অদৃশ্য জালে বন্দি শিক্ষকদের পদোন্নতি ও ইনক্রিমেন্ট

দ্বিতীয় শ্রেণির গেজেটেড পদ মর্যাদা, পদোন্নতি, প্রাপ্ত বকেয়া টাইমস্কেল ও সিলেকশন গ্রেড, বিএড ইনক্রিমেন্ট পেতে দেশের সরকারি মাধ্যমিকের শিক্ষকরা বছরের পর বছর ধরে দাবি করলেও তা বাস্তবায়ন হয়নি। শিক্ষকদের প্রাপ্য সকল সুবিধা এক অদৃশ্য জালে বন্দি থাকায় সকল সুবিধাই বঞ্চিত তারা।

এমনকি উচ্চ আদালতে দাখিল করা রিট পিটিশনের রায়ে শিক্ষকদের প্রাপ্ত সুবিধা প্রদানের নির্দেশ দেয়ার এক বছর পেরিয়ে গেলেও দৃশ্যমান কোন উদ্যোগ নেয়নি সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ। উল্টো হাইকোর্টের রায়ের বিরুদ্ধে নির্ধারিত সময়ের পর আপীলে স্টে-অর্ডারের আবেদন করলে আদালত স্টে-অর্ডারের আবেদন খারিজ করে শুনানির দিনধার্য করে আদালত।

ভুক্তভোগী শিক্ষকরা জানান, তাদের বকেয়া সিলেকশন গ্রেড ও টাইম স্কেল প্রাপ্তির জন্য ন্যায় বিচার ও জটিলতা নিরসনে উচ্চ আদালতে ৩টি রিট পিটিশন দাখিল করেন। এ প্রেক্ষিতে ২০১৯ সালের ২ মে রিট পিটিশনের রায়ে জাতীয় বেতন স্কেল ২০০৯ এর ৭(২) ও ৭(৯) ধারা মোতাবেক প্রাপ্ত সুবিধা প্রদানের নির্দেশ দেয় উচ্চ আদালত। এরপরই একই বছরের ২৪ আগস্ট উচ্চ আদালতের রায়ের সার্টিফাইড কপি মাউশি ও শিক্ষা মন্ত্রণালয়ে জমা দেয়া হয়। আর প্রদত্ত রায়ে ৩ মাসের মধ্যে রায় বাস্তবায়নের নির্দেশনা দিলেও এক বছর পেরিয়ে গেলেও তা বাস্তবায়ন হয়নি।

সহকারি শিক্ষকরা আরো জানান, চাকুরিতে যোগদান থেকে দ্বিতীয় শ্রেণির বেতন স্কেলভুক্ত ১৯৯৭ থেকে ২০০৬ সাল পর্যন্ত নিয়োগ প্রাপ্ত ২ হাজার ৮৪০ জন সহকারি শিক্ষক সিলেকশন গ্রেড স্কেল ও টাইম স্কেলের জন্য আবেদন করে। পরবর্তীতে আরো প্রায় ৩ হাজার শিক্ষক সিলেকশন গ্রেড স্কেল প্রাপ্য হন। অথচ আবেদনকারি সহকারি শিক্ষকদের সিলেকশন গ্রেড স্কেল ও টাইম স্কেলের বিষয়ে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ে ৩ দফা ডিপিসি সভা করেও কোন সিদ্ধান্ত চূড়ান্ত করেনি।

অপরদিকে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের ১৯৭০ সালের অধ্যাদেশ অনুযায়ী শিক্ষকরা অগ্রিম বর্ধিত বেতন প্রাপ্য উল্লেখ থাকলেও ২০১৫ সালের পর যোগদানকৃত শিক্ষকরা প্রাপ্য অগ্রিম বর্ধিত বেতন পাচ্ছে না। শিক্ষকরা অভিযোগে জানিয়েছে, ২০১৫ সালের পে-স্কেলেও অধ্যাদেশ বলবৎ থাকলেও ভিন্ন ব্যাখ্যার মাধ্যমে মহাহিসাব রক্ষণ অফিস অধিদপ্তরের আদেশ বাস্তবায়ন করেনি।

এ প্রসঙ্গে সরকারি দাবি বাস্তবায়ন উপ-কমিটির আহবায়ক আব্দুস সালাম বলেন, আদালতের রায়সহ একাধিকবার কর্তৃপক্ষের কাছে সমাধান চেয়েও না পেয়ে আদালত অবমাননার মামলা করা হয়। মামলার রায় অনুসারে একই অধিদপ্তরে কলেজ শাখায় টাইমস্কেল ও সিলেকশন গ্রেড পেলেও মাধ্যমিকের শিক্ষকদের পক্ষে আদালতের রায়কে অধিদপ্তর অবজ্ঞা করা হচ্ছে।  

ভুক্তভোগী সরকারি মাধ্যমিকের শিক্ষক মনোরঞ্জন ধর বলেন, অর্থ মন্ত্রণালয়ের চিঠির প্রেক্ষিতে শিক্ষকরা এ সুবিধা থেকে বঞ্চিত। অর্থ মন্ত্রণালয়ে চিঠির ভাষ্য অনুযায়ী, যোগদানের পূর্বে বিএড করা থাকলে অগ্রিম বর্ধিত বেতন পাওয়া যাবে। যা সরকারি মাধ্যমিকের নিয়োগবিধির সাথে সাংঘর্ষিক।

তিনি বলেন, নিয়োগ বিধিতে যোগদানের পরবর্তী ৫ বছরের মধ্যে বিএড শেষ করার সুযোগ রয়েছে। এছাড়া একই আইনে প্রায় ৯ হাজার শিক্ষক এ সুবিধা পেলেও মাত্র ৮০০ শিক্ষককে বঞ্চিত করা হচ্ছে, যা একই অধিদপ্তরে কর্মরত শিক্ষকদের মধ্যে চরম বৈষম্য তৈরী করেছে।

টাইমস্কেল ও সিলেকশনগ্রেড এবং অগ্রিম বর্ধিত বেতন প্রসঙ্গে মাউশির সহকারি পরিচালক আমিনুল ইসলাম টুকু  বলেন, সহকারি শিক্ষকরা হাইকোর্টে ৩টি রিট পিটিশন দাখিল করেন। ওই রিটের রায় শিক্ষকদের পক্ষে হয়েছে। কিন্তু সরকার পক্ষ রায়ের বিরুদ্ধে আপীল করায় বিষয়টি উচ্চ আদালতে বিচারাধীন থাকায় বাস্তবায়নের উদ্যোগ নিতে বিলম্ব হচ্ছে।

সাম্প্রতিক দেশকাল ইউটিউব চ্যানেল সাবস্ক্রাইব করুন

মন্তব্য করুন

Epaper

সাপ্তাহিক সাম্প্রতিক দেশকাল ই-পেপার পড়তে ক্লিক করুন

Logo

ঠিকানা: ১০/২২ ইকবাল রোড, ব্লক এ, মোহাম্মদপুর, ঢাকা-১২০৭

© 2024 Shampratik Deshkal All Rights Reserved. Design & Developed By Root Soft Bangladesh

// //