দক্ষিণ কোরিয়ায় উচ্চশিক্ষা লাভের নেপথ্যে মূল আকর্ষণ, দেশটির আন্তর্জাতিকভাবে স্বীকৃত বিশ্ববিদ্যালয়গুলো। গত কয়েক বছরে কিউএস ওয়ার্ল্ড র্যাঙ্কিংয়ের শীর্ষ শতকে রয়েছে দেশটির পাঁচটি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান। এগুলো হলো সিউল ন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি (৩১), কোরিয়া অ্যাডভান্সড ইনস্টিটিউট অব সায়েন্স অ্যান্ড টেকনোলজি (৫৩), ইয়োনসেই বিশ্ববিদ্যালয় (৫৬), কোরিয়া ইউনিভার্সিটি (৬৭) ও পোহং ইউনিভার্সিটি অব সায়েন্স অ্যান্ড টেকনোলজি (৯৮)। চলুন দক্ষিণ কোরিয়ার উচ্চশিক্ষা গ্রহণের জন্য প্রয়োজনীয় তথ্যগুলো জেনে নেওয়া যাক।
সেরা বিষয়গুলো
অর্থনীতি, সায়েন্স অ্যান্ড টেকনোলজি, বিজনেস ম্যানেজমেন্ট, ইঞ্জিনিয়ারিং, ফাইন্যান্স, ফ্যাশন, আন্তর্জাতিক বাণিজ্য, হসপিটালিটি অ্যান্ড ট্যুরিজম ম্যানেজমেন্ট, ডিজাইন মিডিয়া, আন্তর্জাতিক সম্পর্ক ও বায়োটেকনোলজি।
আবেদনের উপায়
দেশটির প্রতিটি বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রছাত্রী ভর্তির জন্য নিজস্ব অনলাইন পোর্টাল ব্যবহার করে। তা ছাড়া ভর্তি কার্যক্রম শুরুর সময়কাল এবং পূর্বশর্তগুলোও শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানভেদে ভিন্ন হয়ে থাকে। তাই চূড়ান্ত আবেদনের আগে অবশ্যই সংশ্লিষ্ট বিশ্ববিদ্যালয়ের অফিশিয়াল ওয়েবসাইট চেক করা উচিত।
ভর্তির আবেদনগুলো সাধারণত সেমিস্টারের ক্লাস শুরু হওয়ার অন্তত তিন থেকে চার মাস আগে জমা নেওয়া হয়। গড়পড়তায় বেশ কিছু শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে ভর্তির মৌসুম প্রধানত দুটি। প্রথমটি হলো স্প্রিং সেমিস্টার, যার আবেদন গ্রহণ মার্চ থেকে জুন মাসে শুরু হয়ে সেপ্টেম্বর থেকে নভেম্বর পর্যন্ত চলে।
দ্বিতীয়টি হলো ফল সেমিস্টার, যে মৌসুমের আবেদন গ্রহণ সেপ্টেম্বর থেকে ডিসেম্বর অবধি শুরু হয়। আর ভর্তির যাবতীয় কার্যক্রম শেষ হয় মে থেকে জুন মাসের মধ্যে।
প্রয়োজনীয় কাগজপত্র
সম্পূর্ণ পূরণকৃত আবেদনপত্র, পাসপোর্ট, পাসপোর্ট সাইজের ছবি, উচ্চ মাধ্যমিক সনদ বা সমমানের ডিপ্লোমা, ইংরেজি ভাষা দক্ষতা সনদ, পার্সোনাল স্টেটমেন্ট, ব্যাংক স্টেটমেন্ট বা আর্থিক সহায়তার হলফনামা, লেটার অব রিকমেন্ডেশন, সিভি, পিতা-মাতার পাসপোর্ট বা পরিচয়পত্র (এনআইডি)।
মাস্টার্সে আবেদনের জন্য ব্যাচেলর ডিগ্রি বা সমমানের ডিপ্লোমা সনদ ও ট্রান্সক্রিপ্ট, কাজের অভিজ্ঞতা (প্রোগ্রাম বিশেষে প্রযোজ্য)। পিএইচডি আবেদনের জন্য স্নাতকোত্তর বা সমমানের ডিপ্লোমা সনদ ও ট্রান্সক্রিপ্ট, মাস্টার্স থিসিস বা গবেষণার প্রস্তাবনা।
ভাষার দক্ষতা প্রমাণ
ইংরেজি ভাষা দক্ষতার প্রমাণপত্র : ন্যূনতম যোগ্যতাস্বরূপ টোফেল (ন্যূনতম ৭১) বা আইইএলটিএস (কমপক্ষে ৫ দশমিক ৫)।
স্টুডেন্ট ভিসার জন্য আবেদন
আবেদন অনুযায়ী ভর্তির অফার লেটার প্রাপ্তির পরপরই প্রথম পদক্ষেপ হচ্ছে ভিসার কাজ শুরু করা। বাংলাদেশি শিক্ষার্থীদের দীর্ঘমেয়াদি অধ্যয়নের উদ্দেশ্যে দক্ষিণ কোরিয়ার ডি-২ ভিসার জন্য আবেদন করতে হবে। এই ভিসায় প্রাথমিকভাবে দুই বছর পর্যন্ত মেয়াদ মঞ্জুর করা হয়। আর একক এন্ট্রি ভিসার মেয়াদ তিন মাস। আবেদনের জন্য সরাসরি চলে যেতে হবে কোরিয়ান ভিসা পোর্টালে। তারপর ই-ফরমটি বারকোডসহ প্রিন্ট করে আপলোডকৃত নথির হার্ড কপিসহ একত্রে কোরিয়ান দূতাবাস বা কনস্যুলেটে জমা দিতে হবে।
ভিসার জন্য প্রয়োজনীয় কাগজপত্র
প্রিন্ট করা স্টুডেন্ট ভিসার আবেদনপত্র বা ই-ফরম, গত ছয় মাসের মধ্যে তোলা পাসপোর্ট সাইজের ১ কপি রঙিন ছবি, দক্ষিণ কোরিয়ায় পৌঁছার দিন থেকে পরবর্তী ন্যূনতম ছয় মাসের মেয়াদসহ বৈধ পাসপোর্ট, কভার বা ফরোয়ার্ডিং লেটার, দক্ষিণ কোরিয়ান বিশ্ববিদ্যালয়ের কাছ থেকে প্রাপ্ত ভর্তির অফার লেটার, জন্ম সনদ, সিটি করপোরেশন বা ইউনিয়ন অফিস কর্তৃক ইস্যুকৃত পারিবারিক সম্পর্কের সার্টিফিকেট। আবেদনকারীর নিজের বা গ্যারান্টরের আর্থিক সামর্থ্য প্রমাণ করার জন্য তার ব্যাংক স্টেটমেন্ট। আবেদনসংক্রান্ত ও অধ্যয়নের জন্য বিদেশে বসবাসের নিমিত্তে পিতা-মাতার অনাপত্তিপত্র (এনওসি)। পিতা-মাতার জাতীয় পরিচয়পত্র। বাংলাদেশ পুলিশ কর্তৃক প্রদত্ত পুলিশ ক্লিয়ারেন্স সার্টিফিকেট। শিক্ষাগত যোগ্যতার যাবতীয় সনদ ও ট্রান্সক্রিপ্ট। তিন মাসের মধ্যে যক্ষ্মা পরীক্ষার ফলাফল। দুই বছরের মধ্যে জারীকৃত ইংরেজি ভাষা শিক্ষার সার্টিফিকেট (আইইএলটিএস)। কোরিয়ান ভাষা দক্ষতার প্রশংসাপত্র (দক্ষিণ কোরিয়া স্বীকৃত) : কোরিয়ান ভাষা শিক্ষা বা এই ভাষার প্রগ্রামগুলোতে অধ্যয়নের ক্ষেত্রে প্রযোজ্য।
এই নথিগুলো অবশ্যই বাংলাদেশ শিক্ষা মন্ত্রণালয় ও পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় কর্তৃক গত তিন মাসের মধ্যে নোটারীকৃত হতে হবে। আবেদনের সঙ্গে এগুলোর আসল ও ফটোকপি উভয়ই জমা দিতে হবে।
সম্ভাব্য খরচ
বিশ্ববিদ্যালয়, অধ্যয়নের বিষয় ও ডিগ্রি পর্যায়ের ওপর ভিত্তি করে পড়াশোনার খরচ ভিন্ন হয়ে থাকে। তার মধ্যে ব্যাচেলর কোর্সগুলোতে প্রয়োজন হয় সাধারণত ৪৩ লাখ থেকে তিন কোটি ৩৯ লাখ কোরিয়ান ওন। এই বাজেট তিন লাখ ৭০ হাজার ১৯ থেকে ২৯ লাখ ১৭ হাজার ১২৫ টাকার সমান। আর স্নাতকোত্তরের জন্য বাজেট রাখতে হবে চার লাখ ৩৬ হাজার ২৭৮ থেকে ৪৩ লাখ ৭১ হাজার ৩৮৫ টাকার সমতুল্য। জীবনযাত্রার খরচের ক্ষেত্রে সবচেয়ে ব্যয়বহুল শহর হচ্ছে রাজধানী সিউল। অন্যদিকে বুসান ও ইঞ্ছনের মতো শহরগুলোর নিত্যনৈমিত্তিক খরচ যথেষ্ট কম।
স্কলারশিপের সুবিধা
অধ্যয়ন ও জীবনযাত্রার বাজেটের অর্থ সংকুলানের জন্য দেশটিতে রয়েছে পর্যাপ্ত স্কলারশিপের সুবিধা। ইয়নসেই ইউনিভার্সিটিতে স্নাতক প্রগ্রামের জন্য পূর্ণ, অর্ধেক বা প্রতি সেমিস্টারের এক-তৃতীয়াংশ অর্থ সহায়তার ব্যবস্থা রয়েছে। একইভাবে কোরিয়া ইউনিভার্সিটিও আংশিক বা সম্পূর্ণ অধ্যয়ন খরচ বহন করে থাকে।
হ্যানিয়াং ইন্টারন্যাশনাল এক্সিলেন্স অ্যাওয়ার্ডসে অধ্যয়ন ফি ৭০, ৫০ বা ৩০ শতাংশ মওকুফ করে। বেশ কিছু সরকারি-বেসরকারি প্রতিষ্ঠান বিভিন্ন পর্যায়ে অধ্যয়নের জন্য পূর্ণ তহবিল প্রদান করে। তার মধ্যে স্যামসাং গ্লোবাল হোপ স্কলারশিপ প্রোগ্রাম পূর্ণ টিউশন ফি ছাড়াও আন্ডারগ্র্যাজুয়েটদের প্রতি সেমিস্টারে দেয় তিন লাখ ৩৫ হাজার ৫৯৮ টাকা। গ্লোবাল কোরিয়া স্কলারশিপ আন্ডার গ্র্যাজুয়েট ও পোস্ট গ্র্যাজুয়েট উভয় পর্যায়ে পূর্ণ অর্থ সহায়তা দেয়।
খণ্ডকালীন চাকরির সুযোগ
খণ্ডকালীন চাকরির জন্য প্রত্যেক শিক্ষার্থীকে অবশ্যই ন্যূনতম এক সেমিস্টার শেষ করতে হবে। এই শর্তে আন্ডার গ্র্যাজুয়েট ছাত্রছাত্রীরা প্রতি সপ্তাহে ২০ ঘণ্টা ও গ্র্যাজুয়েট শিক্ষার্থীরা ৩০ ঘণ্টা কাজ করতে পারবেন। প্রচলিত ডিগ্রি সম্পন্ন হওয়ার পর যারা থিসিসে কাজ করছেন, তারাও সপ্তাহে ৩০ ঘণ্টা পর্যন্ত কাজের অনুমতি পান।
সাম্প্রতিক দেশকাল ইউটিউব চ্যানেল সাবস্ক্রাইব করুন
© 2025 Shampratik Deshkal All Rights Reserved. Design & Developed By Root Soft Bangladesh