বরিশাল মহানগর বিএনপিতে দ্বন্দ্ব

শৃঙ্খলা পরিপন্থী একের পর এক ঘটনায় আলোচিত বরিশাল মহানগর বিএনপি। গত পাঁচ আগস্টের পর মহানগর নেতাদের অসাংগঠনিক কর্মকাণ্ডে বিব্রত কেন্দ্রের নেতারাও। এরই মধ্যে শৃঙ্খলা ভাঙার অভিযোগে শোকজ করা হয়েছে মহানগরের আহ্বায়ক এবং সদস্য সচিবকে।

এমনকি সাংগঠনিকভাবে তাদের ক্ষমতা খর্ব করার গুঞ্জন রয়েছে রাজনৈতিক মহলে। দলীয় সূত্র বলছে, কাউন্সিল ঘিরে ইউনিট কমিটি গঠনের ক্ষমতা থাকছে না মহানগর বিএনপির হাতে। বিতর্কের উর্ধ্বে থেকে ওয়ার্ড কমিটিগুলো সাজাতে ক্ষমতা তুলে দেয়া হচ্ছে বিশেষ টিমের হাতে।

যদিও এমন সিদ্ধান্ত এখানো চূড়ান্ত হয়নি বলে জানিয়েছে দলটির দায়িত্বশীল সূত্র। তাছাড়া মহানগরের আহ্বায়ক মনিরুজ্জামান খান ফারুক ও সদস্য সচিব জিয়াউদ্দিন সিকদারকে বাদ দিয়ে এমন সিদ্ধান্ত তৃণমূল মেনে নিবে না বলে জানিয়েছেন, বিএনপির কেন্দ্রীয় কমিটির বরিশাল বিভাগের সহ-সাংগঠনিক সম্পাদক আকন কুদ্দুসুর রহমান।

দলীয় সূত্র জানিয়েছে, ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে আওয়ামী সরকারের পতন ঘটে গত বছরের পাঁচ আগস্ট। সেই থেকেই নানা কর্মকাণ্ডের মাধ্যমে নিজেদের জাহির করেন মহানগর বিএনপির আহ্বায়ক মনিরুজ্জামান খান ফারুক, সদস্য সচিব জিয়াউদ্দিন সিকদার ও ১ নম্বর যুগ্ম আহ্বায়ক আফরোজা খানম নাসরিন। সালিশ করে কমিশন দাবির কল রেকর্ড ফাঁস, বাসস্ট্যান্ড, টিকিট কাউন্টার, সংখ্যালঘুর ব্যবসা প্রতিষ্ঠান দখল, ছাত্রী হোস্টেলে অনাধিকার চর্চাসহ নানা বিতর্কে জাড়ান তারা।

এরই মধ্যে সামনে আসে মহানগর বিএনপির যুগ্ম আহ্বায়ক হালিম মৃধার ওপর হামলা এবং একই কমিটির যুগ্ম আহ্বায়ক জহিরুল ইসলাম খান লিটু ও মহানগর বিএনপির সাবেক যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক সৈয়দ আকবরের বাড়িতে হামলার ঘটনা।

পৃথক তিনটি হামলার ঘটনার দায় চাপানো হয় মহানগর বিএনপির আহ্বায়ক মনিরুজ্জামান খান ফারুক ও সদস্য সচিব জিয়াউদ্দিন সিকদারের কাধে। আবার নিজ অনুসারীদের নিয়ে দলের অভ্যন্তরে গ্রুপিংয়ের অভিযোগ তোলা হয় যুগ্ম আহ্বায়ক আফরোজা খানম নাসরিনের বিরুদ্ধে। কেউ কেউ বলছেন, এ নিয়ে কেন্দ্রীয় নেতাদের প্রশ্নের মুখেও পড়তে হয়েছে মহানগরের নেতাদের।

দলীয় সূত্র বলছে, মূলতঃ মহানগর বিএনপির কাউন্সিলর পূর্বক ৩০টি ওয়ার্ড কমিটি গঠনকে কেন্দ্র করে প্রকাশ্যে আসে দলের মধ্যে গ্রুপিং এবং আধিপত্য। এমনকি নেতাদের ওপর হামলা এবং বাড়ি ভাঙচুরের নেপথ্যেও রয়েছে একই কারণ।

সূত্রগুলো বলছে, কাউন্সিলের মাধ্যমে মহানগর বিএনপির কমিটি গঠনের পরিকল্পনা রয়েছে কেন্দ্রের। ইতোপূর্বে বরিশাল বিভাগের নেতাদের সাথে এ বিভাগের টিম লিডার বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান আব্দুল আউয়াল মিন্টুর বৈঠকে কাউন্সিলের বিষয়টি গুরুত্ব পায়। কাউন্সিল হলে ভবিষ্যৎ মহানগর বিএনপির নেতৃত্ব নির্ভর করবে বিসিসি’র ৩০টি ওয়ার্ড কমিটির ওপর। এ কারণেই নিজেদের দল ভাড়ি করতে ওয়ার্ড কমিটির দিকে দৃষ্টি দিয়েছেন মহানগরের বর্তমান নেতারা।

মহানগর বিএনপির ১ নম্বর যুগ্ম আহ্বায়ক আফরোজা খানম নাসরিন বলেন, ওয়ার্ড কমিটিগুলো গঠনের জন্য আহ্বায়ক, সদস্য সচিব ও আমাকে কেন্দ্র থেকে দায়িত্ব দেয়া হয়। কিন্তু মহানগর আহ্বায়ক এবং সদস্য সচিব আমাকে কিছু না জানিয়েই খিচুরি পার্টি, দোয়া মোনাজাত এবং পিকনিকে গিয়ে ওয়ার্ড কমিটি গঠনের পায়তারা করছেন। বিষয়টি কেন্দ্রে জানালে তারা ইউনিট কমিটি গঠনে বিকল্প পন্থায় কমিটি গঠনের উদ্যোগ নেন।

তিনি জানান, বিতর্কের উর্ধ্বে থেকে ৩০টি ওয়ার্ড কমিটি গঠনে সাত সদস্যের বিশেষ টিম গঠনের পরিকল্পনা রয়েছে কেন্দ্রের। এর মধ্যে মহানগরের আহ্বায়ক, সদস্য সচিব এবং আমার (নাসরিন) একজন করে প্রতিনিধি থাকবে। কেন্দ্র থেকে দু’জন, বরিশাল বিভাগের টিম লিডার আব্দুল আউয়াল মিন্টুর একজন এবং অন্য জেলা থেকে একজন প্রতিনিধি হিসেবে থাকবে এই টিমে। যাদের টিমে রাখা হবে তারা মহানগর বিএনপির কাউন্সিলে প্রার্থী হতে পারবে না। কেন্দ্রের এমন সিদ্ধান্ত বাস্তবায়ন হলে ত্যাগী এবং নির্যাতিত নেতাকর্মীরা ওয়ার্ড কমিটিতে মূল্যায়ন পাবে। তারা কাউন্সিলের মাধ্যমে যোগ্য নেতৃত্ব নির্বাচিত করতে পারবে।

এদিকে, কেন্দ্রীয় নেতাদের সাথে সাংগঠনিক বৈঠক শেষে ১১ জানুয়ারি বরিশালে ফেরেন মহানগর বিএনপির আহ্বায়ক মনিরুজ্জামান ফারুক ও সদস্য সচিব জিয়াউদ্দিন সিকদার। বরিশালে ফিরেই কেন্দ্রের নির্দেশনা ভেঙে নগরীতে নেতাকর্মীদের নিয়ে বিশাল শোডাউন করে নতুন বিতর্কে জড়ান তারা। সেই সাথে ওয়ার্ড কমিটি গঠনে বিশেষ টিম গঠনের দাবি আরও জোড়ালো হয়।

যদিও শোডাউনের অভিযোগ অস্বীকার করেছেন কেন্দ্রের মহানগর বিএনপির আহ্বায়ক মনিরুজ্জামান খান ফারুক ও সদস্য সচিব জিয়াউদ্দিন সিকদার। এরপরও গত ১৩ জানুয়ারি তাদের দু’জনকেই শৃঙ্খলা ভঙ্গের অভিযোগে কেন্দ্র থেকে পৃথক চিঠিতে শোকজ করা হয়।

যদিও কাউন্সিল পূর্বক ইউনিট কমিটি গঠনে বিকল্প কোনো টিম গঠনের সিদ্ধান্ত হয়নি বলে জানিয়েছেন, বিএনপির কেন্দ্রীয় কমিটির বরিশাল বিভাগের সহ-সাংগঠনিক সম্পাদক আকন কুদ্দুসুর রহমান। তিনি বলেন, কেন্দ্রে এমন কোনো আলোচনা হয়নি। তাছাড়া কাউন্সিলের প্রস্তুতি গোটা বিভাগজুড়েই চলছে। সেখানে শুধুমাত্র মহানগরের বেলায় আসবে কেনো। আর এমন সিদ্ধান্ত নেয়া হলে আমরা তা মানবো না। কেননা ফারুক ও জিয়া এখনো স্বৈরাচারী হাসিনার দেয়া ক্ষত শরীরে বহণ করছে। তারা মৃত্যুর মুখ থেকে ফিরে এসেছে। মহানগরে তাদের বাদ দিয়ে কোনো সিদ্ধান্ত তৃণমূলও মানবে না।

সাম্প্রতিক দেশকাল ইউটিউব চ্যানেল সাবস্ক্রাইব করুন

মন্তব্য করুন

Epaper

সাপ্তাহিক সাম্প্রতিক দেশকাল ই-পেপার পড়তে ক্লিক করুন

Logo

ঠিকানা: ১০/২২ ইকবাল রোড, ব্লক এ, মোহাম্মদপুর, ঢাকা-১২০৭

© 2025 Shampratik Deshkal All Rights Reserved. Design & Developed By Root Soft Bangladesh