শেরপুরে বন্যা পরিস্থিতির অবনতি
রফিক মজিদ, শেরপুর
প্রকাশ: ০৬ অক্টোবর ২০২৪, ১১:০৩ এএম
আপডেট: ০৬ অক্টোবর ২০২৪, ০২:৫৫ পিএম
ভারতের মেঘালয় থেকে নেমে আসা পাহাড়ি ঢল আর অব্যাহত বৃষ্টিতে শেরপুরে বন্যা পরিস্থিতির অবনতি হয়েছে। শ্রীবরদী, ঝিনাইগাতী ও নালিতাবাড়ীর উপজেলার পর নতুন করে পানি উঠছে সদর ও নকলা উপজেলাতে। এতে জেলায় প্রায় দুই লাখ মানুষ বন্যার কবলে পড়েছে।
বন্যার পানিতে ডুবে এরইমধ্যে নারী, বৃদ্ধ ও কিশোরসহ মোট পাঁচজনের মৃত্যু হয়েছে। আর উদ্ধার অভিযানে কাজ করছে সেনাবাহিনী, বিজিবি, ফায়ার সার্ভিস ও বিভিন্ন স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন।
এছাড়া পানির স্রোতে ভেসে গেছে শত শত পুকুরের মাছ, কাঁচা ঘরবাড়ি, গাছগাছালি, গবাদি পশু, বিধ্বস্ত হয়েছে কয়েকটি মহাসড়কসহ অসংখ্যা গ্রামীণ কাঁচা-পাকা সড়ক। কার্যত বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছে অনেক এলাকা। সংকট তৈরি হয়েছে খাদ্য ও বিশুদ্ধ পানির।
জানা যায়, বৃহস্পতিবার রাত নয়টার পর থেকে শুরু হয় টানা ভারী বর্ষণ। রাতভর বর্ষণের ফলে বিপৎসীমার ওপরে উঠে যায় জেলার বিভিন্ন নদ-নদীর পানি। এসব নদীর বাঁধ উপচে এবং অসংখ্য স্থানে বাঁধ ভেঙে প্রবল বেগে লোকালয়ে প্রবেশ করে বানের পানি। সকাল হতেই বাড়িঘর, রাস্তা-ঘাট সব তলিয়ে যায়। আকস্মিক বন্যায় মানুষ দিশেহারা হয়ে পড়ে। পানিতে তলিয়ে যায় বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ও স্বাস্থ্যসেবা দানকারী প্রতিষ্ঠান। এতে ঝিনাইগাতি উপজেলা পরিষদ ও সদর বাজারসহ অন্তত ৭টি ইউনিয়ন বন্যা কবলিত হয়ে পড়ে।
নালিতাবাড়ী উপজেলার সীমান্তবর্তী পাহাড়ি ইউনিয়নগুলো ছাড়াও নদী তীরবর্তী অন্যান্য ইউনিয়ন ও নিম্নাঞ্চলের ইউনিয়নগুলো প্লাবিত হয়ে পড়ে।
শুক্রবার রাত থেকে পাহাড়ি নদীগুলোতে পানির তীব্রতা কিছুটা কমে এলেও ভাটি অঞ্চলের নতুন নতুন এলাকা প্লাবিত হতে শুরু করে। সবমিলিয়ে অন্তত ১০টি ইউনিয়ন প্লাবিত হয় এ উপজেলার।
অন্যদিকে শ্রীবরদী উপজেলায় তিনটি ইউনিয়ন পুরোপুরি প্লাবিত হয়েছে। শনিবার রাতের বৃষ্টি আর পাহাড়ি ঢল নিম্নাঞ্চলে নেমে আসায় সদর উপজেলার গাজিরখামা, ধলা, পাকুরিয়া, বাজিতখিলা ইউনিয়নের প্রায় ৩০টি গ্রামে বন্যা দেখা দিয়েছে। পানি বন্দী হয়ে পড়েছে এখানকার কয়েক হাজার মানুষ। আর একই পরিস্থিতিতে নকলা উপজেলার প্রায় পাঁচটি ইউনিয়নের মানুষ পানিবন্দি হয়ে পড়েছে।
গত শুক্রবার দুপুরে উপজেলার অভয়পুর গ্রামের বাছির উদ্দিনের ছেলে হাতেম আলী (৩০) ও সহোদর আলমগীর (১৬) চেল্লাখালী নদীর ভেঙে যাওয়া পানির স্রোতে নিখোঁজ হয়। পরে শনিবার (৫ অক্টোবর) পানি কিছুটা কমে আসায় বিকেল চারটার দিকে কুতুবাকুড়া গ্রামের ধান ক্ষেত থেকে ওই দুই সহোদরের মরদেহ উদ্ধার করা হয়। একইভাবে শুক্রবার বন্যার পানিতে ডুবে মারা যান উপজেলার বাঘবেড় বালুরচর গ্রামের মানিক মিয়ার স্ত্রী ওমিজা বেগম। একইদিন সন্ধ্যায় খলিসাকুড়া গ্রামে বন্যার পানিতে ডুবে মারা যান বৃদ্ধ ইদ্রিস আলী। এছাড়া আরো একজনের মৃত্যুর খবর পাওয়া গেলেও এখনো পর্যন্ত তার নাম-পরিচয় পাওয়া যায়নি। এখনো নিখোঁজ রয়েছেন আরো একজন।
এদিকে বানভাসি মানুষকে উদ্ধারে শুক্রবার থেকেই কাজ করছে সেনাবাহিনী, ফায়ার সার্ভিস, বিজিবি ও বিভিন্ন স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন। শনিবার দিনভর স্পিডবোট, নৌকা, ভেলা, টিউব ইত্যাদি নিয়ে চলে বন্যায় আটকে পড়াদের উদ্ধার অভিযান। এছাড়াও শুকনা খাবারসহ অন্যান্য খাদ্যসামগ্রী বিতরণ করা হচ্ছে বানভাসীদের মাঝে। এসব কাজে অংশ নিয়েছে উপজেলা প্রশাসনসহ বিভিন্ন রাজনৈতিক দল ও সংগঠন।
সাম্প্রতিক দেশকাল ইউটিউব চ্যানেল সাবস্ক্রাইব করুন
© 2024 Shampratik Deshkal All Rights Reserved. Design & Developed By Root Soft Bangladesh