ছাত্র জীবন থেকেই বৃক্ষ প্রেমী হয়ে ওঠা রাসেলের ক্যাকটাসের বাগান করার প্রতি ঝোঁক ছিল। পরবর্তীতে পেশাগত কারণে যেখানেই গেছেন সেখানেই খোঁজ করেছেন ক্যাকটাসের। জীবনের অর্ধ সঞ্চয় ব্যয় করে সংগ্রহ করছেন দেশী-বিদেশী বিভিন্ন প্রজাতির ক্যাকটাসের গাছ।
শখের বশে নিজ বাড়ির ছাদে শুরু করেন ক্যাকটাস বাগান। এরপর সেটিকে আরো প্রসারিত করে বাড়ির পেছনের বাগানে ৬টি সেডে এখন তার সংগ্রহে দাঁড়িয়েছে আড়াইশ প্রজাতির প্রায় ৪০ হাজারেরও বেশি ক্যাকটাস রয়েছে। প্রতিদিন বিভিন্ন এলাকা থেকে গাছ প্রেমীরা তার বাড়িতে ভিড় জামায়।
বাড়ির ছাদ এবং বাড়ির পাশের বাগানে ছয়টি সেড নির্মাণ করে গড়ে তুলেছেন ক্যাকটাসের বাগান। ছোটবেলা থেকে বৃক্ষ প্রেমী হয়ে ওঠা সার্জেন্ট তৌহিদুল ইসলামের শখ পূরণ হয়েছে ক্যাকটাসের বাগান গড়ে তোলার মধ্য দিয়ে। তিনি স্বপ্ন দেখেন একসময় দেশের মধ্যে সবচেয়ে বড় ক্যাকটাস পার্ক গড়ে তুলবেন। যেখানে দেশ-বিদেশের মানুষ এসে ক্যাকটাসের সৌন্দর্য উপভোগ করতে পারবেন। তার ক্যাকটাস বাগান পরিদর্শন করে কেবলই একটি কথা মনে হচ্ছে কথায় বলে শখের দাম নাকি লাখ টাকা, সেই কথাই যেন সত্যি হলো।
সার্জেন্ট তৌহিদুল ইসলাম রাসেল কুষ্টিয়া জেলার ভেড়ামারা উপজেলার বাহিরচর ইউনিয়নের ষোলদাগ পশ্চিমপাড়া এলাকার আলহাজ্ব রহমত উল্লাহ মেম্বারের ছেলে। তিনি রাজশাহী ট্রাফিক বিভাগে কর্মরত রয়েছেন।
সার্জেন্ট তৌহিদুল ইসলাম রাসেল জানান, প্রথম গাছ আমদানি করেছেন ভারত থেকে। পরে থাইল্যান্ড, মালয়েশিয়া, চীন ও আমেরিকা থেকেও ক্যাকটাস আমদানি করেছেন।
এ মরু উদ্ভিদ টিকিয়ে রাখতে পলিথিনের সেড নির্মাণ, গাছের কাঁটা পর্যবেক্ষণ ও মাটি পরিবর্তনসহ বিভিন্ন যত্ন নিতে হয়। শখের বসে এই ক্যাকটাস বাগান গড়ে তুললেও আমার বাবা এবং আমার স্ত্রী এটির দেখভালো করেন। এছাড়াও সার্বক্ষণিক একজন কর্মী নিয়োজিত রয়েছেন। সিসিটিভির মাধ্যমে আমি পর্যবেক্ষণ করে থাকি। বীজ উৎপাদন, সেখান থেকে নতুন প্রজাতির ক্যাকটাস উদ্ভাবন, সেই সঙ্গে ক্যাকটাসের জন্য পলিথিনের শেড নির্মাণ, গাছের কাঁটা পর্যবেক্ষণ, মাটি পরিবর্তন-সবই করতে হয় আমাদেরকে। তবে প্রথমদিকে এই মরু উদ্ভিদকে বসে আনতে বেশ বেগ পেতে হয়েছে। পরবর্তীতে ভারতীয় এক সংগ্রাহকের পরামর্শে আসে সফলতা। আগামীতে ক্যাকটাসের এই সংগ্রহশালাটি বাণিজ্যিকভাবে সারা দেশে ছড়িয়ে দিতে চাই এবং একটি ক্যাকটাস পার্ক গড়ে তুলতে চাই। যেখানে দেশ-বিদেশের মানুষ এসে ক্যাকটাসের সৌন্দর্য উপভোগ করতে পারবে।
কথা হয়, সার্জেন্ট তৌহিদুল ইসলাম রাসেলের বাবা রহমত উল্লাহর সাথে। তিনি বলেন, আমার ছেলে তৌহিদুল ইসলাম রাসেল ছাত্রজীবন থেকেই গাছের প্রতি প্রেম আর ভালোবাসা ছিল। বাড়ির আঙ্গিনা ও বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে গাছ লাগানো ও পরিচর্যা করা তার যেন নেশায় পরিণত হয়েছিল। নিজ হাতে গাছ রোপণ করে আনন্দ পেতো সে। গাছের প্রতি ভালোবাসা পরবর্তী সময়ে রূপ নেয় ক্যাকটাস সংগ্রহে। শখের বশে ক্যাকটাস সংগ্রহ করে নিজ বাড়ির ছাদে ক্যাকটাস বাগান গড়ে তোলেন। সেই বাগান বৃদ্ধি করে এখন তার নিজ বাড়ির ছাদে দুইটি এবং বাড়ির পেছনের বাগানের ৬টি শেডে এখন তার সংগ্রহ দাঁড়িয়েছে আড়াইশ প্রজাতির ক্যাকটাস। এছাড়াও রাজশাহীতে তার কর্মস্থলেও রয়েছে এমন ক্যাকটাসের সমাহার।
তার ছেলের এমন সাফল্যে বেশ খুশি পুরো পরিবার। তিনি স্বপ্ন দেখেন দেশের মানুষের কাছে ক্যাকটাস সহজলভ্য করে তোলা এবং একটি ক্যাকটাস পার্ক তৈরি করা। যেটি কিনা দেশের মধ্যে সবচেয়ে বড় ক্যাকটাস পার্ক গড়ে উঠবে। সেখানে দেশ-বিদেশের মানুষ এসে ক্যাকটাসের সৌন্দর্য উপভোগ করতে পারবেন।
তার স্ত্রী ইশরাত জাহান বলেন, ক্যাকটাসের প্রতি তার আলাদা ভালোলাগা ও ভালোবাসা রয়েছে। ছুটিতে বাড়িতে আসলে সে ক্যাকটাস বাগানে গভীর রাত পর্যন্ত নিজ হাতে গাছ পরিচর্যা করে থাকে। খাওয়ার কথা মনে থাকে না। সেডে তার খাবার দিয়ে আসতে হয়। অনেক সময় ক্যামেরা দিয়ে পর্যবেক্ষণ করে বলেন কোন গাছে কি করতে হবে। সার-পানি লাগলে অনেক সময় আমি নিজেও এসব করে থাকি। তবে ক্যাকটাসের শরীর জুড়ে কাঁটা থাকার কারণে হাতেও বিঁধে যায়।
ক্যাকটাস কিনতে আসা সৌরভ নামের এক যুবক জানান, ক্যাকটাস বাগানের গল্প শুনে আমি এখানে এসেছি। দেখে আগ্রহটা আরো বেড়ে গেল। এতো সুন্দর এবং হাজার হাজার বিভিন্ন প্রজাতির ক্যাকটাসে মুগ্ধ হয়ে রই।
ভেড়ামারা উপজেলা কৃষি অফিসার মাহমুদা সুলতানা বলেন, ইনডোর প্ল্যান্ট হিসেবে ক্যাকটাস বেশ জনপ্রিয়। ঘরের এক কোণে বা টেবিলের একপ্রান্তে ক্যাকটাস রাখলে জায়গাটি এমনিতেই সুন্দর দেখায়। তার উপর যদি সেই ক্যাকটাসে একটা-দুটো করে ফুলের বাহার আসে তাহলে ঘরের সৌন্দর্য আরো বেড়ে যায়। আমরা সার্জেন্ট তৌহিদুল ইসলাম রাসেলের বাগান পরিদর্শন করেছি। ক্যাকটাস গাছ ও তার কাটাগুলোকে অনেক সৌন্দর্যমণ্ডিত করে তুলেছে। তার এমন উদ্যোগ সত্যি প্রশংসনীয়।
সাম্প্রতিক দেশকাল ইউটিউব চ্যানেল সাবস্ক্রাইব করুন
বিষয় : কুষ্টিয়া ক্যাকটাস বাগান মরু উদ্ভিদ
© 2025 Shampratik Deshkal All Rights Reserved. Design & Developed By Root Soft Bangladesh