এসএসসি ও এইচএসসি পরীক্ষার বিকল্প কী হতে পারে

করোনা সংক্রমণের ঊর্ধ্বগতির কারণে বন্ধ আছে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলো। ক্যালেন্ডার অনুযায়ী বছরের ১ ফেব্রুয়ারি এসএসসি ও ১ এপ্রিল এইচএসসি পরীক্ষা হওয়ার কথা। কিন্তু এবারে তা হয়নি। গতকাল রবিবার (২৭ জুন) কঠোর বিধিনিষেধের কারণে স্থগিত করা হয়েছে এইচএসসি পরীক্ষার ফরম পূরণ কার্যক্রমও। এই পরিস্থিতিতে পরীক্ষা কবে হবে বা আদৌ হবে কি না, এ নিয়ে নানা প্রশ্ন অভিভাবক ও শিক্ষার্থীদের।

আমিরুল ইসলাম নামে এক অভিভাবক বলেন, নানা শঙ্কা ও অনিশ্চয়তায় আছে পরীক্ষার্থীরা। তাদের ভবিষ্যৎ কোন পথে তা বুঝে উঠতে পারছি না।

হাসান নামের এক এসএসসি পরীক্ষার্থী জানায়, এক বছরের বেশি সময় স্কুলের বাইরে আছি। বলতে গেলে কোনো ধরনের পড়াশোনাই হয়নি। এর মধ্যে করোনার ভয়ও রয়েছে। সব মিলে ভীতির মধ্যে আছি। সংক্ষিপ্ত সিলেবাস দেয়া হলেও তাতে মন বসছে না। 

পরীক্ষার সময় নির্ধারণ না হওয়ার কারণে সংশয়ে আছেন শিক্ষার্থী ও অভিভাবকেরা। দুশ্চিন্তায় সময় পার করছেন শিক্ষক ও শিক্ষাবিভাগ সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা। যদিও শিক্ষা বোর্ডগুলোর উদ্যোগে এসএসসির প্রশ্নপত্র ছাপা হয়ে গেছে। এইচএসসির প্রশ্নপত্র মডারেশনের কাজ চলছে। কিন্তু পরীক্ষার ব্যাপারে কোনভাবেই সিদ্ধান্ত দিতে না পারায় উভয় সংকটে পড়েছে শিক্ষা মন্ত্রণালয়।  

শিক্ষা মন্ত্রণালয় এতদিন বলে এসেছে, পরীক্ষা আয়োজনের প্রস্তুতি রয়েছে তাদের। যখন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খোলা হবে, তখনই এসএসসির ক্ষেত্রে ৬০ কার্যদিবস ও এইচএসসির ক্ষেত্রে ৮৪ কার্যদিবস সরাসরি ক্লাসে পড়িয়ে পরীক্ষা নেওয়া হবে। কিন্তু তা আর হয়ে ওঠেনি। সম্প্রতি করোনা সংক্রমণের উর্ধ্বগতি বিষয়টিতে অনিশ্চয়তার মুখে ফেলেছে। যদিও এসএসসি পরীক্ষার ফরমপূরণ কার্যক্রম শেষ হয়েছে। তবে এইচএসসি পরীক্ষার ফরমপূরণের বিজ্ঞপ্তি প্রকাশের পরই তা স্থগিত করা হল।  

করোনার প্রাদুর্ভাবে গত বছরের এইচএসসি ও সমমানের পরীক্ষা নেয়া সম্ভব হয়নি। এসএসসি ও জুনিয়র স্কুল সার্টিফিকেট (জেএসসি) পরীক্ষার ভিত্তিতে তাদের মূল্যায়ন করা হয়েছে। এছাড়াও জেএসসি, প্রাথমিক শিক্ষা সমাপনী (পিইসি) ও স্কুলগুলোর কোনো পরীক্ষাই নেয়া সম্ভব হয়নি। এ বছর গত বছরের চেয়েও করোনা পরিস্থিতি ভয়াবহ রূপ নিয়েছে। তাই সরকার বিকল্প উপায় খুঁজছে। 

জানা গেছে, এমন অবস্থায় পাবলিক পরীক্ষার বিকল্প হিসেবে অ্যাসাইনমেন্টকে স্থায়ী করার চিন্তা করছে শিক্ষা মন্ত্রণালয়। ২০২০ সালের মাধ্যমিক স্তরের শিক্ষার্থীরা সাপ্তাহিক অ্যাসাইনমেন্টের মাধ্যমে কতটুকু শিখছে, কোথায় দুর্বলতা- তা শনাক্ত করা হচ্ছে। একই সঙ্গে অনলাইনে পরীক্ষা নেওয়া যায় কি না তারও সম্ভাব্যতা যাচাইয়ে ঢাকা শিক্ষা বোর্ডের চেয়ারম্যান অধ্যাপক নেহাল আহমেদকে আহ্বায়ক করে ১১ সদস্যের কমিটি করা হয়েছে।  

কমিটির আহ্বায়ক অধ্যাপক নেহাল আহমেদ বলেছেন, অনলাইনে সর্বোচ্চ এমসিকিউ পরীক্ষা নেয়া সম্ভব। কিন্তু রচনামূলক সম্ভব না। আমরা ভার্চুয়াল বৈঠক করেছি। অন্যান্য দেশে কী উপায়ে পড়ালেখা চলছে, কীভাবে পরীক্ষা নেয়া হচ্ছে তা পর্যালোচনা করছি। কোনো দেশই করোনার সময়ে সরাসরি পাবলিক পরীক্ষা নেয়নি। এখন বৈঠক করে বিকল্প উপায়ে পড়ালেখা চালুর বিষয়ে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ে পরামর্শ পাঠানো হবে বলে জানিয়েছেন।

করোনা সংক্রমণ পরিস্থিতি ভালো না হলে এ দুটি পরীক্ষা বাতিল করে সরকারের বিকল্প চিন্তার বিষয়ে এর মধ্যে শিক্ষামন্ত্রীও ইঙ্গিত দিয়েছেন। গত ১৩ জুন এক অনুষ্ঠানে শিক্ষামন্ত্রী ডা. দীপু মনি বলেন, 'পরীক্ষা নিতে পারব কি পারব না, না নিলে বিকল্প ব্যবস্থা কী হবে, সে সবকিছু নিয়েই আমাদের চিন্তাভাবনা রয়েছে। অনলাইন ও অ্যাসাইনমেন্ট যা হচ্ছে, তার বাইরে যেটুকু সম্ভব, শিক্ষার্থীরা পড়াশোনা বাড়িতে চালিয়ে যাক। তাদের উদ্বেগের কোনো কারণ নেই। এমন কোনো সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে না, যাতে তারা ব্যাপকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়। করোনাভাইরাসের কারণে তো সারাবিশ্বেই শিক্ষার ক্ষতি হচ্ছে।'

এরই মধ্যে এ বছরের মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক স্তরের সংক্ষিপ্ত সিলেবাস থেকে ছাত্রছাত্রীদের জন্য অ্যাসাইনমেন্ট তৈরি করতে শিক্ষা মন্ত্রণালয় থেকে 'জাতীয় শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যপুস্তক বোর্ড'কে (এনসিটিবি) নির্দেশ দেয়া হয়েছে। অ্যাসাইনমেন্টগুলো তৈরি ও চূড়ান্ত হলে মাউশি তা শিক্ষার্থীদের মধ্যে বিতরণের জন্য বিদ্যালয়ে পাঠাবে।

এ বিষয়ে এনসিটিবি চেয়ারম্যান অধ্যাপক নারায়ণ চন্দ্র সাহা বলেন, সংক্ষিপ্ত সিলেবাসের আলোকে এনসিটিবিকে এখন অ্যাসাইনমেন্ট তৈরি করতে বলা হয়েছে। সে অনুযায়ী কাজ করা হচ্ছে। ক্লাসে পড়িয়ে পরীক্ষা নেওয়া সম্ভব না হলে অ্যাসাইনমেন্টের মাধ্যমে মূল্যায়ন করে গ্রেড দেয়া হবে।

একাধিক বিকল্প চিন্তা 

শিক্ষা মন্ত্রণালয় সূত্র জানায়, ডিসেম্বরে পরীক্ষা নিতে হলে শিক্ষার্থীদের জন্য কয়েক মাস আগেই শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খুলে দিতে হবে। সেটা সম্ভব না হলে গুরুত্বপূর্ণ চার-পাঁচটি বিষয়ে পরীক্ষা নেয়ার বিকল্প চিন্তা আছে। তবে কোনোভাবেই পরীক্ষা নেয়া সম্ভব না হলে অ্যাসাইনমেন্টভিত্তিক মূল্যায়ন হতে পারে। 

ইতোমধ্যে ২০২২ সালের এসএসসি পরীক্ষার্থীদের অ্যাসাইনমেন্ট দেওয়া শুরু হয়েছে। একইভাবে চলতি বছরের এসএসসি এবং এইচএসসি পরীক্ষার্থীদেরও অ্যাসাইনমেন্ট দেওয়া হবে। এটা অনেকটা 'ওপেন বুক এক্সাম' সিস্টেমের মতো। 

তবে এই দুই পাবলিক পরীক্ষায় অ্যাসাইনমেন্টের মাধ্যমে মূল্যায়ন করা হলে এর সঙ্গে আগের গুরুত্বপূর্ণ পরীক্ষার নম্বর যুক্ত করা হতে পারে। সে ক্ষেত্রে এসএসসিতে জুনিয়র স্কুল সার্টিফিকেট (জেএসসি) এবং এইচএসসিতে জেএসসি ও এসএসসির নম্বরও যুক্ত হতে পারে।

সবশেষ বিকল্প হচ্ছে আগের পরীক্ষাগুলোর ভিত্তিতে মূল্যায়ন। কিন্তু গত বছর জেএসসি ও এসএসসি পরীক্ষার ভিত্তিতে এইচএসসি পরীক্ষার মূল্যায়ন করা হলেও তা ছিল অনেকটাই ‘অটোপাসের’ মতো। কিন্তু কোনোভাবেই এই সর্বশেষ বিকল্পে যেতে চায় না শিক্ষা মন্ত্রণালয়।

আন্তঃশিক্ষা বোর্ডের সভাপতি ও ঢাকা শিক্ষা বোর্ডের চেয়ারম্যান অধ্যাপক নেহাল আহমেদ বলেন, ‘এখন পর্যন্ত সিদ্ধান্ত রয়েছে, পরীক্ষা নেয়া হবে। অন্তত আমরা ডিসেম্বর পর্যন্ত দেখতে চাই। এর মধ্যে সম্ভব না হলে বিকল্প ভাবতে হবে। তবে অটোপাস শিক্ষার্থীদের মানসিকভাবে বিপর্যস্ত করে দেয়। কোনোভাবেই সেদিকে যেতে চাই না। আর অনলাইনে পরীক্ষা নেয়াও এ দেশের প্রেক্ষাপটে কঠিন।’

সাম্প্রতিক দেশকাল ইউটিউব চ্যানেল সাবস্ক্রাইব করুন

মন্তব্য করুন

Epaper

সাপ্তাহিক সাম্প্রতিক দেশকাল ই-পেপার পড়তে ক্লিক করুন

Logo

ঠিকানা: ১০/২২ ইকবাল রোড, ব্লক এ, মোহাম্মদপুর, ঢাকা-১২০৭

© 2024 Shampratik Deshkal All Rights Reserved. Design & Developed By Root Soft Bangladesh

// //