বেনাপোলে অনির্দিষ্টকালের পরিবহন ধর্মঘট, দুর্ভোগে যাত্রীরা

যশোরের বেনাপোল স্থলবন্দরে চলাচল করা সব রুটের দূরপাল্লার পরিবহন মালিকরা অনির্দিষ্টকালের ধর্মঘট ডেকেছে। বেনাপোল পৌর কর্তৃপক্ষের হঠকারী সিদ্ধান্তের কারণে শনিবার (২৩ নভেম্বর) সকাল থেকে এই ধর্মঘট ডাকা হয়। এতে ভোগান্তিতে পড়েছেন ভারত থেকে দেশে ফেরা যাত্রীরা।

জানা গেছে, পরিবহন সেবা বন্ধ থাকায় যাত্রীরা বেনাপোলের বিভিন্ন স্থানে আশ্রয় নিয়েছেন। নারী, শিশু, বয়োজ্যেষ্ঠ ও রোগীদের সবচেয়ে বেশি ভোগান্তি পোহাতে হচ্ছে।  অনেকে বেনাপোল থেকে ইজিবাইক ও লোকাল বাসে যশোরে যাচ্ছেন। এরপর সেখান থেকে ট্রেনে করে ঢাকাসহ বিভিন্ন গন্তব্যে রওনা হচ্ছেন।

বেনাপোলে যানজট নিরসনের লক্ষ্যে গত সপ্তাহে যশোরের জেলা প্রশাসকের সঙ্গে স্থানীয় লোকজন ও পরিবহন মালিকদের বৈঠক হয়।যাত্রীদের চেকপোস্ট থেকে ৪ কিলোমিটার দূরের পৌরসভার টার্মিনালে নামিয়ে দেওয়ার সিদ্ধান্ত হয় বৈঠকে। বেনাপোল চেকপোস্টে বন্দরের নিজস্ব টার্মিনাল থাকা সত্ত্বেও এমন হঠকারী সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। কখনো কখনো যাত্রীদের রাত ৩টায় সেখানে নামিয়ে দেওয়া হয়েছে। এতে ৩০ কোটি টাকা ব্যয়ে নির্মিত টার্মিনালটি অব্যহৃত অবস্থায় পড়ে আছে। ফলে বন্দরের টার্মিনাল থেকে কোটি কোটি টাকার রাজস্ব বঞ্চিত হচ্ছে সরকার।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, গত ২০ বছর ধরে ঢাকা ও চট্টগ্রাম থেকে ছেড়ে আসা পরিবহনগুলো যাত্রীদের সরাসরি চেকপোস্টে বন্দরের টার্মিনালে নামিয়ে দিয়ে আসছে। পরে খালি পরিবহনগুলো বন্দরের টার্মিনালে রাখা হতো। ফলে বন্দরে যেমন রাজস্ব আয় হতো, তেমনি যাত্রীরাও পায়ে হেটে ইমিগ্রেশনে প্রবেশ করতে পারতেন।    

যাত্রীদের অভিযোগ, ভারতীয় চেকপোস্টে পেট্রাপোলে যাত্রীদের সুবিধার্থে ইমিগ্রেশনের সাথেই নির্মাণ করা হয়েছে যাত্রী পরিবহন টার্মিনাল। বাংলাদেশে বর্ডারে চালু টার্মিনাল বন্ধ করে দিয়ে ৪ কিলোমিটার দূরে অবস্থিত টার্মিনালে পাঠানো হচ্ছে যাত্রীদের। এতে চরম ভোগান্তিতে পড়তে হচ্ছে যাত্রীদের।

ভুক্তভোগী জিয়াউর রহমান জানান, তিনি ঢাকা থেকে এসেছেন। তাকে রাত ৩টায় বর্ডার থেকে ৪ কিলোমিটার দূরের পৌর টার্মিনালে  নামিয়ে দেওয়া হয়। ২ ঘণ্টা একটি চায়ের দোকানে বসে থাকেন তিনি। সকাল হওয়ার পর ইজিবাইক নিয়ে বর্ডারে আসেন।

এ ব্যাপারে পরিবহন সমিতির সভাপতি বাবলুর রহমান বাবু জানান, কয়েকদিন আগে যশোর জেলা প্রশাসকের সাথে আমাদের এবং স্থানীয় সুধী সমাজের বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। বৈঠকে যানজটের কথা বলে সব যাত্রীবাহী পরিবহন চেকপোস্টের টার্মিনাল থেকে সরিয়ে নিয়ে বেনাপোল থেকে ৪ কিলোমিটার দূরের কাগজপুকুর টার্মিনাল নেওয়া হয়। গাড়ি সেখান থেকেই ছাড়ার নির্দেশনা দেয় প্রশাসন। 

বৈঠকের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী, ঢাকা থেকে রাতে ছেড়ে আসা বাসগুলোর যাত্রীদের বেনাপোল চেকপোস্টে নামিয়ে দিয়ে পৌর বাস টার্মিনালে আসার কথা। কিন্তু গত শুক্রবার দিবাগত রাত ৩টার দিকে দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে আসা দূরপাল্লার বাসগুলো যাত্রীদের পৌর টার্মিনালে নামিয়ে দেয়। এ সময় যাত্রীরা নানা ধরনের হয়রানি শিকার হয়।

প্রশাসনের এ ধরনের আচরণের প্রতিবাদে পরিবহন মালিক সমিতি গতকাল রাতে কোনো গাড়ি ছাড়েনি এবং বেনাপোল থেকে সব ধরনের বাস এবং দূরপাল্লার বাস বন্ধ রেখেছে মালিক সমিতি।

বেনাপোল পৌরসভার প্রশাসক কাজী নাজি হাসান বলেন, রাত ১২টা থেকে সকাল ৬টা পর্যন্ত যাত্রী নিয়ে সব দূরপাল্লার পরিবহন বেনাপোল চেকপোস্টে যেতে পারবে। বন্দরে যানজট নিরসনের জন্যই এ সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।

বন্দরের পরিবহন টার্মিনাল খালি অবস্থায় পড়ে থাকার বিষয়ে তিনি বলেন, এটা আমাদের বিষয় নয়।

সাম্প্রতিক দেশকাল ইউটিউব চ্যানেল সাবস্ক্রাইব করুন

মন্তব্য করুন

Epaper

সাপ্তাহিক সাম্প্রতিক দেশকাল ই-পেপার পড়তে ক্লিক করুন

Logo

ঠিকানা: ১০/২২ ইকবাল রোড, ব্লক এ, মোহাম্মদপুর, ঢাকা-১২০৭

© 2024 Shampratik Deshkal All Rights Reserved. Design & Developed By Root Soft Bangladesh