সফল কৃষি উদ্যোক্তা মোস্তফা

সালটা ছিল ২০২০। প্রচলিত ফসলের বাইরে কী চাষ করা যায়, যাতে ফলন ভালো হবে আর বিক্রি কতে গেলে ভালো দাম পাওয়া যাবে- এমন ভাবনা ঘুরপাক খাচ্ছিল মোস্তফা কামালের মাথায়। সে বছরের মাঝামাঝিতে পেয়ে গেলেন এর উত্তরও। শুরুটা তখন থেকেই। তার এলাকায় নতুন এক ফসলের আবাদ শুরু করেন তিনি, যার নাম কাসাভা। দেশের বেশ কিছু জেলাতে এর আবাদ আগে থেকে হলেও মোস্তফা কামালই প্রথম পঞ্চগড়ের দেবীগঞ্জে কাসাভা চাষ শুরু করেন। পাশাপাশি শুরু করেন উন্নত জাতের মিষ্টি আলুর চাষ। এর পর আর ফিরে তাকাতে হয়নি উদ্যোক্তা মোস্তফা কামালকে। গত চার বছরে তার কাসাভা ও মিষ্টি আলু চাষের পরিধি অনেক বেড়েছে; যোগ করেছেন নতুন ফসলও। 

শুধু ফসল উৎপাদন নয়, মনোযোগ দিয়েছেন উন্নত জাতের চারা উৎপাদনে। গত বছর দেশের ৩০টি জেলায় কাসাভা ও মিষ্টি আলুর চারা সরবরাহ করেছেন তিনি। সে বছর সাত লাখ কাসাভা ও ৬০ লাখ মিষ্টি আলুর কাটিং বিক্রি করেছেন। আর্থিকভাবে স্বাবলম্বী হওয়ায় কৃষিপাড়ায় মোস্তফা কামাল এখন পরিচিত মুখ। সফল উদ্যোক্তা হিসেবে পঞ্চগড়ে কাসাভা চাষের সঙ্গে তার নাম জড়িয়ে আছে নিবিড়ভাবে। প্রথমে নিজ বাড়ির এলাকা কাদেরের মোড়ে কাসাভা চাষ করেন। বছর যেতেই বেড়েছে চাষের পরিধি। প্রথম দিকে অন্যের জমি লিজ নিয়ে শুরু করেন কাসাভা চাষ। ওকিনেওয়া ও মুরাসাকি জাতের জাপানি মিষ্টি আলুর কাটিং সংগ্রহ করে চাষ শুরু করেন মোস্তফা। 

কাসাভা ও মিষ্টি আলু প্রক্রিয়াজাতকরণের জন্য কিনেছেন স্লাইসার, ক্রাশিং ও ড্রাইং মেশিন। এসব মেশিনে মিষ্টি আলু ও কাসাভার আটা তৈরি করে বাজারজাত করছেন তিনি। বিগত বছরগুলো কাসাভা চাষে আর্থিক সমৃদ্ধির সঙ্গে সঙ্গে পরিকল্পনাতেও পরিবর্তন আনেন মোস্তফা। এই বছর ৯০ বিঘা জমিতে কাসাভা ছাড়াও ১০ বিঘা জমিতে মাদ্রাজি জাতের ওলকচুর চাষ করেছেন। আশা করছেন ৪০০ মণ ওলকচু পাবেন। প্রতিকেজি ওলকচু ১০০ টাকা দরে বিক্রি হয়। জাপানি মুরাসাকি, জাপানি ওয়াকিনওয়া জাতের মিষ্টি আলুর চাষ করেছেন ৪০ বিঘা জমিতে। তিনি সারাদেশে মিষ্টি আলুর কাটিং (চারা) সরবরাহ করে থাকেন। এবার ২৫ লাখ মিষ্টি আলুর কাটিং সরবরাহ করতে পারবেন বলে আশা করছেন। প্রতিটি কাটিং ২ টাকা করে বিক্রি হয়।

ভবিষ্যতে কাসাভা থেকে পলিব্যাগের বিকল্প নবায়নযোগ্য ব্যাগ ও অন্যান্য সামগ্রী তৈরি করবেন বলে পরিকল্পনা আছে মোস্তফার। এই বিষয়ে নিচ্ছেন বিশেষজ্ঞদের পরামর্শ। 

কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের কন্দাল ফসল উন্নয়ন প্রকল্পের পরিচালক মকলেছুর রহমান বলেন, মোস্তফা কামাল তিন বছরেই একজন সফল কৃষি উদ্যোক্তা হিসেবে নিজের অবস্থান তৈরি করেছেন। আমরা তার মাধ্যমেই সারাদেশে মিষ্টি আলু ও কাসাভার বীজ সরবরাহ করছি।

কাসাভা একটি উৎকৃষ্ট মানের খাদ্যবস্তু। পৃথিবীর অনেক দেশের প্রধান খাদ্য এটি। আমাদের দেশে শিমুল আলু নামে পরিচিত এই ফসল মার্চ-এপ্রিলে রোপণ করলে ভালো ফলন পাওয়া যায়। অনুর্বর জমিতে খরা-সহিষ্ণু ফসলটির প্রতি বিঘায় ৮ থেকে ১০ টন ফলন পাওয়া সম্ভব।

দেবীগঞ্জ উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা নাঈম মোর্শেদ বলেন, দেশের ক্রমবর্ধমান খাদ্য চাহিদা পূরণে ভূমিকা রাখতে পারে কাসাভা। তাই এর ফলন ছড়িয়ে দিতে মোস্তফাকে আমরা সার্বিক সহযোগিতা দিয়ে যাচ্ছি। 







সাম্প্রতিক দেশকাল ইউটিউব চ্যানেল সাবস্ক্রাইব করুন

মন্তব্য করুন

Epaper

সাপ্তাহিক সাম্প্রতিক দেশকাল ই-পেপার পড়তে ক্লিক করুন

Logo

ঠিকানা: ১০/২২ ইকবাল রোড, ব্লক এ, মোহাম্মদপুর, ঢাকা-১২০৭

© 2024 Shampratik Deshkal All Rights Reserved. Design & Developed By Root Soft Bangladesh