আজ শুক্রবার মধ্যরাত থেকে টানা দুই মাস চাঁদপুরে পদ্মা-মেঘনাসহ দেশের ছয়টি অভয়াশ্রমে ইলিশসহ সব ধরনের মাছ ধরায় নিষেধাজ্ঞা শুরু হচ্ছে। এরই মধ্যে জেলেরা জাল-নৌকাসহ মাছ ধারার সরঞ্জাম নিয়ে তীরে ফিরতে শুরু করেছেন।
এই সময়ে জেলেদের প্রণোদনা হিসেবে চার ধাপে ৪০ কেজি করে চাল বরাদ্দ দেওয়া হবে বলে জানিয়েছে মৎস্য বিভাগ।
চাঁদপুরের মতলবের ষাটনল থেকে হাইমচর উপজেলার চরভৈরবী পর্যন্ত ৭০ কিলোমিটার মার্চ-এপ্রিল দুই মাস ইলিশসহ সব মাছ ধরা নিষিদ্ধ। এ সময়ে ইলিশ মাছ কেনা-বেচা, পরিবহন ও মজুত সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ। এরই মধ্যে জেলা প্রশাসন ও মৎস্য বিভাগ থেকে জেলেদের নিয়ে মতবিনিময়, লিফলেট বিতরণ ও মাইকিং করা হয়েছে।
এদিকে, দুই মাসের বেকারত্ব নিয়ে দুশ্চিন্তায় জেলেরা। তারা বলছেন, সরকারের পক্ষ থেকে পাওয়া বরাদ্দ তাদের জন্য অপ্রতুল।
লক্ষ্মীপুর ইউনিয়নের মধ্য সাখুয়া গ্রামের জেলে ইসমাইল হোসেন বলেন, ‘কোস্টগার্ড ও নৌ-বাহিনীর সদস্যরা তৎপর থাকলে অসৎ জেলেরা জাটকা ধরতে পারবে না। তাহলে জাটকা বড় হতে পারবে।’
পুরানবাজার রনগোয়াল এলাকার জেলে শাহজাহান মিয়া বলেন, ‘সরকার আমাদের যে চাল দেয়, এই চালে তো আমাদের চাহিদা মিটে না। সরকার যদি জেলেদের আর্থিক সহযোগিতাও করে তাহলে আমরা উপকৃত হতাম। শুধু চাল দিলে তো হয় না, তেল, ডাল, নুন- সবই লাগে।’
হরিণাঘাট এলাকার জেলে ও মৎস্য ব্যবাসায়ী লোকমান পাটোয়ারী বলেন, ‘দুই মাসের অভিযানে আমাদের জাল-নৌকা সব বন্ধ। আমরা সব জাল-নৌকা উঁচুতে উঠিয়ে ফেলছি। আর মার্চের ১ তারিখ থেকে বন্ধ করে ফেলব, উঠিয়ে ফেলব। মাছ ধরা বন্ধের দুই মাস সরকার আমাদের চাল দেয়। চাল যেন ঠিকমতো পাই—এটা সরকারের নিকট অনুরোধ। কিস্তি আছে, বৌ-বাচ্চা আছে, পড়ালেখা আছে বাচ্চাদের, সংসার খরচ আছে। আমরা সাহায্যের জন্য সরকারের কাছে আবেদন করছি।’
এদিকে, জাটকা সংরক্ষণ অভিযান সফল করতে মৎস্য বিভাগ, কোস্টগার্ড, নৌ-পুলিশসহ টাস্কফোর্সের সদস্যরা পর্যায়ক্রমে ২৪ ঘণ্টা নদীতে টহল দিতে প্রস্তুতি নিয়েছে।
এবার নিবন্ধিত ৪০ হাজার ৫ জন জেলেকে ভিজিএফ কর্মসূচির আওতায় আনা হয়েছে বলে জানান জেলা মৎস্য কর্মকর্তা মো. গোলাম মেহেদী হাছান। তিনি বলেন, ‘খুব দ্রুতই জেলেদের মধ্যে চাল বিতরণ শুরু হচ্ছে। জেলেদের যেসব ক্ষুদ্র ঋণ আছে, সেগুলোর কিস্তি যেন এই সময় দিতে না হয় সেজন্য জেলা প্রশাসক থেকে চিঠি দেওয়া হয়েছে। আমরা আশা করছি, জেলেরা এবার নদীতে নামবে না। এবং জেলেদের প্রত্যেক মাসে ৪০ কেজি করে ভিজিএফ কর্মসূচি দেওয়া হবে। চারমাস এটা অব্যাহত থাকবে।’
মৎস্য কর্মকর্তা জানান, আইন অমান্য করে কেউ জাটকা ইলিশ আহরণ করলে তার বিরুদ্ধে মৎস্য আইনে দুই বছর কারাদণ্ড ও ৫ হাজার টাকা জরিমানা অথবা উভয়দণ্ডে দণ্ডিত করার বিধান রাখা হয়েছে।
সাম্প্রতিক দেশকাল ইউটিউব চ্যানেল সাবস্ক্রাইব করুন
© 2025 Shampratik Deshkal All Rights Reserved. Design & Developed By Root Soft Bangladesh