rights Reserved. Design & Developed By Root Soft Bangladesh