শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান জাতীয়করণের দাবিতে মাঠে নামছে লিয়াজোঁ ফোরাম

নানা বৈষম্য ও ভোগান্তি কমাতে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান জাতীয়করণের দাবিতে মাঠে নামছেন শিক্ষকরা। নিয়মতান্ত্রিক পদ্ধতিতে সরকারের সাথে আলোচনার মাধ্যমে মুজিববর্ষেই সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান জাতীয়করণ করতে ইতোমধ্যে মাঠ পর্যায়ে কার্যক্রমও শুরু হয়েছে।

আগামী ৫ অক্টোবর বিশ্ব শিক্ষক দিবসের আগেই সরকারের পক্ষ থেকে সুস্পষ্ট ঘোষণার আলটিমেটামও দিয়েছেন তারা। বাংলাদেশ শিক্ষক সমিতি (বাশিস) ও এমপিওভুক্ত শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান জাতীয়করণ লিয়াজোঁ ফোরামের পক্ষ থেকে লিখিতভাবে প্রধানমন্ত্রী বরাবরে আবেদন করার পাশাপাশি পাঠ পর্যায়েও তারা কাজ শুরু করেছেন।

ইতোমধ্যে জেলা প্রশাসকের মাধ্যমে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান জাতীয়করণের দাবি জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী বরাবরে স্মারকলিপি দেয়ার প্রক্রিয়াও শুরু করেছে শিক্ষকদের এই ফোরাম।

লিয়াজোঁ ফোরামের অনেক শিক্ষক নেতা জানান, বেসরকারি পর্যায়ের এমপিওভুক্ত শিক্ষকরা রাজস্ব খাত থেকে সামান্য বেতন পেলেও তারা অনেকেই বেতন বৈষম্যের শিকার। শিক্ষকরা এক হাজার টাকা বাড়ি ভাড়া, ৫০০ টাকা চিকিৎসা ভাতা, ২৫ শতাংশ ঈদ বোনাস, যা ১৬ বছরেও পরিবর্তন হয়নি। শিক্ষকদের কোনো বদলি প্রথা নেই, ৫ শতাংশ বার্ষিক ইনক্রিমেন্ট দিয়েও আবার ৪ শতাংশ অতিরিক্ত কর্তন করা হচ্ছে বেসরকারি শিক্ষক-কর্মচারী কল্যাণ ট্রাস্ট ও অবসর সুবিধা বোর্ডে। অথচ অবসরপ্রাপ্ত শিক্ষক-কর্মচারীরা সঠিক সময়ে অবসরের টাকাও পাচ্ছেন না। অনেক শিক্ষক-কর্মচারী অবসরে গিয়ে টাকার অভাবে চিকিৎসা না পেয়ে মারা যাচ্ছেন, যা অমানবিক।

শিক্ষকরা জানান, বঙ্গবন্ধুর স্বপ্ন ও আদর্শ ছিল বৈষম্যহীন সমাজব্যবস্থা তথা বৈষম্যহীন শিক্ষা। তিনি বেঁচে থাকলে অনেক আগেই হয়তো শিক্ষা জাতীয়করণ করা হতো। কেননা বাংলাদেশে বৈষম্যহীন একটি সমাজব্যবস্থা গড়ে তুলতে ভিত্তিই হবে শিক্ষা জাতীয়করণ।

শিক্ষকরা আরো জানান, বর্তমান সরকারের আমলেই ২ হাজার ৭৩০টি ননএমপিও শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান এমপিওভুক্ত হয়েছে। আরো প্রায় সাড়ে চার হাজার নন-এমপিও প্রতিষ্ঠান রয়েছে, যেখানে অনেক শিক্ষক-কর্মচারী দীর্ঘদিন বিনা বেতনে চাকরি করে আসছেন। বেসরকারি কলেজের অনার্স-মাস্টার্স শিক্ষকরা ২৮ বছরেও এমপিওভুক্ত হতে পারেননি। এ ছাড়াও এমপিওভুক্তি প্রক্রিয়া সরকারের জন্য অলাভজনক ও শিক্ষক-কর্মচারীদের ভোগান্তির পদ্ধতি।

বাংলাদেশ শিক্ষক সমিতির সভাপতি ও এমপিওভুক্ত শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান জাতীয়করণ লিয়াজোঁ ফোরামের মুখপাত্র মো: নজরুল ইসলাম রনি গতকাল সোমবার জানান, আমরা সরকার প্রধানকে একটি বার্তাই দিতে চাই যে, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান জাতীয়করণ করতে অতিরিক্ত কোনো অর্থ খরচ হবে না। বরং এমপিওর টাকা দিয়েই জাতীয়করণ করা সম্ভব। তিনি আরো জানান, বেতন বৈষম্যসহ নানাবিধ কারণে শিক্ষক সমাজে তীব্র ক্ষোভ ও অসন্তোষ দেখা দিয়েছে। এ ছাড়া ক্ষেত্র বিশেষে অনেক শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে ম্যানেজিং কমিটি/গভর্নিং বডির প্রভাবে শিক্ষক নির্যাতন ও দুর্নীতি এখন চরম পর্যায়ে। এতে সরকারের ভাবমর্যাদা দারুণভাবে ক্ষুন্ন হচ্ছে। তাই জাতীয়করণ এখন সময়ের দাবি।

তিনি আরো জানান, বেসরকারি অনেক শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের কোটি কোটি টাকার ফান্ড রয়েছে। এসব ফান্ড রাষ্ট্রীয় কোষাগারে ফেরত নিয়ে, ছাত্রবেতন বর্তমানের চেয়ে ১০ টাকা বৃদ্ধি করলে সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান একসাথে জাতীয়করণ করলেও সরকারের রাজস্বের তেমন কোনো ঘাটতি হবে না। আর এ জন্য প্রয়োজন শুধু প্রধানমন্ত্রীর সদিচ্ছা আর উদ্যোগ। আগামী ৫ অক্টোবর বিশ্ব শিক্ষক দিসব উপলক্ষে বেসরকারি শিক্ষক-কর্মচারীদের আর্থসামাজিক অবস্থা ও জাতির বৃহত্তর স্বার্থে মুজিববর্ষকে আলোকিত ও অবিস্মরণীয় এবং চির অম্লান করে রাখতে এর আগেই শিক্ষাব্যবস্থা জাতীয়করণ ঘোষণা দিলে একটি নতুন ইতিহাস সৃষ্টি হবে।

সাম্প্রতিক দেশকাল ইউটিউব চ্যানেল সাবস্ক্রাইব করুন

মন্তব্য করুন

Epaper

সাপ্তাহিক সাম্প্রতিক দেশকাল ই-পেপার পড়তে ক্লিক করুন

Logo

ঠিকানা: ১০/২২ ইকবাল রোড, ব্লক এ, মোহাম্মদপুর, ঢাকা-১২০৭

© 2024 Shampratik Deshkal All Rights Reserved. Design & Developed By Root Soft Bangladesh

// //