৫০ বছরে শিক্ষায় কী পেল বাংলাদেশ

১৯৭১ সালে অনেক রক্তের বিনিময়ে আমরা স্বাধীনতা পেয়েছি। সেই স্বাধীনতার ৫০ বছর অতিক্রান্ত হতে চললেও, আমাদের শুনতে হয় দেশের ৭৪৯টি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে মাত্র একজন করে শিক্ষক আছেন। তিনি স্কুলের ঘণ্টা বাজানো থেকে শুরু করে প্রশাসনিক কার্যক্রম সবই সম্পন্ন করেন। আর ১ হাজার ১২৪টি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে প্রতিটিতে শিক্ষক আছেন মাত্র দু’জন। তিনজন শিক্ষক নিয়ে পরিচালিত বিদ্যালয়ের সংখ্যা চার হাজারের বেশি। [সূত্র : বাংলাদেশ প্রাইমারি এডুকেশন : অ্যানুয়াল সেক্টর পারফরম্যান্স রিপোর্ট ২০১৯]।

এ কথাগুলো বলা হলো শিক্ষার করুণ পরিণতি বোঝার জন্য। যেসব দেশকে আমরা উন্নত বলে জানি, সেসব দেশে প্রাইমারি শিক্ষা ও শিক্ষকদের অধিক গুরুত্ব দেওয়া হয় এবং তা অন্যান্য স্তরের শিক্ষকদেরও দেওয়া হয়। ‘যুক্তরাষ্ট্রে শিক্ষকদের ভিআইপি মর্যাদা দেওয়া হয়। ফ্রান্সে আদালতে কেবল শিক্ষকদের চেয়ারে বসতে দেওয়া হয়। জাপানে সরকারের বিশেষ অনুমতি ছাড়া শিক্ষকদের গ্রেফতার করা যায় না। চীনে সবচেয়ে মর্যাদাপূর্ণ পদ শিক্ষকতা আর কোরিয়ায় শিক্ষকরা মন্ত্রীদের সমান সুযোগ পান’। অথচ আমাদের দেশে শিক্ষকদের শহীদ মিনারে পুলিশ দ্বারা পিটিয়ে তক্তা বানানো হয়। পিপার স্প্রে করে চোখ অন্ধ করার চেষ্টা হয়। আরও কত কী! আর হ্যাঁ, প্রাইমারি শিক্ষার ব্যাপারে একটি কথা না বললেই নয়। তাহলো সারাদেশে ২১ হাজার ৫০০টি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষকের পদ শূন্য। প্রতিষ্ঠানেও তাই লেখাপড়া নেই। শিশু শিক্ষার কী করুণ পরিণতি!

এই শিশুরাই প্রাইমারি শেষ করে আসে হাইস্কুলে। এখানেও প্রয়োজনীয় শিক্ষক নেই, ক্লাস রুম নেই, লাইব্রেরি নেই, থাকলে লাইব্রেরিয়ান নেই, মাঠ নেই, বিজ্ঞান-সংস্কৃতিচর্চা নেই। টয়লেট নোংরা বা নেই- ইত্যকার নানা সমস্যা।

বিশ্ববিদ্যালয়ের অবস্থাও তথৈবচ। ২৫ জানুয়ারি ২০২০ দৈনিক ‘যুগান্তর’ পত্রিকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক সংকট নিয়ে প্রধান সংবাদ করেছে- ‘সরকারি ও স্বায়ত্তশাসিত বিশ্ববিদ্যালয়ে ভাড়া করা শিক্ষকেই নির্ভরতা’। অর্থাৎ প্রতিষ্ঠানের শিক্ষকস্বল্পতা। এর ওপর অন্যদিকে আছে- বড় ভাইদের নিষ্ঠুরতা, অত্যাচারে জীবন প্রদীপ নিভে যাওয়ার মতো নির্মম কাহিনী। আর একদিকে আছে বিশ্ববিদ্যালয় পর্যায়ে ‘হলরুম কালচার’, যা মধ্যযুগের বর্বরতার কথাই স্মরণ করিয়ে দেয়। অথচ প্রশাসন নির্বিকার। এই যখন শিক্ষা ব্যবস্থার সার্বিক চিত্র- তখন শিক্ষা কোথায়? আর এই পচাগলা ব্যবস্থার মধ্যে যেসব ব্যক্তিবর্গ শিক্ষকতা পেশায় আসেন তারা তো নমস্য; কিন্তু না, তাদের বৃহৎ এক অংশকে বেতন না দিয়ে বেগার খাটাবার সমস্ত ব্যবস্থা এদেশে শক্তভাবে পাকাপোক্ত। এমপিও (মান্থলি পে অর্ডার) এবং এমপিও ছাড়া স্বীকৃতিপ্রাপ্ত বেসরকারি স্কুল কলেজগুলো পুরো শিক্ষাব্যবস্থার ৯০ শতাংশ। অর্থাৎ শিক্ষাব্যবস্থার সিংহভাগই চলে বেসরকারিভাবে- তা দেশের কল্যাণকর তো বটেই।

দেশে প্রায় ৫ হাজার ২৪২টি স্বীকৃতিপ্রাপ্ত নন-এমপিও শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে ৭৫ থেকে ৮০ হাজার শিক্ষক-কর্মচারী কর্মরত। তারা প্রতিষ্ঠান থেকে সামান্য অর্থ পেয়ে থাকেন। যাকে বেতন বলা যায় না। এ সব শিক্ষকরা ২৬ ডিসেম্বর ২০১৭ থেকে ৫ জানুয়ারি ২০১৮ এবং পূর্ববর্তী সময়ে এমপিওভুক্তির দাবিতে প্রেসক্লাবের সামনে বহুবার অবস্থান ও অনশন কর্মসূচি পালন করেছেন। ৫ জানুয়ারি ২০১৮ প্রধানমন্ত্রীর পক্ষ থেকে তার একান্ত সচিব-১ অনশনস্থলে এসে বলেছিলেন, ‘প্রধানমন্ত্রী নন-এমপিও শিক্ষক-কর্মচারীদের এমপিওভুক্তির আশ্বাস দিয়েছেন এবং শিক্ষামন্ত্রী কাজ শুরু করেছেন’। এই ঘোষণার পরিপ্রেক্ষিতেই ২৯ জুলাই ২০১৮ সালে ‘দৈনিক সংবাদে’ প্রকাশিত ‘সুখবর’টি ছিল-শিক্ষক নিয়োগ ও এমপিওভুক্তিতে ঘুষ দুর্নীতি আরও বেড়েছে। এই খবরের সামান্য একটুঅংশ উদ্ধৃত করা প্রয়োজন মনে করছি- ‘এমপিওভুক্তির আবেদন উপজেলা থেকে জেলা শিক্ষা অফিস পর্যন্ত অনুমোদন পেতে ৫০ হাজার থেকে এক লাখ টাকা, শূন্যপদে শিক্ষক নিয়োগের অনুমোদন পেতে ৩০ থেকে ৫০ হাজার টাকা এবং শিক্ষক নিয়োগে মহাপরিচালকের প্রতিনিধি পেতেও ৪০ থেকে ৫০ হাজার টাকা পর্যন্ত শিক্ষা কর্মকর্তাদের ঘুষ দিতে হয় বলে মন্ত্রিসভার একজন সদস্য ও অন্য একজন সংসদ সদস্য শিক্ষা প্রশাসনের কাছে অভিযোগ করেছেন।’

শিক্ষা বাজেটে দীর্ঘদিন ধরেই একটা শুভঙ্করের ফাঁকি দেওয়া হচ্ছে। শিক্ষায় বাজেট বেশি দেখানোর জন্য অন্য মন্ত্রণালয়ের বাজেটও শিক্ষায় ঢুকিয়ে দেওয়া হয়। ২০২০-২১ অর্থবছরে শিক্ষা ও প্রযুক্তি মিলিয়ে ৮৫,৭৬০ কোটি টাকা অর্থাৎ মোট বাজেটের ১৫.১০% বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে; কিন্তু ২০২০-২১ অর্থবছরের জন্য শিক্ষা খাতে প্রকৃতপক্ষে বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে ৬৬ হাজার ৪০০ কোটি টাকা, যা মোট বাজেটের মাত্র ১১.৬৯ শতাংশ। এটা গত বছরের তুলনায় মাত্র ০.০১ শতাংশ বেশি। অর্থাৎ মূল্যস্ফীতি এবং জাতীয় প্রবৃদ্ধির বিবেচনায় প্রকৃত অর্থে শিক্ষা খাতে বাজেট বরাদ্দ কমে গেছে।

এটা আসলে রাজনৈতিক দৃষ্টিভঙ্গির সমস্যা। বিষয়টি বুঝতে আমাদের একটুপেছনে ফিরে তাকাতে হবে। স্বাধীনতার পরপর ১৯৭২-৭৩ সালে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের সরকার যে শিক্ষা বাজেট অনুমোদন করেছিলেন, সেখানে শিক্ষা খাতে বরাদ্দ ছিল মোট বাজেটের ২০.১ শতাংশ। ১৯৭৩-৭৪ সালে সেটা বাড়িয়ে করা হয়েছিল ২০.৪ শতাংশ। আর এখন মোট বাজেটে ১০ থেকে ১১ শতাংশ বরাদ্দ দেওয়া হচ্ছে। তাহলে আমরা দেখতে পাচ্ছি, বঙ্গবন্ধুর শিক্ষা বাজেটের তুলনায় এখন বরাদ্দ অর্ধেক হয়ে গেছে। বঙ্গবন্ধুর মৃত্যুর পর থেকে শিক্ষা বাজেট কমতে থাকে; কিন্তু এরপরও আশির দশকের শুরুর দিকে সামরিক শাসক এরশাদের আমলেও ১১ থেকে ১৩/১৪ শতাংশ বরাদ্দ ছিল। আর এখন মুক্তিযুদ্ধের পক্ষের সরকারের আমলে এসেও শিক্ষায় এত কম বাজেট বরাদ্দ কোনোভাবেই মেনে নেওয়া যায় না। আর জিডিপির যে কথা বলা হচ্ছে, সেখানে আমাদের খেয়াল করা দরকার যে, বঙ্গবন্ধুর আমলেই শিক্ষা কমিশনের প্রতিবেদনে বলা হয়েছিল, শিক্ষা বাজেটে জিডিপির ৫ শতাংশ বরাদ্দ করতে হবে এবং অতিসত্বর সেটা বাড়িয়ে জিডিপির ৭ শতাংশে উন্নীত করতে হবে। এসব তুলনা করে আমাদের বুঝতে হবে স্বাধীনতার প্রায় পাঁচ দশক পর শিক্ষা বাজেটে আমরা কতটা পিছিয়েছি। সরকারের দৃষ্টিভঙ্গির কারণেই শিক্ষা বাজেটে অগ্রগতি হচ্ছে না।

শিক্ষকদের বেতন-ভাতার সংকট দীর্ঘদিনের। এখানে একটা অরাজকতা চলছে। এমপিওভুক্ত তো আছেই। আবার স্কুল-কলেজের সরকারি স্বীকৃতি আছে; কিন্তু শিক্ষকদের নেই এমন অবস্থাও আছে দেশে! এমন ৮০ হাজার শিক্ষক আছেন যারা স্বীকৃত স্কুলে পড়ান; কিন্তু তাদের বেতনের স্বীকৃতি নেই, অর্থাৎ তারা মান্থলি পে-অর্ডার বা এমপিওভুক্ত নন। একই স্কুলে এমপিও ও নন-এমপিও শিক্ষক আছেন। দশকের পর দশক ধরে শিক্ষকদের প্রতি যে অবিচার এই রাষ্ট্র করে যাচ্ছে, এখন সেই সবকিছুর ফল আমরা দেখছি। যতভাবে পারা যায় শিক্ষকদের পিষে মারা হচ্ছে। শিক্ষা বাজেটে জিডিপির মতোই শিক্ষকদের বেতন নিয়েও স্বাধীনতা-পরবর্তী সময়ের সঙ্গে তুলনাটা জরুরি। ১৯৭২-৭৩ সালে একজন হাইস্কুল শিক্ষকের বেতন ছিল ১২০ টাকা। একজন শ্রমিকের বেতন ছিল ৬০ টাকা। তখন এক ভরি সোনার দাম ছিল ৭০ টাকা। অর্থাৎ একজন শিক্ষক তার এক মাসের বেতন দিয়ে দেড় ভরি সোনা কিনতে পারতেন। এখন অবস্থা কী দাঁড়িয়েছে? এক ভরি সোনার দাম ৫৫ থেকে ৬০ হাজার টাকা। এই হিসাবে স্কুল-কলেজের শিক্ষকদের বেতনের তুলনা করলে বোঝা যাবে অবস্থাটা কী! এদেশে শিক্ষকদের বেতন কমেছে; কিন্তু সরকারি কর্মকর্তাদের বেতন বাড়তে বাড়তে কোথায় গিয়ে ঠেকেছে, সেই তুলনাটা করলেই শিক্ষার প্রতি সরকারের দৃষ্টিভঙ্গি বোঝা যাবে।

মনে পড়ছে ’৮০-র দশকে বিদেশি ‘বন্ধুরা’ মানে শত্রুরা বিজ্ঞান শিক্ষার উন্নয়নের জন্য আবিষ্কার করল এক পদ্ধতি। তার নাম ছিল- ‘এসো নিজে করি’। একদল লেখক টেক্সটবুক বোর্ডে ঝাঁপিয়ে পড়লেন। তথাকথিত বিদেশি একদল ‘পণ্ডিত’ এলেন আর সবাই মিলে বই লেখা শুরু করলেন, যা ওদের দেশে তখন পরিত্যক্ত। একদল লেখেন ইংরেজিতে, তারপর বিদেশিরা তা দেখেন, তার বাংলা তরজমা করে ছাপানো হয় বই। দেখা গেল, আসল জিনিসই নেই অর্থাৎ বিষয়বস্তু। শুধু ‘এসো নিজে করি’- এটার মধ্যে ওটা ঢালো-‘দেখ, কি দেখলে?’ এই শেষ; কিন্তু একটা জিনিসকে তো নানাভাবেই দেখা যায়। তার ওপর প্রয়োজন প্রত্যেক প্রতিষ্ঠানে সিলেবাস অনুযায়ী ল্যাবরেটরি। ওই যে টেক্সট বুক বোর্ডের আহ্বানে চুক্তি ভিত্তিতে এসেছেন ঘণ্টা অনুযায়ী অর্থ প্রাপ্তি তাদের কাম্য-সারাদেশে স্কুলসমূহে বিজ্ঞান গবেষণাগার আছে কি-না, শিক্ষক আছে কি-না- এটা তাদের বিচার বিবেচ্য ছিল না। একটা উদাহরণ দেওয়া যাক। জীববিজ্ঞান বইয়ের একটি প্রশ্ন। চিংড়ি মাছ নীল দেখায় কেন? বইয়ের ওই অধ্যায়ের কোনো অংশে এর তিল পরিমাণ উল্লেখ ছিল না, তাহলে শিক্ষার্থী জানবে কীভাবে? শিক্ষকও তো সর্বত্র বিষয়ভিত্তিক না; হয়তো ভূগোলের শিক্ষক, নয় ইতিহাসের শিক্ষক বিজ্ঞান পড়াচ্ছেন। এটি একটি উদাহরণমাত্র বিদ্যালয়ের লেখা-পড়া প্রসঙ্গে। অতঃপর সমালোচনার মুখে তা বিদায় নিয়েছিল। তারপর এশিয়ান ডেভেলপমেন্ট ব্যাংক কোথায় টাকা দেবে? দিল ‘সৃজনশীল’ পরীক্ষা পদ্ধতিতে। এভাবেই শিক্ষাব্যবস্থায় পরীক্ষা-নিরীক্ষা চলছে বিদেশি ঋণ করা টাকার ভাগবাটোয়ারা নিয়ে। 

এখন আমাদের সমাধানের পথ কী? পরিষ্কার করেই বলা যায় সমাধানের পথ- (১) ঋণ না করে পদ্মা সেতুর মতো নিজেদের অর্থায়নে দেশীয় পদ্ধতিতে উন্নয়নের চেষ্টা করা। এই পদ্ধতি আমাদের দেশে জন্ম দিয়েছে- পৃথিবীখ্যাত বিজ্ঞানী ড. সত্যেন বোস, প্রফুল্ল চন্দ্র রায়, আবদুল করিম সাহিত্য বিশারদ, জ্ঞানতাপস ড. মু. শহীদুল্লাহ, অধ্যাপক আবুল ফজল, শিকাগোর শততলা ভবনের স্ট্রাকচারাল ডিজাইনার প্রকৌশলী ড. ফজলুর রহমান, ড. গোবিন্দ চন্দ্র দেব, ড. জোতির্ময় গুহ ঠাকুরতা, আলতাফ মাহমুদ, জহির রায়হান, অধ্যাপক মুনীর চৌধুরী, ডা. ফজলে রাব্বি, ডা. আলীম চৌধুরী, অধ্যাপক ড. খান সারওয়ার মুর্শিদ, অধ্যাপক বদরুদ্দীন উমর, অর্থনীতিবিদ ড. রেহমান সোবহান, অধ্যাপক কবীর চৌধুরী, ইতিহাসবিদ ড. সালাহ উদ্দীন আহমেদ, অধ্যাপক সরদার ফজলুল করিম, কবি শামসুর রাহমান, ড. আহমেদ শরীফ, অধ্যাপক হাসান আজিজুল হক, অধ্যাপক আনিসুজ্জামান প্রমুখ। এ মাটিতেই জন্ম নিয়েছিলেন- অমর্ত্য সেন, মেঘনাদ সাহা, জগদীশ চন্দ্র বসু, অধ্যাপক ড. জামাল নজরুল ইসলাম। বর্তমানেও আছেন অধ্যাপক যতীন সরকার, অধ্যাপক সিরাজুল ইসলাম চৌধুরীসহ হাজার হাজার নাম দেশজুড়েই তাঁরা আছেন। কাজেই বিদেশের পরিত্যক্ত পদ্ধতি এখানে চাপিয়ে দেওয়ার চেষ্টার পেছনের কারণ এখন প্রকাশ্য হয়ে গেছে। আমাদের দেশেও বর্তমানে প্রাথমিক পর্যায়ের শিক্ষা নিয়ে অনেকে গবেষণা করছেন; চট্টগামের ‘ফুলকলি’ স্কুলের মাধ্যমে সাহিত্যিক, সাংবাদিক আবুল মোমেন, ঢাকার ‘নালন্দা’ স্কুল পরিচালনা করছেন ছায়ানট প্রধান সর্বজন শ্রদ্ধেয় ড. সনজীদা খাতুন প্রমুখসহ আরও অনেকে।

তাই শিক্ষাব্যবস্থার উন্নয়ন এবং প্রশ্নপত্র ফাঁস রোধে সীমাবদ্ধ পরিসরে পয়েন্ট আকারে কয়েকটি প্রস্তাবনা বিবেচনার জন্য তুলে ধরা প্রয়োজন বোধ করছি। (১) রক্তস্নাত ’৭২-এর সংবিধানের ভিত্তিতে সাম্যের নীতিতে অসাম্প্রদায়িক, একধারার বিজ্ঞান ভিত্তিক শিক্ষানীতি প্রণয়ন ও চালু করা। ২০১০ সালের শিক্ষানীতি ’৭২-এর সংবিধানের ভিত্তিতে রচিত হয়নি। যেহেতু ’৭২-এর সংবিধান সংসদে ফিরে আসে ৩০ জুন ২০১১ সালে। 

(২) মাতৃভাষায় প্রথমে শিশুদের পঞ্চম শ্রেণি পর্যন্ত পাঠ দান পৃথিবীর প্রায় সব রাষ্ট্রেই তা স্বীকৃত। তবে বর্তমান ডিজিটাল বাংলাদেশ গড়ে তোলার প্রত্যয়েরকালে 

তৃতীয় শ্রেণি থেকে ভাবা যেতে পারে শিক্ষাবিদদের মতামতের ভিত্তিতে। যারা বিদেশি আছেন তাদের জন্য পৃথক ব্যবস্থা থাকতেই পারে। তৃতীয় বা পঞ্চম শ্রেণির পর বিজ্ঞানসম্মত পদ্ধতিতে দ্বিতীয় ভাষা ইংরেজি শেখানোর প্রস্তুতি অবশ্যই থাকতে হবে। পাকিস্তান আমলেও তৃতীয় শ্রেণি থেকেই তা ছিল।

(৩) শিক্ষার উন্নয়নের সঙ্গে শিক্ষকের উন্নয়ন জড়িত। মানসম্পন্ন শিক্ষা পেতে হলে প্রয়োজন শিক্ষকদের সম্মানজনক পৃথক বেতন স্কেল। বেসরকারি শিক্ষকদের ১০০০ টাকা বাসা ভাড়ার তামাশাটুকুও বন্ধ করতে হবে। সরকার বলবে, আগে তো ১০০/- ছিল। আমরা ১০০০/- করেছি। আগের সরকার তো ২১ আগস্ট ২৬ জনকে গ্রেনেড মেরে হত্যা করেছিল, হাজার হাজার মানুষকে পঙ্গু করেছিল, এদের মধ্যে কেউ কেউ ১৯৭৫-এর ১৫ই আগস্টকে সাধুবাদ জানিয়েছিল, তাই বলে কি আপনারা লাখ লাখ মানুষ মারবেন? তা যেমন সমর্থনযোগ্য নয়, তেমনি পূর্ববর্তী সরকারের ১০০/- বাসা ভাড়া, তারও পূর্বে ৬০ টাকা; এসবই শিক্ষাব্যবস্থাকে পঙ্গু করার যে-নীল নকশা ছিল, তা বলাই বাহুল্য। তাই আজও তা বহাল তবিয়তে থাকতে পারে না। তারপর আছে উৎসব ভাতা-আধা + আধা করে ১টা দেওয়া, বৈশাখী ভাতা না দেওয়া, যে কোনো অপরাধ প্রমাণিত হওয়ার আগেই চিরতরে বেতন বন্ধ করে দেওয়া ইত্যাদি। 

তাই স্কুল কলেজ এমপিওভুক্ত, এমপিও-আশ্বাসভুক্ত, রেজিস্টার্ড, নন-রেজিস্টার্ড-সব প্রতিষ্ঠানে শিক্ষকদের বেতন নিয়ে টালবাহানা অনতিবিলম্বে বন্ধ করে শিক্ষার পরিবেশে সু-বাতাস আনা বড়ই জরুরি। 

(৪) স্কুলের ম্যানেজিং কমিটিতে শিক্ষানুরাগী অর্থাৎ যাদের স্কুলকে নানাভাবে সহযোগিতা করার মানসিকতা আছে, তাদের নিয়ে কমিটি গঠন করা প্রয়োজন। স্কুল ফান্ড থেকে এবং শিক্ষকদের বেতন থেকে অর্থ হাতিয়ে নেওয়ার মানসিকতা যাদের আছে এবং যারা মুক্তিযুদ্ধের চেতনার ধারাকে বিশ্বাস করেনা; তারা যেন থাকতে না-পারে এমন একটি সার্কুলার জারি করা প্রয়োজন শিক্ষা মন্ত্রণালয় থেকে। শিক্ষক নিয়োগের ব্যাপারেও সব ঝামেলা দূর করা প্রয়োজন দ্রুতগতিতে। 

(৫) এলাকাভিত্তিক স্কুলের পরিকল্পনা করে প্রত্যেক এলাকার স্কুলকে সর্বোত্তম স্কুল-রূপে গড়ে তোলায় মনোনিবেশ করার বিষয়টি এলাকার মানুষদের সঙ্গে নিয়েই করতে হবে, এটা মুক্তিযুদ্ধের মত কঠিন কাজ না। এতে সরকারের অনুপ্রেরণা থাকতে হবে। প্রয়োজন আর্থিক সহায়তা। জাপান, ইংল্যান্ড, কানাডাসহ পৃথিবীর অনেক দেশেই এই নিয়ম যাতে শিশুরা পায়ে হেঁটে স্কুলে যেতে পারে। এতে বাবা-মা’র শরীর স্বাস্থ্য যেমন রক্ষা পাবে, তেমনি রাস্তার যানজটও কমে আসবে। কিছুটা হলেও পরিবেশ দুষণমুক্ত থাকতে পারবে। 

(৬) শিক্ষক-শিক্ষার্থী অনুপাত ৩০:১ হতে হবে। একজন শিক্ষকের ওপর ৬০ বা ১১৯ শিক্ষার্থী দিলে কীভাবে শিক্ষক পড়াবে আর ক্লাশে শিক্ষার্থী সব কিছু বুঝে ফেলবে?

(৭) প্রশ্নফাঁস আর এই পরীক্ষাবাণিজ্য বন্ধ করতে চাইলে শিক্ষানীতি বহির্ভূত ‘প্রাথমিক সমাপনী’ এবং ২০১০ শিক্ষানীতি বাতিল করে ’৭২-এর সংবিধানের ভিত্তিতেই শিক্ষানীতি প্রণয়ন করতে হবে। ‘৭২-এর সংবিধানের ভিত্তিতে শিক্ষানীতি রচিত হলে সংবিধানের ১৭নং ধারা অনুযায়ী তা হবে। যেমন রাষ্ট্র : ‘(ক) একই পদ্ধতির গণমুখী ও সর্বজনীন শিক্ষাব্যবস্থা প্রতিষ্ঠার জন্য এবং আইনের দ্বারা নির্ধারিত স্তর পর্যন্ত সকল বালক-বালিকাকে অবৈতনিক ও বাধ্যতামূলক শিক্ষাদানের জন্য।

(খ) সমাজের প্রয়োজনের সহিত শিক্ষাকে সংগতিপূর্ণ করিবার জন্য এবং সেই প্রয়োজন সিদ্ধি করিবার উদ্দেশ্যে যথাযথ প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত ও সদিচ্ছা প্রণোদিত নাগরিক সৃষ্টির জন্য।

(গ) আইনের দ্বারা নির্ধারিত সবময়ের মধ্যে নিরক্ষরতা দূর করিবার জন্য কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণ করিবে।’

অথচ ২০১০ শিক্ষানীতি সম্পূর্ণ এর বিপরীত। কোথায় এর নিরক্ষরতা দূরীকরণের টার্গেট? কোথায় একই পদ্ধতির গণমুখী শিক্ষা?

(৮) সমাজের রন্ধ্রে রন্ধ্রে পর্বত সমান দুর্নীতি রোধ করার বিন্দু পরিমাণ ব্যবস্থা না নিলে ‘প্রশ্নপত্র ফাঁস’ রোধ করা যাবে না- যেহেতু এ নিয়ে চলে বিশাল বিশাল বাণিজ্য- তাই পরিপূর্ণভাবে ‘পিএসসি’ ও ‘জেএসসি’ পরিত্যাগ করে পূর্বের মতো শুধু মেধাবীদের জন্যই হওয়া উচিত বৃত্তি পরীক্ষা। বাকিদের জন্য খেলাধুলা, সাঁতার শেখা, সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ড, বাগান করা, কৃষিতে বাবা-মাকে সহায়তা করাসহ অনেক কিছু। আমাদের দেশের অনেকেই খেলাধুলা, সঙ্গীত, শিল্প-সংস্কৃতি, সমাজসেবা নানাবিধ কাজে বিশ্বজোড়া খ্যাতি অর্জন করেছেন। তারা সব বিষয়ে জিপিএ-৫ বা তৎকালীন লেটার মার্কস পেয়েছিলেন তা তো না। প্রাথমিক শিক্ষা সমাপনী ও জেএসসিতে জিপিএ-৫ না পেলেও নানাবিধ ক্ষেত্রে জিপিএ-৫ বা তারও চেয়ে বেশি কিছু পাওয়া যায়। তাই দুর্নীতির মাধ্যমে তা অর্জনের চেষ্টা করা যেমন অনাকাঙ্ক্ষিত, তেমনি অন্যায়। 

(৯) ইংরেজি শিক্ষা শিশু শ্রেণি থেকে বাদ দিয়ে যে শ্রেণি থেকেই শুরু হোক, যারা ভালো করবে তারা সামগ্রিকভাবে ভালো ফলাফল করবে; কিন্তু ইংরেজিতে যারা খুবই কম নম্বর পাবে তারাও পরবর্তী শ্রেণিগুলোতে যেন উত্তীর্ণ হতে পারে। কারণ এতেই পিছিয়ে থাকা জনগোষ্ঠীর পিছিয়ে পড়া শুরু হয়। শুধু ইংরেজি যেন তাদের প্রাথমিক পর্যায়ের পড়াশুনার পথ রুদ্ধ করতে না পারে এবং অষ্টম শ্রেণির পর তারা যেন কোনো কারিগরি প্রতিষ্ঠানে যেতে পারে। দশম শ্রেণির পরও তাই। কারিগরির জন্য ইংরেজিতে ন্যূনতম ২০ মার্কস পেলেও যেন সে পরবর্তীতে ভর্তি হতে পারে। তাহলে তারা অন্ধকারের গুহা থেকে রক্ষা পাবে। এ বিষয়গুলো অনেক চিন্তাবিদ, যারা শিক্ষা নিয়ে ভাবনা-চিন্তা করেন তারাও নানা সময়ে কথাগুলো বলেছেন। মাতৃভাষার মাধ্যমেই সে জ্ঞান অর্জন করতে পারে এবং এতে ঝরে পড়ার হার কমবে।

(১০) শিক্ষাব্যবস্থার উন্নতির জন্য শিক্ষাজীবন থেকেই শিক্ষার্থীদের বিশেষ করে স্কুল বা কলেজের শিক্ষকতা পেশায় আগ্রহী করার জন্য চেষ্টা করতে হবে। আগ্রহী শিক্ষার্থী নবম শ্রেণি থেকে সে ১০০ নম্বরের এডুকেশনবিষয়ে ১টি পেপার বেশি পড়বে এবং সেজন্য তাকে একটি মাসিক বৃত্তি অবশ্যই দেওয়ার ব্যবস্থা করতে হবে। হতে পারে তা ২-৩ হাজার টাকা। উচ্চ মাধ্যমিকেও তারা শিক্ষা বিষয়ে একটি পেপার বেশি পড়বে এবং গ্র্যাজুয়েশনের পর বিএড ও এমএড করার পর তাদের কলেজ শিক্ষক স্কেলে বেতন পাওয়ার অধিকার থাকতে হবে। এতে শিক্ষকতা পেশার মান বাড়বে এবং শিক্ষার্থীরা তখন আগ্রহী হবে। তারা যে কোনো বিষয়ের ওপর মাস্টার্স ডিগ্রিও নিতে পারবে। উপযুক্ত শিক্ষকই শিক্ষার মান বাড়াতে পারে। শিক্ষাব্যবস্থার উন্নয়নে শিক্ষার্থীর মনোযোগ আকর্ষণে শিক্ষকের যোগ্যতা একটি বড় নিয়ামক। তখন প্রশ্ন ফাঁসের প্রয়োজনীয়তা হারিয়ে যাবে।

 (১১) একইভাবে যারা অধিক মেধার ভিত্তিতে বিজ্ঞান শাখায় পড়বে তাদেরও বৃত্তি প্রদান করা প্রয়োজন বিজ্ঞান শিক্ষায় আগ্রহী করার জন্য।

(১২) আর একটি কথা। শিক্ষাব্যবস্থাকে সরকারি করে বিসিএস ক্যাডারদের সঙ্গে বছরের পর বছর মামলা মোকদ্দমায় না জড়িয়ে প্রকৃত জাতীয়করণ প্রয়োজন। শিক্ষাব্যবস্থার পঙ্কিল দিকগুলো থেকে পরিত্রাণের জন্য এর বিকল্প নেই। অন্য কোনো সময়ে ‘সরকারিকরণ না জাতীয়করণ’- এ বিষয়ে কথা বলা যাবে। তবে এটুকু বলা যায় যে, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের যাবতীয় খরচ সরকার বহন করবে; কিন্তু প্রতিষ্ঠান হবে স্বায়ত্বশাসিত, সরকারি হবে না। শিক্ষাব্যবস্থার উন্নয়ন ছাড়া, শিক্ষকতা পেশার মান উন্নয়ন ছাড়া ও সর্বোপরি সুস্থ রাজনীতির বিকাশ ছাড়া সমাজ দেহের দগদগে ঘা কখনই আরোগ্য লাভ করবে না। সর্বোপরি সত্যিকার অর্থে ‘৭২-এর সংবিধানের মূল নীতির ভিত্তিতে মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় দেশ গড়ার অঙ্গীকারের মধ্যেই আছে এর সমাধান। সর্বোপরি হাজার হাজার শিক্ষক-পদ যে খালি আছে, তা দ্রুত পূরণ করতে হবে। শিক্ষা খাতে বিনিয়োগ বাড়াতে হবে- তা বাজেটের ৩০ শতাংশ এবং জাতীয় আয়ের ইউনেস্কোর সুপারিশ অনুযায়ী অনুন্নত দেশের জন্য ৭ শতাংশ।

সব পরীক্ষার প্রশ্ন ফাঁস রোধ করতে চাইলে ব্যাংক-বীমা, হাওর-বাঁওড়, নদী-নালা, প্রকৃতি পরিবেশসহ সমাজের সকল পর্যায়ের দুর্নীতির মূলোৎপাটনও প্রয়োজন। আর সমাধান হবে, সমাজে সাম্য প্রতিষ্ঠায় অঙ্গীকারাবদ্ধ হলে- যা ছিল ওই মুক্তিযুদ্ধের চেতনার মধ্যেই।

এদেশে বিত্তবান শ্রেণি, যাদের সন্তানরা ইংলিশ মিডিয়ামে পড়ে, তাদের দেশপ্রেম নেই; কিন্তু মাদ্রাসার শিক্ষার্থীদের সঙ্গে এদের এত মিল; যেহেতু মায়ের ভাষার প্রতি এই দুই শ্রেণির মমতা নেই, সে কারণে দেশ মাতৃকার প্রতি, দেশের মানুষের প্রতি, এমন কি মা-বাবার প্রতি এরা দয়া-মায়াহীন।

ইংরেজি শিক্ষাব্যবস্থা সম্পর্কে ও মাতৃভাষা সম্পর্কে রবীন্দ্রনাথের বক্তব্য কী ছিল, আমরা তা একটু স্মরণ করতে পারি। তিনি বলেছেন- ‘ঔপনিবেশিক শিক্ষার পেছনে কোনো সুচিন্তিত ভাবনা বা কোনো শিক্ষাতত্ত্বই নেই। অর্থাৎ শিক্ষার লক্ষ্য সম্পর্কে কোনো চিন্তা নেই, তদানুযায়ী কোনো পরিকল্পনা নেই। বরং বলা যায়, কুপরিকল্পনা আছে, সে হলো শিক্ষাব্যবস্থার মধ্য দিয়ে মানুষকে কেরানীতে পরিণত করা আর ঔপনিবেশিক প্রভু-শক্তির ক্রীতদাসে পরিণত করা। ফলে সৃজনশীলতা, মুক্তি ও আনন্দ, শিক্ষার যা অপরিহার্য ভিত্তি, তা এই শিক্ষাব্যবস্থায় সম্পূর্ণ অবহেলিত। এক কথায়, এ শিক্ষা শিক্ষাই নয়- এ হলো এক ধরণের বিষক্রিয়া।’

আর মাতৃভাষা সম্পর্কে রবীন্দ্রনাথ বলেছিলেন- ‘শিক্ষার বিষয়বস্তু যাই হোক না কেন, শিক্ষা মাতৃভাষায় না হওয়ার ফলে, একটি সম্পূর্ণ বিজাতীয় ভাষার মাধ্যমে হওয়ার ফলে, সাধারণভাবে ওই শিক্ষা আমাদের অন্তরে প্রবেশ করে না। এ শিক্ষা সম্পূর্ণ শূন্যগর্ভ- অনেকটা খোলসের মতো, জীবিকার ক্ষেত্রে তা আমাদের অঙ্গে থাকে বটে, কিন্তু অন্তরঙ্গ জীবনে তার কোনো ক্রিয়া থাকে না। বিজ্ঞান শিক্ষাতেও তাই। বিজ্ঞান আমাদের জীবনে প্রবেশ করে না। ফলে বিজ্ঞানে যারা সুশিক্ষিত বলে গণ্য, তাদের জীবনদৃষ্টি সম্পূর্ণ অবৈজ্ঞানিক থেকে যায়। সোজা কথায়, এ শিক্ষা আমাদের বাইরের চাকচিক্য দিলেও অশিক্ষিতই রেখে দেয়।’ 

তারপর তিনি বলেছেন, ‘এ শিক্ষা অত্যন্ত সংকীর্ণ গণ্ডির মধ্যে সীমাবদ্ধ। এর সঙ্গে জনশিক্ষার কোনো ব্যবস্থা নেই। শিক্ষার বিকিরণের কোনো পথ নেই।’

আজও আমরা দেখি- শিক্ষার সঙ্গে সংস্কৃতির যোগ নেই, প্রকৃতি-পরিবেশের তেমন ভাবনা নেই, নইলে কি রামপালে সুন্দরবনের কাছে মেগা পাওয়ার প্ল্যান্ট করার পরিকল্পনা হয়? কারণ একটাই- মেগা Project মেগা Profit।

সুকান্ত ভট্টাচার্যের আশাজাগানিয়া বক্তব্য দিয়ে শেষ করা যেতে পারে, সুকান্ত বলেছেন- ‘যে শিশু ভূমিষ্ঠ হলো আজ রাতে/তার মুখে খবর পেলুম/সে পেয়েছে ছাড়পত্র এক/এ বিশ্বকে এ শিশুর/বাসযোগ্য করে যাবো আমি/নবজাতকের কাছে এ আমার দৃঢ় অঙ্গীকার।’


এ এন রাশেদা
সম্পাদক : শিক্ষা বার্তা
প্রাক্তন শিক্ষক : নটর ডেম কলেজ

সাম্প্রতিক দেশকাল ইউটিউব চ্যানেল সাবস্ক্রাইব করুন

মন্তব্য করুন

Epaper

সাপ্তাহিক সাম্প্রতিক দেশকাল ই-পেপার পড়তে ক্লিক করুন

Logo

ঠিকানা: ১০/২২ ইকবাল রোড, ব্লক এ, মোহাম্মদপুর, ঢাকা-১২০৭

© 2024 Shampratik Deshkal All Rights Reserved. Design & Developed By Root Soft Bangladesh

// //