বেরোবিতে সেশনজট শূন্যের কোটায়, স্বস্তিতে শিক্ষার্থীরা

দীর্ঘ একযুগের বেশি সময় ধরে সেশনজটে যাঁতাকলে পিষ্ট ছিল রংপুরের বাতিঘর বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয় (বেরোবি)। বর্তমান উপাচার্য অধ্যাপক ড. হাসিবুর রশীদের দূরদর্শিতা বিশ্ববিদ্যালয়টির তিন থেকে চার বছরের সেশনজট নিরসন হয়েছে।

করোনাকালে শিক্ষার্থীদের সেশনজটের ক্ষতি পুষিয়ে নিতে রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ে ২০২১ সালের শীতকালীন ছুটি বাতিল করা হয়েছিল।৬ মাসের সেমিস্টার চার মাসে নামিয়ে আনা হয়। এভাবে শিক্ষার্থীদের সেশনজট কমিয়ে শূন্যের কোটায় আনার পরিকল্পনা নেয় বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন।

জানা যায়, প্রতিষ্ঠালগ্ন থেকেই ভয়াল সেশনজটের কবলে পড়ে উত্তরের বাতিঘর নামে পরিচিত বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়। বিশ্ববিদ্যালয়টির অধিকাংশ বিভাগেই দেড় বছর থেকে সাড়ে তিন বছরের সেশনজট ছিল। যার ফলে ছয় থেকে সাত বছরেও শেষ হচ্ছিল না স্নাতক। সময় মতো পড়াশোনা শেষ করতে না পারায় ভবিষ্যৎ নিয়ে দুশ্চিন্তায় পড়েন শিক্ষার্থীরা।

এর আগে বিশ্ববিদ্যালয়টির ভূগোল ও পরিবেশ বিজ্ঞান, কম্পিউটার সায়েন্স অ্যান্ড ইঞ্জিনিয়ারিং, পদার্থবিজ্ঞান, রসায়ন, গণিত, বাংলা, ইংরেজি, ইতিহাস ও প্রত্নতত্ত্ব বিভাগে তিন বছরের সেশনজট ছিল। এছাড়া জেন্ডার অ্যান্ড ডেভেলপমেন্ট স্টাডিজ, গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা, লোক প্রশাসন, সমাজবিজ্ঞান ও রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগে দুই বছরের সেশনজট ছিল।

এদিকে সেশনজট নিরসন হওয়ায় গত ২০২১-২২ শিক্ষাবর্ষে স্নাতক প্রথমবর্ষ ভর্তি পরীক্ষায় গুচ্ছভুক্ত ২২টি বিশ্ববিদ্যালয়ের মধ্যে আসন সংখ্যার তুলনায় সর্বোচ্চ ভর্তিতে এগিয়ে ছিল বেরোবি। প্রায় শতভাগ ভর্তির কারণ হিসেবে বিশ্ববিদ্যালয়ের বর্তমান একাডেমিক শৃঙ্খলা ও সেশনজটমুক্ত হওয়ায় বিশ্ববিদ্যালয়টিকে সর্বোচ্চ পছন্দের তালিকায় রেখেছেন নবীন শিক্ষার্থীরা।

গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের  ২০১৭-২০১৮ সেশনের শিক্ষার্থী সাগর সর্দার বলেন, আমি যখন আমার বিভাগের ক্লাস করতে যেতাম, তখন বড় ভাইদের কাছ থেকে শুনতাম, আমাদের বিভাগে অনেক সেশনজট।কিন্তু বর্তমানে আমাদের বিভাগে সেশনজট শূন্যের কোটায়। মহামারী করোনাভাইরাসের কারণে দীর্ঘদিন বিশ্ববিদ্যালয় বন্ধ থাকলেও অনলাইনে ক্লাস কার্যক্রম চলমান ছিল। অন্যান্য বিশ্ববিদ্যালয় তুলনায় আমাদের বিশ্ববিদ্যালয়ে নির্ধারিত সময়ে মধ্যে আমাদের শিক্ষা কার্যক্রম শেষ করছে।

মার্কেটিং বিভাগের ২০১৮-১৯ সেশনের শিক্ষার্থী মো. মেহরাজ হোসাইন বলেন,গত দুই বছর আগেও সেশনজট বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের সাথে জড়িয়ে থাকলেও বর্তমানে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রত্যেক বিভাগ এখন সেশনজট মুক্ত। যার ফলে  বিশ্ববিদ্যালয়ের  ভর্তি পরীক্ষার্থীদের পছন্দের তালিকায় বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয় এখন প্রথম কাতারে। যার জন্য আমি ধন্যবাদ দিব বিশ্ববিদ্যালয়ের বর্তমান উপাচার্য অধ্যাপক ড. হাসিবুর রশিদ স্যারকে। যিনি উপাচার্য হিসাবে যোগদানের পর অনলাইন পরীক্ষা কার্যক্রম গ্রহণ করেন যার কারণেই আমরা নির্ধারিত সময়ের মধ্যেই আমরা আমাদের শিক্ষা কার্যক্রম শেষ করতে পেরেছি।

এবিষয়ে বেরোবির শিক্ষক সমিতির সাধারণ সম্পাদক আসাদুজ্জামান মন্ডল আসাদ সাম্প্রতিক দেশকালকে বলেন, বিশ্ববিদ্যালয়ে দুই বছরের সেশনজটসহ করোনাকালিন একবছর সেশনজট ছিল। বর্তমান উপাচার্য চেষ্টা আর শিক্ষকদের অক্লান্ত পরিশ্রমের ফলে আমরা সেশনজট কাটিয়ে উঠেছি। আমাদের শিক্ষক সংকট এবং ক্লাসরুম সংকট এত কিছুর মাঝেও আমরা পিছিয়ে নেই। এখন গুচ্ছ ২২ বিশ্ববিদ্যালয়ের মধ্যে বেরোবি কে সবাই প্রথম পছন্দের তালিকায় রাখে। যা আমরা গত ২০২১-২২ সেশনে দেখেছি।

সাম্প্রতিক দেশকাল ইউটিউব চ্যানেল সাবস্ক্রাইব করুন

মন্তব্য করুন

Epaper

সাপ্তাহিক সাম্প্রতিক দেশকাল ই-পেপার পড়তে ক্লিক করুন

Logo

ঠিকানা: ১০/২২ ইকবাল রোড, ব্লক এ, মোহাম্মদপুর, ঢাকা-১২০৭

© 2024 Shampratik Deshkal All Rights Reserved. Design & Developed By Root Soft Bangladesh

// //