৩০ সেপ্টেম্বর থেকে অর্নাস-মার্স্টাস শিক্ষকদের অবস্থান কর্মসূচি ঘোষণা

বেসরকারি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের জনবল কাঠামো ও এমপিও নীতিমালা-২০১৮তে বেসরকারি কলেজের অনার্স-মাস্টার্স শিক্ষকদের অন্তর্ভুক্তির দাবিতে মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর দৃষ্টি আকর্ষণের জন্য ৩০ সেপ্টেম্বর থেকে ২ অক্টোবর পর্যন্ত ঢাকার জাতীয় প্রেস ক্লাবের সামনে স্বাস্থ্যবিধি মেনে ও সামাজিক দূরত্ব বজায় রেখে তিনদিনের “মানববন্ধন ও শান্তিপূর্ণ অবস্থান” কর্মসূচি ঘোষণা করেছে “বাংলাদেশ বেসরকারি কলেজ অনার্স-মাস্টার্স শিক্ষক ফেডারেশন”।

দেশের গ্রামের দরিদ্র ও গরীব শিক্ষার্থীদের উচ্চশিক্ষা নিশ্চিত করতে জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার পর থেকে প্রায় ২৮ বছর ধরে এসব শিক্ষকরা শুধুমাত্র জনবল কাঠামোতে না থাকার কারণে এমপিওভুক্তির বাইরে রয়েছে। 

গত বছরের শেষ দিকে শিক্ষা মন্ত্রণালয় জনবল কাঠামো সংশোধনের উদ্যোগ গ্রহণ করে। উক্ত সংশোধনীর প্রথম সভায় অনার্স-মাস্টার্স কোর্সের শিক্ষকদের জনবল কাঠামোতে অন্তর্ভুক্তির বিষয়ে সর্ব সম্মতিক্রমে সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়। পরবর্তীতে সরকারের পলিসির বিষয় উল্লেখ করে অনার্স-মাস্টার্স শিক্ষকদের নীতিমালার বাইরে রাখার সিদ্ধান্ত নেন সংশোধনী কমিটি।

জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীনে বেসরকারি কলেজগুলোতে অনার্স-মাস্টার্স কোর্স চালু করা হয় ১৯৯৩ সাল থেকে কিন্তু এই শিক্ষকদের জন্য আজ পর্যন্ত কোন সরকারি নীতিমালা তৈরি করা হয়নি। শিক্ষক নিয়োগ থেকে শুরু করে পাঠদানের অনুমতি, সিলেবাস প্রণয়ন, শিক্ষকদের প্রশিক্ষণ, ফলাফল প্রকাশসহ সকল কার্যক্রম তদারকি করে জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়। কিন্তু বেতন/এমপিও বেলায় সরকারি সিদ্ধান্তের কথা বলা হয়। বহু দেন দরবারের পরে এসব শিক্ষকদের বেতন ভাতা স্ব স্ব প্রতিষ্ঠান থেকে প্রচলিত স্কেলে শতভাগ প্রদানের আদেশ জারি করে জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়। কিন্তু প্রতিষ্ঠানগুলোতে ফান্ড না থাকার কারণ দেখিয়ে উক্ত আদেশ না মেনে কলেজভেদে দুই থেকে ১০ হাজার টাকা বেতন প্রদান করা হয়। আবার অনেক কলেজে সেই টাকাও দেওয়া হয় না। 

শিক্ষকদের উক্ত বেতনে বর্তমান বাজারে পরিবারের ভরণপোষণ ও দিনাতিপাত করা একেবারেই অসম্ভব। শিক্ষকদের যে ন্যূনতম বেতন দেওয়া হত সেটাও বর্তমানে করোনা মহামারীতে প্রায় ৫/৬ মাস ধরে বন্ধ রয়েছে। এ সকল শিক্ষকদের সমস্যর স্থায়ী সমাধানের জন্য মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় থেকে বিগত দিনে তিনটি নির্দেশনা শিক্ষা মন্ত্রণালয়কে প্রদান করা হয় যা আজও বাস্তবায়ন করা হয়নি। 

শিক্ষা মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির দুটি সুপারিশ ও শিক্ষা অধিদপ্তরের সাবেক দুজন মহাপরিচালকের দুটি সুপারিশ থাকার পরেও অনার্স-মাস্টার্স শিক্ষকদের জনবল কাঠামোতে অন্তর্ভুক্ত করা হয়নি। এছাড়া একই বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীনে একই সিলেবাসে পাঠদান করিয়ে পূর্বে ৪৫টি জাতীয়করণকৃত কলেজের অনার্স-মাষ্টার্স শিক্ষকেরা ক্যাডারভুক্ত হয়েছেন এবং বর্তমানে ২৭৫ টি কলেজের অনার্স মাষ্টার্স শিক্ষকেরা নন-ক্যাডার হিসাবে আত্বীয়করণ হতে যাচ্ছে। আবার একই এমপিওভুক্ত প্রতিষ্ঠানে ইন্টারমিডিয়েট ও ডিগ্রি কোর্সের শিক্ষকরা এমপিওভুক্ত এবং মাদ্রাসা পর্যায়ে ফাজিল ও কামিল শিক্ষকরা এমপিওভুক্ত হতে পারলেও  আমরা কলেজ পর্যায়ে অনার্স-মাস্টার্সের শিক্ষকরা আজও এমপিওভুক্ত হতে পারেনি যা অত্যন্ত দুঃখজনক। 

উল্লেখ্য, আমাদের যৌক্তিক দাবীর স্বপক্ষে দীর্ঘ ২৮ বছর ধরে সংবাদ সম্মেলন ও মানববন্ধন করে ইলেকট্রনিক মিডিয়া ও পত্রিকার মাধ্যমে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের দৃটি আকর্ষণ করে আসছি। কিন্তু  সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের কেউ আমাদের দাবি বাস্তবায়নে এগিয়ে আসেননি।

তাই, চলমান জনবল কাঠামো ও এমপিও নীতিমালা-২০১৮এর সংশোধনীতে বেসরকারি কলেজের অনার্স-মাস্টার্স শিক্ষকদের অন্তর্ভুক্তির মাধ্যমে বেতন সমস্যার স্থায়ী সমাধানের লক্ষ্যে মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর দৃষ্টি আকর্ষণের জন্য ৩০ সেপ্টেম্বর থেকে ২ অক্টোবর পর্যন্ত ঢাকার জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে স্বাস্থ্যবিধি মেনে ও সামাজিক দুরত্ব বজায় রেখে “মানববন্ধন ও শান্তিপূর্ণ অবস্থান” কর্মসূচি পালন করা হবে।

এ সম্পর্কে সংগঠনের আহ্বায়ক মো. হারুন অর রশিদ বলেন, ‘শুধুমাত্র জনবল কাঠামোর অজুহাতে দীর্ঘ ২৮ বছর ধরে আমাদেরকে কেন সরকারি সুযোগ-সুবিধার (এমপিও) বাইরে রাখা হয়েছে তা বোধগম্য নয়। তাই মানবতার মা মাননীয় প্রধানমন্ত্রী জননেত্রী শেখ হাসিনার দৃষ্টি আকর্ষণ ও পেশাগত দাবি আদায়ের জন্য আমরা অহিংস ও শাান্তিপূর্ণভাবে জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে মানববন্ধন ও অবস্থান কর্মসূচি পালন করব। আমরা প্রবলভাবে বিশ্বাস করি যে, হাজার বছরের সর্বশেষ্ঠ বাঙালি জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের সুযোগ্য কন্যা মাননীয় প্রধানমন্ত্রী আমাদের মানবিক দাবি মেনে নিবেন’।

সংগঠনের সদস্য সচিব মো. মোস্তফা কামাল বলেন,‘ উচ্চ শিক্ষায় নিয়োজিত ৫০০০ হাজার শিক্ষকের বেতন ভাতার যৌক্তিক দাবিতে স্বাস্থ্যবিধি মেনে ও সামাজিক দুরত্ব বজায় রেখে জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে “মানববন্ধন ও শান্তিপূর্ণ অবস্থান” কর্মসূচি পালন করব’। তিনি সারা দেশের সকল অনার্স-মাস্টার্স শিক্ষকদের উক্ত কর্মসূচিতে উপস্থিত থাকার জন্য আহ্বান জানান।


সাম্প্রতিক দেশকাল ইউটিউব চ্যানেল সাবস্ক্রাইব করুন

মন্তব্য করুন

Epaper

সাপ্তাহিক সাম্প্রতিক দেশকাল ই-পেপার পড়তে ক্লিক করুন

Logo

ঠিকানা: ১০/২২ ইকবাল রোড, ব্লক এ, মোহাম্মদপুর, ঢাকা-১২০৭

© 2024 Shampratik Deshkal All Rights Reserved. Design & Developed By Root Soft Bangladesh

// //