কারো জীবন বাঁচাতে রক্ত, চিকিৎসা, সহযোগিতা সব প্রয়োজনেই যাকে কাছে পাওয়া যায়, তিনি ময়মনসিংহের কাব্য সুমী সরকার। পেশায় একজন শিক্ষক হলেও দীর্ঘদিন ধরে জড়িত রয়েছেন সামাজিক বিভিন্ন কর্মকাণ্ডে। ৬০ জন প্রতিবন্ধী ছেলেমেয়ের সুখে-দুঃখের নিবেদিতপ্রাণ তিনি।
নিজের আরাম-আয়েশ বিসর্জন দিয়ে এসব প্রতিবন্ধীসহ সমাজের অসহায় মানুষের পাশে দাঁড়ানো যেন তার গুরুদায়িত্ব। তবে এসব ক্ষেত্রে তার বড় শক্তি পরিবারের সদস্যদের প্রেরণা ও সহযোগিতা। ফুলবাড়িয়ার রাধাকানাই ইউনিয়নে খালইপুড়া গ্রামে প্রতিবন্ধীদের স্থায়ী বাসস্থানের জন্য নিজের ২১ শতাংশ জমি লিখে দিয়েছেন। সেখানে বহুতল ভবন নির্মাণেরও পরিকল্পনা রয়েছে তার।
করোনার সময়ে নারী করোনা-যোদ্ধা হিসেবে বিভিন্ন মহলে পরিচিতি পান কাব্য সুমী সরকার। ৭০ জন নারীর লাশ দাফন-কাফনে অংশগ্রহণ করেন। নগরীর চরপাড়ার অসহায় আব্দুল আহাদ, রাধাকানাইয়ের মো. নাদিমের সাত লাখ টাকা ব্যয়ে হার্টের অপারেশন করিয়ে মানবিকতার পরিচয় দেন তিনি। বর্তমানে দশম শ্রেণির ছাত্র মো. হিমেলের ক্যানসার চিকিৎসায় সহযোগিতা করছেন।
কাব্য সুমী সরকার ২০১৭ সালের ৯ জুন প্রতিষ্ঠা করেন আনোয়ারা করিম সমাজকল্যাণ সংস্থা। এই সংগঠনটির আওতায় ফুলবাড়িয়ার রাধাকানাইয়ের ৫০ জন এবং সদর উপজেলার ১০ জনসহ মোট ৬০ জন প্রতিবন্ধীর দায়দায়িত্ব বহন করছেন তিনি। তার সহযোগিতায় ৪০ জন প্রতিবন্ধী সরকারি ভাতার আওতায় এসেছে। এ ছাড়া প্রত্যেক প্রতিবন্ধীকে তিনি মাসিক ৩০০ টাকা করে সহযোগিতা করছেন। তাদের পরিবারের কেউ অসুস্থ হলেও সর্বোচ্চ সহযোগিতা করার চেষ্টা করেন। রক্ত দিয়ে মানুষের জীবন বাঁচাতে প্রতিষ্ঠা করেন ব্রহ্মপুত্র ব্লাড কল্যাণ সোসাইটি। সংগঠনটির চার শতাধিক রক্তদাতা রয়েছেন। এ পর্যন্ত ৩২৫ জনকে তার সংগঠনের উদ্যোগে রক্ত দেওয়া হয়েছে।
কাব্য সুমী সরকার বলেন, ‘মানুষকে ভালোবাসার মধ্যে একটা সুখ আছে। আমি তা পাই প্রতিবন্ধীদের ভালোবেসে। ব্যস্ততার কারণে দুই-এক দিন এদের খোঁজখবর না নিতে পারলে খারাপ লাগে। ওরা প্রত্যেকে আমার সন্তানের মতো। জীবনের শেষ মুহূর্ত পর্যন্ত মানুষের সেবা করে কাটাতে চাই।’
তিনি আরো বলেন, প্রতিবন্ধীদের মাসিক খরচ জোগাড় করা হয় একটি অটোরিকশা ভাড়ার টাকা এবং নগরীর গাঙ্গিনারপাড় একটি শোরুম রয়েছে, সেটির আয় থেকে। এ ছাড়া ক্যানসার আক্রান্তসহ গুরুতর অসুস্থ চারজনকে ঢাকায় নিয়ে অপারেশন করিয়েছি নিজের পাশাপাশি অন্যদের সাহায্য নিয়ে।
তাৎক্ষণিকভাবে কারো কোনো চিকিৎসার প্রয়োজন হলে কিংবা সহযোগিতার দরকার হলে নিজের জমানো টাকা অথবা বিত্তবানদের সহযোগিতায় পাশে দাঁড়ানোর চেষ্টা করি।
হাসিনা বেগম নামের এক নারী বলেন, ‘আমরা গরিব অসহায়। আমার ছেলে নাদিমের হার্টের সমস্যা হলে সুমী তিন লাখ টাকা সংগ্রহ করে চিকিৎসা করিয়েছেন। এখন ছেলে পুরোপুরি সুস্থ। তার জন্য ছেলেটা বেঁচে আছে। আমরা তার প্রতি কৃতজ্ঞ।’
চার প্রতিবন্ধীর বাবা মো. ইব্রাহিম বলেন, ‘প্রতিবন্ধী চার মেয়েকে নিয়ে খুব সমস্যায় পড়েছিলাম। কিন্তু সুমী আমাদের পাশে দাঁড়ানোর পর ঘর, ভ্যান, গাভি এবং দুই মেয়ের ভাতার ব্যবস্থা হয়েছে। শুধু আমরাই নই, এলাকার সকল প্রতিবন্ধীসহ অসহায়দের ভরসার জায়গা তিনি।’
সাম্প্রতিক দেশকাল ইউটিউব চ্যানেল সাবস্ক্রাইব করুন
© 2024 Shampratik Deshkal All Rights Reserved. Design & Developed By Root Soft Bangladesh