খেজুরের রস থেকে গুড় তৈরিতে ব্যস্ত গাছিরা

নাটোর-বগুড়া মহাসড়কের শেরকোল বাজার থেকে ১ কিলোমিটার পূর্বে ধুলাউড়ি গ্রাম। এ গ্রামের একটি একচালা টিনের বাড়িতে তৈরি হচ্ছে খেজুর গুড়। টাটকা খেজুর রস জাল দিয়ে পাটালি, ঝোলা, লালিসহ তৈরি করছেন নানা রকম মজাদার গুড়।

ধুলাউড়ি গ্রামের এই একচালা টিনের বাড়িটি ভাড়া নিয়েছেন রাজশাহীর বাঘা এলাকা থেকে আসা ৫ থেকে ৭ জনের একদল গাছি। গত তিন বছর ধরে প্রতি শীত মৌসুমে এ বাড়িতেই গুড় তৈরি করছেন এই গাছি। এ কারণে এ বাড়িটি এখন স্থানীয়দের কাছে গুড় তৈরির কারখানা নামে পরিচিত হয়ে উঠেছে।

সরেজমিনে ধুলাউড়ি গ্রামের ওই বাড়িতে গিয়ে দেখা যায়, রস জাল দিয়ে গুড় তৈরিতে ব্যস্ত সময় পার করছেন গাছিরা। এ সময় কথা হয় সিদ্দিক ও আলতাফ নামের দুই গাছির সাথে। তারা জানান, গত কার্তিক মাসে তারা এখানে এসেছেন। থাকবেন ফাল্গুন মাস পর্যন্ত। দুই কেজি থেকে তিন কেজি গুড় দেওয়ার শর্তে মালিকের কাছ থেকে খেজুর গাছ বর্গা নিয়েছেন। এ বছর তাদের গাছের সংখ্যা প্রায় ২৭০টি। এখানে তারা প্রতিদিন গুড় উৎপাদন করছেন ৬০ থেকে ৭০ কেজি। শীত আর রোদ দুটোই খেজুর রসের জন্য অনুকূল আবহাওয়া। আবহাওয়া অনুকূল থাকলে গুড়ের উৎপাদন বাড়ে।

তারা জানান, পাটালি, ঝোলা ও পাতলা বা লালি গুড় ১৫০ থেকে ১৬০ টাকা পাইকারি কেজি দরে বিক্রি করছেন। পাইকাররা কারখানা থেকেই গুড় কিনে নিয়ে যান। পাইকারদের পাশাপাশি খুচরাও বিক্রি হয়। তবে খুচরা ও পাইকারি একই দামে বিক্রি করেন তারা।

গাছিরা আরো জানান, প্রতিদিন রাত সাড়ে ৩টায় গাছ থেকে রসের হাড়ি নামানো শুরু হয়। এর পর সকাল থেকে টানা চার, পাঁচ ঘণ্টা জাল দিতে হয়। এভাবে দুপুর ১২টা থেকে ১টার মধ্যে শুরু হয় পাটালি তৈরির কাজ। বিকালে আবারও ব্যস্ত থাকতে হয় গাছে ছাঁচ দেওয়া ও হাড়ি লাগানোর কাজে। সব মিলে হাড় ভাঙা পরিশ্রম করতে হয় তাদের। পাঁচ মাসে ৫০ থেকে ৬০ হাজার টাকা আয় হয় প্রত্যেক গাছির। এলাকায় বিভিন্ন পেশার কাজ করলেও শীতের এই পাঁচ মাস এলাকার বাহিরে এসে গুড় তৈরির কাজ করে বাড়তি আয় করেন তারা।

ধুলাউড়ি গ্রামের কৃষক মখলেছুর জানান, আমরা খেজুর গাছের তেমন যত্ন বুঝি না। অযত্ন অবহেলায় গাছগুলো পড়েই থাকতো। আমার পুকুর পাড়ের ১০টি গাছ ওদের কাছে বর্গা দিয়েছি। বিনা পরিশ্রমে ১০টি গাছ থেকে ৩০ কেজি গুড় পাবো। তাতে আমার সারা বছর গুড়ের চাহিদা মিটবে।

সিংড়া বাজারে গুড় ব্যবসায়ী আনিছুর, নরেন ও মাসুদ আলী জানান, শীত মৌসুমে ধুলাউড়ি, পাটকোল, তেমুখ নওগাঁসহ উপজেলার বিভিন্ন কারখানা থেকে খেজুর গুড় কিনে তারা বাজারে বিক্রি করছেন। গ্রামের এসব কারখানার গুড় টাটকা ও সুস্বাদু বলে বাজারে অন্য গুড়ের চেয়ে এসব গুড়ের চাহিদা বেশি।

সিংড়া উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা কৃষিবিদ খন্দকার ফরিদ জানান, সিংড়া উপজেলায় এ বছর ৫৮ হাজার খেজুর গাছ থেকে রস সংগ্রহের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে। সাধারণত কৃষকরা পারিবারিকভাবেই শীতকালে এসব গাছ থেকে রস সংগ্রহ করে গুড় তৈরি করেন। পাশাপাশি বিগত কয়েক বছর ধরে রাজশাহী, সিরাজগঞ্জ, বগুড়াসহ বিভিন্ন জেলা থেকে গাছীরা আসছেন। তারা টিম ওয়ার্ক করে গাছ বর্গা নিয়ে রস সংগ্রহ করে গুড় তৈরি করছেন। আমরা স্বাস্থ্যসম্মত গুড় তৈরির জন্য ওই সব পারিবারিক কারখানাগুলোতে মনিটরিং করছি। খেজুর গাছ কৃষকদের বাড়তি আয়ের একটি উৎস। এ গাছ থেকে শুধু গুড়ই পাওয়া যায় তা নয়। গাছের পাতা শুকিয়ে নকশাদার পাটি, হাত ব্যাগসহ নানা রকম পণ্য তৈরি করা হয়। প্রতিটি বাড়িতে যাতে অন্তত একটি করে খেজুর গাছ থাকে সে জন্য কৃষকদের মাঝে প্রচারণা চালানো হচ্ছে।

সাম্প্রতিক দেশকাল ইউটিউব চ্যানেল সাবস্ক্রাইব করুন

মন্তব্য করুন

Epaper

সাপ্তাহিক সাম্প্রতিক দেশকাল ই-পেপার পড়তে ক্লিক করুন

Logo

ঠিকানা: ১০/২২ ইকবাল রোড, ব্লক এ, মোহাম্মদপুর, ঢাকা-১২০৭

© 2025 Shampratik Deshkal All Rights Reserved. Design & Developed By Root Soft Bangladesh