শেরপুরে জিআই স্বীকৃতি পেল ছানার পায়েস

শেরপুরে ভৌগলিক নির্দেশক বা জিআই পণ্য হিসেবে তুলশীমালা চালের পর এবার ঐতিহ্যবাহী ছানার পায়েস স্বীকৃতি পেয়েছে।

আজ বৃহস্পতিবার (৫ ডিসেম্বর) শেরপুরের জেলা প্রশাসক তরফদার মাহমুদুর রহমান বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।

শেরপুরের জেলা প্রশাসক তরফদার মাহমুদুর রহমান জিআই স্বীকৃতি অর্জনের বিষয়টি সাংবাদিকদের সাথে প্রকাশ করার পর শহরজুড়ে আনন্দ ছড়িয়ে পড়ে। 

এ উপলক্ষে সাধারণ মানুষের মাঝে ছানার পায়েস বিতরণ করেছে জেলা ব্র্যান্ডিং ওয়েবসাইট ‘আওয়ার শেরপুর’। 

আওয়ার শেরপুরের প্রতিষ্ঠাতা ও স্বত্বাধিকারী মো. দেলোয়ার হোসেন বলেন, ছানার পায়েস শেরপুরের ঐতিহ্য ও সংস্কৃতির অংশ। জিআই পণ্য হিসেবে অন্তর্ভুক্ত হওয়ায় আমরা আনন্দিত। এটি শেরপুরে ব্র্যান্ডিং ও ঐতিহ্য আরো বহুদূর নিয়ে যাবে।

তিনি আরো জানায়, শেরপুরের ছানার পায়েস সারাদেশে বিখ্যাত। এটির জিআই স্বীকৃতি চেয়ে শিল্প মন্ত্রণালয়ের পেটেন্ট, শিল্প-নকশা ও ট্রেডমার্কস অধিদপ্তর (ডিপিডিটি) বরাবর আবেদন করেছে জেলা প্রশাসন শেরপুর। সকল প্রক্রিয়া সম্পন্ন করে জিআই স্বীকৃতি পেয়েছে আজ। ডিপিডিটির মহাপরিচালক মুনিম চৌধুরীর স্বাক্ষরিত সনদের মাধ্যমে এই স্বীকৃতির কথা জানতে পারে শেরপুরবাসী। এতে সর্বস্তরের মানুষ উল্লাসিত।

ছানার পায়েস কীভাবে বানানো হয়, সেটা জানালেন শেরপুর শহরের গোয়ালপট্টি মহল্লার দুর্গাচরণ মিষ্টান্ন ভান্ডারের মিষ্টি তৈরির কারিগর রিপন চন্দ্র ভদ্র।

তিনি বলেন, ছানার পায়েস তৈরি করতে দুধ, চিনি, ময়দা ও এলাচ লাগে। প্রথমে দুধ জ্বাল দিয়ে ক্ষীর করা হয়। এরপর আলাদাভাবে দুধ থেকে ছানা কেটে তাতে সামান্য ময়দা মিশিয়ে ছোট ছোট গুটি করা হয়। এই গুটি চিনিমিশ্রিত শিরায় ভিজিয়ে আগে তৈরি করা ক্ষীরে ছেড়ে হাল্কা আঁচে জ্বাল দেওয়া হয়। এভাবেই তৈরি হয় সুস্বাদু এই মিষ্টি। এক কেজি ছানার পায়েস তৈরি করার জন্য দুই কেজি দুধ, আধা কেজি চিনি, সামান্য পরিমাণ ময়দা ও ১০ থেকে ১৫ গ্রাম এলাচ লাগে।


এ বিষয়ে শেরপুর শহরের রঘুনাথ বাজার মহল্লার অনুরাধা মিষ্টান্ন ভান্ডারের স্বত্বাধিকারী বাপ্পি দে জানায়, শেরপুরের প্রশাসন, সাংবাদিক, সুধী মহল থেকে শুরু করে সর্ব মহলের সহযোগিতায় আজ শেরপুরে তুলশীমালা চালের পর দ্বিতীয় জিআই পণ্য হিসেবে ঐতিহ্যবাহী ছানার পায়েস জিআই পণ্যের স্বীকৃতি পাওয়ায় শেরপুরের অর্থনৈতিক খাত চাঙ্গা হওয়ার পাশাপাশি দেশ ও দেশের বাইরে শেরপুরের সুনামও ছড়িয়ে পড়বে বলে আমি মনে করি।

জেলা প্রশাসক তরফদার মাহমুদুর রহমান সাংবাদিকদের বলেন, দেশের ৪৪তম জিআই পণ্যের মর্যাদা অর্জন করেছে শেরপুরের ছানার পায়েস। আমরা আজকেই সনদের কপি হাতে পেয়েছি। জিআই পণ্য হওয়ার কারণে তা সারাদেশে ছড়িয়ে যাবে।

তিনি আরো বলেন, শেরপুরের সম্ভাবনায় অন্যান্য সকল পণ্যের জিআই স্বীকৃতি চেয়ে প্রস্তাব করা হবে শীঘ্রই।

উল্লেখ্য, শেরপুরের ছানার পায়েসের ঐতিহ্য শত বছরের পুরোনো। ব্রিটিশ আমলে এই মিষ্টি প্রথম তৈরি হয় শেরপুরের গোয়ালপট্টিতে। তখন হাতে গোনা দু-একটি দোকানে এই মিষ্টি হতো। এখন জেলা সদরেই অন্তত ২০টি দোকানে ছানার পায়েস হচ্ছে। এসব দোকানে প্রতিদিন গড়ে বিক্রি হয় প্রায় ২০০ থেকে ৩০০ কেজি ছানার পায়েস। শেরপুর শহরের বিভিন্ন মিষ্টির দোকানে প্রতি কেজি ছানার পায়েস প্রকার ভেদে ৩৫০ থেকে ৪০০ টাকায় বিক্রি হয়। জেলার ঝিনাইগাতী, শ্রীবরদী, নকলা ও নালিতাবাড়ী উপজেলাতেও পাওয়া যায় এই মিষ্টি। এই ছানার পায়েস জেলা এবং   জেলার বাইরের বিভিন্ন আত্মীয়স্বজনদের বাসায় বেড়াতে গেলে অথবা বিয়ে, জন্মদিন, ঈদুল ফিতর, ঈদুল আজহা, দুর্গাপূজাসহ বিভিন্ন ধর্মীয় উৎসব ও যেকোনো অনুষ্ঠানে আপ্যায়নের জন্য শেরপুরের মানুষের কাছে পছন্দের মিষ্টি ছানার পায়েস।

সাম্প্রতিক দেশকাল ইউটিউব চ্যানেল সাবস্ক্রাইব করুন

মন্তব্য করুন

Epaper

সাপ্তাহিক সাম্প্রতিক দেশকাল ই-পেপার পড়তে ক্লিক করুন

Logo

ঠিকানা: ১০/২২ ইকবাল রোড, ব্লক এ, মোহাম্মদপুর, ঢাকা-১২০৭

© 2025 Shampratik Deshkal All Rights Reserved. Design & Developed By Root Soft Bangladesh