প্রথমবার ফুলকপি চাষ করে বেশ লাভ করেছিলেন চাষিরা। বেশি লাভের আশায় আবারও চাষ করেন। এতে চাহিদার চেয়ে ফলন বেশি হওয়ায় এবার আর তেমন দাম পাচ্ছেন না তারা। এখন ক্ষেতেই ফুলকপি নষ্ট করে দিচ্ছেন চুয়াডাঙ্গার অনেক চাষি।
জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর বলছে, প্রথমবার ফুলকপির দাম ভালো পাওয়ায় আবারো অধিক লাভের আশায় অধিকাংশ চাষি দ্বিতীয়বার চাষ করেন। এ জন্য চলতি বছর চাহিদার তুলনায় চুয়াডাঙ্গায় অধিক ফুলকপির ফলন হয়েছে।
সদর উপজেলার তিতুদহ ইউনিয়নের ছোটশলুয়া গ্রামের চাষি সোনা মিয়া বলেন, ফুলকপি কেনার খদ্দের নেই। এবার অনেক বেশি কপি হয়েছে। ক্ষেতেই নষ্ট হচ্ছে সব কপি। বাধ্য হয়েই আমার ক্ষেতের ১০ বিঘা জমির ফুলকপি ট্রাক্টর দিয়ে নষ্ট করে দিয়েছি। ১০ বিঘা জমিতে ফুলকপি চাষ করেছিলাম। প্রতি বিঘা জমিতে ২৫-৩০ হাজার টাকা খরচ হয়েছে। এতে প্রায় আমার ৩ লাখ টাকা লোকসান হয়েছে। এখন চাষের খরচই উঠছে না।
ওই গ্রামের চাষি সাইফুল ইসলাম বলেন, ঋণ নিয়ে ৪ বিঘা জমিতে ফুলকপি চাষ করেছিলাম। গত বছরেও প্রতি বিঘা জমির ফুলকপি ৮০-৯০ হাজার টাকায় বিক্রি করেছি। এবার ৪ বিঘা জমির কপি ১৬ হাজার টাকায় বিক্রি করতে হয়েছে। চাষের খরচই ওঠেনি। চাহিদার তুলনায় এবার ফলন বেশি হওয়ায় এমন পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়েছে। ঋণের বোঝা নিয়ে দুশ্চিন্তায় আছি।
দামুড়হুদা উপজেলার নাপিতখালী গ্রামের সবজি চাষি খালিদ হাসান জানান, চলতি মৌসুমে দেড় বিঘা জমিতে ফুলকপি চাষ করেন তিনি। এতে তার চারা, বালাইনাশক, সার, সেচ ও শ্রমিক বাবদ ব্যয় হয়েছে ৫০ হাজার টাকা। তার চাষের ফুলকপি বিক্রি হবে ১০ থেকে ১৫ হাজার টাকায়। এতে তার চারা কেনা খরচও উঠবে না।
একই উপজেলার গোবিন্দহুদা গ্রামের সাবেক ইউপি সদস্য লুৎফর রহমান বলেন, বুকভরা আশা নিয়ে এবার দেড় বিঘা জমিতে ফুলকপি-বাঁধাকপি আবাদ করেছি। বেশ ভালো ফলন হয়েছে। বাজার দর যেভাবে কমে গেছে, তাতে করে অনেক টাকা লোকসান হয়েছে। প্রতিবছর এ সময় মাঠে মাঠে পাইকারি মহাজনরা ঘুরে ঘুরে কপি কিনত, এবার মহাজনের দেখা মিলছে না।
দামুড়হুদা উপজেলার বদনপুর গ্রামের জাহাঙ্গীর হোসেন বলেন, এক সপ্তাহ আগে একজন পাইকারি সবজি ব্যবসায়ীর নিকট থেকে ১ লাখ টাকায় দরদাম করে কপি বিক্রি করি। চুক্তি মোতাবেক তিনি আমাকে ২৮ হাজার টাকা অগ্রিম দেয়। গত কয়েক দিন যাবত সবজির বাজার দর কমে যাওয়ায় তিনি আর কপি নিতে চাচ্ছেন না।
জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক মাসুদুর রহমান সরকার বলেন, অনেক চাষি প্রথমবার কপি চাষ করে ভালো দাম পেয়ে বেশি লাভের আশায় আবারো দ্বিতীয়বার ফুলকপি চাষ করেছেন। এ জন্য চাহিদার তুলনায় উৎপাদন বেড়ে যাওয়ায় এখন ফুলকপির আর দাম পাচ্ছেন না।
সাম্প্রতিক দেশকাল ইউটিউব চ্যানেল সাবস্ক্রাইব করুন
বিষয় : ফুলকপি দাম পাচ্ছেন না চুয়াডাঙ্গা চাষি
© 2025 Shampratik Deshkal All Rights Reserved. Design & Developed By Root Soft Bangladesh