প্রাথমিক শিক্ষকদের প্রশিক্ষক হচ্ছেন ১৬তম গ্রেডের কর্মচারীরা

উপজেলা রিসোর্স সেন্টারের (ইউআরসি) ১৬তম গ্রেডের পদ ডাটা এন্ট্রি অপারেটরদের ১০ম গ্রেডের পদ সহকারী ইনস্ট্রাক্টর পদে চলতি দায়িত্ব দেওয়ার প্রস্তাব দিয়েছেন প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের (ডিপিই) মহাপরিচালক শাহ রেজওয়ান হায়াত।

গত ২০ ফেব্রুয়ারি এ সংক্রান্ত প্রস্তাব প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের সচিবের কাছে পাঠানো হয়।

প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের প্রস্তাবে বলা হয়েছে, ইউআরসি’র ডাটা এন্ট্রি অপারেটর ১৬তম গ্রেডের একটি পদ। বিভিন্ন সময়ে নিয়োগপ্রাপ্ত হয়ে তারা ১৯-২০ বছর যাবৎ একই পদে কর্মরত রয়েছেন। অথচ বিধি মোতাবেক ১৫ বছরের অভিজ্ঞতাসম্পন্ন ডাটা এন্ট্রি অপারেটরদের সহকারী প্রোগ্রামারের ৬০ শতাংশ পদে পদোন্নতির বিধান রয়েছে। কিন্তু প্রাথমিক শিক্ষায় উপজেলা রিসোর্স সেন্টার, উপজেলা শিক্ষা অফিস, জেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিস, পিটিআই এবং বিভাগীয় উপপরিচালকের কার্যালয়ে সহকারী প্রোগ্রামারের কোনো পদ নেই। বর্তমানে উপজেলা পর্যায়ে ৪২৪টি রিসোর্স সেন্টারে সহকারী ইন্সপেক্টরের পদ রয়েছে। এর মধ্যে আবার ১৫০ জন সহকারী ইনস্ট্রাক্টর পদে চলতি দায়িত্বে কর্মরত রয়েছেন।

ডিপিই’র প্রস্তাবে আরও বলা হয়েছে, প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তর গেজেটেড ও নন গেজেটেড কর্মচারী নিয়োগ বিধিমালা-২০২১ অনুযায়ী সহকারী ইনস্ট্রাক্টর পদে ২০ শতাংশ সরাসরি নিয়োগ ও ৮০ শতাংশ ফিডার পদ হিসেবে প্রধান শিক্ষকদের (বিভাগীয় প্রার্থী) জন্য সংরক্ষিত থাকবে। তবে সংস্থাপন মন্ত্রণালয়ের বিধি অনুযায়ী, জ্যেষ্ঠতা নির্ণয়ে জটিলতা, নিয়োগবিধি প্রণয়নে বিলম্ব, পদোন্নতিযোগ্য কর্মকর্তা-কর্মচারীর অভাব এবং নিয়োগবিধি অনুযায়ী নিয়োগে বিলম্ব এই চার ব্যতিক্রমধর্মী ক্ষেত্রে চলতি দায়িত্ব প্রদান বিবেচনা করা যেতে পারে।

এদিকে, প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের প্রস্তাবটি নিয়ে ক্ষুব্ধ সরকারি প্রাথমিকের চার লাখ শিক্ষকই।

সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা বলছেন, প্রস্তাবটি গৃহীত হলে ইউআরসি’র ১৬তম গ্রেডের কর্মচারীরা হতে যাচ্ছেন প্রাথমিক শিক্ষকদের প্রশিক্ষক। অথচ পদে চাকরির শিক্ষাগত যোগ্যতাও এইচএসসি বা সমমান পাস। অথচ প্রধান শিক্ষক ও সহকারী শিক্ষক পদে চাকরির যোগ্যতা স্নাতক। আর দ্বিতীয় শ্রেণির পদমর্যাদা ও একাডেমিক পদে থেকেও পদোন্নতি বঞ্চিত হচ্ছেন প্রাথমিকের প্রধান শিক্ষকেরা। বিধি অনুযায়ী তাদেরই সহকারী ইনস্ট্রাক্টর পদে দায়িত্ব পাওয়ার কথা। আর ১৩তম গ্রেডে থাকলেও আলোচনায় নেই সহকারী শিক্ষকেরা।

জানতে চাইলে প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের সচিব ফরিদ আহাম্মদ গণমাধ্যমকে বলেন, আমাদের কাছে যেই প্রস্তাবই আসুক না কেন আমরা নিয়মকানুন, বিধি-বিধান দেখেই এ ব্যাপারে সিদ্ধান্ত নেব। তবে এটা বলতে পারি, যৌক্তিকতার বাইরে কোনো কিছুই করা হবে না।

এদিকে, ডিপিই বলছে, সরাসরি নিয়োগ ও প্রধান শিক্ষকদের পদোন্নতির ক্ষেত্রে প্রস্তাবিত নিয়োগবিধি চূড়ান্তকরণে বিলম্ব এবং নিয়োগবিধি অনুযায়ী নিয়োগে বিলম্ব হওয়ায় সহকারী ইন্সপেক্টরের বিপুলসংখ্যক পদ শূন্য থাকার কারণে স্নাতকোত্তর এবং বিএড ও এমএড ডিগ্রিধারী যোগ্যতাসম্পন্ন ডাটা এন্ট্রি অপারেটরদের সহকারী ইনস্ট্রাক্টর পদে চলতি দায়িত্ব প্রদানের বিষয়টি বিবেচনা করা যেতে পারে।

বাংলাদেশ সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় প্রধান শিক্ষক সমিতির সিনিয়র যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ও মুখপাত্র শেখ মোহাম্মদ ছায়িদ উল্লা গণমাধ্যমকে বলেন, সহকারী উপজেলা শিক্ষা অফিসার ও সহকারী ইনস্ট্রাক্টর পদগুলো একাডেমিক সুপারভাইজারের পদ। এসব পদ ধারীগণ সাধারণত শিক্ষায় ডিগ্রি বিএড, এমএড ডিগ্রিধারী হয়ে থাকেন। কিন্তু প্রাথমিক প্রধান শিক্ষকদের পাশ কাটিয়ে ডাটা এন্ট্রি অপারেটরগণকে সহকারী ইনস্ট্রাক্টর পদে চলতি দায়িত্ব প্রদানের প্রস্তাব মানে প্রাথমিকের প্রায় চার লাখ শিক্ষককে অপমান বা অমর্যাদা করার শামিল। আশা করি প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের মহাপরিচালক তার প্রস্তাব সংবলিত পত্রটি প্রত্যাহার করে নেবেন। প্রধান শিক্ষকদের সহকারী ইনস্ট্রাক্টর ও সহকারী উপজেলা শিক্ষা অফিসার পদে পদায়ন করবেন।

সাম্প্রতিক দেশকাল ইউটিউব চ্যানেল সাবস্ক্রাইব করুন

মন্তব্য করুন

Epaper

সাপ্তাহিক সাম্প্রতিক দেশকাল ই-পেপার পড়তে ক্লিক করুন

Logo

ঠিকানা: ১০/২২ ইকবাল রোড, ব্লক এ, মোহাম্মদপুর, ঢাকা-১২০৭

© 2024 Shampratik Deshkal All Rights Reserved. Design & Developed By Root Soft Bangladesh

// //