নিষিদ্ধের একমাসে সফলতা নেই বরিশালে, হাত বাড়ালেই মিলছে পলিথিন

পরিবেশের ভারসাম্য রক্ষায় গত ১ নভেম্বর থেকে দেশের বাজারগুলোতে পলিথিন নিষিদ্ধ করেছে সরকার। নিষেধাজ্ঞার একমাস পূর্তি হয়েছে গত শনিবার (৩০ নভেম্বর)। কিন্তু বরিশালের বাজারগুলোতে এখনো কমেনি পলিথিনের ব্যবহার।

বরং প্রশাসনের তদারকির অভাবে মানুষ ভুলতে বসেছে পলিথিন নিষেধাজ্ঞার কথা! কেননা এখনো ‘বাজার থেকে সুপারসপ’ প্রায় সবখানে হাত বাড়ালেই মিলছে নিষিদ্ধ পলিথিন। আবার পলিথিন নিষিদ্ধের আদেশ বাস্তবায়নে গত এক মাসে প্রশাসনের সফলতাও প্রায় শূণ্যের কোটায়।

জানা গেছে, গত ১ নভেম্বর থেকে বাজারগুলোতে পলিথিন ব্যাগ নিষিদ্ধ করে পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয়। এই নির্দেশ অমান্য হলে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণের নির্দেশনা রয়েছে স্থানীয় প্রশাসনে।

এমন নির্দেশনা পেয়ে গত ৩ নভেম্বর থেকে বরিশালের বাজারগুলোতে শুরু হয় নিষিদ্ধ পলিথিন বিরোধী অভিযান। ওইদিন বরিশাল নগরীর নতুন বাজারে পলিথিন বিরোধী এ অভিযানের নেতৃত্ব দেন জেলা ম্যাজিস্ট্রেট বা জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ দেলোয়ার হোসেন।

এ সময় বাজার থেকে কিছু পলিথিন জব্দ করা হলে অভিযানের প্রথম দিন বিধায় সতর্ক করা হয় ব্যবসায়ীদের। তবে বরিশাল জেলাজুড়ে এ অভিযান অব্যাহত থাকার কথা সাংবাদিকদের জানান জেলা প্রশাসক।

তবে বাস্তবে দেখা গেলো উল্টোটা চিত্র। পলিথিন ব্যবহারে নিরুৎসাহীত করা বা ব্যবহার বন্ধে গত এক মাসে বরিশালের বাজারগুলোতে জেলা প্রশাসন বা পরিবেশ অধিদপ্তরের তদারকির চিত্র চোখে পড়েনি। বরং আগের মতই পলিথিনের ব্যবহার করতে দেখা যায় বাজারগুলোতে। এ নিয়ে ক্রেতা-বিক্রেতা কারর মধ্যেই নেই কোনো মাথা ব্যাথা।

রবিবার দুপুরে নগরীর নতুন বাজারে গিয়ে দেখা যায়, পলিথিনের অবাধ ব্যবহারের চিত্র। এই বাজারটিতেই গত ৩ নভেম্বর অভিযান চালিয়েছিলেন জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ দেলোয়ার হোসেন এবং পরিবেশ অধিদপ্তর। সেই বাজারে সবজি, মাছ-মাংস বা নিত্যপণ্য কেনাবেচায় পলিথিন শপিং ব্যাগই যেন শেষ ভরসা।

কথা হয় নতুন বাজারের ব্যবসায়ীদের সাথে। তারা বলেন, পলিথিন যেমন সহজলভ্য। তেমনি দামেও কম। তাছাড়া পলিথিনের বিকল্প তেমন কিছু পাওয়া যাচ্ছে না। যা পাওয়া যাচ্ছে তাও দামে বেশি। আবার আগের মতই পলিথিন বাজারে এসে দিয়ে যায় ব্যবসায়ীরা।

এ বাজারের ব্যবসায়ীরা দাবি করেন, গত ৩ নভেম্বর জেলা প্রশাসকের উপস্থিতিতে অভিযান পরিচালিত হয়েছে। এরপর পলিথিন বিরোধী অভিযানে নতুন করে কেউ আসেনি।

শুধু নতুন বাজার নয়, নগরীর চৌমাথা বাজার, নথুল্লাবাদ বাজার, কাশিপুর বাজার, সাগরদী বাজার, রূপাতলী বাজার, বাংলা বাজার এবং পোর্টরোডসহ সব বাজারের চিত্র সেই আগের মতই আছে। 

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, গত এক মাসে বরিশালে পলিথিন বিরোধী অভিযানের চিত্র তেমন নেই বললেই চলে। গত ১২ নভেম্বর রাতে র‌্যাবের সহযোগিতায় নগরীর পলাশপুর এলাকার একটি গোডাউনে অভিযান পরিচালনা করে দুই হাজার কেজি নিষিদ্ধ পলিথিন জব্দ করে পরিবেশ অধিদপ্তর।

এছাড়া বৃহস্পতিবার বরিশালের বাবুগঞ্জ উপজেলায় মোবাইল কোর্ট পরিচালনা করে উপজেলা প্রশাসনের ভ্রাম্যমাণ আদালত। এ সময় নিষিদ্ধ পলিথিন ব্যবহারের অপরাধে এক ব্যবসায়ীকে চার হাজার টাকা জরিমানা করা হয়। এছাড়া মহানগরীসহ গোটা জেলা জুড়েই পলিথিনের বিরুদ্ধে কঠোর অভিযান নেই বলে দাবি সংশ্লিষ্টদের।

তবে পরিবেশ অধিদপ্তর বরিশাল বিভাগীয় কার্যালয়ের পরিচালক (চলতি দায়িত্ব) মুহাম্মদ মুজাহিদুল ইসলাম বলেন, আমাদের অভিযান চলমান রয়েছে। গত এক মাসে বরিশাল জেলা কার্যালয় আড়াই টন পলিথিন জব্দ করেছে। এছাড়া জরিমানা আদায় করেছে ১২ হাজার টাকা। বিভাগের অন্যান্য জেলা-উপজেলাগুলোতেও অভিযান চলমান রয়েছে।

এছাড়া পলিথিন বিরোধী প্রচারণা, লিফলেট বিতরণ, সচেতনতামূলক সভা করেছি। এতে করে পলিথিন যে নিষিদ্ধ সেটা সাধারণ মানুষ নিশ্চিত হয়েছে। তবে পলিথিনের সহজলভ্যতা এবং বিকল্প কিছু বাজারে না থাকায় বাজারে এটা নিয়ন্ত্রণ কষ্টকর হয়ে দাঁড়িয়েছে। এখন কঠোর অভিযান, জেল-জরিমানা ছাড়া কিছু করার নেই।

তাছাড়া পলিথিনের ব্যবহার বন্ধ করতে হলে আগে সরবরাহ বন্ধ করতে হবে বলে জানিয়েছেন জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ দেলোয়ার হোসেন। তিনি বলেন, বরিশালে পলিথিন তৈরি হয় না। এখানে যারা মজুদ করে তাদের ধরা জরুরি। আমরা তাদেরকে ধরার চেষ্টা করছি। এরই মধ্যে পলাশপুরে একটি বড় চালান আমরা জব্দ করেছি, সেটা সবাই জানে। তাই পলিথিনের বড় ব্যবসায়ী এবং মজুদের বিষয়ে প্রশাসনকে তথ্য দিয়ে সহযোগিতা চেয়েছেন জেলা প্রশাসক।

উল্লেখ্য, ২০০২ সালের ১ মার্চ আইন করে বিষাক্ত পলিথিন উৎপাদন, বিপণন ও ব্যবহার নিষিদ্ধ করে বাংলাদেশ। তবে দেশে পলিথিনের ব্যবহার কমেনি। বরং গত দুই দশকের বেশি সময় ধরে পলিথিনের উৎপাদন ও ব্যবহার বাড়তে দেখা যায়। এরপর ২০১০ সালে আরেকটি আইন করে সরকার। কিন্তু সেই আইনও বাস্তবে কোনো কাজে দেয়নি।

সাম্প্রতিক দেশকাল ইউটিউব চ্যানেল সাবস্ক্রাইব করুন

মন্তব্য করুন

Epaper

সাপ্তাহিক সাম্প্রতিক দেশকাল ই-পেপার পড়তে ক্লিক করুন

Logo

ঠিকানা: ১০/২২ ইকবাল রোড, ব্লক এ, মোহাম্মদপুর, ঢাকা-১২০৭

© 2025 Shampratik Deshkal All Rights Reserved. Design & Developed By Root Soft Bangladesh