দোটানায় শিক্ষা মন্ত্রণালয়

এসএসসি-এইচএসসিতে অটোপাস!

এসএসসি ও এইচএসসির পরীক্ষার্থী ও অভিভাবকরাও উদ্বেগের মধ্যে সময় কাটাচ্ছেন। পরীক্ষা হবে কী হবে না, কীভাবে হবে এ নিয়ে দুশ্চিন্তায় সময় পার করছেন তারা। কারণ, দেশে নতুন করে করোনা সংক্রমণ বেড়ে যাওয়ায় এসএসসি ও এইচএসসি পরীক্ষা নিয়ে জটিলতা দেখা দিয়েছে। মৃত্যু-শনাক্ত বেড়ে যাওয়ায় দোটানায় পড়েছে শিক্ষা মন্ত্রণালয়। পরীক্ষা নিয়ে বিকল্প উপায় খুঁজছে সরকার। তবে শেষ পর্যন্ত এ দুই পাবলিক পরীক্ষার আয়োজন সম্ভব হবে না বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা।

জনস্বাস্থ্যবিদসহ সংশ্লিষ্ট বিশেষজ্ঞদের মতে, করোনার ডেল্টা বা ভারতীয় ভ্যারিয়েন্ট যেভাবে গ্রাম থেকে শহরে ছড়িয়ে পড়ছে তাতে করে এবারও এসএসসি ও এইচএসসি ‘অটোপাসের’ দিকেই যাচ্ছে। তবে সরকার থেকে বলা হয়েছে, ন্যূনতম সিলেবাসের ওপর শ্রেণিকাজ শেষ করে পরীক্ষা নেওয়ার প্রস্তুতি নিয়েছে।

কিন্তু সর্বশেষ রবিবার (১৩ জুন) শিক্ষামন্ত্রী ডা. দীপু মনির বক্তব্যে এ দুই পরীক্ষা নিয়ে নতুন করে ভাবনার বিষয়টি উঠে এসেছে। তিনি জাতীয় প্রেস ক্লাবে এক অনুষ্ঠান শেষে সাংবাদিকদের বলেন, ‘চলতি বছরের এসএসসি ও এইচএসসি পরীক্ষার্থীদের উদ্বেগ অনেক বেশি। আমরা চেষ্টা করছি সংক্ষিপ্ত সিলেবাসে তাদের পরীক্ষা নেওয়ার। যদি সেটা সম্ভব না হয় তবে বিকল্প চিন্তাভাবনা করা হচ্ছে। এজন্য আমরা বিকল্প পদ্ধতিতে শিক্ষাব্যবস্থা চালিয়ে যাচ্ছি। টিভি, অনলাইন ও অ্যাসাইনমেন্টের মাধ্যমে শিক্ষার্থীরা পড়ালেখা করার সুযোগ পাচ্ছে।’

শিক্ষার্থীদের উদ্দেশে শিক্ষামন্ত্রী বলেন, ‘পরীক্ষা নিয়ে উদ্বিগ্ন হওয়ার কিছু নেই, তোমরা বাসায় বসে নিয়মিত পড়ালেখা করে সিলেবাস শেষ করবে। তার সঙ্গে সুস্থ থাকতে হবে। জীবন থেকে এক বছর চলে গেলেও কিছু হবে না, তার চেয়ে সুস্থ থাকাটা বড় বিষয়।’ 

তিনি আরও বলেন, ‘শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ থাকায় শিক্ষাব্যবস্থার যে ক্ষতি হচ্ছে তা কাটিয়ে ওঠার জন্য নানা পদক্ষেপ হাতে নেওয়া হচ্ছে। করোনা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে এলে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খুলে দেওয়া হবে।’

প্রশ্ন উঠেছে, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খুলে দিলেও পরীক্ষা নেয়া কি আদৌ সম্ভব কী না। শিক্ষাপঞ্জি অনুযায়ী প্রতিবছরের ১ ফেব্রুয়ারি এসএসসি এবং ১ এপ্রিল এইচএসসি পরীক্ষা হয়ে থাকে। এবার প্রায় ৪৪ লাখ শিক্ষার্থীর এ দুটি পরীক্ষায় অংশ নেওয়ার কথা। সরকার বলছে, সংক্ষিপ্ত সিলেবাসে (কাস্টমাইজড) এ দুটি পাবলিক পরীক্ষা নেওয়ার প্রায় সব প্রস্তুতি সম্পন্ন করে রেখেছে। সে অনুযায়ী এসএসসিতে ৬০ এবং এইচএসসিতে ৮৪ দিন ক্লাস নিয়ে পরীক্ষা নেওয়ার কথা।

কিন্তু পরীক্ষা নেয়াটা এখন জটিল হয়ে গেছে। কারণ, সারা দেশে তিন সহস্রাধিক কেন্দ্রে পরীক্ষা নিতে হবে। অন্যদিকে, ২০ লক্ষাধিক শিক্ষার্থীর অনলাইনে পরীক্ষা নেওয়ার ঝুঁকি বাস্তবসম্মত নয়।

করোনাভাইরাসের কারণে গত বছর ১৭ মার্চ থেকে সাধারণ ছুটি চলছে দেশের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে। গত ১৫ মাসে এখন পর্যন্ত তিন ধাপে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খুলে দেওয়ার উদ্যোগ নেওয়া হয়। এ লক্ষ্যে স্কুল, কলেজ ও মাদ্রাসা পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন করার নির্দেশনাও পাঠানো হয়। কিন্তু সংক্রমণ ফের ঊর্ধ্বগতি লাভ করায় প্রথম দুবারই উদ্যোগ ভেস্তে গেছে। সর্বশেষ গত ২৬ মে সংবাদ সম্মেলন করেন শিক্ষামন্ত্রী। সেদিন তিনি ১৩ জুন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খুলে দেওয়ার কথা বলেন। ওইদিন করোনা নমুনা পরীক্ষা বিবেচনায় শনাক্তের হার ৯ দশমিক ১১ শতাংশ। আর বৃহস্পতিবার এ হার পাওয়া যায় ১৩ দশমিক ২৫ শতাংশ, যা বুধবার ছিল ১২ দশমিক ৩৩ শতাংশ। অর্থাৎ সংক্রমণের ঊর্ধ্বমুখী প্রবণতা অব্যাহত।

এসএসসি ও এইচএসসি পরীক্ষার্থীদের সরাসরি ক্লাস নেওয়ার লক্ষ্যে মূল সিলেবাস কাটছাঁট করা হয়েছে। ওই সিলেবাসের ২৫-৩৫ শতাংশ রেখে তৈরি করা হয়েছে কাস্টমাইজড সিলেবাস। এটি ইতিমধ্যে শিক্ষার্থীদের হাতে পৌঁছে দেওয়া হয়েছে। তবে পরীক্ষার প্রশ্ন কাঠামো ঠিক থাকবে। এছাড়া আগামী বছরের (২০২২) শিক্ষার্থীদের সিলেবাসও পুনর্বিন্যাস করা হয়েছে। তাদের প্রশ্নকাঠামোতেও পরিবর্তন আসবে।

অন্যদিকে এইচএসসি পরীক্ষা নেওয়ার প্রস্তুতিও বোর্ডগুলো এগিয়ে নিচ্ছে। বর্তমানে বিভিন্ন বোর্ডে প্রশ্নপত্র প্রণয়ন শেষে পরিশোধনের কাজ চলছে। এসব শিক্ষার্থীর এখন পর্যন্ত অবশ্য ফরম পূরণের কাজ শুরু করেনি শিক্ষা বোর্ডগুলো। কিন্তু করোনার সংক্রমণ কমবে এমন পরিস্থিতি দেশে সৃষ্টি হয়নি। বরং ধরণ পরিবর্তন করে নতুনভাবে ছড়াচ্ছে করোনার সংক্রমণ। তাই সরকার অটোপাসের দিকেই হাঁটবে বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা।

সাম্প্রতিক দেশকাল ইউটিউব চ্যানেল সাবস্ক্রাইব করুন

মন্তব্য করুন

Epaper

সাপ্তাহিক সাম্প্রতিক দেশকাল ই-পেপার পড়তে ক্লিক করুন

Logo

ঠিকানা: ১০/২২ ইকবাল রোড, ব্লক এ, মোহাম্মদপুর, ঢাকা-১২০৭

© 2024 Shampratik Deshkal All Rights Reserved. Design & Developed By Root Soft Bangladesh

// //