‘পদে থাকার অধিকার হারিয়েছেন শাবিপ্রবি ভিসি’

নানা বিতর্কিত কর্মকাণ্ডের কারণে সিলেটের শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য (ভিসি) অধ্যাপক ফরিদ উদ্দিন আহমেদে ক্ষমতায় থাকার অধিকার হারিয়েছেন বলে মনে করছেন দেশের প্রবীণ শিক্ষাবিদ সৈয়দ আনোয়ার হোসেন। তার পক্ষে সরকারের অনড় অবস্থান দেশের শিক্ষা ব্যবস্থার জন্য অশনিসংকেত বলেও মনে করছেন তিনি। সাম্প্রতিক দেশকালের সাথে একান্ত স্বাক্ষাৎকারে এসব কথা বলেন তিনি।  

সৈয়দ আনোয়ার হোসেন বলেন, শিক্ষার্থীরা আল্টিমেটাম দিয়েছে। রাজনৈতিক আন্দোলনেও আল্টিমেটাম দেয়া হয়। আল্টিমেটাম দেয়ার পর কিন্তু কোনো আলোচনা হয় না। আরেকটি কথা হচ্ছে, শাহজালাল বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য তার নৈতিক অবস্থান হারিয়েছেন। তাঁর নিজেরই উচিত পদ থেকে সরে আসা। সরকারেরও উচিত তাকে সরিয়ে দেয়া। কারণ তার সম্পর্কে গণমাধ্যমে তথ্য পাওয়া গেছে, তার শিক্ষাগত যোগ্যতার সীমাবদ্ধতা আছে। জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের নারী শিক্ষার্থীদের নিয়েও অত্যন্ত কটূক্তি করেছেন। এসব কর্মকাণ্ডে পর উপাচার্য পদে থাকার কোনো অধিকার তার নেই। 

তিনি বলেন, শিক্ষক-শিক্ষার্থী ও স্থানীয় আওয়ামী লীগ যখন তাকে ঘৃণাভরে প্রত্যাখ্যান করেছে সরকারের উচিত তাকে সরিয়ে যোগ্য-দক্ষ ও গ্রহণযোগ্য মানুষকে উপাচার্য নিয়োগ করা। অতীতে দেখেছি সরকার শুধুমাত্র রাজনৈতিক বিবেচনায় এই সমস্ত নিয়োগগুলো দেয়ার চেষ্টা করছে। যার ফলে এই সরকারের আমলে ৪টি বিশ্ববিদ্যালয়ে এই ধরনের সংকট তৈরি হলো। 

আওয়ামী লীগ নষ্ট হচ্ছে ‘হাইব্রিড ও কাউয়্যাদের’ ধারা আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদেরের এই বক্তব্যকে উদ্ধৃত করে প্রবীণ এই শিক্ষাবিদ বলেন, এই হাইব্রিড ও কাউয়্যা দলের সদস্য এই উপাচার্য। কারণ তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে থাকাকালে বিএনপিপন্থি সাদাদল করতেন এবং জিয়ার চেয়ারের প্রস্তাবক ছিলেন বলে গণমাধ্যমে দেখেছি। এমন ব্যক্তিকে আওয়ামী লীগ যদি সমর্থন দিয়ে থাকে তবে সেটা আওয়ামী লীগের অভ্যন্তরীণ বিষয়। এটা নিয়ে আমার বলার কিছু নেই। তবে জনবলে আওয়ামী লীগ এতো দরিদ্র হয়নি যে তাকে ভিসি বানাতে হবে। 

শিক্ষার্থীদের আলোচনার জন্য ঢাকায় আনা কতটা যৌক্তিক? এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, শিক্ষামন্ত্রীর নিজস্ব কোনো অবস্থান নেই। সরকারের বর্তমান যে পদ্ধতি এবং প্রক্রিয়া চলমান তাতে কোনো মন্ত্রীরই নিজস্ব কোনো মতও নেই। প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশেই তিনি বলেছেন, শিক্ষার্থীদের আলোচনা করতে। তবে শিক্ষামন্ত্রীকে সম্মান দেখিয়ে আলোচনা আসলে শিক্ষার্থীদের চূড়ান্ত একটি দাবিই করা উচিত, যে ভিসির পদত্যাগ করাতে হবে-যদি তারা তা চায়। তবে আমি খুব কষ্ট পাচ্ছি আন্দোলন করতে গিয়ে ১৬ জন শিক্ষার্থী অসুস্থ হয়ে পড়েছে। তারপরও উপাচার্যকে ক্ষমতায় থাকতে হবে এমনটা আমি নৈতিক প্রেক্ষাপটে মেনে নিতে পারছি না, সরকারও অনড় অবস্থায় আছে- এটা আমাদের দেশের শিক্ষা ব্যবস্থার জন্য অশনিসংকেত। 

প্রসঙ্গত, গত ১৩ জানুয়ারি রাত থেকে সিরাজুন্নেছা ছাত্রী হলের প্রভোস্টের পদত্যাগসহ তিন দফা দাবিতে ছাত্রীরা আন্দোলন শুরু করেন। এর এক পর্যায় গত ১৬ জানুয়ারি দাবি আদায়ে ছাত্রীরা উপাচার্যকে অবরুদ্ধ করে রাখলে পুলিশ উপাচার্যকে উদ্ধার করতে গিয়ে আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের উপর লাঠিচার্জ করে, রাবার বুলেট, টিয়ার গ্যাস নিক্ষেপ করে। এরপর থেকে আন্দোলন আরো তীব্র হয়ে উঠে। গত বুধবার বিকেল পৌনে ৩টার দিকে উপাচার্যের বাসভবনের সামনে প্রায় ২৪ জন শিক্ষার্থী অনশনে বসেন। ২০ জানুয়ারি রাতে প্রায় সহস্রাধিক শিক্ষার্থী ক্যাম্পাসে মশাল মিছিল করেন। এ সময় তারা উপাচার্যের পদত্যাগ দাবি করে বিভিন্ন স্লোগান দেন। পরে দিনগত রাত ৩টার দিকে শিক্ষার্থীরা উপাচার্যের কুশপুতুল দাহ করেন। এখন পর্যন্ত চলছে সেই অনশন। 

শিক্ষার্থীরা বলছেন, যতক্ষণ পর্যন্ত বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য, প্রক্টরিয়াল বডি এবং ছাত্রকল্যাণ উপদেষ্টা পদত্যাগ না করবেন, ততক্ষণ পর্যন্ত অনশন চলবে। অনশনকারী শিক্ষার্থীরা কোনো ধরনের খাদ্য বা তরল জাতীয় খাবার খাবেন না। যদি অনশনের কারণে কোনো শিক্ষার্থীর মৃত্যু হয়, তাহলে দায়ভার বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন এবং উপাচার্যকে নিতে হবে। হাসপাতালে ডাক্তারদের অনুরোধেও অনশন ভাঙেননি শিক্ষার্থীরা।

সাম্প্রতিক দেশকাল ইউটিউব চ্যানেল সাবস্ক্রাইব করুন

মন্তব্য করুন

Epaper

সাপ্তাহিক সাম্প্রতিক দেশকাল ই-পেপার পড়তে ক্লিক করুন

Logo

ঠিকানা: ১০/২২ ইকবাল রোড, ব্লক এ, মোহাম্মদপুর, ঢাকা-১২০৭

© 2024 Shampratik Deshkal All Rights Reserved. Design & Developed By Root Soft Bangladesh

// //