বদলির আট মাসেও কর্মস্থল ছাড়েননি বরিশাল জেলা ত্রাণ ও পুনর্বাসন কর্মকর্তা

প্রায় আট মাস আগে বরিশাল জেলা ত্রাণ ও পুনর্বাসন কর্মকর্তা রনজিত কুমার সরকারকে সাতক্ষীরায় বদলির আদেশ দিয়ে প্রজ্ঞাপণ জারি করে দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয়। নতুন কর্মস্থলে যোগদানের জন্য বেধে দেয়া সময়ও পার হয়েছে অনেক আগেই।

কিন্তু এখনো বরিশাল জেলা ত্রাণ ও পুনর্বাসন কর্মকর্তার পদ আঁকড়ে ধরে আছেন আলোচিত এই কর্মকর্তা। বরং এখন বদলির আদেশ প্রত্যাহারে এখনো দৌড়ঝাঁপ করছেন তিনি।

যদিও প্রায় আট মাস আগে দেয়া বদলির আদেশ প্রত্যাহার হওয়ায় স্বপদে বহাল রয়েছে বলে দাবি করেছেন রনজিত কুমার সরকার। তবে বদলির আদেশ প্রত্যাহারে মন্ত্রণালয়ের নতুন আদেশের কোনো প্রমাণ দেখাতে পারেননি তিনি। এমনকি সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ের ওয়েব সাইটেও খুঁজে পাওয়া যায়নি এমন প্রমাণ।

দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয়ের প্রজ্ঞাপন থেকে জানা যায়, গত বছর অর্থাৎ ২০২৪ সালের ৩০ এপ্রিল উপ-সচিব মুনিরা সুলতানা স্বাক্ষরিত এক প্রজ্ঞাপনে কয়েকটি জেলার ত্রাণ ও পুনর্বাসন কর্মকর্তাদের রদবদল করা হয়।

এর মধ্যে বরিশাল জেলা ত্রাণ ও পুনর্বাসন কর্মকর্তা রনজিত কুমার সরকারকে সাতক্ষীরা জেলায় বদলি করা হয়। আর বরিশাল জেলা ত্রাণ ও পুনর্বাসন কর্মকর্তা পদে বদলি করা হয় মাগুরা জেলার মোহাম্মদ নুরুজ্জামানকে বদলি করা হয়।

বদলির আদেশে বদলিকৃত কর্মকর্তাদের ২০২৪ সালের ১২ মের মধ্যে নতুন কর্মস্থলে যোগদানের নির্দেশ দেয়া হয়। নতুন কর্মস্থলে না গেলে ২০২৪ সালের ১৩ মে হতে বর্তমান কর্মস্থল থেকে স্টান্ড রিলিজ বলে গণ্য হবে।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, ‘বদলির আদেশের আট মাস চলছে। এরই মধ্যে মাগুরা জেলা ত্রাণ ও পুনর্বাসন কর্মকর্তার পদ শূন্য হয়ে আছে। সেখানে অতিরিক্ত দায়িত্ব পালন করছেন এসএম আকাশ। মোহাম্মদ নুরুজ্জামান বদলির পর উপ-পরিচালক পদে পদোন্নতি পেয়ে অধিদপ্তরে যোগদান করেছেন বলে জানিয়েছেন মাগুরা জেলা ত্রাণ ও পুনর্বাসন কার্যালয়ের উচ্চমান সহকারী আইরীন সুলতানা।

অপরদিকে, বদলির আদেশ প্রত্যাহার না হলেও স্বপদেই রয়ে গেছেন বরিশাল জেলা ত্রাণ ও পুনর্বাসন কর্মকর্তা রনজিত কুমার সরকার। অভিযোগ রয়েছে, জুলাই অভ্যুত্থানের পর বদলির বিষয়টি ধামাচাপা দেন তিনি। এমনকি বর্তমানে পূর্বের বদলির সেই আদেশ প্রত্যাহারে লবিং করছেন তিনি।

পূর্বে বদলির বিষয়টি  স্বীকার করে বরিশাল জেলা ত্রাণ ও পুনর্বাসন কর্মকর্তা রনজিত কুমার সরকার বলেন, আগের সেই আদেশটি প্রত্যাহার হয়েছে। সেই হিসেবে আমি বৈধভাবেই এ পদে রয়েছি। তবে বদলির আদেশ বাতিল করে স্বপদে পুনবহালের নতুন আদেশের চিঠি তার কাছে চাওয়া হলেও তিনি দেখাতে পারেননি। এমনকি এ বিষয়ে সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ের ওয়েব সাইট ঘেটেও এর প্রমাণ মেলেনি।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, ইতোপূর্বে বরগুনা সদর উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা (পিআইও) ছিলেন রনজিত কুমার সারকার। সেখানে বরগুনা-১ আসনে আওয়ামী লীগের প্রভাবশালী সংসদ সদস্য ধীরেন্দ্র চন্দ্র দেবনাথ শম্ভুর আস্থাভাজন ছিলেন তিনি। অনেকে তাকে সাবেক এই সংসদ সদস্যের কথিত ছেলে বলেও আখ্যা দিয়েছেন।

সাবেক ওই সংসদ সদস্যের আস্থাভাজন হয়ে দীর্ঘ ১৫ বছর তিনি পিআইও পদে বরগুনায় কর্মরত ছিলেন। সেই সুযোগে কর্মস্থলকে অনিয়ম-দুর্নীতির মচ্ছবে পরিণত করেন। এমনকি সেসময় দুর্নীতির অভিযোগে দায়েরকৃত মামলায় হাজতবাস করেছেন তিনি। যা নিয়ে তৎকালিন সময় বিভিন্ন গণমাধ্যমে সংবাদ প্রকাশিত হয়।

এরপরও শুধুমাত্র আওয়ামী লীগের এমপির ঘনিষ্ঠ এবং আস্থাভাজন হওয়ায় দুর্নীতি চাপা দিয়ে পদোন্নতির মিশন সম্পন্ন করেন রনজিত কুমার সরকার। জেলা ত্রাণ ও পুনর্বাসন কর্মকর্তা পদে পদোন্নতি পেয়ে যোগদান করেন বরিশালে।

অভিযোগ রয়েছে, বরিশালে যোগদানের পরেও দুর্নীতি-অনিয়ম বন্ধ হয়নি এই কর্মকর্তার। বরং তার অনিয়ম-দুর্নীতির ডালপালা ছড়িয়েছে জেলার ১০টি উপজেলাতে। জুলাই-আগস্ট বিপ্লবে পালিয়ে যাওয়া আওয়ামী সরকার দলীয় নেতাদের সাথে নামে-বেনামে জিআর বরাদ্দ দিয়ে ভাগবাটোয়ারার অভিযোগ রয়েছে তার বিরুদ্ধে। এমনটি করে রাতারাতি আঙুল ফুলে কলাগাছ বনে যান এই কর্মকর্তা।

সাম্প্রতিক দেশকাল ইউটিউব চ্যানেল সাবস্ক্রাইব করুন

মন্তব্য করুন

Epaper

সাপ্তাহিক সাম্প্রতিক দেশকাল ই-পেপার পড়তে ক্লিক করুন

Logo

ঠিকানা: ১০/২২ ইকবাল রোড, ব্লক এ, মোহাম্মদপুর, ঢাকা-১২০৭

© 2025 Shampratik Deshkal All Rights Reserved. Design & Developed By Root Soft Bangladesh