বরিশাল প্রতিনিধি
প্রকাশ: ২৫ জানুয়ারি ২০২৫, ০৬:৩৪ পিএম
আপডেট: ২৫ জানুয়ারি ২০২৫, ০৬:৩৮ পিএম
ক্ষমতার পালাবদলের পর মহাসড়কে অবৈধ যানবাহনের দৌরাত্ম্য বেড়ে গেছে কয়েকগুণ। প্রতিনিয়ত দাপিয়ে বেড়াচ্ছে ফিটনেসবিহীন থ্রি-হুইলার, ইজিবাইকসহ অবৈধ যানবাহন। এর ফলে সড়কে বিশৃঙ্খলা যেমন বেড়েছে, তেমনি প্রতিনিয়ত ঘটছে দুর্ঘটনা।
অভিযোগ রয়েছে হাইওয়ে পুলিশের কঠোর নজরদারি না থাকায় সৃষ্টি হয়েছে এমন পরিস্থিতি। তবে বিশৃঙ্খলা ঠেকাতে অসহায়ত্বের কথা বলছে, হাইওয়ে পুলিশ এবং বিআরটিএ।
বরিশাল বিআরটিএর তথ্যমতে, এ জেলায় নিবন্ধিত যানবাহনের সংখ্যা ৯১ হাজার ৫৭৯। এর মধ্যে রয়েছে- মিনি ট্রাক, মোটরসাইকেল, পিকআপ ভ্যান, সিএনজি চালিত অটোরিকশা, মাইক্রোবাস, লেগুনা, কাভার্ড ভ্যান, মিনিবাস ইত্যাদি। তবে নিবন্ধন ছাড়া শুধু বরিশাল জেলায় অবৈধ এ যানবাহন সংখ্যা দুই লাখেরও বেশি।
বরিশাল জেলা বিআরটিএর সহকারী পরিচালক খালিদ মাহমুদ জানান, গাড়ির সংখ্যা এতবেশি যে, নিয়মিত অভিযান চালিয়েও নানা কারণে প্রতিরোধ করা যাচ্ছে না। এছাড়া বিআরটিএর পক্ষ থেকে চালকদের প্রায়ই প্রশিক্ষণ দেওয়া হচ্ছে। কিন্তু প্রশিক্ষণ ও ভাতা নেওয়ার পরও চালকরা প্রশিক্ষণের কথাই ভুলে যাচ্ছে। এজন্য প্রতিনিয়ত ঘটে দুর্ঘটনা।
এক জরিপে দেখা যায়, গত বছরের জানুয়ারি থেকে ডিসেম্বর মাস পর্যন্ত বরিশাল-ঢাকা-পটুয়াখালী ও ঝালকাঠি মহাসড়কে সড়ক দুঘর্টনায় ৪২ জনের প্রাণহানী ঘটেছে। এরমধ্যে বরিশাল-ঢাকা মহাসড়কেই নিহত হয়েছে ৩১ জন।
বিআরটিএর তথ্য বলছে, গত এক বছরে বরিশাল বিভাগে ৩৫৩টি সড়ক দুর্ঘটনায় মারা গেছেন ২৯২ জন। আহত হয়েছেন আরও ছয় শতাধিক।
এসব দুর্ঘটনার মূল কারণ হিসেবে উঠে এসেছে আঞ্চলিক ও জাতীয় মহাসড়কে নসিমন, করিমন, ইঞ্জিনচালিত ভ্যান, মাহেন্দ্রা, থ্রি-হুইলারসহ উচ্চ আদালত থেকে নিষিদ্ধ যানের অবাধ চলাচল। ভারী যানবাহনের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে এমন অবৈধ যান চলাচল সবথেকে বেশি ব্যস্ততম বরিশাল-ঢাকা মহাসড়কে।
স্থানীয় সূত্র বলছে, প্রতিদিন গড়ে দুই সহস্রাধিক এমন যান চলাচল করে এই সড়ক দিয়ে। এতে চরম ঝুঁকি নিয়ে চলেন যাত্রী ও ভারী যানবাহনের চালকরাও। অন্যদিকে বিআরটিএ ও হাইওয়ে পুলিশের কার্যকর পদক্ষেপ নিতে ব্যর্থ হওয়ার কথা বলছেন সংশ্লিষ্টরা।
এ বিষয়ে বরিশাল-ঢাকা মহাসড়কের ইজিবাইক চালক মনির হোসেন বলেন, বরিশাল থেকে গৌরনদী পর্যন্ত আমরা গাড়ি চালাই। খুব অল্প পথে যাত্রীরা বাসে উঠতে চান না বলেই আমরা এ রুটে গাড়ি চালাই। এ অঞ্চলের যাত্রীদের যাতায়াতের বিকল্প পথ না থাকার কারণেই আমাদের এ পথে চলতে হয়।
একই রুটে নিয়মিত ভারী পণ্য নিয়ে আসা যাওয়া করেন ট্রাক চালক মিলন বিশ্বাস। তিনি বলেন, ৫ আগস্টের পর এই সড়কে বৈধ এবং অবৈধ যানবাহনের সংখ্যা কয়েকগুণ বেড়ে গেছে। যার মধ্যে ছোট যান অর্থাৎ থ্রি-হুইলার জাতীয় যানের সংখ্যাই বেশি।
ছোট যানের কারণে আমরা গাড়িই চালাতে পারি না। হুট করেই সামনে চলে আসে। তখন কিছুই করার থাকে না। ছোট গাড়ির চালকদের ব্রেক ঠিকভাবে কাজ করে না, এরা গাড়ি চালানোর নিয়ম জানেনও না, মানেনও না।
জানা গেছে, পদ্মা সেতু চালু হওয়ার পর দক্ষিণাঞ্চল রুটে বিভিন্ন পরিবহনে চাপ বেড়ে যায়। পরিবহনের চাপ সামলাতে বরিশাল-ঢাকা মহাসড়কে ফিটনেসবিহীন থ্রি-হুইলার, ইজিবাইক, ইঞ্জিনচালিত ভ্যানের অবাধে চলাচল করতে পারতো না।
তবে যাও চলতো তা আওয়ামী লীগের সময় স্থানীয় নেতাদের ছত্রছায়ায় এবং হাইওয়ে থানা পুলিশের যোগসাজসে চলাচল করতো। ৫ আগস্ট ছাত্র-জনতার গণঅভ্যুত্থানে স্বৈরশাসকের পতন হলে হাইওয়ে থানা পুলিশের দায়িত্বহীনতার কারণে নিয়ন্ত্রহীনভাবে বেড়ে যায় অবৈধ যানবাহনের সংখ্যা। এ কারণে মহাসড়কটিতে সড়ক দুর্ঘটনার ঘটনা বৃদ্ধি পেয়েছে বলে জানিয়েছেন বরিশাল জেলা জনস্বার্থ রক্ষা কমিটির সদস্য সচিব মনোয়ারুল ইসলাম অলি। তিনি বলেন, ভাঙ্গা থেকে কুয়াকাটা মহাসড়ক পর্যন্ত ছয় লাইনের কাজটি বন্ধ হয়ে গেছে। এটা হতাশা জনক।
তিনি আরো বলেন, পরিবহন চালকদের বেপরোয়া চালানোর কারণেও সড়ক দুঘর্টনা বাড়ছে। তেমনি সড়কে ছোট যান চালানো বন্ধে যে দুটি সংস্থা আছে বিআরটিএ আর হাইওয়ে পুলিশ কার্যকর ভূমিকা রাখতে পারছে না। এদের দায়িত্ব তারা যদি নিয়ম মতো পালন করতো, তাহলে অবৈধ যান চলার কথা না। দুর্ঘটনাও কমে আসার কথা। তারপরেও বাইপাস সড়ক হলে দুঘর্টনার সংখ্যা কমে আসবে বলেন তিনি।
শুধু বরিশাল-ঢাকা মহাসড়ক নয়, একই চিত্র বরিশাল-পটুয়াখালী, বরিশাল ঝালকাঠিসহ সবগুলো আঞ্চলিক ও জাতীয় মহাসড়কে। এসব অবৈধ যানবাহন চলাচল বন্ধে বিআরটিএ ও হাইওয়ে পুলিশ অভিযান পরিচালনা করার দাবি করলেও তা খুব একটা ফলপ্রসূ হচ্ছে না বলে জানান বিআরটিএর বরিশাল বিভাগীয় পরিচালক জিয়াউর রহমান।
তিনি বলেন, মহাসড়কে অবৈধ যান চলাচল বন্ধে আমরা নিয়মিত অভিযান পরিচালনা করছি। অভিযান চালাতে গিয়েও আমরা নানা প্রতিবন্ধকতায় পড়ি। তবে আশা করছি সামনে আমাদের অভিযান আরও জোরদার করতে পারবো। একইসঙ্গে প্রতিটি মহাসড়কেই সার্ভিস লাইন রাখা খুব প্রয়োজন। এ জন্য সড়ক বিভাগ উদ্যোগী হবে বলে আশা করি।
এদিকে অবৈধ যানবাহনের বিরুদ্ধে অভিযান চলমান ও মামলা দেয়া হচ্ছে বলে জানান, গৌরনদী হাইওয়ে থানার অফিসার ইনচার্জ আমিনুর রহমান। তিনি বলেন, বিভিন্ন রুটে এত বেশি সংখ্যক অবৈধ যান চলাচল করছে, তাদের প্রতিরোধ করা আমাদের পক্ষে সম্ভব হয়ে উঠছে না।
সড়ক বিভাগের তথ্য মতে, বরিশাল বিভাগের ৩টি জাতীয় ও ২টি আঞ্চলিক মহাসড়ক রয়েছে, যার মধ্যে ৩টি জাতীয় মহাসড়কের ১০১ এবং ২টি আঞ্চলিক মহাসড়কের দৈঘ্য ১৬ কিলোমিটার বলে জানিয়েছেন বরিশাল সড়ক বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী মো. নাজমুল ইসলাম।
হাইওয়ে পুলিশের মাদারীপুর জোনের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মো. মারুফ হোসেন বলেন, সর্তক করার পরেও মহাসড়ক থেকে থ্রি হুইলার নিয়ন্ত্রণ করা যাচ্ছে না। অনেক সময় তাদের বিরুদ্ধে মামলা দিলে হেনস্তার শিকার হতে হয়। তারপরেও সরকারের নির্দেশনা আমরা পালন করে যাচ্ছি।
সাম্প্রতিক দেশকাল ইউটিউব চ্যানেল সাবস্ক্রাইব করুন
বিষয় : বরিশাল অবৈধ যানবাহন সড়ক দুর্ঘটনা
© 2025 Shampratik Deshkal All Rights Reserved. Design & Developed By Root Soft Bangladesh