বরিশাল থেকে ৫ জেলায় বাস চলাচল বন্ধ

হাফ ভাড়া নিয়ে ছাত্রীকে হেনস্তা এবং শিক্ষার্থীদের ওপর শ্রমিকদের হামলার প্রতিবাদে মঙ্গলবার সন্ধ্যা ৬টা থেকে রাত সোয়া ৯টা পর্যন্ত সড়ক অবরোধ করে শিক্ষার্থীরা। পরে ৮ দফা দাবি জানিয়ে প্রশাসনের মধ্যস্থতায় তারা অবরোধ তুলে নিলেও নতুন করে আজ বুধবার (২৯ জানুয়ারি) সকাল থেকে ধর্মঘট শুরু করেছেন বাস শ্রমিকরা।

এর ফলে সকাল থেকে নগরীর রূপাতলী বাসস্ট্যান্ড থেকে খুলনাসহ দক্ষিণাঞ্চলের পাঁচটি জেলায় বাস চলাচল বন্ধ রয়েছে। এ বাসস্ট্যান্ড থেকে পটুয়াখালী, বরগুনা, ঝালকাঠি, পিরোজপুর জেলার বিভিন্ন রুটে এবং খুলনা-বাগেরহাট রুটে বাস চলাচল করে।

শ্রমিকদের দাবি- নিরাপত্তাহীনতার কারণে তারা কর্মবিরতি পালন শুরু করেছেন। নিরাপত্তা নিশ্চিত না হওয়া পর্যন্ত অনির্দিষ্টকালের জন্য ডাকা কর্মবিরতি চালিয়ে যাবেন তারা।

এদিকে পূর্ব ঘোষণা ছাড়াই শ্রমিকদের কর্মবিরতির কারণে বাস চলাচল বন্ধ রয়েছে। এর ফলে ভোগান্তিতে পড়তে হয়েছে বিভিন্ন রুটের হাজার হাজার যাত্রীদের। সকাল থেকেই বাসস্ট্যান্ডে এসে শ্রমিকদের কর্মবিরতির কারণে তারা গন্তব্যে যেতে পারেননি। অনেককে বিকল্প ব্যবস্থায় থ্রি-হুইলার এবং মোটরসাইকেলে ঝুঁকি নিয়ে গন্তব্যে যাত্রা করতে দেখা যায়।

রূপাতলীস্থ বরিশাল জেলা বাস শ্রমিক ইউনিয়নের সাধারণ সম্পাদক আবুল কালাম চৌধুরী বলেন, মঙ্গলবার সন্ধ্যায় শিক্ষার্থীরা শ্রমিকদের ওপর হামলা, অফিস এবং বাস ভাঙচুর করেছে। কিন্তু বিভিন্ন গণমাধ্যমে বাস শ্রমিকদের দোষারোপ করে সংবাদ প্রকাশ করা হয়েছে।


তিনি বলেন, বাস শ্রমিকরা জীবনের ঝুঁকি নিয়ে সাধারণ মানুষদের পরিবহন সেবা দিয়ে আসছে। অথচ সড়ক পথে শ্রমিকদের ন্যূনতম নিরাপত্তা ব্যবস্থা নেই। কথা কথায় যাত্রীরা শ্রমিকদের মারধরসহ খারাপ ব্যবহার করে। নিজেদের নিরাপত্তা নিশ্চিতের দাবিতে শ্রমিকরা অনির্দিষ্টকালের জন্য কর্মবিরতি শুরু করেছে। শুধু বরিশাল নয়, এ কর্মসূচিতে বিভাগের অন্য জেলার শ্রমিক ইউনিয়নগুলো যোগ দিয়েছে।

এর আগে মঙ্গলবার বিকেলে বিএম কলেজের রাষ্ট্র বিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষার্থী লিপি আক্তার রাজাপুর থেকে ‘তাওহীদ’ পরিবহন (বরিশাল মেট্রো-ব ১১-০২২৯) নামের বাসে বরিশালে যাচ্ছিলেন। এ সময় হাফ ভাড়া নিয়ে তর্কাতর্কিতে ছাত্রীকে হেনস্থা করার অভিযোগ করা হয়। এর প্রতিবাদে মঙ্গলবার সন্ধ্যায় শিক্ষার্থীরা রূপাতলী বাস টার্মিনাল থেকে চালকসহ বাস তাদের ক্যাম্পাসের দিকে নিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করে। এ নিয়ে শ্রমিক এবং শিক্ষার্থীদের মধ্যে হামলা-পাল্টা হামলা এবং সংঘর্ষ হয়। প্রতিবাদে শিক্ষার্থীরা বরিশাল-কুয়াকাটা-ভোলা-ঝালকাঠি-বরগুনা মহাসড়কের রূপাতলী গোলচত্বরে মহাসড়কে টায়ার জ্বালিয়ে অবরোধ করলে যানবাহন চলাচল বন্ধ হয়ে যায়।

এ সময় ৮ দফা দাবি তুলে ধরে শিক্ষার্থীরা। দাবিগুলো হলো- ছাত্রীকে হেনস্থা এবং শিক্ষার্থীদের ওপর হামলাকারী বাস শ্রমিকদের ২৪ ঘণ্টার মধ্যে বিচারের আওতায় আনা, হামলায় আহত শিক্ষার্থীদের ক্ষতিপূরণ প্রদান, বরিশাল বিভাগের সকল রুটে আইডি কার্ড প্রদর্শন সাপেক্ষে শিক্ষার্থীদের হাফ ভাড়া কার্যকর, আর কোন বাসে শিক্ষার্থী হেনস্থা হলে সংশ্লিষ্ট বাসের রুট পারমিট বাতিল ও শ্রমিককে আইনের আওতায় আনা, দ্রুত সময়ের মধ্যে বাস মালিক সমিতিতে নির্বাচিত কমিটি গঠন, আধুনিক বাস সেবা ও ডিজিটাল ট্রাফিক আইন বাস্তবায়ন, প্রশিক্ষিত চালক নিয়োগ এবং বাস টার্মিনালে সকল প্রকার চাঁদাবাজি বন্ধ।

বিএম কলেজের অর্থনীতি বিভাগের মাস্টার্সের ছাত্র কামরুল ইসলাম হাবিব বলেন, আমরা ৮ দফা দাবিতে মঙ্গলবার সন্ধ্যায় সড়ক অবরোধ করেছিলাম। প্রশাসনের মধ্যস্থতায় বাস মালিক-শ্রমিকরা ৮ দাবি মেনে নিলে রাত সোয়া ৯টার দিকে অবরোধ প্রত্যাহার করা হয়। দাবি মেনে নেওয়ার পর মালিক-শ্রমিকরা বুধবার সকালে উদ্দেশ্যমূলকভাবে ধর্মঘট শুরু করেছে।

জানা গেছে, রূপাতলী বাস টার্মিনালের নিয়ন্ত্রক বরিশাল মহানগর বিএনপির সদস্য সচিব জিয়াউদ্দিন সিকদার। ৫ আগস্টের পর তিনি এ টার্মিনাল কেন্দ্রিক বাস মালিকদের সংগঠন বরিশাল-পটুয়াখালী মিনিবাস মালিক সমিতির আহবায়ক হন। পরবর্তীতে চাঁদাবাজিসহ বিভিন্ন কারণে কেন্দ্র থেকে সেই কমিটি ভেঙে দেওয়া হয়। এর তিনদিনের মাথায় বাস মালিক গ্রুপ নামে অপর একটি কমিটি ঘোষণা করেন তিনি। সেই কমিটির সভাপতি জিয়াউদ্দিন সিকদার। এসব কারণে শ্রমিক আন্দোলনের পেছনে রাজনৈতিক নেতাদের মদদ থাকতে পারে বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা।

সাম্প্রতিক দেশকাল ইউটিউব চ্যানেল সাবস্ক্রাইব করুন

মন্তব্য করুন

Epaper

সাপ্তাহিক সাম্প্রতিক দেশকাল ই-পেপার পড়তে ক্লিক করুন

Logo

ঠিকানা: ১০/২২ ইকবাল রোড, ব্লক এ, মোহাম্মদপুর, ঢাকা-১২০৭

© 2025 Shampratik Deshkal All Rights Reserved. Design & Developed By Root Soft Bangladesh