প্লাস্টিক দূষণ রোধে সমুদ্র সৈকতে ভয়ংকর বর্জ্য দানব

এশিয়া মহাদেশের সর্ববৃহৎ প্লাস্টিক দানব নির্মিত হয়েছে কক্সবাজার সমুদ্র সৈকতে। প্রায় ১০ মেট্রিক টন প্লাস্টিকের বিভিন্ন বর্জ্যের সমন্বয়ে তৈরি এই স্ট্যাচু। প্লাস্টিক দূষণের ভয়াবহতা সম্পর্কে মানুষের সচেতনতা বৃদ্ধি ও প্লাস্টিক ব্যবহার রোধ করতে নির্মিত করা হয় এই বর্জ্য দানব। দানবটি প্লাস্টিক দূষণে প্রাণ-প্রকৃতির বিরূপতার সাক্ষ্য দিচ্ছেন। পর্যটক ও স্থানীয়রা বিনোদনের পাশাপাশি বিষয়টি শিক্ষণীয় হিসেবে গ্রহণ করছেন। 

কক্সবাজার জেলা প্রশাসন ও স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন বিদ্যানন্দ ফাউন্ডেশনের উদ্যোগে নির্মিত সৈকতের সুগন্ধা পয়েন্টে প্রদর্শন করা হয় প্লাস্টিক বর্জ্য দিয়ে তৈরি এ দানব ভাস্কর্য।

সরেজমিনে দেখা যায়, সমুদ্র সৈকতের সুগন্ধা পয়েন্ট সংলগ্ন বালিয়াড়িতে শূন্য দাঁড়িয়ে আছে ভয়ংকর এক দানব। যে দানবটি রক্ত-মাংসহীন প্রতীকী হলেও যার হিংস্র থাবায় প্রতিনিয়ত ক্ষত-বিক্ষত হয় মানবদেহ, প্রকৃতি ও প্রাণবৈচিত্র্য। সৈকতে ঘুরতে আসা যে কেউ দূর থেকে এটি দেখে প্রথমে ভয় পেলেও কাছে যেতেই সে ভয় কেটে যাবে। আর জানবে দানবটির দেহে বয়ে বেড়ানো প্লাস্টিক দূষণে প্রাণ-প্রকৃতির ক্ষতির মাত্রা।

আয়োজক সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন, প্রবালদ্বীপ সেন্টমার্টিন ও কক্সবাজার সমুদ্র সৈকতের অপার সৌন্দর্য উপভোগ করতে প্রতিদিন সমাগম ঘটে লাখো পর্যটকের। যারা সৈকতের বালিয়াড়ি ও সাগরের পানিতে ফেলছে প্লাস্টিক পণ্য সামগ্রীর বর্জ্য। এতে উদ্বেগজনক হারে বাড়ছে দূষণ এবং হুমকির মুখে পড়ছে সামুদ্রিক জীব ও মানবজীবন।

আর প্রাণ-প্রকৃতির দূষণ রোধে এবং সচেতনতা সৃষ্টিতে কক্সবাজার জেলা প্রশাসন ও স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন বিদ্যানন্দ ফাউন্ডেশন নিয়েছে প্লাস্টিক বর্জ্যে তৈরি দানব ভাস্কর্যের প্রদর্শনীর মত ভিন্নধর্মী এ উদ্যোগ।

বিদ্যানন্দ ফাউন্ডেশনের দায়িত্বরত স্বেচ্ছাসেবক মুহাম্মদ মুবারক জানান, গত প্রায় এক মাস ধরে কক্সবাজার শহর, ইনানী ও টেকনাফের সমুদ্র সৈকত থেকে সংগ্রহ করা হয় অন্তত ১০ মেট্রিক টন প্লাস্টিক বর্জ্য। এ সব বর্জ্য দিয়ে কক্সবাজার সমুদ্র সৈকতে নির্মাণ করা হয় এই প্লাস্টিক দানব।

গত ৭ নভেম্বর কক্সবাজার সমুদ্র সৈকতে পর্যটকদের জন্য ‘প্লাস্টিক এক্সচেঞ্জ স্টোর’ ও স্থানীয়দের জন্য ‘প্লাস্টিক এক্সেঞ্জ মার্কেট’ উদ্বোধন করেন জেলা প্রশাসক। যেখানে প্লাস্টিক বর্জ্য হিসেবে ফেলে দেওয়া খালি পাত্র, বোতল ও পলিথিনের প্যাকেটের বিনিময়ে যে কেউ নিতে পারেন চাল, ডাল, তেল, চিনি ও লবণসহ নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্য এবং পর্যটকরা জিতে নিবেন বই, কলম, ক্যাপ, ব্যাগসহ বিভিন্ন উপহার। এই কার্যক্রম থেকেই মূলত ১০ মেট্রিক টন প্লাস্টিক বর্জ্য সংগ্রহ করা হয়।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের চারুকলা বিভাগের ভাস্কর ও শিল্পী আবীর কর্মকার জানান, বিদ্যানন্দের ভিন্নধর্মী উদ্যোগে প্লাস্টিক দানবটি তৈরি করেছেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের চারুকলা বিভাগের একদল শিল্পী। এতে তারা প্লাস্টিক বর্জ্যের পাশাপাশি ব্যবহার করেছেন কাঠ, পেরেক ও আঁটাসহ (গাম) আরও কয়েকটি উপকরণ। ভাস্কর্য শিল্পীদের দাবি, এটি এশিয়া মহাদেশের সর্বোচ্চ প্লাস্টিক দানব।

এ দিকে মঙ্গলবার (৩ ডিসেম্বর) বিকেলে প্লাস্টিক বর্জ্যে নির্মিত এ দানবটি দেখতে ভিড় করেছেন সৈকতে ঘুরতে আসা পর্যটকরা। তারা বলছেন, মানুষ এটি দেখতে এসে দৈত্য-দানবের ভয়ংকর রূপের মত প্লাস্টিক বর্জ্যের ক্ষতিকর দিক সম্পর্কে সচেতন হবেন। পাশাপাশি নিজেরাও প্লাস্টিক পণ্য ব্যবহারে সজাগ থাকবেন।

পরিবেশবাদীরা বলছেন, বিদ্যানন্দের ভিন্নধর্মী এ উদ্যোগ প্রশংসনীয়। এতে মানুষ প্লাস্টিক দূষণের ভয়াবহতা সম্পর্কে অবহিত হবেন। বিদ্যানন্দের মত অন্যান্য সংগঠন ও সংস্থাগুলোকে এ ধরনের কর্মকাণ্ডে এগিয়ে আসার আহ্বান তাদের।

বিদ্যানন্দ ফাউন্ডেশনের গভর্নিং বডির সদস্য জামাল উদ্দিন বলেন, বিশ্বের দীর্ঘতম সৈকতে ঘুরতে আসা পর্যটক ও স্থানীয়দের মাঝে প্লাস্টিক বর্জ্যের দূষণ সম্পর্কে সচেতনতা সৃষ্টিতে ভিন্নধর্মী এ উদ্যোগ। আর এটি পুরো পর্যটন মৌসুম সর্বসাধারণের জন্য উন্মুক্ত থাকবে। এটাকে কেন্দ্র করে এখানে প্লাস্টিক দূষণবিরোধী সচেতনতামূলক পথ নাটক ও সংগীতানুষ্ঠানের আয়োজন করা হবে।

কক্সবাজার জেলা প্রশাসক মুহম্মদ সালাহউদ্দিন জানান, আমরা অনেকে সৈকতে বোতল নিয়ে যায়। পানি খেয়ে বোতলটা বালুচরে ছুড়ে মারি। সেই বোতল চলে যাচ্ছে সমুদ্রের পানিতে। প্লাস্টিক বর্জ্য খেয়ে মারা যাচ্ছে সামুদ্রিক প্রাণী। ধ্বংস হচ্ছে পরিবেশ ও জীব বৈচিত্র্য। সমুদ্র সৈকত দেখতে এসে যদি আমরা সমুদ্রকে ডাস্টবিন বানিয়ে ফেলি তাহলে দুর্গতি নেমে আসবে। সমুদ্র দেশের অতি মূল্যবান সম্পদ, সমুদ্রের ক্ষতি করার অধিকার কারও নেই। তাই সমুদ্রকে রক্ষা করতে পারলে রক্ষা হবে প্রকৃতি ও প্রতিবেশ। 

সাম্প্রতিক দেশকাল ইউটিউব চ্যানেল সাবস্ক্রাইব করুন

মন্তব্য করুন

Epaper

সাপ্তাহিক সাম্প্রতিক দেশকাল ই-পেপার পড়তে ক্লিক করুন

Logo

ঠিকানা: ১০/২২ ইকবাল রোড, ব্লক এ, মোহাম্মদপুর, ঢাকা-১২০৭

© 2025 Shampratik Deshkal All Rights Reserved. Design & Developed By Root Soft Bangladesh