আয়াকে কাজ করতে বলায় শিক্ষার্থী-কর্মচারীদের ওপর হামলা

জামালপুরের সরিষাবাড়ী উপজেলার পোগলদিঘা ইউনিয়নের পাটাবুগা দাখিল মাদ্রাসায় শিক্ষক ও আয়া দম্পতি মাসের পর মাস দায়িত্ব পালন না করেই নিয়মিত বেতন-ভাতা উত্তোলন করছেন বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে।

এদিকে তাদের কর্তব্য ফাঁকির প্রতিবাদ করায় গতকাল মঙ্গলবার (১০ ডিসেম্বর) সকালে শিক্ষক রমজান আলী ও তার স্ত্রী একই মাদ্রাসার আয়া আঞ্জুমনোয়ারার হামলার শিকার হয়েছেন কয়েকজন শিক্ষার্থী-কর্মচারী।

এর আগে গত ২৬ নভেম্বর শরীর চর্চা শিক্ষক এ কে এম আমিনুল হক তাদের আক্রমণের শিকার হন।

মাদ্রাসা ও স্থানীয় সূত্র জানায়, পাটাবুগা দাখিল মাদ্রাসার সহকারী শিক্ষক (সমাজবিজ্ঞান) রমজান আলী ২০২২ সালের নভেম্বর মাসে তৎকালীন ম্যানেজিং কমিটির সদস্য (শিক্ষক প্রতিনিধি) ও পৌর আওয়ামী লীগের প্রচার সম্পাদক হওয়ার সুবাদে প্রভাব খাটিয়ে তার স্ত্রী আঞ্জুমনোয়ারাকে একই মাদ্রাসায় আয়া পদে নিয়োগ দেন। এরপর প্রায় দুইবছর ধরেই আয়া আঞ্জুমনোয়ারা মাদ্রাসায় উপস্থিত না হয়েই নিয়মিত বেতনভাতা উত্তোলন করে আসছেন। তিনি মাসে মাত্র ১-২ দিন উপস্থিত হয়ে হাজিরা খাতায় পুরোমাসের স্বাক্ষর একসাথে দিয়ে যান।

এদিকে মঙ্গলবার সকালে ৯ম শ্রেণির কক্ষে আবর্জনা থাকায় শিক্ষার্থীরা আয়া আঞ্জুমনোয়ারাকে তা পরিষ্কার করতে বলেন। এ সময় আয়া ও তার স্বামী রমজান আলী ক্ষিপ্ত হয়ে উঠেন। একপর্যায়ে বলেন যে, তোদের মা-বোন এনে এসব পরিষ্কার করা। আমার বউ এসব করতে পারবে না। শিক্ষার্থীরা প্রতিবাদ জানালে রমজান আলী মুঠোফোনে বহিরাগত লোকজন ডেকে এনে তাদের ওপর হামলা করায়।

তাদের হামলায় মাদ্রাসার নিরাপত্তাকর্মী রুহুল আমিন, ৯ম শ্রেণির শিক্ষার্থী আল-আমিন, শাকিল, সোহানসহ অন্তত ১০ জন আহত হন।

খবর পেয়ে উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তা, একাডেমিক সুপারভাইজার ও পুলিশ ঘটনাস্থলে গিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ করেন।

আহত শিক্ষার্থী আল-আমিন, শাকিল ও সোহান জানান, আয়া মাদ্রাসায় আসেন না, আসলেও তার সাথে কথা বলা যায় না। খালা ডাকলে রেগে যান, মেডাম ডাকতে বলেন। কিছু বলতে গেলে তার স্বামী রমজান স্যার পরীক্ষার ফেল করিয়ে দেওয়ার হুমকি দেন। আয়াকে কক্ষ পরিষ্কার করতে বহিরাগত লোকজন এনে তারা আমাদের মারধর করেছে।

মাদ্রাসার নিরাপত্তাকর্মী রুহুল আমিন অভিযোগ করেন, আঞ্জুমনোয়ারা এবং তিনি একসঙ্গেই চাকরি নিয়েছেন। কিন্তু তিনি নিয়মিত দায়িত্ব পালন করলেও আয়া অনুপস্থিত থাকেন, শুধু মাস শেষে হাজিরা খাতায় স্বাক্ষর করে বেতন তুলে নেন। আয়ার কাজগুলোও আমাদেরই করতে হয়। বহিরাগত লোকজন এনে ছাত্রদের ওপর হামলা সময় প্রতিবাদ করায় আমাকেও মারধর করা হয়।

অফিস সহকারী সাইফুল ইসলাম অভিযোগ করেন, আয়া ও তার স্বামীর অন্যায় কাজের প্রতিবাদ করা যায় না। কিছু বললেই শো-কজ ও চাকরিচ্যুতির হুমকি, বহিরাগত ক্যাডার এনে গালিগালাজ ও ভয়ভীতি দেখান। এমনকি ইতোপূর্বে রমজান আলী তাকে একাধিকবার মিথ্যা মামলায় জড়িয়ে পুলিশকে দিয়ে হয়রানি এবং জোরপূর্বক সাদা স্ট্যাম্পে স্বাক্ষর নিয়ে রেখেছেন।

শরীর চর্চা শিক্ষক এ কে এম আমিনুল হক অভিযোগ করেন, গত ২৬ নভেম্বর আমি আয়ার কাছে পানি চাইলে স্বামী-স্ত্রী মিলে আমাকে মারধর করেন।

এ ব্যাপারে মাদ্রাসার সুপারিন্টেন্ডেন্ট আইয়ুব আলী বলেন, আয়া আঞ্জুমনোয়ারা ও তার স্বামী রমজান আলীকে অফিসিয়ালভাবে বারবার সতর্ক করা হলেও কোনো পরিবর্তন হননি, বরং বিভিন্নসময় দলীয় প্রভাবে হুমকি-ধমকি এবং বহিরাগত লোকজন নিয়ে শিক্ষক-কর্মচারীদের নানাভাবে লাঞ্ছিত করেন। তাদের বিরুদ্ধে বিভাগীয় ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার বরাবর লিখিত অভিযোগ দায়ের করা হয়েছে।

উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা মোজাম্মেল হক জানান, হামলা-মারধরের বিষয়টি শুনে ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছি। এরআগেও অভিযুক্ত ওই দম্পতির বিরুদ্ধে লিখিত অভিযোগের ভিত্তিতে তদন্ত কমিটি গঠিত হয়েছে। শীঘ্রই তদন্ত প্রতিবেদন দেওয়া হবে।

উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা শারমিন আক্তার বলেন, একাধিক লিখিত অভিযোগের ভিত্তিতে তিন সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। প্রতিবেদনের আলোকে তাদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।

সাম্প্রতিক দেশকাল ইউটিউব চ্যানেল সাবস্ক্রাইব করুন

মন্তব্য করুন

Epaper

সাপ্তাহিক সাম্প্রতিক দেশকাল ই-পেপার পড়তে ক্লিক করুন

Logo

ঠিকানা: ১০/২২ ইকবাল রোড, ব্লক এ, মোহাম্মদপুর, ঢাকা-১২০৭

© 2025 Shampratik Deshkal All Rights Reserved. Design & Developed By Root Soft Bangladesh