‘দ্য লরেক্স’- প্রয়োজন যখন পুঁজির ভূমিকায় অবতীর্ণ হয়

‘ওয়াল স্ট্রিট’ ছবির প্রধান চরিত্র গর্ডন গ্রেকোর মুখে যখন সংলাপ শোনা যায়- ‘Greed is good’ তখন ‘দ্য লরেক্স’ ছবিতে প্রচ্ছন্নভাবে কোরাসের কণ্ঠে আমরা শুনতে পাই ‘Need is good’। আপাতদৃষ্টিতে এই গ্রিড বা লোভ এবং নিড বা প্রয়োজন শব্দ দুটির অর্থ ভিন্ন হলেও, শিশুতোষ অ্যানিমেটেড ‘দ্য লরেক্স’ ছবির প্রয়োজন শব্দটি অর্থ এবং ব্যঞ্জনার দিক থেকে যেন লোভ শব্দকেও ছাড়িয়ে যায়। পুঁজিবাদী অর্থনৈতিক উৎপাদন ব্যবস্থা একদিকে যেমন লোভ ছাড়া টিকতে পারে না, ঠিক তেমনি প্রয়োজন ছাড়াও টিকতে পারে না। এই উৎপাদন ব্যবস্থা আমাদের নতুন নতুন প্রয়োজনের দিকে ক্রমাগত উৎসাহিত করে যায়। মানুষের প্রয়োজন যত বৃদ্ধি করা যাবে, পুঁজির তত স্ফীতি ঘটবে। ঠিক যেভাবে অর্থ গৃধ্নুতা না থাকলে উন্মুক্ত বাজার ব্যবস্থা টিকে থাকতে পারবে না, একইভাবে প্রয়োজন না থাকলে উন্মুক্ত বাজার ব্যবস্থাও টিকে থাকতে পারবে না। লোভ সামলানো গেলেও প্রয়োজন সামলানো সম্ভব না। 

পুঁজিবাদী অর্থনৈতিক উৎপাদন ব্যবস্থায় ‘প্রয়োজন’ একটি অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ পুঁজি। এই কারণেই ওয়াল স্ট্রিটের অর্থ গৃধ্নুতার চেয়ে দ্য লরেক্সের প্রয়োজন আরও বেশি শক্তিশালী, আরও বেশি অর্থ বহন করে। এই প্রয়োজনের মুলা ঝুলিয়ে পুঁজিবাদী অর্থনৈতিক উৎপাদন ব্যবস্থা আমাদের ক্রমেই প্রাকৃতিক পরিবেশ ধ্বংসের দিকে নিয়ে যাচ্ছে। প্রথম দিকে প্রাকৃতিক পরিবেশ ধ্বংসের জন্য কলকারখানা থেকে নির্গত ধোঁয়ার ওপর জোর দেওয়া হলেও ধীরে ধীরে মানুষ বুঝতে পারে প্রাকৃতিক ভারসাম্য ধ্বংসের জন্য শুধু কলকাখানাই নয়, বন-পাহাড়, গাছ-পালা, নদী-নালা থেকে শুরু সবকিছুকে ক্রমাগত উজাড় করে দেওয়ার যে উদ্যোগ গ্রহণ করা হয়েছে সেটাও অন্যতম বড় একটি কারণ। খুব স্বাভাবিকভাবেই তাই প্রাকৃতিক পরিবেশ রক্ষার ওপর মানুষ জোর দিতে থাকে। 

১৯৭০ এর ২২ এপ্রিল প্রথম ঘোষণা করা হয় ‘আর্থ ডে’ বা ‘ভূমি দিবস’ হিসেবে। প্রায় একই সময়ে অর্থাৎ ১৯৭১ সালে থিয়োডোর সিয়াস গেইসেল (১৯০৪-১৯৯১), যিনি মি. সিয়াস নামে অধিক পরিচিত, তিনি লেখেন ‘দ্য লরেক্স’, যা পরবর্তীতে ২০১২ সালে ক্রিস রিনোডের পরিচালনায় নির্মিত হয় শিশুতোষ অ্যানিমেটেড ছবি দ্য লরেক্স। 


ছবিটিকে মিউজিকাল অ্যানিমেটেড ছবি বললেও খুব ভুল বলা হবে না। ছবির মাঝে মাঝে গানের মধ্যে দিয়ে গল্পের অনেক কিছু আমরা পেয়ে যাই। যেমন ছবির শুরুতেই কোরাস গানের মধ্যে দিয়ে আমরা জানতে পারি, স্নিডভিল নামে এমন একটি শহরের কথা, যে শহরে প্রাকৃতিক কোনো গাছ নেই। আছে প্লাস্টিক গাছ। শহরের গাছগুলো কারখানায় উৎপাদন করা হয়। প্রাকৃতিক গাছ নেই বলে বিশুদ্ধ বাতাসও নেই। সেখানে বাতাস কিনে নিঃশ্বাস নিতে হয়। তবু শহরের বাসিন্দারা বেশ সুখে বাস করে ইত্যাদি। সেই শহরের প্রধান ও’হেয়ার নামে স্বৈরাচারী শাসক আছে, যে এই বাতাস বিক্রি করে বিলিয়নেয়ার বা ট্রিলিয়নেয়ার নয় জিলিয়নিয়ার হয়েছে। 

এভাবেই ছবির শুরুতেই আমরা বুঝতে পারি, স্নিডভিল শহরের বাসিন্দারা এমন একটি প্লাস্টিক বা কৃত্রিম শহরে বাস করে, যেখানে নিঃশ্বাস নেওয়ার জন্যও টাকা গুনতে হয়। এরকম প্লাস্টিক পরিবেশে থাকা সত্ত্বেও সেই শহরের জনগণকে বেশ সুখী জীবনযাপন করতে দেখা যায়। কারণ, স্বৈরশাসকরা জনগণের দৃষ্টি সুরোম্য পর্দা দিয়ে ঢেকে রাখতে ভীষণ পারঙ্গম। যে পর্দা ভেদ করে স্বৈরশাসকদের শয়তানি কোনোভাবেই ধরা পড়ে না; কিন্তু সাধারণ জনগণের দৃষ্টি পর্দা ঢেকে রাখা সম্ভব হলেও, কিছু মানুষ থাকে? যাদের দৃষ্টি কঠিন পর্দা দিয়েও ঢেকে রাখা যায় না। সেই পর্দা ভেদ করে তারা ঠিক ঠিক সত্যের ঠিকানা পেয়ে যায়। দ্য লরেক্স ছবির কিশোর নায়ক টেড সেই কিছু মানুষদের একজন। টেড তার থেকে বয়সে কিছুটা বড় বান্ধবী অড্রের হাতে আঁকা প্রাকৃতিক গাছের ছবি দেখে মুগ্ধ হয়। তাই অড্রে যখন তাকে আব্দার করে এইরকম প্রাকৃতিক গাছ সংগ্রহ করার জন্য, শুরু হয় টেডের প্রাকৃতিক গাছ অনুসন্ধানের সংগ্রাম। 

এই গাছের সন্ধান করতে যেয়েই ছবির গল্পকার ওয়ান্সলারের সঙ্গে টেডের দেখা হয়। যার কাছে টেড জানতে পারে কী করে অপূর্ব প্রাকৃতিক পরিবেশে পূর্ণ এই স্নিডভিল শহরের সব গাছ একদিন ধ্বংস হয়েছিল তারই হাত ধরে; কিন্তু যে শহরে ও’হেয়ারের মতো একজন স্বৈরাচার শাসক থাকে, সেখানে প্লাস্টিক রেখে প্রাকৃতিক গাছের অনুসন্ধানের কাজ এত সহজ না। স্নিডভিলের আনাচে কানাচে সিসি ক্যামেরা দিয়ে জনগণের ওপর কড়া নজরদারির ব্যবস্থা করা আছে। জনগণ চোখের পাতা ফেললেও সেটা সিসি ফুটেজে ধরা পড়ে যায়। উঁচু এবং কঠিন দেয়াল ঘেরা স্নিডভিলের কাউকে শহরের বাইরে যেতে দেওয়া হয় না। অথচ ওয়ান্সলার শহরের বাইরে থাকে। তাই তার কাছে পৌঁছানোর জন্য টেডকে শহরের বাইরে যেতেই হবে। অদম্য ভালোবাসা কাউকে কোনো কাজে আটকে রাখতে পারে না। টেড তাই স্নিডভিলের যক্ষপুরী ভেদ করে ঠিক ঠিক ওয়ান্সলারের কাছে পৌঁছে যায়। শুরু হয় গাছ নিধনের পেছনের গল্প। ওয়ান্সলার টেডকে সেই গল্প বলা শুরু করে। 

ছবির ফ্ল্যাশব্যাকে দেখা যায় বেকার ওয়ান্সলার নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করার জন্য একদিন বাড়ি থেকে বের হয় এবং একটি জায়গায় যেয়ে পৌঁছায়। সেই জায়গার প্রাকৃতিক সৌন্দর্য টেডকে ভীষণ মুগ্ধ করে। তার প্রাকৃতিক সৌন্দর্য বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায়ের ‘আরণ্যক’ উপন্যাসের কথা মনে করিয়ে দেয়। উপন্যাসের লেখকও জীবিকার জন্য ঘনবন পরিবেষ্টিত জঙ্গলময় এলাকায় একদিন গিয়েছিলেন। সেই ঘনবন পরিবেষ্টিত এলাকায় কিছু দিন থাকার পর উপন্যাসের বর্ণনায় আমরা দেখি লেখক লিখছেন, ‘আমার যে চোখ কখনো এর আগে ফোটে নাই, সে চোখ যেন ফুটিয়াছে, যেসব কথা কখনো ভাবি নাই তাহাই ভাবাইতেছে ... এখানে চাকরিতে আসার দিনটি হইতে এদেশের এই ধু-ধু মুক্ত প্রান্তর ও বনভূমি আমাকে ক্রমশ দেশ (বাড়ির কথা) ভুলাইয়া দিতেছে, সভ্য জগতের শত প্রকারের আরামের উপকরণ ও অভ্যাসকে ভুলাইয়া দিতেছে, বন্ধু-বান্ধব পর্যন্ত ভুলাইবার জোগাড় করিয়া তুলিয়াছে ...। ” উপন্যাসের জায়গায় জায়গায় প্রকৃতির যে অসাধারণ বর্ণনা আমরা পাই, সেই বর্ণনা আমাদের বুঝিয়ে দেয়, প্রকৃতিকে একবার আপন করে নিতে জানলে প্রকৃতিও মানুষকে আপন করে নেয়; কিন্তু পুঁজিবাদী অর্থনৈতিক ব্যবস্থা এই প্রকৃতিকে মানুষ থেকে শুধু বিচ্ছিন্নই করে না, আপনজন এমনকি নিজেকেও নিজ থেকে বিচ্ছিন্ন করে দেয়। 

প্রকৃতির ধ্বংসে তাই পুঁজিবাদী অর্থনৈতিক ব্যবস্থার কিছু যায়-আসে না। এখানে বেঁচে থাকার একটিই মানদণ্ড এবং সেটা হলো অর্থ বা টাকা। টাকাই এই ব্যবস্থার ঈশ্বর। অর্থ বা টাকার বাসনা মানুষকে অন্ধ করে দেয়। তাই ওয়ান্সলার সেখানে বিচিত্র রঙের ট্রুফুলা গাছ দেখে খুশিতে আত্মহারা হয়ে যায়। তার এই আনন্দ নানা বর্ণেও ট্রুফুলা গাছের সৌন্দর্যের কারণে নয়। ট্রুফুলা গাছের আগায় সুতার মতো নানা রঙ-বেরঙের ফুল আছে, সেটা দিয়ে এক ধরনের কাপড় বোনা যায়। ওয়ান্সলার স্বপ্ন দেখে সেই কাপড় বিক্রি করে সে বিলিয়নিয়ার, ট্রিলিয়নিয়ার হতে পারবে এই আশায় আনন্দে আত্মহারা হয়ে ওঠে। সেই ফুল দিয়ে বোনা কাপড় তৈরির মধ্যে দিয়ে টেড যেন একটি বিপ্লব ঘটিয়ে দিবে। ইতিহাসের শিল্পবিপ্লব নিয়ে মানুষ যেমন খুশিতে আত্মহারা হয়েছিল, অনেকটা সেইরকম। ঠিক এই সময় আমাদের দেখা হয়, ছবির মূল চরিত্র লরেক্সের সঙ্গে, যে লরেক্স শুধু গাছের কথা বলে, গাছ রক্ষা অর্থাৎ প্রাকৃতিক পরিবেশ রক্ষার জন্য ওয়ান্সলারকে অবিরাম বলে যায়। 

লরেক্সকে আমরা আধুনিক কালের পরিবেশবাদী আন্দোলনকারী বলতে পারি। সেই লরেক্স ওয়ান্সলারকে বারবার সাবধান করা সত্ত্বেও ওয়ান্সলার সেই জায়গার সব ট্রুফুলা গাছ কেটে সাফ করে দেয়। ফলে যা হবার সেটাই হয়। প্রকৃতিবিহীন এক বিবর্ণ ভূমিতে রূপান্তরিত হয়ে যায় অতীতের স্নিডভিল শহর। সেখানকার সব পশুপাখি এমনকি ওয়ান্সলারের প্রিয় ঘোড়াটা পর্যন্ত ওয়ান্সলারকে ছেড়ে চলে যায়। সব শেষে বিদায় নেয় লরেক্স। হিম ধরা সেই রুক্ষ্ম ভূমির ওপর দাঁড়িয়ে একা ওয়ান্সলার অনুশোচনায় দগ্ধ হতে থাকে; কিন্তু ততদিনে যা ক্ষতি হবার তা হয়ে গেছে। 


যে ক্ষতির পরিণাম আমরা দেখতে পাইআকিরা কুরোসাওয়ার ‘ড্রিমস’ ছবিতে। ছবির আটটি স্বপ্নের একটি স্বপ্নের নাম ‘দ্য উইপিং ডেমন’। যেখানে আমরা দেখতে পাই একজন যুবক গাছপালা, নদীনালা, পাহাড় পর্বত, পশু-পাখিহীন একটি দেশে যেয়ে হাজির হয়। মানুষ ততদিনে দানবে রূপান্তরিত হয়ে গেছে। একজন দানব তাকে জানায়, নিউক্লিয়ার বোমার আঘাত, মিসাইলের আঘাতে প্রকৃতির সবকিছু বিলুপ্ত হয়ে গেছে। সেই বিষণ্ন দানবকে যুবক যখন প্রশ্ন করে, শস্যকণা ছাড়া তারা কী করে বেঁচে আছে? দানব তাকে উত্তরে বলে, “আমরা নিজেরাই এখন নিজেদের ভক্ষণ করি।” 

কী দুর্দান্ত সংলাপ! একটি কার্টুনে আঁকা ছবিতে তাই এখন দেখা যায়, একজন ধনী লোক ডলার চিবিয়ে খাচ্ছে। লরেক্স ছবির এমনই একজন বুর্জোয়া দানবের নাম ও’হেয়ার, যার কথা আগেই বলা হয়েছে। ওয়ান্সলারের পাপের ফলে সেই বিরান ভূমিতে, গাছ ছাড়া মানুষের যখন নিঃশ্বাস নিতে কষ্ট হয়, আনন্দে মেতে ওঠে, ও’হেয়ার। কারণ মানুষের নিঃশ্বাসের যত প্রয়োজন পড়বে, বাতাসেরও তত প্রয়োজন পড়বে। ও’হেয়ার বাতাসের ফ্যাকট্রি গড়ে তোলে। ও’হেয়ারের বুদ্ধিজীবী বিজ্ঞানীরা বুদ্ধি দেয় বেশি বেশি প্লাস্টিকের বোতল তৈরির জন্য। কারণ প্লাস্টিকের বোতলের ভেতর রাখা জিনিস মানুষ বেশি পছন্দ করবে, তাই সেগুলো বেশি বেশি কিনতে চাইবে। যত বেশি কিনবে পরিবেশ তত বেশি দূষিত হবে। পরিবেশ যত দুষিত হবে বাতাসের প্রয়োজন আরও বাড়বে। বাতাসের প্রয়োজন যত বাড়বে, ও’হেয়ার তত বেশি ধনী হয়ে উঠবে। ঠিক যেমন করোনাকালে, আমাদের এখন অক্সিজেন কিনে জীবন বাঁচানোর সংগ্রাম করতে হচ্ছে। এভাবে গোটা শহরই প্লাস্টিক দিয়ে মুড়ে দেয়া হয়; কিন্তু মানুষের সঙ্গে দানব কখনই পেরে ওঠে না। 

ওয়ান্সলারের বাড়ির কাছে ইংরেজি একটি শব্দ UNLESS ছবির অন্যতম গুরুত্ব বহনকারী একটি শব্দ। এই শব্দবন্ধ দিয়ে আমরা বুঝতে পারি, টেডের মতো মানুষদের আগমন যতদিন পর্যন্ত না আসবে, ততদিন পর্যন্ত পৃথিবী ধ্বংস হতেই থাকবে। ওয়ান্সলারট্রুফুলা গাছের শেষ বীজটা টেডকে দিয়ে বলে, এটা নিয়ে যেয়ে তোমার শহরের মধ্যেখানে বুনে দাও। যেখান থেকে সবাই দেখতে পারবে। UNLESS শব্দটা দিয়ে আমরা বুঝে যাই, ট্রুফুলা গছের এই শেষ বীজটা টেডের অপেক্ষাতেই ছিল। এখানে টেড এবং ওয়ান্সলেরের মধ্যে গুরুত্বপূর্ণ কিছু সংলাপ তুলে ধরা হলো -

ওয়ান্সলার : এই বীজটা তোমাকে বুনতে হবে। 

টেড : কিন্তু কেউ তো গাছ নিয়ে এখন আর ভাবে না। 

ওয়ান্সলার : তাহলে সবাইকে ভাবাও ... যেভাবে যা আছে, সেসব বদলে দাও। বীজটা ছোট এবং এমন আহামরি কিছুই না; কিন্তু বীজ এখন যেভাবে আছে সেভাবে সে চিরদিন থাকবে না। ঠিক এখন যেমন তুমি ছোট আছ সেইরকম তুমি আর থাকবে না। 

 অর্থাৎ টেডের মতো একজনের আগমন যতদিন পর্যন্ত না ঘটবে, ততদিন পর্যন্ত প্রকৃতির সমাধান হবে না। এই বীজ একদিন বড় হয়ে প্রকৃতিকে রক্ষা করবে, মানুষ জাতিকে রক্ষা করবে। 

আমরা বুঝে যাই, একটি ছোট্ট বীজ কত বড় কল্যাণ নিয়ে আসতে পারে ভবিষ্যতে। একটি বীজ মানে একটি ভবিষ্যৎ। একটি বীজ মানে সুস্থভাবে মানুষের বেঁচে থাকার আশা। তারপরেই আমরা দেখি সেই বীজ বপনের জন্য টেডকে কত সংগ্রাম করতে হয়। ঠিক যেভাবে বাস্তবে সংগ্রাম করতে হয়েছিল ১৭৩০ সালে ভারতের রাজস্থানের জোদপুরে খেজুরি গাছ রক্ষার জন্য। যে গাছ রক্ষার জন্য অমৃতা দেবী ও তার তিন মেয়ে সন্তানসহ ৩৬৩ মানুষকে আত্মাহুতি দিতে হয়েছিল। যার পরিপ্রেক্ষিতে পরবর্তীতে ১৯৭৩ সালে ওই ভারতেরই উত্তর প্রদেশের ঝাড়খন্ড এলাকায় বনরক্ষা আন্দোলন হয়েছিল, যার নাম ‘চিপকো আন্দোলন’, যা মোটামুটি আমরা সবাই জানি। হিন্দি শব্দ চিপকো অর্থ জড়িয়ে ধরো বা আটকে থাকো। ফসলের জমি কেড়ে নিয়ে ঝাড়খন্ডে কারখানা স্থাপনের জন্য প্রশাসন একশটি গাছ কাটার উদ্যোগ নিলে, সাধারণ গ্রামবাসী গাছকে জড়িয়ে ধরে বন রক্ষার আন্দোলন শুরু করে। শেষ পর্যন্ত প্রশাসন পিছু হটতে বাধ্য হয়। এভাবেই রাষ্ট্রের অবৈধ, অনৈতিক কাজগুলো বাতিল করার জন্য আটকে থেকে বা চেপে ধরে আদায় করতে হয়। লরেক্স ছবিতেও আমরা দেখি টেডের সঙ্গে জনগণ একজোট হয়ে ও’হেয়ারকে ছুড়ে ফেলে দেয়। প্রকৃতির জয় হয়। 

পাঞ্জাবের বিখ্যাত ইকো-ফেমেনিস্ট এবং পরিবেশ আন্দোলনকারী ড. বন্দনা দেবী বর্তমান গোলকায়ন অর্থনীতির নাম দিয়েছেন গোলকায়ন ক্যাসিনো। তার মতে বিল গেটস হলো আধুনিক কলাম্বাস। কৃষির ওপর কিছু চমৎকার সংজ্ঞা পাই আমরা তার কাছ থেকে। তিনি বলেন, এগ্রিকালচার মানে যত্নের কালচার, এগ্রিকালচার মানে ভালোবাসার কালচার, ভালো এগ্রিকালচার মানে জমির প্রতি যত্ন। ভূমিতে কেমিক্যাল ব্যবহারের বিরুদ্ধে ভূমিকেই লড়তে হবে। প্রকৃতিকে রক্ষা না করলে প্রকৃতিও আমাদের রক্ষা করতে পারবে না। প্রকৃতি সচেতন ছবি দ্য লরেক্স, অ্যানিমেশনের মধ্যে দিয়ে শিশু থেকে শুরু করে, বড়দেরও তাই ভাবিয়ে তোলে।  

সাম্প্রতিক দেশকাল ইউটিউব চ্যানেল সাবস্ক্রাইব করুন

মন্তব্য করুন

Epaper

সাপ্তাহিক সাম্প্রতিক দেশকাল ই-পেপার পড়তে ক্লিক করুন

Logo

ঠিকানা: ১০/২২ ইকবাল রোড, ব্লক এ, মোহাম্মদপুর, ঢাকা-১২০৭

© 2024 Shampratik Deshkal All Rights Reserved. Design & Developed By Root Soft Bangladesh

// //